• ফুটবল, অন্যান্য
  • " />

     

    সাড়া জাগিয়েও সফল হতে পারেনি যে ১০ দলবদল...

    সাড়া জাগিয়েও সফল হতে পারেনি যে ১০ দলবদল...    

    প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের দলে টানতে কাড়ি কাড়ি অর্থ ব্যয় করে ক্লাবগুলো। খেলোয়াড়দের স্কাউটিং থেকে শুরু করে বিভিন্ন মাধ্যমে বাজিয়ে দেখার পরই তবে একটি দলবদল চূড়ান্ত হয়। কিন্তু এতো কিছুর পরও ইতিহাস এমন কিছু দলবদলের সাক্ষী হয়েছে, যা খেলোয়াড় বা ক্লাব কারও জন্যই লাভজনক হয়নি, বরং প্রতিটি গল্পই শেষ হয়েছে করুণ রাগে।

     

    কেভিন ডি ব্রুইন - চেলসি

    ২০১২-১৪ সাল পর্যন্ত সময়ে মরিনহোর চেলসিতে খেলেছিলেন সময়ের অন্যতম সেরা মিডফিল্ডার কেভিন ডি ব্রুইন। কিন্তু চেলসির জার্সিতে দুই মৌসুম মিলিয়ে মোটে নয়বার মাঠে নেমেছিলেন তিনি, আহামরি কোনও পারফরম্যান্স দেখাতে পারেননি। খেলার ধরনের দিক দিয়ে মরিনহোর প্রিয় খেলোয়াড় হওয়ার সবকিছুই ছিল তার মাঝে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত চেলসিতে আর থিতু হতে পারেননি।

     


     তবে চেলসিতে থিতু হতে না পারলেও পরে জার্মানির ভলফসবার্গ ঘুরে সিটিজেনদের ডেরায় এসে ডি ব্রুইন খুঁজে পেয়েছেন নিজের ফর্ম, এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে।

     

    আনহেল ডি মারিয়া - ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড

    স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের দায়িত্ব ছাড়ার পর প্রথম মৌসুমে বড় কোনো সাইনিং করাতে পারেননি ডেভিড ময়েস। তিনি চলে যাওয়ার পর রিয়াল মাদ্রিদ থেকে আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড ডি মারিয়াকে প্রায় ৬০ মিলিয়ন পাউন্ড দিয়ে আনে ইউনাইটেড। তবে রিয়াল মাদ্রিদের ফর্ম ইউনাইটেডে আনতে পারেননি ডি মারিয়া। চোট, ফর্ম, পরবর্তী ম্যানেজার লুই ফন হালের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতিতে ইউনাইটেডে তার দিন ক্ষণিয়ে আসে দ্রুতই।

     


    তবে এসবের চেয়েও তার ইংল্যান্ড ছেড়ে ফ্রান্সে পাড়ি জমানোর পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে, ম্যানচেস্টারে তার বাসায় ডাকাতির চেষ্টা। সেই ঘটনার পরপরই ডি মারিয়া এবং তার পরিবার ইংল্যান্ড ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের। শেষ পর্যন্ত প্রায় ১৫ মিলিয়ন পাউন্ড ক্ষতিতে ডি মারিয়াকে পিএসজির কাছে বিক্রি করে দেয় ম্যান ইউনাইটেড।

     

    পল গ্যাসকয়েন - লাৎসিও

    এক লাইনে ইংলিশ মিডফিল্ডার পল গ্যাসকয়েনের ক্যারিয়ারের সারাংশ করা যায় ‘আরেকটু ভালো হতে পারত’ লাইনটি দিয়ে। সাড়ে ৫ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে টটেনহাম থেকে ইতালিয়ান ক্লাব লাৎসিওতে কাটানো তিনটি মৌসুমও তেমনি আরেকটু স্মরণীয় হতে পারত। তবে লাৎসিওতে পাড়ি জমানোর আগেই চোটাঘাতে জর্জরিত হয়ে পড়েছিলেন তিনি। এমনকি ১৯৯১ সালের এফএ কাপ ফাইনালে চোটে পড়ার পর তার লাৎসিও যাওয়াও এক বছর পিছিয়ে গিয়েছিল। তবে পরের বছর লাৎসিওতে গেলেও চোট সমস্যা আর তার পিছু ছাড়েনি।


    কঠিন তিনটি মৌসুম কাটিয়ে ১৯৯৫ সালে স্কটিশ ক্লাব রেঞ্জার্সে ফিরে এসেছিলেন গ্যাসকয়েন। ইংলিশ ফুটবলের দুর্দিনে তরুণ একজন ব্রিটিশ মিডফিল্ডারের বিদেশী লিগে খেলার বিষয়টিতে অনেকে আশান্বিত হয়েছিলেন। তবে ‘গাজ্জা’র লাৎসিও ক্যারিয়ারে সেই আশা গুঁড়েবালি হয়েছে।

     

    আন্দ্রেই শেভচেঙ্কো - চেলসি

    ২০০৬ সালে যখন আন্দ্রেই শেভচেঙ্কোর চেলসিতে আসাটা অন্য ক্লাবগুলোর ছিল বড় একটা ধাক্কা। গত দুই প্রিমিয়ার লিগ জেতা দলেই কেন বিশ্বের সেরা স্ট্রাইকারকে পাবে, তাও আবার একেবারে পানির দামে মোটে ৩০ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে?  

     


    তবে সিরি আ-তে মিলানের হয়ে ২০৮ ম্যাচে ১২৭ গোল করা শেভচেঙ্কোর বেহাল ফর্মে হালে পানি পেয়েছিলেন তারা। চেলসির হয়ে ৪৮ ম্যাচে মোটে ৯ গোল করা শেভচেঙ্কো ইংল্যান্ডে পায়ের তলে মাটি খুঁজে পাননি। স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে ব্যর্থ সময় কাটিয়ে শেষে নিজ দেশ ইউক্রেনে ফিরে গিয়েছিলেন তিনি।

     

    জোনাথান উডগেট - রিয়াল মাদ্রিদ

    ২০০৪ সালের আগস্টে ১৩.৪ মিলিয়ন পাউন্ডে নিউক্যাসল ইউনাইটেড থেকে রিয়াল মাদ্রিদে গিয়েছিলেন জোনাথান উডগেট। তবে কিনা তিনি এতটাই চোটজর্জর ছিলেন যে, মাদ্রিদে গমনের প্রায় এক বছর পর ক্লাবের হয়ে অভিষেক ম্যাচ খেলেছিলেন। আর তাও আবার ছিল এক দুঃস্বপ্নময় অভিষেক, মাদ্রিদিস্তাদের হয়ে নিজের প্রথম ম্যাচেই আত্মঘাতী গোল করেছিলেন, লাল কার্ডও দেখেছিলেন উডগেট। সময়ের অন্যতম সেরা ডিফেন্ডার হওয়ার মতো প্রতিভা থাকা সত্ত্বেও চোটাঘাতে ক্যারিয়ারে অর্জনের খাতা খুব বেশি বড় করতে পারেননি তিনি।


    গাইজকা মেনডিয়েটা - লাৎসিও

    ভ্যালেন্সিয়া থেকে প্রায় ৪৭.৭ মিলিয়ন পাউন্ড খরচায় মেনডিয়েটাকে দলে টেনেছিল লাৎসিও। ভ্যালেন্সিয়ার সেরা সময়ে দল ছেড়ে লাৎসিও গেলেও প্রতিভাবান মিডফিল্ডার মেনডিয়েটাকে নিয়ে সবার আশা ছিল, সিরি আ-তেও নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর রাখবেন তিনি। মধ্যমাঠ নিয়ন্ত্রন করে দলের খেলা গড়ে দিতে দারুণ ভূমিকা রাখায় পারদর্শী ছিলেন তিনি। 


    কিন্তু ইতালিয়ান ফুটবলের সঙ্গে একেবারেই মানিয়ে নিতে পারেননি তিনি। এর পেছনে অনেকে সে সময় লাৎসিওর দলের ভেতরে অনেক পরিবর্তনকে দায়ী করেছেন। আবার কেউ আবার লাৎসিওর আর্থিক অবস্থার টানাপড়েনকে দায়ী করেছেন। কারণ আর্থিক সমস্যা থাকায় ক্লাবের হয়ে মাত্র ৩১ ম্যাচ খেলার পরই তাকে ধারে বার্সেলোনা এবং মিডলসবোরোতে পাঠিয়ে দেয় লাৎসিও। শেষ পর্যন্ত স্থায়ীভাবে মিডলসবোরোতে থিতু হয়েছিলেন তিনি।

     

    ফার্নান্দো রেডনডো - মিলান

    আর্জেন্টাইন মিডফিল্ডার রেডনডো কখনোই রিয়াল মাদ্রিদ ছাড়তে চাননি। মাদ্রিদের হয়ে একেবারে বাজে খেলছিলেন তাও নয়, বেশ ভালোই খেলছিলেন। তবে কিনা অনেক তারার ভিড়ে তার দিকে আলো কমই পড়েছে। লুইস ফিগোসহ আরও বেশ কয়েকজন নামকরা খেলোয়াড়কে কিনতে তখন অর্থ প্রয়োজন ছিল ফ্লোরেন্তিনো পেরেজের। আর তাই অনিচ্ছা সত্ত্বেও মাদ্রিদ ছাড়তে হয়েছিল তাকে। তবে এরপরও ইতালিতে নতুন অধ্যায় শুরু করার জন্য মঞ্চ তৈরি ছিল তার জন্য।


    কিন্তু ভাগ্য সহায় হয়নি, মিলানে যাওয়ার পরপরই হঠাৎ অনুশীলনে মারাত্মক হাঁটুর চোটে পড়েন তিনি। সেই চোটের কারণে দুই বছর মাঠে বাইরে থাকতে হয়েছিল তাকে। শেষ পর্যন্ত ২০০৪ সালে সেই চোট নিয়েই ফুটবলকে বিদায় জানিয়েছিলেন রেডনডো।

     

    রবি কিন - লিভারপুল

    ২০ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে টটেনহাম থেকে অভিজ্ঞ এবং ফর্মে থাকা স্ট্রাইকার রবি কিনকে অ্যানফিল্ডে এনেছিলেন তখনকার লিভারপুল ম্যানেজার রাফায়েল বেনিতেজ। কিন্তু লিভারপুলে আসার পর থেকেই আর ছন্দ খুঁজে পাননি তিনি, মাত্র মাস ছয়েক পরেই আবারও পুরনো ক্লাব টটেনহামের কাছেই তাকে বিক্রি করে দেয় লিভারপুল।


    তার ফর্মের অবনতির কারণ হিসেবে পরবর্তীকালে ম্যানেজার বেনিতেজকে দায়ী করেছিলেন লিভারপুল কিংবদন্তি স্টিভেন জেরার্ড। ক্লাবে আসার পর প্রথম দিন থেকে অভিজ্ঞ একজন স্ট্রাইকারের খেলার ধরন বদলানোর চেষ্টা করতে যাওয়াতেই হিতে-বিপরীত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছিলেন তিনি।

     

    হুয়ান সেবাস্তিয়ান ভেরন - ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড

    হুয়ান সেবাস্তিয়ান ভেরন মধ্যমাঠের একজন দারুণ খেলোয়াড় ছিলেন নিশ্চিতভাবে, তবে স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের খেলার ধরনের সঙ্গে মানানসই ছিলেন না মোটেই। সেটা ফার্গুসনেরও খুব ভালোভাবে জানা ছিল, তবুও একটা ফাটকা খেলেছিলেন। কখনো কখনো সেটা কাজেও লেগে যেত, যেমন এরিক ক্যানটোনার কথাই ধরুন না!


    কিন্তু প্রায় ২৮ মিলিয়ন পাউন্ড ব্যয়ে দলে আনা ভেরনকে দিয়ে তেমন ফল পাওয়া যায়নি। ফার্গুসনের ভাগ্য ভালো ছিল যে,  লগ্নির অর্ধেকটা তুলে আনতে পেরেছিলেন চেলসির মালিক রোমান আব্রামোভিচের কাড়ি কাড়ি টাকা খরচার সুবাদে। ২০০৩ সালে ১৫ মিলিয়ন পাউন্ডে চেলসির কাছে ভেরনকে ছেড়ে দিয়েছিল ইউনাইটেড। তবে এরপর চেলসিতে গিয়েও দিন ফেরেনি ভেরনের, মাত্র ৭ ম্যাচ খেলানোর পরই চেলসি তাকে ধারে খেলাতে পাঠিয়ে দেয় ইন্টার মিলান এবং পরবর্তীতে আর্জেন্টাইন ক্লাব এসতুদিয়ান্তেসে।

     

    মারিও বালোতেল্লি - লিভারপুল

    মারিও বালোতেল্লির কোনও দলবদলই সেই অর্থে খুব একটা কার্যকর বা ফলপ্রসূ হয়নি। তবে লিভারপুলে তার সময়টা শুরু থেকেই অভিশপ্ত ছিল। কারণ স্ট্রাইকার হিসেবে লুইস সুয়ারেজের বদলি হিসেবে ম্যানেজার ব্র্যান্ডন রজার্সের প্রথম পছন্দ ছিলেন অ্যালেক্সিস সানচেজ। তবে সানচেজ আর্সেনালকে বেছে নেওয়ায় শেষ পর্যন্ত উপায়ান্তর না দেখেই বালোতেল্লিকে দলে টেনেছিল লিভারপুল। সংবাদমাধ্যমে রজার্স এই দলবদলটিকে একটি জুয়া বলেছিলেন, যেটি কার্যকরী প্রমাণ হতে পারে আবার ব্যর্থতায় পর্যবসিতও হতে পারে।


    বালোতেল্লির ক্ষেত্রে দ্বিতীয়টি হয়েছিল, ২৮ ম্যাচ খেলে মোটে ৪ গোল করেছিলেন তিনি। অ্যানফিল্ডে আসার পর বছর না ঘুরতেই বালোতেল্লিকে আবারও মিলানে ধারে পাঠিয়ে দেয় লিভারপুল।