• ক্রিকেট, অন্যান্য
  • " />

     

    তাদের প্রথম : আকবরের রক্তঝরা স্মৃতি আর বিশ্বকাপে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে চাপ

    তাদের প্রথম : আকবরের রক্তঝরা স্মৃতি আর বিশ্বকাপে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে চাপ    

    প্রথম কিছু কি ভোলা যায়! সুমনের গানের মতো প্রথম- তা সুখস্মৃতি হোক বা বেদনার- এমন কিছুর জায়গাটাই যেন আলাদা। প্যাভিলিয়নের নতুন সিরিজ তাদের প্রথম-এ খেলোয়াড়রা শোনাবেন তাদের প্রথম সব ম্যাচের গল্প- বিভিন্ন পর্যায়ের। 

    অ-১৯ বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক আকবর আলি বলেছেন তার প্রথম ক্রিকেট বলের ম্যাচ, অ-১৯ পর্যায়ে বাংলাদেশের হয়ে প্রথম ম্যাচ, এরপর প্রিমিয়ার লিগ, বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ এবং বিশ্বকাপ থেকে ফিরে প্রিমিয়ার লিগের প্রথম ম্যাচের গল্পও...


    ক্রিকেট বলের প্রথম ম্যাচ নিয়ে তেমন কিছু মনে পড়ে না। শুধু মনে পড়ে, ম্যাচটা হেরেছিলাম। আর রক্তাক্ত হয়েছিলাম! 

    ইন্টার-স্কুলের হয়তো ম্যাচ ছিল, না না, ইন্টার-স্কুল না। যে একাডেমিতে ছিলাম, সেটিরই অনুশীলন ম্যাচ ছিল একটা। প্রথমে ব্যাটিং করছিলাম, কতো রান করেছি মনে নাই। শুধু এটুকু মনে আছে, আমার হেলমেটের ভেতর দিয়ে বল ঢুকে থুতনি কেটে গিয়ে রক্ত বের হচ্ছিল। আমি অবশ্য প্রথমে বুঝিই নাই। সেভাবেই ২-৩ বল খেলেছি। তখন তো লেদারের গ্লাভস ব্যবহার করতাম না, চামড়ারটা করতাম। একটু পর দেখি ভেজা ভেজা লাগে। তারপর হাত দিয়ে দেখি রক্ত। ব্যান্ডেজ-ট্যান্ডেজ করে আবার খেলতে নেমেছিলাম। কৃত্রিম উইকেটে খেলা ছিল। 

    সে ম্যাচ বাদ দিলে আমার প্রথম মারা ছয়ের কথা মনে পড়ে। বিকেএসপিতে ভর্তি হওয়ার পর আমাদের ক্রিকেট সেকশনকে দিনাজপুরে পাঠানো হয়েছিল। দিনাজপুর বিকেএসপির মাঠেই মেরেছিলাম। পুল করে একটা ছয়।

    আমি কোনও ম্যাচকেই বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার চেষ্টা করি না আসলে। একটা অনুশীলন ম্যাচ খেললেও জেতার জন্যই খেলি। প্রতিদ্বন্দ্বীতামূলক ম্যাচ হলে তো কথাই নাই। অ-১৯ দলের হয়ে প্রথম ম্যাচ তাই বিশেষ কিছু, সেটা বলবো না। তবে এ ম্যাচের কথা আসলে যেটা মনে পড়ে, চট্টগ্রামে এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচ ছিল, ১ রান করেছিলাম সম্ভবত (৮ বল খেলে)। ওই ম্যাচটা মনে আছে। আর যেটা মনে পড়ে, আমি একটু বেশিই সতর্কতা অবলম্বন করেছিলাম না চাওয়া সত্ত্বেও। আমি চাইনি, কিন্তু অমন হয়ে গেছে যে, আমি বাড়তি সতর্ক হয়ে গেছি। একটু বেশি দেখেশুনে খেলার চেষ্টা করছিলাম। 

    ‘ব্যাক অফ দ্য মাইন্ডে’ হয়তো কাজ করছিল, এশিয়া কাপে প্রথম ম্যাচ। আমরা ব্যাটিং করছিলাম আগে। যখন উইকেট পড়ে গেল বেশ কয়েকটা (৯৩ রানে পড়েছিল ৪ উইকেট), বেশি ‘ডিটারমাইন্ড’ হয়ে গিয়েছিলাম যে, “উইকেট দিবই না!” এসব ভেবে শট খেলা অফ করে দিয়েছিলাম। এটা- ‘ইনটেনশনটা’- খারাপ ছিল একটু।

    তবে পরের ম্যাচে পাকিস্তানের সঙ্গে খেলা ছিল, ভেবেছিলাম, যা হবার হবে। প্রথম বল খারাপ পেলে প্রথম বলেই আমার মতো করে খেলব। যাই ঘটুক না কেন। ওই ম্যাচে অপরাজিত ছিলাম (৩১ বলে ১৭)। (প্রান্তিক নওরোজ) নাবিল (৯৩ বলে ৫৮) আর শামিম (হোসেন) (১০৫ বলে ৬৫) ফিফটি করেছিল। এবার জিতেছিলাম (৩ উইকেটে)
     


    বিশ্বাস করবেন কিনা জানি না, হয়তো অনেকেই বলবেন প্রতিপক্ষ হিসেবে জিম্বাবুয়ে সহজ, তবে পুরো টুর্নামেন্টে যতো ম্যাচ খেলেছি, সবচেয়ে বেশি চাপে ছিলাম ওই ম্যাচে।


    বিকেএসপিতে থাকার সময় আমরাই ফার্স্ট ডিভিশন থেকে প্রিমিয়ার লিগে উঠেছিলাম। প্রিমিয়ার লিগের প্রথম ম্যাচের আগে একটা জিনিসই কাজ করছিল, যাদের খেলা দেখে বড় হয়েছি, এবার তাদের বিপক্ষে খেলব। আপনারা জানেন, বিকেএসপিতে প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচ হয়। যখন বিকেএসপিতে ছিলাম, কলেজ ফাঁকি দিয়ে খেলা দেখতে যেতাম ২ নম্বর বা ৩, ৪ নম্বর মাঠে। খেলা দেখার একটা ব্যাপার কাজ করতো। আমাদের অনুশীলন হতো বিকেলে, কিন্তু কলেজ টাইমে খেলা দেখতে চলে যেতাম। প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচের আগে ওইটাই মনে হচ্ছিল, যাদের খেলা এতদিন দেখেছি, তাদের সঙ্গেই খেলব। ওরকম একটা এক্সাইটমেন্ট কাজ করছিল।

    তবে আমার মনে হয়, প্রথম ম্যাচ যাওয়ার পর সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছিল আবার। যার বিপক্ষে খেলি, যেখানেই খেলি, খেলা তো খেলাই! 

    প্রিমিয়ার লিগেও প্রথম ম্যাচে আবাহনীর বিপক্ষে (মিরপুরে) এক অঙ্কেই আউট হয়েছিলাম। (মোসাদ্দেক হোসেন) সৈকত ভাইয়ের বলে বোল্ড হয়েছিলাম। রান কতো করেছিলাম মনে নাই, ৬-৭ সম্ভবত (১০ বলে ৩), তবে বোল্ড হয়েছিলাম এটা মনে আছে। সামনের বলে পেছনে চলে গিয়ে বোল্ড হয়েছিলাম। এ ম্যাচে নিজের মতোই ছিলাম, বাড়তি কোনও চাপ বা কিছু কাজ করেনি অ-১৯ এর প্রথম ম্যাচের মতো। তবে নিজের বাজে সিদ্ধান্তে আউট হয়েছিলাম আমি। ওই বলটাতে শট সিলেকশনে ভুল করেছিলাম।


    আরও পড়ুন- আকবর আলি অ্যান্ড দ্য চেম্বার অফ থটস


    অ-১৯ বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচের কথা উঠলে যেটা বলতে হয়, বিশ্বাস করবেন কিনা জানি না, হয়তো অনেকেই বলবেন প্রতিপক্ষ হিসেবে জিম্বাবুয়ে সহজ, তবে পুরো টুর্নামেন্টে যতো ম্যাচ খেলেছি, সবচেয়ে বেশি চাপে ছিলাম ওই ম্যাচে। কোয়ার্টার ফাইনাল-সেমিফাইনাল-ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকা-নিউজিল্যান্ড-ভারতের সঙ্গে খেলার কথা বাদ দিন, এদের চেয়ে বেশি চাপে ছিলাম জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওই ম্যাচটা নিয়ে। চাপটা হলো, টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচ, টোন সেট করে দেবে পুরো টুর্নামেন্টের। হয়তো কারও সঙ্গে আলোচনা করিনি, তবে থাকে না, ভেতর ভেতর একটা টেনশন কাজ করে, অধিনায়ক হিসেবেও। ওই জিনিসটা প্রথম ম্যাচেই বেশি ছিল।

    অবশ্য আরেকটা চাপের ম্যাচ ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে, কোয়ার্টার ফাইনাল যেটা। সেখানে তাদের ঘরের দর্শক থাকবে, সেটি কীভাবে সামলাবো আমরা। তবে সবচেয়ে বেশি ছিল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই। একটা টেনশন কাজ করার কথা ছিল প্রথম ম্যাচ নিয়ে, সেটাই হয়েছিল।

    বিশ্বকাপ থেকে ফেরার পর তো প্রিমিয়ার লিগে আর একটি ম্যাচই খেলতে পারলাম। জেতাতে পারলাম না, আমার একটা ভাল সুযোগ ছিল (২৫২ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিং করছিল আকবরদের গাজী গ্রুপ, প্রাইম ব্যাঙ্কের বিপক্ষে)। সাত নম্বরে নেমেছি, কিন্তু ওভার ছিল (৩০.২ ওভারে ১৩০ রানে ৫ম উইকেট যাওয়ার পর নেমেছিলেন আকবর)। প্রতিদিন এমন সুযোগ থাকবে না, এতো ওভার ব্যাটিং করার। ভাল একটা সুযোগ ছিল। তবে রান-আউট হয়ে গেলাম নিজের দোষেই (২৮ বলে ৩১ রান করে)। জেতানোর সুযোগটা হাতছাড়া করলাম। 

    ওই ম্যাচের পর তো অনিশ্চিত হয়ে গেল সবকিছুই। এই মহামারিতে ঘরবন্দি অবস্থায় আমার ভাবনাটা সরল- স্কিলটা গুরুত্বপূর্ণ, তবে ফিটনেস ধরে রাখাটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ আমার কাছে। ফিটনেসের ওপরই জোর দিচ্ছি তাই। ব্যাটিং করেছি দুই-একদিন, তবে একটা ভয় কাজ করে। টেনিস বল নিয়েই আছি তাই। আতঙ্কের মধ্যে থাকি, মাঠে বের হওয়া হয় না। মূল পরিকল্পনা এখন ফিটনেস নিয়ে কাজ করা। ভাল খবরের আশায় আছি। বাকিটা সময়ের ওপর ছেড়ে দেওয়া ছাড়া তো উপায় নেই।