• অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ২০২০
  • " />

     

    আকবর আলি অ্যান্ড দ্য চেম্বার অফ থটস

    আকবর আলি অ্যান্ড দ্য চেম্বার অফ থটস    

    “ইয়েস, আই অ্যাম বিয়ন্ড ইয়োর থটস”। 

    সোশ্যাল মিডিয়ায় টিন-এজ কারও এমন ‘বায়ো’ বা ‘সংক্ষিপ্ত আত্মজীবনীমূলক প্রোফাইল’ কি আলাদা করে নজরে পড়ে আপনার? নাকি ব্যাপারটা এই প্রজন্মের জন্য খুবই চলনসই- তাদের চিন্তা-ভাবনা, নিজেদেরকে প্রকাশ করার উপায়ই এমন? আপনার সঙ্গে ‘জেনারেশন গ্যাপ’ থাকলে তাদেরকে প্রশ্ন করে দেখতে পারেন। যুতসই, বা আপনার মতো মনমতো উত্তর পেলেন কিনা, সেটা বিবেচনার দায়ভার আপনার।

    এমন প্রশ্ন শুনে অবশ্য আকবর আলি একটু হেসে দিলেন, “(আসলে লিখেছি) এটা বলতে যে, আমি, অনেক কথা- অনেক কথা না- বেশিরভাগ কথা অনেকের সঙ্গে শেয়ার করি না। এই কারণেই হয়তোবা লিখে দিয়েছিলাম, যে আমাকে চিন্তা করতে পারবা না।”

    তবে আকবর নিজেকে ‘ইন্ট্রোভার্ট’ মনে করেন না, “ইন্ট্রোভার্ট না। বন্ধুদের যদি জিজ্ঞাসা করেন- শুধু বন্ধু না- সিনিয়র বা জুনিয়র যারা আমার সঙ্গে মেশে, বা আমি যাদের সঙ্গে মিশে ‘কমফোর্টেবল ফিল’ করি, তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলে বলতে পারবে। আমিও মিশতে পছন্দ করি, এমন না যে নিজেকে গুটিয়ে রাখতে পছন্দ করি। আমি নিজেকে ‘ইন্ট্রোভার্ট’ বলব না।”

    বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ের প্রথম ওয়ানডে চলছে সিলেটে, আকবর একটা সংবর্ধনা অনুষ্ঠান শেষ করে আগের রাতে ফিরেছেন ঢাকায়। বিশ্বকাপ জিতে দেশে ফেরার পর থেকে বেশ ছুটোছুটি গেছে তার। বাড়ি গিয়েছিলেন, ঢাকায় ফিরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই দিনের প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছেন। এরপর একদিনের জন্য রংপুর যাবেন, আবার ফিরতে হবে প্রিমিয়ার লিগের দলবদলের জন্য। এরপর অনুশীলন, ম্যাচ। করোনা ভাইরাসের তোপ তখনও আসেনি এদেশে। 

    মিরপুরে বিসিবি কার্যালয়ের সামনে তখনও ঝুলছে লম্বা ব্যানার, ট্রফি হাতে গলায় মেডেল ঝুলিয়ে যেখানে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছেন আকবর। 

    ****

    আকবর আলি আরেকবার পারলেন না। 

    বাঁহাতি অর্থোডক্স স্পিনার অথর্ভ আঙ্কোলেকারের বেরিয়ে যাওয়া বলটা ডাউন দ্য গ্রাউন্ডে এসে খেলতে গিয়ে দিলেন ফিরতি ক্যাচ। ১০৭ রানের লক্ষ্যে ১৬ রানেই ৪ উইকেট চলে যাওয়ার পর নেমেছিলেন, আউট হলেন ৭ম ব্যাটসম্যান হিসেবে, জয় থেকে ২৯ রান দূরে। মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরির সঙ্গে জুটিটা আরেক দফা আশা জোগাচ্ছিল বাংলাদেশকে, তবে স্নায়ুচাপটা নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলেন না আকবর। ১ বল পর ফিরলেন মৃত্যুঞ্জয়, তানজিম হাসান সাকিবের পর শাহিন আলম আঙ্কোলেকারের শিকার। বাংলাদেশ থামলো ৬ রান দূরে। 

    অ-১৯ এশিয়া কাপ ফাইনাল, সেপ্টেম্বর, ২০১৯, কলম্বো। ভারতের প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ। 

    “এশিয়া কাপের ফাইনালে আমি যেটা আউট হয়েছি- আমারই ব্যর্থতা ছিল। আমি শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে ছিলাম। আমার ওরকম একটা ভুল শট খেলা ঠিক হয়নি। এগুলো নিয়েও ডিস্টার্বড ছিলাম, যে আগেও দুই-একটা ম্যাচ জেতাতে পারিনি। তো সুযোগ পেলে বিশ্বকাপে করতে হবে। এশিয়া কাপে ওই মুহুর্তে ওই শট খেলা উচিৎ হয়নি”, সরল স্বীকারোক্তি আকবরের। 
     


    আকবর আলি আরেকবার পারলেন না/এসিসি


    ফাইনাল হারের পর বাংলাদেশের ডাগ-আউটে যেন নেমে এলো নিকষ কালো এক আঁধার- এতো কাছে গিয়েও থমকে দাঁড়ালে তো এমন হবেই। আকবর মাথা নিচু করে একদিকে তাকিয়ে আছেন, পেছনে শামীম হোসেন পাটওয়ারি। তার পেছনে মাহমুদুল হাসান জয় বুঝে উঠতে পারছেন না কিছু। সবার পেছনে মৃত্যুঞ্জয়,  অবিশ্বাস খেলা করছে তার চোখেমুখে। 

    ওপাশে বুনো উল্লাসে মেতেছে ভারত, আরেকটি এশিয়া কাপ তাদের।

    অবশ্য ভারতের কাছে এমন বাঁচামরার ম্যাচ এভাবে হারাটা নতুন নয় বাংলাদেশের কাছে। এর আগের অক্টোবরে আরেকটি এশিয়া কাপের সেমিফাইনালে বাংলাদেশ হেরেছিল ভারতের কাছেই, আরও কম ব্যবধানে, ২ রানে। ১৭৩ রানতাড়ায় ৬৫ রানে ৫ উইকেট যাওয়ার পর নেমেছিলেন আকবর, শামীমের সঙ্গে ৭৪ রানের জুটিতে তিনি করেছিলেন ৬৩ বলে ৪৫ রান। 

    তবে ২২ বল বাকি থাকতে, ২ রানের দূরত্বে থামলো বাংলাদেশ। রাকিবুল হাসানের সঙ্গে ভুল বুঝাবুঝিতে রান-আউট হয়েছিলেন মিনহাজুর রহমান। আকবর সে দলের অধিনায়ক ছিলেন না, ছিলেন তৌহিদ হৃদয়।

    আকবর এই দলেই ছিলেন না শুরুতে।  

    ****

    ২০১৮ অ-১৯ বিশ্বকাপে পঞ্চম স্থান নির্ধারণী প্লে-অফে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হেরেছিল বাংলাদেশ। পরের বিশ্বকাপের জন্য দলের পরিকল্পনা শুরু হয়েছিল সে বছরের জুলাইয়ে, দেশের মাটির এশিয়া কাপের মাসদুয়েক আগে। অ-১৮ পর্যায়ের খেলার পর ইয়ুথ ক্রিকেট লিগ- ওয়াইসিএল, চ্যালেঞ্জ সিরিজ- এরপর ক্যাম্পের জন্য দল ডাকা হলো। পুরোনো যারা ছিলেন, সঙ্গে অ-১৯ বিশ্বকাপে খেলার মতো বয়সসীমার মধ্যে যারা পড়েন, তাদেরকে নিয়ে। তবে আকবর সেখানে নেই। 

    আকবর আগের বিশ্বকাপের দলেও ছিলেন না। হৃদয় ছিলেন, শামিম ছিলেন স্ট্যান্ড-বাইয়ে।

    তবে এই দলে আকবরের না থাকাটা বিকেএসপির কোচ মাসুদ হাসানের মনে খটকা যোগাল- আকবরকে নিয়ে কোথাও একটা যোগাযোগের ঘাটতি হচ্ছে। দরকার পড়লে যে কোনও সুযোগ তখনও আছে কিনা- সেটি দেখতে চান তিনি। সুযোগটা তিনি বা আকবর পেয়ে গেলেন- বিকেএসপির সঙ্গে অনুশীলন ম্যাচ খেলতে গেল অ-১৯ দল। 

    “ইন্ট্রোভার্ট না। বন্ধুদের যদি জিজ্ঞাসা করেন- শুধু বন্ধু না- সিনিয়র বা জুনিয়র যারা আমার সঙ্গে মেশে, বা আমি যাদের সঙ্গে মিশে ‘কমফোর্টেবল ফিল’ করি, তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলে বলতে পারবে। আমিও মিশতে পছন্দ করি, এমন না যে নিজেকে গুটিয়ে রাখতে পছন্দ করি। আমি নিজেকে ‘ইন্ট্রোভার্ট’ বলব না।”

    সেই অনুশীলন ম্যাচের একটিতে আকবর ৯০-পেরুনো ইনিংস খেললেন। মাসুদ আরেকবার আকবরের পক্ষে তার ‘অনুরোধ’টা নির্বাচক হান্নান সরকারকে জানানোর সুযোগ পেলেন। হান্নান অবশ্য আকবরকে চিনতেন আগে থেকেই। ইয়ুথ ক্রিকেট লিগে আকবর যে দলের অধিনায়ক ছিলেন, তিনি ছিলেন সে দলের উপদেষ্টা এবং ম্যানেজার। আকবরকে তারও ‘ভাল লেগেছিল’। 

    বিকেএসপির আরেক কোচ মন্টু দত্তর মাধ্যমে হান্নান জানলেন, ২০১৫ সালে করা পাসপোর্ট অনুযায়ী পরের বিশ্বকাপ খেলার মতো বয়স আছে আকবরের। শুরুতে এই হিসাবটায় একটু গড়বড় হয়ে গিয়েছিল তাদের। সেই ম্যাচের পর তাকে দলে নিতে দেরি করলেন না হান্নান। ক্যাম্পে ডাক দিলেন। 

    “উচিত বা ডিজার্ভ করি এমন না। ইচ্ছা ছিল (অ-১৯) দলে খেলার, হয়তোবা সুযোগ হয়ে উঠছিল না”, আকবর বলছিলেন, “আল্লাহর রহমতে ওই ম্যাচটায় পারফর্ম করেছি, নির্বাচকরাও মাঠে ছিল। সব মিলিয়ে সুযোগটা হয়ে গেছে। সুযোগটার অপেক্ষায় ছিলাম। আল্লাহর রহমতে হয়ে গেছে।” 
     


    “আবার আকবরের অধিনায়কত্ব তো আমার দেখা আছে, ওয়াইসিএলে দেখেছি। এরপর নাভিদ (নওয়াজ), আমাদের কোচের সঙ্গে কথা বললাম। সিদ্ধান্ত নিয়ে সুজন ভাইয়ের (বিসিবির গেম ডেভলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান খালেদ মাহমুদ সুজন) সঙ্গে কথা বলে জানালাম বিষয়টা, যে এই ব্যাপার। তখন বলা হলো, হৃদয়কে ফ্রি করে দিয়ে আকবরকে অধিনায়কত্ব দেওয়া যায়।”/আইসিসি


    এরপর দেশের মাটিতে এশিয়া কাপ- সেমিফাইনালে সেই হার। এরপর শ্রীলঙ্কা সফর। যুব টেস্ট ও ওয়ানডে সিরিজ মিলিয়ে অধিনায়ক হৃদয় ৮ ইনিংসে করলেন ২টি ফিফটি। তবে পারফরম্যান্সটা ঠিক প্রত্যাশামতো হলো না টিম ম্যানেজমেন্টের। 

    হান্নান বলছিলেন, “এশিয়া কাপে হৃদয় অধিনায়ক হিসেবে খেলেছে- যেহেতু আগের বিশ্বকাপ খেলেছে সে। তবে তার পারফরম্যান্স উঠানামা করছিল একটু। এরপর শ্রীলঙ্কায় যখন খেলি, তখনও ছিল অমন, আসলে শ্রীলঙ্কায় তেমন কেউই পারফর্ম করেনি। হৃদয়ও গড়পড়তা পারফরম করেছিল। কিন্তু তার কাছ থেকে আমাদের প্রত্যাশা বেশি ছিল। তবে তার পারফরম্যান্স তো আমাদের দরকার, অন্যতম মূল ক্রিকেটার সে আমাদের। 

    “আবার আকবরের অধিনায়কত্ব তো আমার দেখা আছে, ওয়াইসিএলে দেখেছি। এরপর নাভিদ (নওয়াজ), আমাদের কোচের সঙ্গে কথা বললাম। সিদ্ধান্ত নিয়ে সুজন ভাইয়ের (বিসিবির গেম ডেভলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান খালেদ মাহমুদ সুজন) সঙ্গে কথা বলে জানালাম বিষয়টা, যে এই ব্যাপার। তখন বলা হলো, হৃদয়কে ফ্রি করে দিয়ে আকবরকে অধিনায়কত্ব দেওয়া যায়।” 

    ২০১৯ এশিয়া কাপে কলম্বোর সেই ফাইনালের দিনে ডাগ-আউটে আকবর যখন মাথা নিচু করে, একটু দূরে অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন কোচ নাভিদ। ওপরে ড্রেসিংরুমে বিমর্ষ হান্নান। 

    ২০২০ অ-১৯ বিশ্বকাপের আগে ভারতের সঙ্গে ৫টি ম্যাচ খেলেছিল বাংলাদেশ। হেরেছিল ৪টি, এর মাঝে ৩টিই ছিল টুর্নামেন্টের নক-আউট ম্যাচ।

    ****

    প্রতিপক্ষ যখন ভারত, তখন বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা যেন ‘অনেক পেরিয়েও পার হওয়া হলো না’ ধরনের। সিনিয়র-জুনিয়র, ছেলে-মেয়ে- ভেদাভেদ নেই তেমন (মেয়েরা অবশ্য ২০১৮ এশিয়া কাপ টি-টোয়েন্টিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ভারতকে হারিয়ে, তবে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে ১৬ ম্যাচের ২টিতে জিতেছে তারা, দুটিই ওই এশিয়া কাপে)। আকবরদের এই দলটাও তার ব্যতিক্রম ছিল না। 

    এমনিতেই বয়সভিত্তিক দলে ভারতের বিপক্ষে শেষ বিশ্বকাপের ফাইনালের আগে ২০ বছরে বাংলাদেশ ২৩ ম্যাচে জিতেছিল মাত্র তিনটিতে। ২০০২ বিশ্বকাপে পার্থিভ প্যাটেল-স্টুয়ার্ট বিনি-মনভিন্দর বিসলাদের হারিয়েছিলেন নাফীস ইকবাল-আফতাব আহমেদ-মোহাম্মদ আশরাফুলরা। ২০১৭ সালে এশিয়া কাপে আকবরদের আগের ব্যাচ জিতেছিল। 

    ২০২০ বিশ্বকাপের এই যাত্রায় ফাইনালের আগে বাংলাদেশ ভারতের বিপক্ষে জিতেছিল একটি ম্যাচ- ইংল্যান্ডের ত্রিদেশীয় সিরিজে গ্রুপপর্বে। বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে ৩২ ওভারে বাংলাদেশের ২১৮ রান তাড়া করতে হতো বাংলাদেশকে। আকবর যখন নামেন, প্রয়োজন ছিল ৭৯ বলে ৯৯ রান। তবে লক্ষ্য থাকলে সুবিধা হয় তার। 

    ক্রিকেটে উইকেটকিপিং বা অধিনায়কত্বের তুলনায় ব্যাটিংটাই বেশি উপভোগ করেন, আরও উপভোগ আকবর করেন লক্ষ্য নিয়ে খেলা, “আমি টার্গেট নিয়ে (দ্বিতীয় ইনিংসে) খেলতে পছন্দ করি। লক্ষ্য থাকলে সহজ মনে হয়, একটু হিসাব করে খেলা যায়। আগে করলে ‘কনফিউজড’ থাকি। কতো রান বোর্ডে বোলারদের জন্য যথেষ্ট হবে। আর লক্ষ্য থাকলে- আস্কিং রেট কতো- ৪-৫ এসব হিসাব করা যায়। সুবিধা হয়।” 

    ৩৬ বলে ৪৯ রানে অপরাজিত থাকলেন আকবর, বাংলাদেশ জিতল ৩ বল বাকি রেখে। 

    তবে ভারত মানেই বাড়তি চাপ যেন বাংলাদেশের জন্য। হান্নানের ভাষায়, “ভারতের সাথে সব অ-১৯ দলেরই চাপ বেশি থাকে। (বিশ্বকাপ) ফাইনালের আগেও চাপ ছিল, সেটা ভারতের সাথে যে কোনও ম্যাচেই থাকে- তারাও নেয় এভাবে (বাড়তি চাপ), আমরাও নেই। ভারত এগিয়ে থাকে যে জায়গাতে, মানসিক জায়গাটাতে। ওরা ওখানে যে চাপ তৈরি করতে পারে, আমরা কখনও পারি নাই এর আগে।”

    এর আগে অ-১৯ বিশ্বকাপে কোনও বাংলাদেশ দল যা পারেনি, আকবররা সেটি করলেন সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে। 

    বাকি রইল ভারত বাধা। 

    “খেলার দিক থেকে আমরা কখনোই পিছিয়ে ছিলাম না ওদের চেয়ে- ২ রানে, ৫ রানে, ৬ উইকেটে হেরেছি, সে ম্যাচেও ২৬৪ (২৬১) করেছিলাম- তো খেলার জায়গায় আমরা কখনোই পিছিয়ে ছিলাম না, ছিলাম মানসিক জায়গা থেকে”, হান্নানের কথাতেই ফুটে ওঠে, ফাইনালে মূল চ্যালেঞ্জ ছিল কোনটি। 


    ****

    বাংলাদেশ ফাইনালে খেলিয়েছিল বাড়তি একজন পেসার, বাঁহাতি স্পিনার হাসান মুরাদের জায়গায় এসেছিলেন অভিষেক দাস। আর আক্রমণের ঝাঁঝ ছিল শুরু থেকেই। 

    “এবারের ফাইনালে সবাই দেখছে, বাংলাদেশ কীভাবে চাপ তৈরি করতে পারে। আমরা হয়তো নিজেদের ছোট ভাবতাম, বা ওই চাপ তৈরি করার সামর্থ্য ছিল না। আর একটা ব্যাপার- ভারতের সঙ্গে খেলতে খেলতে একটা অভ্যাসের ব্যাপার তৈরি হয়। এই অভ্যাসটা তৈরি করে দিয়েছে, মানসিকতা- যে তাদেরকে চাপ ফিরিয়ে দেব। ওরা যেভাবে আক্রমণাত্মক খেলে, আমরাও খেলব। ওদের মানসিকতার জায়গাটাও বুঝে ফেলেছি। ক্রিকেটার থেকে শুরু করে আমাদের ম্যানেজমেন্টের সবাই- আমরা তৈরি হয়ে ছিলাম”, হান্নান বলছিলেন চাপ সামলানোর ব্যাপারটি। 

    টুর্নামেন্টের সেরা ব্যাটসম্যান ইয়াসাভি জইসওয়ালকে প্রথম বল করার পর ফেরার আগে একটা ‘লুক’ দিয়েছিলেন শরিফুল। পরের বলে আবার। এর পরের বলে আবার। প্রথম ওভার মেইডেন। পরের ওভারে তানজিম হাসান সাকিব যেন এই আক্রমণের ঝাঁঝকে আরেক দফা বাড়িয়ে নিলেন। সাক্সেনার একটা ফিরতি শট ধরে থ্রো করলেন সরাসরি- মাথার একটু পাশ দিয়ে বেড়িয়ে গেল সেটা। বাংলাদেশ যেন ভারতকে বার্তা দিচ্ছিল- চাপ এবার তোমাদের ওপর। 

    প্রথম ব্রেকথ্রু অভিষেক দিলেও দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ৯৪ রানে জইসওয়াল-তিলক ভার্মা বাংলাদেশকে প্রতি-আক্রমণ করছিলেন যেন। ফিরিয়ে দিচ্ছিলেন চাপটা। তবে বাংলাদেশ জানত, একটা ব্রেকথ্রু দরকার তাদের। সাকিবের বলে ভার্মার ক্যাচটা ছোঁ মেরে শরিফুল নিলে বাংলাদেশ পেল ব্রেকথ্রু। 
     


    প্রথম ব্রেকথ্রু অভিষেক দিলেও দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ৯৪ রানে জইসওয়াল-তিলক ভার্মা বাংলাদেশকে প্রতি-আক্রমণ করছিলেন যেন।/আইসিসি


    চাপ- বড়ই অদ্ভুত এক ব্যাপার। আবারও ‘প্যানিক’ করা শুরু করলো ভারত। ১৫৬ রানে ৩ উইকেট থেকে ১৭৭ রানে অল-আউট। তবে কাজ বাকি তখনও, ইয়ান বিশপ যেমন কমেন্ট্রিতে বলছিলেন, ‘জব হাফ ডান ফর দ্য মেন ইন দ্য গ্রিন’।  

    “আপনি যদি খেয়াল করেন, আমাদের ‘অ্যাগ্রেশন’-এর দিকে তাকান- আমাদের ভয় ছিল না”, হান্নান মনে করিয়ে দেন, “এই ম্যাচে কাজ করেনি (সেসব)। প্রায় ৮-৯ জন (ভারতীয়) ক্রিকেটার এর আগে অন্তত ৩টা ম্যাচ খেলেছিল আমাদের সঙ্গে। খেলার দিক থেকে আমরা কখনোই পিছিয়ে ছিলাম না ওদের চেয়ে, ছিলাম মানসিক জায়গা থেকে। তো এই মানসিক জায়গাতে উন্নতি করার চেষ্টা করেছি।”

    আকবরের মতে, শুধু মাঠের ভেতর তারা ক্রিকেটাররা না- মাঠের বাইরেও সবাই এক হয়ে কাজ করেছেন, “হ্যাঁ, ম্যাচ খেলেছি অনেক ঠিক আছে। এর বাইরেও আমাদের সেন্টার উইকেটে প্রচুর অনুশীলন হতো। তো সেন্টার উইকেটে (খেলার সময়), কোচিং স্টাফের যারা ছিল, তারা আম্পায়ারিং করেছে, স্কোরিং করেছে। তারাও সম্পৃক্ত থাকতো। ক্লোজলি সম্পৃক্ত ছিল। আমরা যা ভুল করেছি- বোলিং কোচ, সেন্টার উইকেটেই কথা বলেছে। ব্যাটিং কোচ হয়তো ঠিক করে দিয়েছে ভুল শট খেললে। ফিল্ডিং কোচ সহায়তা করেছে।”

    তবে সবকিছুর ফলটা দেখার তখনও এক ধাপ বাকি।

    ****

    ২০১৮ এশিয়া কাপের সেমিফাইনালে আকবর নেমেছিলেন ৬৫ রানে ৫ উইকেট যাওয়ার পর। পরের বছর ফাইনালে ১৬ রানে নেই ৪ উইকেট, এসেছিলেন আকবর। প্রথমটিতে লক্ষ্য ছিল ১৭৩। পরেরটিতে ১০৬। আকবর পারেননি একটিতেও দলকে পার করাতে।

    পচেফস্ট্রুমে ফাইনালে ১৭৭ রানে ভারতকে আটকে দেওয়ার পর আকবর যখন নামলেন, ৬২ রানে এবার কার্যত ৪ উইকেট নেই বাংলাদেশের, ৩ জন আউট হওয়া ব্যাটসম্যানের সঙ্গে চোট পেয়ে উঠে গেছেন পারভেজ হোসেন ইমন। রানতাড়া করতে ভালবাসেন আকবর, তবে চাপটা তো তাতে উবে যায় না। শীঘ্রই শাহাদাত হোসেন দীপু ফিরলেন আকবরকে রেখে। চোট নিয়ে খেলা শামীম বাইরের বল তাড়া করতে গিয়ে ক্যাচ দিলেন, উচ্চাভিলাষী শট খেলতে গিয়ে বিপদ ডেকে আনলেন শাহাদাত। ইমন আবার নামলেন, আকবরের সঙ্গে ৪১ রানের জুটিতে অনেক আশা দিয়ে ফিরে গেলেন আবারও। 

    থাকলেন আকবর। আর থাকলো চাপ। ডাগ-আউটে শামীমদের মুখচ্ছবি বদলে যেতে শুরু করলো, আবারও সেই চেনা শঙ্কাটা ফিরে আসছে। 

    এবার আকবরের সঙ্গী রাকিবুল, ২০১৮-এর সেমিফাইনালে যিনি সঙ্গীকে রান-আউট হয়ে যেতে দেখেছিলেন জয় থেকে ২ রান দূরত্বে। আর থাকলো বৃষ্টির হাতছানি। থাকলো ভারত-বাধার চাপ। যে চাপ বোলিংয়ের শুরুতেই নেই করে দিতে চেয়েছিলেন আকবররা। 

    বাইরে থেকে প্রান্তিক নওরোজ নাবিলের চিৎকার, বা স্ট্রেংথ ও কন্ডিশনিং কোচ রিচার্ড স্টোনিয়েরের 'মাতা টান্ডা, মাতা টান্ডা' কি পৌঁছাচ্ছিল আকবরদের কান পর্যন্ত? 

    হান্নান যে মানসিক উন্নতির কথা বলছিলেন, তাতে অন্তর্ভুক্ত ছিল ক্রিকেটারদের কথাবার্তা, তাদের ‘অ্যাটিচুড’, তাদের কমিটমেন্টের ক্ষেত্র। সেসবকেও ‘বুস্ট-আপ-এর ভাবনা ছিল তাদের। তবে বাংলাদেশ আদতে কতটুকু উন্নতি করতে পারলো, সেটার পরীক্ষা আরেকবার নিল পচেফস্ট্রুম।
     


    “সত্যি বলতে কী, আমরা যখন ব্যাটিং করছিলাম, তখন মাথাতেও ছিল না কতো ওভার মেইডেন গেল। যখন দেশে ফিরলাম, মানুষজন যখন কথা বলছে, যে তোরা ৩ ওভার মেইডেন দিলি, তখন উপলব্ধি করেছি, যে হ্যাঁ, ৩টা ওভার (টানা) মেইডেন গেছে।/আইসিসি ভায়া গেটি


    ইমনের উইকেটসহ টানা ২৩ বল ডট দিল বাংলাদেশ। রাকিবুলকে নিয়ে আকবর যেন টিকে থাকতে চাইছিলেন শুধু। আদতে কতো বল ডট গেল, সেসব মাথাতেই ছিল না আকবরদের, “ওদের মেইন বোলার ছিল রভি (বিষ্ণয়), আর কার্তিক (তিয়্যাগি)। তারা ভাল করছিল। যেহেতু তাদের ওভার শেষের দিকে ছিল, আমরা যদি তাদেরকে উইকেট না দিই, তাহলে আমাদের কাজ সহজ হবে পরে। রভি এবং কার্তিককে সি-অফ করা মূল লক্ষ্য ছিল। অন্যান্যদের বাজে বলের সুযোগ কাজে লাগানো ছিল উদ্দেশ্য। এটা মনে ছিল না যে কতো বল ডট গেল। 

    “সত্যি বলতে কী, আমরা যখন ব্যাটিং করছিলাম, তখন মাথাতেও ছিল না কতো ওভার মেইডেন গেল। যখন দেশে ফিরলাম, মানুষজন যখন কথা বলছে, যে তোরা ৩ ওভার মেইডেন দিলি, তখন উপলব্ধি করেছি, যে হ্যাঁ, ৩টা ওভার (টানা) মেইডেন গেছে। ব্যাটিংয়ের সময় মাথায় ছিল না।”

    ৩৪তম ওভারে শেষ করলেন বিষ্ণয়। কার্তিক ৩৭তম ওভারে। আকবররা এখন রান করার জন্য ‘মুক্ত’। ডিএলে ততক্ষণে ৭ রানে এগিয়ে। 

    বৃষ্টির পর, পরিবর্তিত লক্ষ্যে রাকিবুলের সিঙ্গেল নিয়ে যখন বাংলাদেশে প্রথমবার বিশ্বকাপ এলো, বোলার ছিলেন অথর্ভ আঙ্কোলেকার। আগের বছর এশিয়া কাপের ফাইনালে এই আঙ্কোলেকারকেই ফিরতি ক্যাচ দিয়েছিলেন আকবর। শেষ ২ উইকেট নিয়ে আরেকবার বাংলাদেশের ওপর ভারত-জুজু চাপিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। 

    এবার নয়। 

    “সব কিছু মিলিয়ে তাদেরকে আমরা হারানোর জায়গা তৈরি করতে পেরেছি। মানসিক দিক দিয়ে উন্নতি করার কারণে আমরা বের হয়ে আসতে পেরেছি আমার মনে হয়”, বিশ্বকাপ জয়ের প্রায় দেড় মাস পরও উপলব্ধি হান্নানের। 

    আর আকবর বলেন, ক্রিকেটের খুবই ‘বেসিক’-এর কথা, “সাইকোলজিক্যালি আমাদের প্রত্যেকটা ম্যাচের পর মিটিং হতো। কী ভুল করেছি, কী করলে আরও ভাল হতো। ম্যাচ খেলার সঙ্গে এই বিশ্লেষণগুলি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আমাদের সালাউদ্দিন স্যার ছিলেন অ্যানালিস্ট। তারও কৃতিত্ব আছে। খুঁটিনাটি ধরিয়ে দিয়েছেন। বোলারদের কথা বলি- পিচ ম্যাপ, কোথায় করলে আরও ভাল হতো (এসব দেখিয়ে দিয়েছেন)।”

    ফাইনালে মাঠের খেলাতেও অবশ্য স্পষ্ট ছিল এসব- বাংলাদেশ জানে তার কোন মিশনে নেমেছে। 

    ****

    “তার চিন্তাটা কন্ট্রোলড হইসে। যখন দেখসি মারে নাই, বুঝসি যে শালা থাকবে আজ। সে জানত সে ফিনিশ করে আসবে, ফিনিশ না করে আসবে না।”

    ইমরান রউফ বিকেএসপির সাবেক অধ্যক্ষ। আকবরদের ‘স্যার’। ইমরানের সঙ্গে আকবরদের সম্পর্কটা এমনই। 

    ইমরান নিজে পড়েছিলেন ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজে। 

    বড় বড় মাঠ, ক্যাম্পাস, হাউস- সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার আগেই এসবের সঙ্গে পরিচয় ছিল তাই তার। আর ভালবাসতেন ক্রিকেট, চাকরিতে ঢোকার আগে খেলেছেন নিয়মিত। 

    তবে বিকেএসপিতে যোগ দেওয়ার আগে আরও অনেকের মতো তারও অনুভূতি হয়েছিল- ডিমোশোনই হয়ে গেল কিনা, “লেখাপড়া কম জানে এমন একটা ভাব কাজ করতো হয়তো আমাদের। তবে যাওয়ার পর কোচদের সাথে ক্লোজ হয়ে গিয়েছিলাম। আগে অধ্যক্ষরা যেটা করতো, বেলা ১২টার পর তাদের আর খুঁজে পাওয়া যেতো না। তবে যেহেতু আমি মডেল স্কুলের ছেলে, মাঠে যাওয়ার অভ্যাস আছে, নিজে স্কুল-কলেজে খেলেছি। আবার আমার ফ্রেন্ড আছে সেখানে- মন্টু দত্ত, মতি ভাই।”

    আকবরকে তিনি দেখেছিলেন যোগ দেওয়ার ৪-৫ দিন পর। তখনও আকবর ঠিক প্রথম সারির ক্রিকেটার নন বিকেএসপির, তার মতে, “শামীমকে যে মেধা আল্লাহ দিয়েছে, আকবরকে বোধহয় তার অর্ধেক দিয়েছে। তবে আমাকে যেটা স্ট্রাইক করলো, তখন, ওকে দূর থেকে দেখলাম। আমি টেকনিক্যাল পার্ট খুব কম বুঝি, তবে সাইকোলজিক্যাল ব্যাপারটা বুঝি আমি বলে মনে হয়। আমি ছেলেটাকে দেখা শুরু করলাম মনযোগ দিয়ে। এই ছেলেটা অন্যদের চেয়ে একটু ‘পলিশড’- কথাবার্তায়, চলাফেরায়। ‘ম্যাচিউরড’ না, ‘ডিসেন্ট অ্যান্ড পলিশড’। 
     


    “সবকিছুরই মূল কারণ জেতা। যদি না জিতি, ১০০-১৫০ রান মেটার করবে না। জেতাটা গুরুত্বপূর্ণ।”/ ইলাস্ট্রেশন : প্রিয়ম শরীফ অপু


    “দেখলাম, বাচ্চাটা কী করে। সে ভাল। তবে শামীম বা (আমিনুল ইসলাম) বিপ্লবের মতো না। তখন মনে হলো, ছেলেটা প্রচন্ড চিন্তা করে ব্যাটিং নিয়ে। ওর সমস্যাগুলির একটি ছিল, ব্যাটিং বা কিপিং করছে হয়তো ম্যাচের প্রথম বলে, ও চিন্তা করছে, আল্লাহ দ্বিতীয় ইনিংসে তো পিচটা খারাপ হবে, আমি কীভাবে ব্যাটিং করব। সে খুব চিন্তা করত।”

    আকবরের চিন্তা-ভাবনা অবশ্য জটিল নয়, “চিন্তা করি যে, সার্বিকভাবে, আমি সবসময়ই কতো রান করলাম এটা দিয়ে নিজেকে মাপতে চাই না। সবসময় জিততে চাই। জেতার জন্য অবদান রাখতে চাই। সেখানে কতো রান সেটা ব্যাপার না। দল যাতে জেতে, সেটাতে অবদান রাখতে চাই।” 

    “চিন্তা এটা থেকেই- এতো রান লক্ষ্য দিতে চাই, এটাতে জিততে পারব কিনা। সবকিছুরই মূল কারণ জেতা। যদি না জিতি, ১০০-১৫০ রান মেটার করবে না। জেতাটা গুরুত্বপূর্ণ।” 

    আকবর যে সিরিজে অ-১৯ দলের বিপক্ষে পারফর্ম করে দলে এলেন, তখন ডিরেক্টরের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছিলেন ইমরান। ম্যাচ আয়োজন বা যারা খেলবে তাদের ছুটির ব্যবস্থা করতে তাই দেরি করেননি তিনি। 

    “চিন্তা করি যে, সার্বিকভাবে, আমি সবসময়ই কতো রান করলাম এটা দিয়ে নিজেকে মাপতে চাই না। সবসময় জিততে চাই। জেতার জন্য অবদান রাখতে চাই। সেখানে কতো রান সেটা ব্যাপার না। দল যাতে জেতে, সেটাতে অবদান রাখতে চাই।”

    ফাইনালে জয়ের পর ইমরানকে ভিডিও কল করেছিলেন আকবর, “আমাকে ফোন করল। বলে যে স্যার, ‘বাবা-মাকে ফোন করসি, বাসায় কথা বলে গোসল টোসল করি নাই, আপনার চেহারাটা দেখতে ইচ্ছা হইল’। এতদিন ভিডিও কল দেয় নাই, কাল দিয়েছে। 

    “আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম, কেমন লাগতেসে রে, ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়ন? ও বলে যে, স্যার আপনার কেমন লাগতেসে, আপনি ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়ন? আমি বললাম, আমার তো বিশ্বাস হইতেসে না, কারণ আমি তো এখনও দেখতেসি তুই বিকেএসপিতে মাথা নীচু করে হেঁটে যাইতেছিস আর আসতেছিস। তুই তো ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়ন টিমের ক্যাপ্টেন। ম্যান অফ দ্য ফাইনাল। বললাম, পারলে একটু হাসান স্যারের সাথে কথা বলিস। বললো যে স্যার, আমার হোয়াটস-অ্যাপে এখন যে নাম্বার দিয়ে লগ-ইন করা, সেটায় নাম্বার পাচ্ছি না, কল দিতে চাচ্ছি।

    “... আমি শুধু জিজ্ঞাসা করি, শামিমকে ওই ৪ ওভার দিলি না ক্যান। বা আজ, অমুক খেললো না ক্যান। এসব প্রশ্ন আসে তো। মৃত্যুঞ্জয় ফিরে এসেছে, দুর্দান্ত ক্রিকেটার সে। বলি যে, পাটোয়ারি নড়ে না ক্যান। ৬ ওভার বোলিং করে দাঁড়ায়া আছে, পাশ দিয়ে বল যায়। বলে যে স্যার, ‘থার্ড ডিগ্রি টিয়ার নিয়ে খেলতেসে। ও যে খেলতেসে ওটাই আমাদের জন্য বেশি’।”

    “বিকেএসপির গল্প কতো আছে। প্রায় ১০ বছর পর প্রিমিয়ার লিগে উঠলাম, আমাদের খেলা পড়তো ফতুল্লায়। খেলা শুরু হবে ৯.৩০টায়। আমি যেটা করতাম, ছুটির দিনে খেলা পড়তো, আমি ওদের সঙ্গে ঘুমাতাম। যাওয়ার সময়ও বাসে সব ছেলেরা ঘুমাচ্ছে, আমি আর হাসান ভাই, বাকি কোচরা, ডিয়ার ভাইরা তাকিয়ে জেগে আছি, কথা বলছি- বাচ্চারা কী করবে, ঘুমাচ্ছে।
     
    “আমার কাছে ছবি আছে একটা। বৃষ্টি হচ্ছে, ফতুল্লায় ফ্লোরের মধ্যে আকবররা ঘুমাচ্ছে। কাজের সূত্রে এই মুহুর্তে রাঙামাটিতে আমি। ঢাকায় ফিরে ছবিটা খুঁজব।”

    ****

    আকবররা ঘুমাচ্ছেন।

    ঢাকার আকাশ চিড়ে সূর্যটা উঠছে যেন। বড় ট্রাকের কালো ধোঁয়ার সঙ্গে সূর্যের কমলা রঙটা মিশে গিয়ে কেমন ধোঁয়াটে একটা চাঙর তৈরি করছে। মিরপুর-১ এর দিক থেকে নিরাপত্তা প্রোটোকলসহ একটা বাস টেকনিক্যালের মোড়ে এসে দাঁড়ালো। কদিন আগে অ-১৯ বিশ্বকাপজয়ী দলকে যে বাসে বরণ করে নিয়ে আসা হয়েছিল, সেই ‘ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়ন’ লেখা বাসটা। বিকেএসপিতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে আকবরসহ কয়েকজন আছেন বিশ্বকাপজয়ী দলের। তাদেরকেই নিয়ে যাচ্ছে এই বাস। হোটেল থেকে জিম্বাবুয়ে আসবে বলে তাদের জন্য অপেক্ষা। উঁকি দিলে দেখা যায়, আকবররা ঘুমাচ্ছেন।

    বিকেএসপির বাইরে ব্যানার ঝুলছে, বিশ্বকাপজয়ীদের অভিনন্দন জানিয়ে। খেলার বিরতিতে বা শেষে বিকেএসপির কোনও কর্মচারী বা কেউ এসে আকবরদের জড়িয়ে ধরেন। আকবর বা তাদের রুমমেট, সিনিয়র-জুনিয়ররা বাড়তি মনযোগ পাচ্ছেন। তাদেরই একজন মাহমুদুল, ক্রিকেট উইং-এরই। বিকেএসপির মাঠে এমন খেলা থাকলে তারা একটু ‘ছাড়’ পান, খেলা দেখতে আসার জন্য। 

    আকবর যে হাউসে থাকতেন, সেখানে নিয়ে গেলেন তিনি। নিজে গিয়ে ডেকে এনে দিলেন আকবরের রুমমেট, ‘এক ব্যাচ সিনিয়র’ আবু নাসেরকে। নাসের নিজেও প্রিমিয়ার লিগ খেলেছেন, আকবরের অধিনায়কত্বেই। তার মতে, তার এই ক্রিকেট ক্যারিয়ারের সেরা অধিনায়ক আকবর। 


    ওপাশে নাসের যখন কথা বলছেন, এক ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে লেগস্পিনার টিনোটেনডা মুতোমবদজির গুগলি পড়তে না পেরে বোল্ড হয়ে ফিরেছেন আকবর। তানজিদ হাসান তামিম অবশ্য করলেন ঝড়ো এক সেঞ্চুরি। 

    বিকেএসপির ওপর ততক্ষণে দুপুরের কড়া রোদ। দাঁড়িয়ে অপেক্ষায় মাসুদ হাসান, আকবরদের বিকেএসপির কোচ। মাসুদ অপেক্ষা করছেন এক টেলিভিশন সাংবাদিকের সঙ্গে, সেই টিভিতে লাইভে যাবেন বলে। বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা- এরপর কিছুক্ষণ আগে আরেক টিভিকে বলা কথাগুলিই যেন আরেকবার বলে সময় দিতে পারলেন তিনি। 

    “পার্থক্য তো আছেই”, আকবরকে নিয়ে বলেন তিনি, “যেমন- এখানে- মানে- আগে এজ গ্রুপে যে পর্যায়ে ছিল- এখন বদলেছে খেলার ধরনটা। অনেক দায়িত্ব এসেছে। অধিনায়কত্ব যেমন। যখনই ম্যাচ খেলিয়েছি- ব্যাটিংয়ের ব্যাপার- কখন কোনটা করা দরকার- বল অনেক কম- রান অনেক বেশি- ডাবল- ৪০-৪৫ বলে ৮০ করতে হবে- (এমন পরিস্থিতিতে কীভাবে খেলতে হবে) এটা তাকে শেখাতে হয়নি। স্কোরবোর্ড কী সিগন্যাল দিচ্ছে (সে বুঝতে পারতো)। সবচেয়ে বড় তার বুঝাপড়াটা- আমাকে দায়িত্ব নিতে হবে। যে নন-স্ট্রাইকে আছে- তার অ্যাডজাস্ট করা সময়ের ব্যাপার। 

    “বল নষ্ট না হয়- এই সেন্সটা কাজ করা- এই ক্যালকুলেশন- এটা স্পেশাল দিক- এজ গ্রুপে আসে না সাধারণত। হয়তো কোচ হিসেবে আমরা অ্যানালাইসিস করি, পড়াশুনা আছে বলে বুঝি- কিন্তু সে তো ওই লেভেলে না। এই চিন্তার ফল কিন্তু এই বিশ্বকাপ (জেতা)। এই মানুষটাকে কীভাবে নার্সিং করবে- সেটার দায়িত্ব বিসিবির। বল এখন বিসিবির কোর্টে।”

    খেলা শেষের পর জটলার মনযোগ অগ্রাহ্য করে আকবর কথা বলে যান তার হাসান স্যারের সঙ্গে। 


    ****


    মিরপুর একাডেমি মাঠে অনুশীলন শেষে বেড়িয়ে যাচ্ছেন গাজী গ্রুপের ক্রিকেটাররা। সনজিত সাহা দীপ টানা দ্বিতীয় মৌসুম খেলছেন ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে গাজীর হয়ে। আকবর আলি, শাহাদাত হোসেন দীপুরা সতীর্থ তার এবার। 

    একটু আগে লিগ শুরুর প্রথম দিন পারটেক্সকে মিরপুরের মূল মাঠে গুঁড়িয়ে দিয়েছে আবাহনী। লিটন দাস খেলা শেষ করে একাডেমির দিকে এগুচ্ছেন, হয়তো একটু আড্ডা মারবেন বলে। দীপের সঙ্গে গলা চড়িয়ে কথা হয় তার, “তোদের খেলা কবে? আমাদের পরেরটা ১৮ তারিখ, ফতুল্লায়।” 

    দীপ-লিটন সম্পর্কে বন্ধু। দিনাজপুরের এ প্রজন্মের দুই ক্রিকেট ‘তারকা’। 

    ২০১২-এর পর ২০১৪ সালেও অ-১৯ বিশ্বকাপ খেলেছিলেন লিটন। প্রথমবার ৫২.৪০ গড়ে ২৬২, পরেরবার ৫০ গড়ে ২০০ রান করেছিলেন লিটন। কদিন আগেই সিলেটে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ইনিংসের রেকর্ডটা তামিম ইকবালের কাছ থেকে নিয়ে নিয়েছেন। বয়সভিত্তিক ক্রিকেট থেকেই লিটনকে নিয়ে হয়তো দারুণ আশা ছিল কর্তা-ব্যক্তিদের, লিটন অবশেষে সেসব প্রত্যাশা পূরণের পথে আরেকটু এগিয়ে গেছেন। 

    দীপ একাডেমির ভেতরে যাবেন, লিটনের আবাহনী সতীর্থ নাঈম শেখের কাছ থেকে একটা ব্যাট আনতে। মেহেদি হাসান রানা, সাইফউদ্দিনের সঙ্গে একটু বসেন লিটন। সাইফউদ্দিন ও রানা ২০১৬ সালে অ-১৯ বিশ্বকাপ খেলেছিলেন দীপের সঙ্গেই। চোট কাটিয়ে জিম্বাবুয়ে সিরিজেই জাতীয় দলে ফিরেছেন সাইফ, রানা আলো ছড়িয়েছেন শেষ বিপিএলে। 

    বয়সভিত্তিক পর্যায়ের পরের ধাপের মূল চ্যালেঞ্জগুলি ব্য্যাখ্যা করেন দীপ, “এজ-লেভেলে যেটা হয়, আপনি একটা নির্দিষ্ট গাইডলাইনে থাকবেন। অনুশীলনের একটা শিডিউল থাকে। একটা ‘প্রপার গাইডলাইন’ থাকে। আমাদের বাংলাদেশে যে কাঠামো, সংস্কৃতি- বয়সভিত্তিক পর্যায় পার করার পর সবচেয়ে কঠিন সময়টা আসে। সব ক্রিকেটারই এটা বলেন, বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে কঠিন সময় হচ্ছে অনূর্ধ্ব-১৯ পার করার পর শীর্ষ পর্যায়ে যাওয়ার রাস্তাটা, যদি আপনি এইচপি বা এমন দলের আওতায় না থাকেন- তাহলে সবচেয়ে কঠিন। কারণ কই অনুশীলন করবেন? একটা একাডেমিতে সবাই পারে না। একটা পরিবেশে সবাই পারে না।

    “নাইনটিনের প্ল্যাটফর্মটা যে খুব শক্ত, তা কিন্তু নয়। এরপরের স্টেজটা আসল। আপনি কেমন ক্রিকেটার (সেটা বুঝা যায় এখানে)। চাপ নিতে পারছেন কিনা- ঘরোয়া লিগের, বিপিএলের। ‘হার্ড-ওয়ার্ক’ করা, নিজেকে প্রস্তুত করা গুরুত্বপূর্ণ। কলেজের পর বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার মতো ব্যাপারটা।” 

    বিসিবি অবশ্য বলেছে, অ-২১ পর্যায়ের একটা কাঠামোতে আকবরদের রাখা হবে। তবে আপাতত তাদের সামনে ‘ওপেন-ফিল্ড’। প্রিমিয়ার লিগের দলবদলের আগেও একাডেমিতে ছিলেন আকবর, এখন থাকছেন ক্লাবের ব্যবস্থায়। 

    “(ঘরোয়াতেও) আমাদের দেশের ড্রেসিংরুমের পরিবেশটা অবশ্য সহায়ক। এটা খুবই ভাল। আমাদের এই পরিবেশটা ভাল”, দীপ বলেন। 

    দীপ যখন ব্যাট আনতে একাডেমির ভেতরে গেছেন, ওপাশে একটা রাইড শেয়ারিংয়ের গাড়ি ডাকেন আকবর। অন্য সতীর্থদের সঙ্গে বেড়িয়ে যান। পরদিন গাজী গ্রুপের প্রথম ম্যাচ। আকবর ড্রেসিংরুম শেয়ার করবেন দীপদের সঙ্গে। 

    ****

    “দেখুন, আমার মনে হয় মাইন্ড সেট-আপটা গুরুত্বপূর্ণ। বাস্তবতা মেনে নিতে হবে”, যেন দীপের সুরেই কথা বলেন আকবর, “এতদিন আপনি এজ-লেভেলে খেলেছেন। এখন আপনাকে সিনিয়রদের সঙ্গে, বাংলাদেশের যারা শীর্ষ পর্যায়ের, তাদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করতে হবে। এখানে চ্যালেঞ্জটা আমার মনে হয় দ্বিগুণেরও বেশি হতে পারে। সবদিক থেকেই প্রস্তুত থাকতে হবে। ‘মেন্টাল, স্কিল এবং ফিজিক্যাল-’ তিনটা দিক থেকেই প্রস্তুত থাকতে হবে। আপনাকে সবকিছুর জন্যই প্রস্তুত থাকতে হবে। (তবে) মানসিক প্রস্তুতিটাই আমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়।”

    আকবরের অবশ্য লিস্ট ‘এ’-তে অভিষেক হয়েছে আগেই। ২০১৮-১৯ মৌসুমে বেশ লম্বা সময়ের পর প্রিমিয়ার লিগে ফিরেছিল বিকেএসপি, আকবর পরে নেতৃত্বও দিয়েছিলেন তার দলকে। শুরুতে আব্দুল কাইয়ুম অধিনায়ক ছিলেন, পরে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল আকবরকে। অ-১৯-এর এই দলটার মতো করেই। তবে সেবার বিকেএসপি রেলিগেশন লিগের পরও ছিল পয়েন্ট তালিকার তলানীতেই। 

    গাজী গ্রুপের প্রথম ম্যাচে দীপ খেললেন না। আকবরের অ-১৯ সতীর্থ শাহাদাত দীপুও না। আকবর খেললেন। 

    প্রাইম ব্যাংক ও বাংলাদেশের নতুন ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবাল একটা শট খেললেন, পেছন ঘুরে এরপর আকবরের সঙ্গে কথা বললেন কিছু একটা নিয়ে। তামিম একটু পরই আউট হয়ে গেলেন, নাসুম আহমেদকে স্লগ করতে গিয়ে আকাশে বল তুলে। আকবর উল্লাসে মাতলেন তখন ‘নতুন’ সতীর্থদের সঙ্গে। 

    রনি তালুকদারের ৭৯ রানের সঙ্গে নাহিদুল ইসলামের অপরাজিত ৫৩ ও নাঈম হাসানের অপরাজিত ৪৬ রানে ভর করে প্রাইম ব্যাংক তুললো ২৫১ রান। শুরুতে উইকেট হারালেও সৌম্য সরকারের সঙ্গে মুমিনুল হক ও মাহমুদউল্লাহর জুটিতে ঠিক পথেই ছিল গাজী গ্রুপ। এরপর নাহিদুলের এক ওভারে সৌম্য-ইয়াসির রাব্বি ফিরলে বদলে যায় খেলার চিত্রটা। ৩১তম ওভারে অলক কাপালির বলে মাহমুদউল্লাহ ক্যাচ দিয়ে ফেরেন। গাজী গ্রুপের জয়ের জন্য তখন প্রয়োজন ১১৮ বলে ১২২ রান, প্রয়োজনীয় রান-রেট ৬.২০। 


    ২৭ বলে ৩১ রান করা আকবর পারলেন না আরেকবার।/বিসিবি


    আকবর আগেই ড্রেসিংরুম থেকে বেরিয়ে ডাগ-আউটে এসে বসে ছিলেন। মাথার হেলমেটের সামনের দিকে একটা টেপ মারা, হয়তো বাংলাদেশের হেলমেটটা পরেই নেমেছিলেন। প্যাডজোড়াও তাই।

    দূর থেকে আর কিছু না হোক, বেশ হাই ব্যাকলিফটটা দেখলে ক্রিজে আকবরকে আলাদা করে চিনতে পারবেন আপনি। অলক কাপালির প্রথম বলটা লেগস্টাম্পের ওপর লো-ফুলটস, সুইপ করতে ভুল করলেন না। পরের ওভারে একই বোলারকে কাভার দিয়ে আরেকটি চার মারলেন। অ-১৯ সতীর্থ শরিফুল হাসানের শর্ট বলে যে হুক করলেন, তাতে খুব একটা নিয়ন্ত্রণ না থাকলেও চার পেলেন। তবে এরপর ফুললেংথের বলটায় বোলারস ব্যাকড্রাইভে মারা তার ছয়টা এসে পড়লো ঠিক সাইটস্ক্রিন বরাবর। উইকেটের পেছন থেকে আরেকবার চেয়ে থাকলেন এনামুল হক বিজয়, ২০১২ অ-১৯ বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ রান-সংগ্রাহক ছিলেন যিনি। 

    আকবর ৬ষ্ঠ উইকেটে আরিফুল হকের সঙ্গে তুললেন ৬ ওভারে ৩৫ রান, প্রয়োজনীয় রান-রেটের চেয়ে একটু কম হারে। আরিফুল ফিরলেন, মাহেদি হাসান নেমে ধুঁকছিলেন একটু। তবে প্রয়োজনীয় রানরেটটা ছয়ে নেমে এসেছে ততক্ষণে। 

    শরিফুলের বলটা মিড-উইকেটে খেলে দৌড় শুরু করেছিলেন আকবর, শুরুতে সাড়া পেয়েছিলেন মাহেদির কাছে। তবে মুহুর্তেই ছুটতে থাকা ইয়াসিরকে দেখে মত বদলালেন মাহেদি, শেষ মুহুর্তে উলটো ঘুরে দূরত্বটা কাভার করতে একটা ডাইভ দিলেন আকবর। ইয়াসিরের থ্রো ততক্ষণে ভেঙে দিয়েছে স্টাম্প। 

    ডাগ-আউট থেকে এসেছিলেন, এবার ক্রিজ থেকে ড্রেসিংরুমের দূরত্বটা আরেকবার আকবরের জন্য হয়ে গেল বেশ লম্বা। ২৭ বলে ৩১ রান করা আকবর পারলেন না আরেকবার। মাহেদি পরে চেষ্টা করেও জেতাতে পারলেন না ম্যাচটা গাজী গ্রুপকে। 

    হোয়াটস-অ্যাপে ম্যাচের আগেরদিন শুভকামনা জানানো মেসেজের জবাব এলো এই ম্যাচের পর- একটা ‘স্যাড’ ইমোজি। যখন কথা ফুরিয়ে যায়, তখন ইমোজি আসে। 

    **** 

    ‘আকবর_দ্যগ্রেট।’ 

    ইন্সটাগ্রামে এই আইডির নামকরণের ‘যথার্থতা’ জানতে চাইলে আরেকবার হাসেন আকবর। “ওটা অনেক আগে থেকে, ১ বছর থেকে আইডিটা চালাচ্ছি। এই নামটাই ছিল। তবে প্রথমে নামের পর জার্সি নম্বর দিয়ে খুলেছিলাম। পরে মনে হলো, নাহ, নাম্বারটা ভাল লাগছে না। চেঞ্জ করি।”

    এ প্রজন্মের টিন-এজারদের মতোই ভাবনা, তাই তো? 

    অবশ্য আকবরের পরের কথা আপনাকে ধন্দে ফেলে দিতে পারে তার টিন-এজ ‘সত্তা’ নিয়ে, “আমি ব্যক্তিগতভাবে খুব বেশি দূরের চিন্তা করি না। লক্ষ্য হয়তো আছে যে, নিজেকে এখানে বা এই জায়গায় দেখতে চাই। তবে সবসময় ওটা চিন্তা করলে কঠিন হয়ে যেতে পারে। আপনাকে বর্তমান নিয়ে ভাবতে হবে। আমি এভাবেই চিন্তা করি। সামনে প্রিমিয়ার লিগ আছে, সামনের দুইমাস প্রিমিয়ার লিগ নিয়ে চিন্তা করতে চাই। এরপর বিরতিতে চিন্তা করব যে এরপর কী করব। বিশ্বকাপ তো অতীত। এখন দুইটা ম্যাচ খারাপ করলে মানুষ আবার অতীতটাকে ভুলে যাবে। বর্তমানটাকেই গোণায় ধরবে। এখন প্রিমিয়ার লিগেই সম্পূর্ণ ফোকাস রাখতে চাই।”

    বিকেএসপিতে খেলার ইচ্ছা ছিল বলে রংপুরের বাড়ি ছেড়েছিলেন। ঢাকায় রিপোর্ট করে তখনকার ক্রিকেট সেকশনের নিয়ম মেনে গিয়েছিলেন দিনাজপুর। বিকেএসপি-বয়সভিত্তিক দল-অ-১৯-প্রিমিয়ার লিগ-এশিয়া কাপ-বিশ্বকাপ-প্রিমিয়ার লিগ- আকবর এগুচ্ছেন। 

    আকবর যেদিন এসব বলছিলেন, তখনও বিসিবির সামনে তার পোস্টারটা ঝুলছিল। প্রিমিয়ার লিগ শুরু হওয়ার পর সেটা সরে গেছে। দেশের ক্রিকেট অ-১৯ বিশ্বকাপ জয়ের মোহ কাটিয়ে উঠেছে আরও আগেই। আকবর সেটি জানেন। চিন্তাও করেন সেভাবেই। 

    আকবরকে তার হোয়াটস-অ্যাপের বায়োর বলা কথার মতো করে ‘চিন্তা করতে’ যাওয়ার ঝুঁকিটা নেবেন কিনা, সে ভার আপনার।