• বুন্দেসলিগা
  • " />

     

    'সামাজিক দূরত্বের' শিক্ষা দিয়ে শালকেকে উড়িয়ে দিল ডর্টমুন্ড

    'সামাজিক দূরত্বের' শিক্ষা দিয়ে শালকেকে উড়িয়ে দিল ডর্টমুন্ড    

    ফুলটাইম
    বরুশিয়া ডর্টমুন্ড ৪-০ শালকে ০৪


    দুই মাসে মরচে পড়েনি এর্লিং ব্রুট হালান্ডের বুটে। ম্যাচের আধ ঘন্টা পেরুনোর আগেই গোল করলেন। কর্নার ফ্ল্যাগের কাছাকাছি গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লেন। সতীর্থরা ছুটে এসে অবশ্য জড়িয়ে ধরলেন না। দূর থেকে তালি দিয়ে হালান্ডের প্রাপ্যটা বুঝিয়ে দিলেন। ফাঁকা মাঠে প্রত্যেকটি তালি শোনা গেল স্পষ্ট। সাউন্ডবক্সে বাজল দর্শকদের হুঙ্কার। এই দৃশ্যের সঙ্গে যত দ্রুত মানিয়ে নিতে পারবেন ততোই ভালো আপনার জন্য। এটাই নতুন ফুটবলের পরিচিত দৃশ্য।

    করোনাভাইরাস সংক্রমণের পর ইউরোপে বুন্দেসলিগা ফিরল সবার আগে। ফেরাটা ডর্টমুন্ড সমর্থকদের জন্য হলো দারুণ। রেভিয়ের ডার্বিতে শালকেকে উড়িয়েই দিয়েছে ডর্টমুন্ড। শালকের সঙ্গে নিজেদের পার্থক্যটাই যেন প্রমাণ করল তারা। এমন দিনে মাঠে সমর্থক থাকলে ইয়েলো ওয়ালের ঝাকুনিতে কাঁপত পুরো জার্মানি।



    রেভিয়ের ডার্বির কাঁপন অবশ্য ম্যাচের এক সপ্তাহ আগে থেকেই টের পাওয়া যায়। এবার ডার্বির চেয়ে বড় বিজ্ঞাপন ফুটবলের ফেরা। তাও এমন এক মহামারীর সময়ে। দুই দল টানেল দিয়ে মাঠেও প্রবেশ করলেন আলাদা সময়ে। বাইশজন তাদের পজিশন নেওয়ার পর মাঠে ঢুকলেন রেফারি। কয়েন টসেও থাকল সামাজিক দূরত্বের ছোঁয়া। আর রেফারির প্রথম বাঁশির পর সামাজিক দূরত্ব পালন শুরু ডর্টমুন্ডের। আর শালকে ডিফেন্ডাররা হন্যে হয়ে ছুটলেন তাদের ধরতে।

    লুসিয়ান ফাভ্রে অবশ্য জেডন সানচেকে বসিয়ে রেখে খানিকটা চমকই দিয়েছিলেন। অ্যাক্সেল ভিটসেলও ছিলেন না ইনজুরির কারণে। হালান্ডের সঙ্গে থরগ্যান হ্যাজার্ড শুরু করলেন আক্রমণভাগে। তাদের সঙ্গে সমান তালে পাল্লা দিয়ে আক্রমণে উঠছিলেন রাফায়েল গেরেরোও। লেফটউইংব্যাক গেরেরো পরে করেছেন জোড়া গোল। আর সবগুলো গোলে অবদান রেখে হুলিয়ান ব্রান্ডট আলো ছড়িয়েছেন ফেরার ম্যাচে।

    দুই মাস খেলা বন্ধ থাকলেও গেল দুই সপ্তাহের অনুশীলনে ফুটবলাররা নিজেদের গুছিয়ে নিয়েছেন খানিকটা। খেলায় আনাড়ি ছাপ পাওয়া গেল তাই কমই। অবশ্য সেটা শুধু ডর্টমুন্ডের ক্ষেত্রেই সত্য। ২৯ মিনিটে ডান প্রান্ত থেকে আসা হ্যাজার্ডের ক্রস বক্সের ভেতর থেকে দারুণ এক টাচে জালে পাঠিয়ে দিলেন হালান্ড। শরীর বাঁকিয়ে বাম পা প্রসারিত করে হালান্ডের ওয়ান টাচ ফিনিশ নিরপেক্ষ সমর্থকদের চোখের তৃপ্তিই যোগালো।

    শালকে গোলরক্ষক মার্কস শুবার্ট খানিকটা নড়বড়ে ছিলেন শুরু থেকেই। প্রথমার্ধ শেষের আগে যে ভুলটা করলেন সেটা আরও ডোবালো শালকেকে। বল ক্লিয়ার করতে পারেননি ঠিকমতো। সেখান থেকেই আক্রমণে উঠল ডর্টমুন্ড। ব্রান্ডটের পাস ধরে বক্সের ভেতর থেকে বাম পায়ে কোণাকুণি ফিনিশে গেরেরো পেলেন প্রথম গোল। জালের কোণায় বল লেগে ‘ক্যাচ’ করে ওঠার শব্দটাও স্পষ্ট শোনা গেল। মাঠ ফাঁকা হোক, এমন শব্দ তো মধুরই!


    আরও পড়ুনঃ 'ফুটবলের নতুন দুনিয়ায় আপনাকে স্বাগতম'


    দ্বিতীয়ার্ধে আর ডর্টমুন্ডের সামনে দাঁড়াতেই পারল না শালকে। বিরতি শেষের ৪ মিনিট পর দারুণ এক প্রতি আক্রমণ থেকে চোখের পলকে শালকের বক্সের সামনে ডর্টমুন্ড। ব্রান্ডটের নিচু পাস এবার বক্সের ঠিক বাইরে পেলেন হ্যাজার্ড। বিধ্বংসী শটে ডার্বি গোল পেয়ে গেলেন তিনিও। এমন গোল উদযাপন না করলে মান থাকে না। হ্যাজার্ড ফাঁকা গ্যালারিরি সামনেই হাত উঁচিয়ে দুধের স্বাদ ঘোলে মেটালেন।

    রেভিয়ের ডার্বিতে সবশেষ ৮ ম্যাচে মাত্র একবার জিততে পেরেছিল ডর্টমুন্ড। পেছন থেকে ফিরে দারুণ জয়ের রেকর্ডও আছে শালকের। কিন্তু ৬৩ মিনিটে ক্ষীণ সেই সম্ভাবনাটাও উড়িয়ে দিলেন গেরেরো। বক্সের ভেতর আড়াআড়ি দৌড় দিচ্ছিলেন গেরেরো, হালান্ড তাকে খুঁজে পেলেন পাসে। বাম পায়ে আউট অফ দ্য ফুটে করা দারুণ এক ফ্লিকে মুহুর্তের জন্য ভুলিয়েই দিলেন তিনি আদতে একজন লেফটব্যাক।

    ৫ বদলির নতুন নিয়মটা শালকে শেষ পর্যন্ত প্রয়োগ করেছে। এছাড়া ডেভিড ওয়াগনারের আর কোনো কৌশলই সফলতার মুখ দেখেনি ডর্টমুন্ডের মাঠে। খেলোয়াড়রা বদলি হয়ে সাইডবেঞ্চে বসার আগে খুঁজেছেন মাস্ক। সাইডবেঞ্চে অবশ্য গাদাগাদি করেও বসেননি কেউ। দূরত্ব রেখে  মাঠের এক পাশের পুরো জায়গাটাই দখল করে বসেছেন খেলোয়াড়, কোচরা। ডর্টমুন্ড অবশ্য বদলি ব্যবহার করেছে ৪ বার। জেডন সানচোরা মাঠে নেমে নিজেদের ঝালিয়ে নেওয়ার সুযোগও পেয়েছেন খানিকটা।

    ম্যাচ শেষে একটা রীতি ঠিকঠাক পালন করেছে ডর্টমুন্ড। ইয়েলো ওয়াল ফাঁকা, কিন্তু ডর্টমুন্ড খেলোয়াড়রা ফাঁকা স্ট্যান্ডের সামনে গিয়েই হাত উঁচিয়ে ধন্যবাদ জানিয়েছেন অদৃশ্য সমর্থকদের। শুধু একে অন্যের হাতটাই ধরেননি, আর পালন করেছেন দূরত্ব!