• অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ ২০১৬
  • " />

     

    ২২ গজের সেলুলয়েড : বাংলাদেশের প্রথম আর মিরাজের শেষ

    ২২ গজের সেলুলয়েড : বাংলাদেশের প্রথম আর মিরাজের শেষ    

    ব্যাটসম্যানই যখন ‘উইকেট-হন্তারক’!

    মোসাব্বেক হোসাইনের বলটা কাভারে ঠেলেই পড়িমড়ি করে ছুটলেন রান নিতে। চরিথ আসালাঙ্কাকে আউট করতে সরাসরি থ্রো দরকার ছিল, ফিল্ডার পারলেন না। উল্টো আসালাঙ্কাই ভেঙ্গে দিলেন স্ট্যাম্প, তাও আবার তিনটিই! রান-আউট থেকে বাঁচতে ডাইভ দিয়েছিলেন, এমন পরিস্থিতিতে বল আর স্ট্যাম্পের মাঝ দিয়ে দৌড়ানোর ‘অলিখিত’ ‘কৌশল’ মেনেই আড়াআড়িভাবে ‘স্লাইড’ করলেন। থামলেন, তিনটি স্ট্যাম্পের অবস্থান উল্টাপাল্টা করে দিয়েই! ভাগ্যিস, নন-স্ট্রাইক প্রান্তের স্ট্যাম্প, স্ট্রাইক প্রান্তের স্ট্যাম্প হলে তো নিজের উইকেটটাই উল্টাপাল্টা হয়ে যেতো আসালাঙ্কার!

     

    'ফুল' সাইফুল

    সাইফুদ্দীনের ফুললেংথের বলটা মারতে গিয়ে মিস করলেন ওয়ানিধু হাসারাঙ্গা। হলেন বোল্ড। পরের বলটা ইয়র্কার, জিহান ড্যানিয়েলের প্যাডে লাগলো প্রথমে, তারপর স্ট্যাম্পে। আবেদন করছিলেন সাইফুদ্দীন, আম্পায়ার ইশারায় বললেন, বোল্ডই হয়েছে। দুইয়ে দুই সাইফুদ্দীন!

    পরের বলটাও ফুললেংথে করলেন সাইফুদ্দীন, তবে এবার লেগস্ট্যাম্পের বাইরে। দামিথা সিলভা পরাস্ত হয়েছিলেন, প্যাডেও লেগেছিল বল! তবে আবেদন করতে গিয়েও নিজেই থেমে গেলেন সাইফুদ্দীন, লেগস্ট্যাম্পের বাইরে পড়লে কী আর এলবিডাব্লিউ পাওয়া যায়! হ্যাটট্রিক বলটা ঠিক যুতসই রকমের ‘ফুল’ হলো না সাইফুদ্দীনের!

     

    উইকেট নম্বর এক

    দক্ষিণ আফ্রিকা ৫, স্কটল্যান্ড ৪৮, নামিবিয়া ৬, নেপাল ১৭, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৪৪। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের এবারের আসরে বাংলাদেশের সঙ্গে আগের ম্যাচগুলোতে প্রতিপক্ষের উদ্বোধনী জুটির রান। তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচের আগে তিনবার উদ্বোধনী জুটি ভেঙ্গেছিলেন মিরাজ, দুইবার সাইফুদ্দীন। আজ শ্রীলঙ্কার উদ্বোধনী জুটিতে কামিন্ডু মেন্ডিস আর সালিন্ডু উশান মিলে তুললেন ৬০ রান। আগের সর্বোচ্চ স্কটল্যান্ডের চেয়েও ১২ রান বেশী, ৫০ রানের নীচেই প্রতিপক্ষের প্রথম উইকেট তুলে নেওয়া হলো না এবার। তবে প্রথম উইকেটটা ঠিকই নিলেন মিরাজ, উশান স্ট্যাম্পড হলেন তাঁর বলেই!

     

    জাকেরের ফিরে আসা

    বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো নেমেছিলেন আজ। প্রথম উইকেটেও ছিল জাকের আলীর হাত, সালিন্ডু উশানকে তো তিনিই স্ট্যাম্পড করেছিলেন। এরপর দুইটি ক্যাচ নিয়েছেন, একটি রান-আউটে সহায়তা করেছেন। নেমেছিলেন তিন নম্বরে, তবে চোট পেয়ে উঠে যেতে হলো ১৯ রান করেই। মোসাব্বেক হোসেনের উইকেটের পর বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল ১২ বলে ১৫ রান, জাকের ফিরে এলেন তখন। মারলেন গুরুত্বপূর্ণ চার, শেষ ওভারে বাংলাদেশের প্রয়োজনটা নেমে এলো ৪ রানে। টাই হয়ে যাওয়ার পর আবার মারলেন চার, শেষটাও হলো জাকেরের হাতেই!

     

    'বাংলা-শেক'

    আগেরদিন এই মুখগুলো ছিল বিমর্ষ। হয়তো দেখেও দেখেননি স্প্রিংগারের 'চেস্টরোল-ড্যান্স'। আজ জাকেরের বাউন্ডারির পরই ছুটে গেলেন সব, মুখে উচ্ছ্বাস। আর জাকের তখন ব্যস্ত, কোমরের সঙ্গে হাত দোলাতে! ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে আফতাব-বাশাররা দুই হাত ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে নেচেছিলেন, আজ নাচলেন জাকের। হালিম গিয়ে চেষ্টা করলেন সঙ্গ দেওয়ার! হয়ে গেল 'বাংলা-শেক'!   

     

    মিরাজের শেষ  

    ২১ এপ্রিল ২০১৩ সাল। মিরপুরে শ্রীলঙ্কান অনূর্ধ্ব-১৯ এর সঙ্গে যুব ওয়ানডেতে অভিষেক হয়েছিল মেহেদী হাসান মিরাজের। পরপর দুই বিশ্বকাপে নেতৃত্ব দিয়েছেন দলকে, ইতিহাস সেরা তৃতীয় স্থানও এনে দিলেন। মিরাজের ‘যুব’ হয়ে থাকার পালা এবার শেষ, শেষ যুব ওয়ানডেটা যে খেলে ফেললেন আজই! বোলিংয়ে ২৮ রানে ৩ উইকেট, ব্যাটিংয়ে ৬৬ বলে ৫৩ রানে হলেন ম্যাচসেরা। বিশ্বকাপে টানা চার ফিফটি হলো মিরাজের!

    জাতীয় দলে যদি মিরাজ টানা খেলে যান, বাংলাদেশের ক্রিকেট নিশ্চয়ই উপকৃতই হবে!

     

    বাংলাদেশের প্রথম

    ২০০৬ সালের বিশ্বকাপে পঞ্চম হয়েছিল বাংলাদেশ। মুশফিকুরদের দলের সাফল্যই এতোদিন হয়ে ছিল সেরা। মিরাজদের দল সেমিফাইনালে উঠেই সে ‘রেকর্ড’ ভেঙ্গেছিল। আজ ওয়েস্ট ইন্ডিজকে তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে হারিয়ে সে সাফল্যকেই আরেকধাপ এগিয়ে নিল বাংলাদেশ।

    বাংলাদেশের অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায়ের একটা ‘সেরা সময়’-এর সমাপ্তিই কি ঘটলো? নাকি আরও বেশী ‘সেরা সময়’ এর হলো সূচনা!