• অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ ২০১৬
  • " />

     

    ২২ গজের সেলুলয়েড । 'হাসান এন্ড হাসান কোং'

    ২২ গজের সেলুলয়েড । 'হাসান এন্ড হাসান কোং'    

    ছবির পরে ছবি চলে নাকি তৈরী হয় সিনেমা। ক্রিকেট ম্যাচও তো তাই। টুকরো টুকরো অসংখ্য ছবি জন্ম নেয় যেখানে। ২২ গজ আর সবুজ ওই উদ্যানের ছবিগুলোকে যদি ধরা যেত সেলুলয়েডে! 


     

    এ শুধু ‘বিভ্রান্তি’র দিন!

     

    ধামালার শটটা মিড-অফে ঝাঁপিয়ে পড়ে আটকালেন শান্ত। রিজাল ওপাশে দাঁড়িয়েই ছিলেন, ধামালা বোধহয় এতটা ভাল ফিল্ডিং আশা করেন নি! পড়িমড়ি করে পেছন ফিরলেন, পৌঁছাতে পারলেন না।

    এরপর রিজাল কাট করলেন, ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে আবার ঝাঁপিয়ে পড়ে আটকালেন শান্ত! এবার রাজবিত ফিরিয়ে দিলেন রিজালকে। শান্তর থ্রোটা আগেই গ্লাভসবন্দী করার আগেই উইকেট ভেঙ্গে দিয়েছিলেন জাকির, ভুল বুঝতে পেরে স্ট্যাম্প উপড়ে ফেললেন, এতকিছুর মাঝেও ক্রিজে ফিরতে পারলেন না রিজাল।

    মিরাজের বলটা মিডউইকেটে খেলেছিলেন আইরি, সেখানে ছিলেন পিনাক। আইরি আর ভুরটাল দুজনই দৌড়ালেন, মাঝে এসে আবার দুজন দুদিকে ফিরে দৌড় দিলেন! পিনাকের থ্রো ধরে স্ট্যাম্প ভেঙ্গে দিলেন মিরাজ, বিভ্রান্তির কবলে এবার ভুরটাল!

    ইনিংসের শেষ বলটা সোজা খেলেছিলেন কান্ডেল, সাইফুদ্দীনের হাতে লেগে গড়িয়ে গিয়ে বল লাগলো নন-স্ট্রাইক প্রান্তের স্ট্যাম্পে। না, নন-স্ট্রাইক প্রান্তের প্রেম টামাং আউট হননি, রান নিতে পড়িমড়ি করে ছোটা টামাং-ই আউট হয়েছেন ওপ্রান্তে গিয়ে!

     

    আজ দুজনার দুটি পথ...

     

    নেপালীদের রান-আউটকে 'বিভ্রান্তিকর' বললে, বাংলাদেশীদের রান-আউটকে বলতে হবে আরও বেশী কিছু। অথবা করতে হবে 'কাব্য'! 

     

     

    কান্ডেলের বলটা কাভারে খেলেছিলেন জয়রাজ। এক রান। ফিল্ডার মিস করলেন। দুই রানের জন্য শুরুতে দুজনই ছুটলেন, জয়রাজের সঙ্গে পিনাকও। তবে আরেক ফিল্ডারের কাছে বল যাওয়া দেখেই কিনা আটকে গেলেন পিনাক, অবশ্য দৌড় থামালেন না জয়রাজ। থামলেন পিনাকের প্রান্তে গিয়েই! দুজনের পথ মিললো একই প্রান্তে! ফিল্ডারকেও বিভ্রান্ত দেখালো খানিকটা, কোন প্রান্তে থ্রো করবেন, বোধহয় সেটিই বুঝে উঠতে পারেননি! বোলিং-প্রান্তে থ্রো করলেন, কান্ডেল স্ট্যাম্প ভাঙ্গলেন। আসলে কে আউট তা বুঝতে অন-ফিল্ড আম্পায়ার দ্বারস্থ হলেন টেলিভিশন আম্পায়ারের। রিপ্লে দেখালো, নন-স্ট্রাইক থেকে ছুটে যাওয়া জয়রাজই পিনাকের আগে ওপ্রান্তের ক্রিজে ঢুকেছেন!

    দুজনের পথ একদিকেই মিলেছিল, তবে টেলিভিশন আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের পর পিনাকের পথটাই ড্রেসিংরুমমুখী হলো শুধু!  

     

    ‘সব’ হারিয়েও ছুটে চলি!

     

    প্রথমে মাথা থেকে ক্যাপটা খুলে পড়লো। ক্রিজের মাঝপথে পা থেকে জুতাও খুলে গেল, একপাটি! তবে দৌড় থামালেন না সুনীল ধামালা! রিজালের ডাকে ঠিকই দুই রান নিলেন। মিরাজের বলটা ফাইন লেগে খেলেছিলেন রিজাল, প্রথম রান নেওয়ার সময় ধামালার ‘জিনিসপত্র’ ঠিকঠাকই ছিল। তবে দ্বিতীয় রান নিতে গিয়েই ঘটলো বিপত্তিটা!

    এ যাত্রায় জুতা ছাড়া দৌড়িয়ে রান নিতে পারলেও, পরে রান-আউটই হয়েছেন ধামালা। সেবার পায়ে জুতা ছিল, মাথায় হেলমেট ছিল, ক্রিজে ফিরে ধাক্কাও খেলেন উইকেটকিপার জাকিরের সঙ্গে! তবে শেষরক্ষাটা হলো না!

     

    'নিয়ন্ত্রিত' নেপাল, 'অনিয়ন্ত্রিত' পরাজয়!

     

    ম্যাচের প্রথম ওভারের চতুর্থ বলটাই মেহেদী হাসান রানা ওয়াইড করেছিলেন। এক শান্ত ছাড়া বাংলাদেশের সব বোলারই ওয়াইড দিয়েছিলেন, মিরাজের ৩টি সহ মোট ওয়াইড হয়েছিল ৮টি। নেপালী বোলাররা ৩৮ ওভার পর্যন্ত ‘ওয়াইড-বিহীন’ ছিলেন, ৩৯তম ওভারে এসে আইরি দিয়েছিলেন প্রথম ওয়াইড। পরে আরেকটি ওয়াইড করেছেন, নেপালের ইনিংসেও ওয়াইড ওই দুইটিই!

    তবে এত ‘নিয়ন্ত্রিত’ বোলিং করেও লাভ হলো না নেপালের!  

     

    অবশেষে জাকির!

     

    দীপেন্দ্র আইরি লেগস্ট্যাম্পের বাইরে বল করেন, জাকির কখনোও ফ্লিক করতে চান, কখনো খেলতে চান জোরের ওপর। ৩৮তম ওভারের শেষ দুই বল খেলতে গিয়েছিলেন এভাবেই, দুই বলের একটিতে নিতে পেরেছিলেন এক রান। তবে ৪১তম ওভারের ৪র্থ বলে ভারসাম্যই হারিয়ে ফেললেন কিছুটা, ওই লেগস্ট্যাম্পের বাইরে আইরির বল খেলতে গিয়েই! সময়মতো ক্রিজে ঢুকতে পেরেছিলেন বলে রক্ষা পেলেন সেবার। ৪৩তম ওভারের ৪র্থ বলটাও লেগস্ট্যাম্পের বাইরেই করলেন আইরি, তবে এবার একটু বেশীই বাইরে। জাকির সুইপ করতে গিয়েছিলেন, বটম এজড হয়ে বল গেল বাউন্ডারিতে। লেগ-স্ট্যাম্পের বাইরের বলের লড়াইটায় জিতলেন জাকিরই!

     

    হাসান এন্ড হাসান কোং

     

    জাকির হাসান যখন ক্রিজে আসেন, বাংলাদেশের জিততে দরকার আরও ১৩৭ রান। মেহেদী হাসান মিরাজ যখন ক্রিজে আসেন, তখন দরকার ১১৪ রান। দুই মিরাজ মিলেই ওই ১১৪ রানেরও বেশী তুললেন, বাংলাদেশকে জয়ের বন্দরে পৌঁছিয়েই ফিরলেন!

    সেট হতে সময় নিয়েছেন দুজনই, তবে একসময় জমে গেলেন, শট খেললেন চোখ-ধাঁধানো সব! প্রয়োজনীয় রান রেট ছয়ের কোঠা পেরিয়ে গেল, দমলেন না তাতেও। ৪২ বলে তখন দরকার ৪৯ রান, লেগস্পিনার ল্যামিচানেকে এক্সট্রা কাভার দিয়ে চার মারলেন মিরাজ। সে ওভারে দুজন মিলে নিলেন ১২, বল আর রানের ব্যবধান নেমে এলো ১-এ। এক্সট্রা কাভারে এরকম ক্ল্যাসিক শট খেলেছেন জাকিরও, ফিফটিও করেছেন চার মেরেই! দুজন মিলে গড়েছেন ৫ম উইকেটে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের জুটি, এ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ জুটি।

    শেষটা করেছেন জাকির, ছয় মেরে। তবে নেপাল আসলে শেষ হয়েছে দুই ‘হাসান’- জাকির ও মিরাজের ব্যাটিংয়েই!