• লা লিগা
  • " />

     

    মেসি-রোনালদোর যত 'প্রথম'

    মেসি-রোনালদোর যত 'প্রথম'    

    কে সেরা? লিওনেল মেসি নাকি ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো? এই প্রশ্নের উত্তর হয়ত কখনও মিলবে না, ফুটবলে এই বিতর্কটা চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে রুপান্তর হয়েছে। কিছু মানদণ্ডে মেসির সামনে রোনালদোকে বামন মনে হবে তো কিছু ক্ষেত্রে আবার রোনালদোর পাল্লা ভারী মেসির চেয়ে। তবে ‘কে সেরা’ প্রশ্নের উত্তর না মিললেও করোনাভাইরাসের কারণে পাওয়া এই অবসর সময়টাতে একটা কাজ করা যায়, ফুটবল ভক্তদের গত দেড় দশক ধরে অফুরন্ত বিনোদন দিয়ে যাওয়া এই দুই মহারথীর শুরুর গল্পটা মনে করে দেখা যায় এই ফাঁকে। আর তাই তাদের ক্যারিয়ারের উল্লেখযোগ্য সব ‘প্রথম’ গুলো নিয়েই সাজানো হয়েছে এই লেখা।

     

    প্রথম ম্যাচ

    রোনালদো : স্পোর্টিং সিপি - ইন্টার মিলান, ১৪ আগস্ট ২০০২

    রোনালদোর ক্যারিয়ারের প্রথম ম্যাচটা নিয়ে বলার মতো তেমন কিছু নেই। চ্যাম্পিয়নস লিগের বাছাই পর্বের প্রথম লেগে ইন্টার মিলানের বিপক্ষে ৫৮ মিনিটে মাঠে নেমেছিলেন তিনি। গোলশূন্য ড্র হওয়া সেই ম্যাচে রোনালদো নিষ্প্রভ ছিলেন। দ্বিতীয় লেগে ১৭ বছর বয়সী রোনালদোকে ছাড়াই মাঠে নেমেছিল স্পোর্টিং সিপি, ইন্টারের কাছে সেই ম্যাচ ২-০ গোলে হেরে সেবার আর চ্যাম্পিয়নস লিগ খেলা হয়নি তাদের।

    মেসি : বার্সেলোনা - এস্পানিওল, ১৬ অক্টোবর ২০০৪

    রোনালদোর মতো মেসির প্রথম ম্যাচটাও নীরবেই কেটেছে। নগর প্রতিদ্বন্দ্বী এস্পানিওলের বিপক্ষে বার্সার ১-০ গোলে লিগ ম্যাচ জয়ের দিনে মেসি মোটে ৮ মিনিট খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন। সেদিন ৮২ মিনিটে ডেকোর বদলি হিসেবে নেমেছিলেন ১৭ বছরের তরুণ মেসি।

    প্রথম গোল

    রোনালদো : স্পোর্টিং সিপি - মোরেইরেনস, ৭ অক্টোবর ২০০২


    কী দারুণ গোল! ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে রোনালদো সেদিন প্রথম নিজের ঝলক দেখিয়েছিলেন। মাঠের মাঝ বৃত্তের কিছুটা সামনে থেকে বল পেয়ে সামনের দিকে এগুচ্ছিলেন রোনালদো। চোখের পলকেই দুটি চ্যালেঞ্জ পেরিয়ে গেলেন, বক্সের সামনে আরেকটি চ্যালেঞ্জকে নিখুঁত স্টেপ-ওভার করে বক্সের ভেতরে ঢুঁকে গিয়েছিলেন তিনি। তারপর আর ঠেকায় কে! গোলরক্ষককে মাটিতে বসিয়ে তার ডান পাশ দিয়ে আলতো ফিনিশিংয়ে নিজের লিগ অভিষেকেই ক্যারিয়ারের প্রথম গোল পেয়েছিলেন তখনকার ‘সিআর ২৮’। স্পোর্টিং সেদিন ৩-০ গোলের জয় পেয়েছিল আর রোনালদোও পরে সেই ম্যাচে তুলে নিয়েছিলেন আরও একটি গোল।

     

    মেসি : বার্সেলোনা - আলবাসেতে, ১ মে ২০০৫


    মেসির অভিষেক গোলটা তো রীতিমত ঐতিহাসিক। সে সময়ের বিশ্বসেরা রোনালদিনহো লব করে মেসির দিকে বাড়িয়েছিলেন বল, সেখান থেকে বল পেয়ে দুই অসহায় আলবাসেতে ডিফেন্ডারকে মাঝে রেখে মেসি ওয়ান-টু খেলেছিলেন রোনালদিনহোর সঙ্গে। এরপর পায়ে বল নিয়ে এগিয়ে আসতে থাকা গোলকিপারের দিকে কিছুটা এগিয়ে গিয়ে তার উপর দিয়েই বল পাঠিয়ে দেন জালে। উত্তরসূরিকে কাঁধে নিয়ে রোনালদিনহো সেদিন প্রায় মিনি ল্যাপ অফ অনার দিয়েছিলেন সেদিন, ন্যু ক্যাম্পে সেদিন মেসির রাজ্যাভিষেক হয়েছিল।

     

    প্রথম লাল কার্ড

    রোনালদো : অ্যাস্টন ভিলা - ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, ১৫ মে ২০০৪


    রোনালদোর ক্যারিয়ারের প্রথম লাল কার্ডের ঘটনাটিকে এক কথায় দুর্ভাগ্যজনক বলা যায়। ভিলার সঙ্গে ম্যাচের ৩৮ মিনিটে ডাইভ দেওয়ার অভিযোগে প্রথম হলুদ কার্ড দেখেন তিনি। আর অফসাইডের বাঁশি বাঁজার পরও গোলমুখে শট নিয়ে যখন দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখেন রোনালদো, তার দল ইউনাইটেড তখন ম্যাচে ২-০ গোলে এগিয়ে। এরপর ক্যারিয়ারে আরও ১০ বার লাল কার্ড দেখেছেন 'সিআর সেভেন', সর্বশেষ ২০১৮ সালে ভ্যালেন্সিয়ার বিপক্ষে চ্যাম্পিয়নস লিগে লাল কার্ড দেখেছিলেন রোনালদো।

    মেসি : হাঙ্গেরি - আর্জেন্টিনা ১৭ আগস্ট ২০০৫


    মেসির প্রথম লাল কার্ড দেখাটা অবশ্য আরও মর্মান্তিক। তাও আবার আন্তজার্তিক ম্যাচে অভিষেকের দিনে। হাঙ্গেরির বিপক্ষে ম্যাচের ৬৪ মিনিটে বদলি হিসেবে নেমেছিলেন তিনি, বল পায়ে মাঠের ডান প্রান্ত দিয়ে এগুচ্ছিলেন বক্সের দিকে, ড্রিবলিং করতে গিয়ে প্রতিপক্ষ খেলোয়াড় ভিলমোস ভাঙ্কজাকের সঙ্গে হালকা ধাক্কাধাক্কি হচ্ছিল। এর মধ্যেই রেফারির বাঁশি। মেসি ভেবেছিলেন হয়ত ভাঙ্কজাক তার শার্ট ধরে টান দেওয়ায় ফ্রি-কিক পেতে যাচ্ছেন তিনি। কিন্তু কিসের কী! রেফারি উল্টো ভাঙ্কজাককে কনুই দিয়ে আঘাত করার কারণ দেখিয়ে মেসিকে সরাসরি লাল কার্ড দেন। আন্তর্জাতিক ফুটবলে আর্জেন্টিনার হয়ে সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতা মেসির শুরুটা এমন বেখাপ্পাই হয়েছিল। ক্যারিয়ারে এরপর আর মোটে একটি লাল কার্ড দেখেছেন মেসি, সেটাও আর্জেন্টিনার হয়ে খেলার সময়েই, চিলির বিপক্ষে কোপা আমেরিকার ম্যাচ বিতর্কিত এক লাল কার্ড দেখে মাঠ ছেড়েছিলেন তিনি। 

     

    প্রথম হ্যাটট্রিক

    রোনালদো : ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড - নিউক্যাসল ইউনাইটেড, ১২ জানুয়ারি ২০০৮



    ফুটবল ইতিহাসে রোনালদোর চেয়ে বেশি হ্যাটট্রিক কারও নেই। তবে হ্যাটট্রিকের রাজার প্রথম হ্যাটট্রিকের অপেক্ষাটা সমসাময়িকদের চেয়ে অপেক্ষাকৃত বেশিই ছিল। ২৩ বছর বয়সে রেড ডেভিলদের হয়ে নিউক্যাসলের বিপক্ষে রোনালদো পেয়েছিলেন প্রথম ক্যারিয়ার হ্যাটট্রিক। ম্যাচে প্রথম গোলটি এসেছিল চিকি এক ফ্রি-কিক থেকে, বক্সের বাইরে থেকে সামনের মানব দেওয়ালকে বোকা বানিয়ে লো শটে। দ্বিতীয় গোলটি অবশ্য পুরোদস্তর দলগত গোল যাকে বলে আরকি! মধ্যমাঠ থেকে মাইকেল ক্যারিকের পিং পাস ধরে কার্লোস তেভেজের দিকে বল বাড়ান ওয়েইন রুনি। তেভেজ বিদ্যুৎগতিতে গোলের দিকে দৌড়ে যেতে থাকা রোনালদোকে সরবরাহ করেন নিখুঁত বল, সেখান থেকে ফার্স্ট টাচেই বল জালে জড়ান পর্তুগিজ মহাতারকা। আর হ্যাটট্রিক গোলটি এসেছিল ম্যাচের ৮৮ মিনিটে, বক্সের ভেতর হাফ-ব্লকড শট থেকে বল পেয়েছিলেন রোনালদো। একজন ডিফেন্ডারকে বোকা বানিয়ে নিখুঁত শটে বল জালে জড়াতে আর বেগ পেতে হয়নি তার।

    মেসি : বার্সেলোনা - রিয়াল মাদ্রিদ, ১০ মার্চ ২০০৭


    মেসির প্রথম হ্যাটট্রিকের গল্পটা রাজসিক। এমন কিছু গল্পেই সভব! ন্যু ক্যাম্পে বার্সেলোনার হয়ে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে এল ক্লাসিকোতে প্রথম হ্যাটট্রিক পেয়েছিলেন তিনি। ১৯ বছর বয়সী তরুণ মেসি সেদিন মাদ্রিদিস্তাদের স্তব্ধ করে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, তাকে নিয়ে হৈচৈ নিরর্থক নয় মোটেই। ম্যাচে নিজের প্রথম গোলটি পেতে খুব একটা কষ্ট করতে হয়নি মেসিকে, স্যামুয়েল ইতোর বল যখন খুঁজে নেয় তাকে, সামনে তখন অনেকটা ফাঁকা জায়গা। প্রথম টাচে বল নিয়ন্ত্রণে নেন মেসি, দ্বিতীয় টাচে ইকার ক্যাসিয়াসকে পরাস্ত করে বল জালে পাঠিয়ে দেন। মেসির দ্বিতীয় গোলটার শুরু হয়েছিল রোনালদিনহোর অবিশ্বাস্য এক ড্রিবলিংগুলোর একটি থেকে। দারুণ ড্রিবলের মাধ্যমে মাদ্রিদ বক্সে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি করে গোলমুখে শট নেন রোনালদিনহো, তবে সেই শট ফেরাতে গিয়ে বল মেসির পায়ে তুলে দেন গোলরক্ষক। এরপর জাল কাঁপাতে মেসিকে আর আমন্ত্রণ জানাতে হয় নাকি! হ্যাটট্রিক গোলটি ছিল একেবারে চিরাচরিত ‘মেসি গোল’। রোনালদিনহোর পাস যখন নিয়ন্ত্রণে আসে মেসির, তাকে ঘিরে আছে তখন তিনজন সাদা জার্সিধারী। কিন্তু মেসি তাদের ধার ধারলেন মোটেও, একের পর এক চ্যালেঞ্জ নস্যি করে সেদিন ক্যারিয়ারের প্রথম হ্যাটট্রিক তুলে নিয়েছিলেন মেসি।

    মেসি বনাম রোনালদোর প্রথম ম্যাচ

    বার্সেলোনা - ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ২৩ এপ্রিল ২০০৮

    এই দুই মহারথীর প্রথম দেখাটা হয়েছিল চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালের প্রথম লেগে। ম্যাচের আগেই দুজনের লড়াই জমে উঠেছিল মাঠের বাইরে। ব্যালন ডি অরের দৌড়ে রোনালদো তখন তৃতীয় আর মেসি দ্বিতীয় (যদিও শেষ পর্যন্ত কাকা সেবার সেরার পুরস্কার ঘরে তুলেছিলেন)। দুই লেগের টাইয়ে তেমন একটা সুবিধা করতে পারেননি মেসি-রোনালদোর কেউ। প্রথম লেগে ন্যু ক্যাম্পে পেনাল্টিও মিস করেছিলেন রোনালদো। যদিও শেষতক দ্বিতীয় লেগে পল স্কোলসের একমাত্র গোলে জয়ে পেয়ে ফাইনালে পৌঁছে গিয়েছিল রেড ডেভিলরা। মেসি-রোনালদো সেই দুই লেগের পর আরও ৩৩ টি ম্যাচে একে অপরের বিপক্ষে খেলেছেন এখন পর্যন্ত।