• ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইংল্যান্ড সফর ২০২০
  • " />

     

    স্টোকস ব হোল্ডার, আর ডাওরিচের সেকাল-একাল

    স্টোকস ব হোল্ডার, আর ডাওরিচের সেকাল-একাল    

    ১ম টেস্ট, সাউথাম্পটন
    তৃতীয় দিন, স্টাম্পস
    ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস ২০৪ (স্টোকস ৪৩, বাটলার ৩৫, হোল্ডার ৬/৪২, গ্যাব্রিয়েল ৪/৬২) ও ২য় ইনিংস ১৫/০*
    ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১ম ইনিংস ৩১৮ (ব্রাথওয়েট ৬৫, ডাওরিচ ৬১, চেজ ৪৭, স্টোকস ৪/৪৯, অ্যান্ডারসন ৩/৬২, বেস ২/৫১) 
    ইংল্যান্ড ৯৯ রানে পিছিয়ে


    এদিন কন্ডিশন পুরো বদলে গেল সাউথাম্পটনে। ঝকঝকে রোদের দেখা মিললো। ক্রেইগ ব্রাথওয়েটের পর শেন ডাওরিচের ফিফটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ পেলো ১১৪ রানের লিড। মাঝে রসটন চেজও বেশ ভুগিয়েছেন ইংল্যান্ডকে। জেমস অ্যান্ডারসনের পর ডম বেস ও বেন স্টোকস স্বাগতিকদের ঠিক ছিটকে যেতে দেননি। 

    তবে দিনশেষে ৯৯ রানে এগিয়ে থাকা ওয়েস্ট ইন্ডিজই এ টেস্টে এখনও এগিয়েই আছে। শেষদিকে ১০ ওভার ব্যাটিং করে ১৫ রান তুললেও উইকেট দেননি দুই ইংলিশ ওপেনার। সাউথাম্পটনে বাকি দুই দিন জাগাতে পারে রোমাঞ্চই। 

    অধিনায়ক বনাম অধিনায়ক

    দুজনই অলরাউন্ডার, দুজনই দলের অধিনায়ক। সিরিজ শুরুর আগে জেসন হোল্ডার বলেছিলেন, হয়তো বেন স্টোকসের মতো স্বীকৃতি তিনি পান না, টেস্টের এক নম্বর অলরাউন্ডার হিসেবে হয়তো সেটি প্রাপ্য তার। সাউথাম্পটনে দ্বিতীয় দিনটা নিজের করে নিয়েছিলেন হোল্ডার, তার দারুণ বোলিংয়ে ইংল্যান্ড ধসে গিয়েছিল দ্রুতই। হোল্ডার পেয়েছিলেন স্টোকসের উইকেটও। এদিন যখন ব্যাটিংয়ে নামলেন, লিড তিন অঙ্ক ছোঁয়নি, স্টোকস বোলিংয়ে চড়াও হতে পারেননি তখনও। ইংল্যান্ডকে ছিটকে দেওয়ার একটা সুযোগ ছিল হোল্ডারের। তবে স্টোকসের আচমকা বাউন্সারে ছিটকে গেলেন তিনিই। ইংলিশ পেসাররা তাকে যে লেংথে বল করছিলেন, সবচেয়ে শর্ট ছিল স্টোকসের বলটাই। পুল করতে গিয়ে টপ-এজড হলেন হোল্ডার, ফাইন লেগে ধরা পড়লেন জফরা আর্চারের হাতে। অধিনায়ক আগেরদিন আউট করেছিলেন আরেক অধিনায়ককে, এদিনও হলো সেটিই। 

    স্টোকসের ডাবল

    এই পিচে পেস দরকার মনে করে আর্চার ও মার্ক উডকে খেলালো ইংল্যান্ড স্টুয়ার্ট ব্রডকে বসিয়ে রেখে। তবে এ দুজন মিলে শেষ পর্যন্ত ৪৪ ওভারে ১৩৫ রান দিয়ে নিলেন ১ উইকেট। এগিয়ে আসলেন বেন স্টোকস। হোল্ডারের মতো মিডিয়াম পেস কার্যকরী হলো তারও। ৪৯ রানে ৪ উইকেটের বোলিং ফিগার দিয়ে টেস্টে একটা ডাবলও পূর্ণ করে ফেললেন তিনি-- ১৫০ উইকেট ও ৪০০০ রানের। স্টোকসের আগে এই কীর্তি আছে ৫ জনের- গ্যারি সোবার্স, ইয়ান বোথাম, কপিল দেব, জ্যাক ক্যালিস ও ড্যানিয়েল ভেট্টোরির। 

    স্টোকসের এ ইনিংসের বোলিং ফিগার ফিরিয়ে আনলো বব উইলিসের স্মৃতিও। ১৯৮৩ সালে বব উইলিস হেডিংলিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৩৫ রানে নিয়েছিলেন ৫ উইকেট, তারপর কোনও ইংল্যান্ড অধিনায়ক হিসেবে স্টোকসেরটিই সেরা বোলিং ফিগার। 

    ডাওরিচের সেকাল-একাল

    ২০১৭ সালে শেষ যেবার ইংল্যান্ড গিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ব্যাটিংয়ে বীভৎস সময় গিয়েছিল উইকেটকিপার শেন ডাওরিচের। ৬ ইনিংসে করেছিলেন ২৪ রান, ৪.৮০ গড়ে। বলই খেলেছিলেন মাত্র ৭৭টি। ডাওরিচ এদিন যখন নামলেন সাত নম্বরে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ তখনও লিড নেয়নি। 

    ডাওরিচ শেষ পর্যন্ত করলেন ১১৫ বলে ৮ চারে ৬১ রান। রান, মুখোমুখি হওয়া বলসংখ্যা-- আগের সিরিজকে তিনি ছাড়িয়ে গেলেন এক ইনিংসেই। আগেরবার নিজে বীভৎস সময় কাটিয়েছিলেন, এবার ইংল্যান্ডকে জ্বালিয়ে গেলেন বেশ এক দফা। উইকেটকিপিংয়েও সময়টা বেশ ভালই গেছে এখন পর্যন্ত তার, ১ম ইনিংসে ৩টি ক্যাচ নিয়েছেন, এর মাঝে জস বাটলারের ক্যাচটি তো ছিল ডানদিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে নেওয়া। 

    রিভিউ 

    আগেরদিন রিভিউ ছিল আলোচনায়। থাকলো এদিনও। তবে গল্পটা একটু ভিন্ন এবার। 

    দ্বিতীয় দিন ৬টি রিভিউ হয়েছিল, ৬টিই করেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ, যার মাঝে ৫ বারই আম্পায়ার ভুল প্রমাণিত হয়েছিলেন। এদিনও রিভিউ হলো ৫টি। 

    ক্রেইগ ব্রাথওয়েটের বিপক্ষে কট-বিহাইন্ডের রিভিউ নিয়ে ব্যর্থ হলো ইংল্যান্ড, সেই ব্রাথওয়েট ফিফটির পর রিভিউ নিয়েও বাঁচলেন না এলবিডব্লিউ থেকে। 

    মাঝে জফরা আর্চারের বলে শেই হোপকে এলবিডব্লিউ দিয়েছিলেন রিচার্ড ইলিংওর্থ, হোপ নিয়েছিলেন রিভিউ। তবে রিপ্লেতে দেখা গেল, আর্চার করেছেন নো। হোপ বাঁচলেন, বাঁচলো রিভিউও। অবশ্য নো না হলে হোপ আউটই হতেন, বল ট্র্যাকিং ছিল তেমনই। অবশ্য পরে রসটন চেজের বিপক্ষে অ্যান্ডারসনের বলে এলবিডব্লিউয়ের রিভিউ নিয়ে সফল হলেন স্টোকস।

    তবে সবকিছুকে আসলে ছাড়িয়ে গেল শামারহ ব্রুকসের নেওয়া রিভিউটা। অ্যান্ডারসনের বলে তাকে কট-বিহাইন্ড দিলেন রিচার্ড কেটেলবোরো, টাইমারে ১ সেকেন্ড বাকি থাকতে সেটা রিভিউ করলেন ব্রুকস। কিন্তু আল্ট্রা-এজ ঠিকই দেখালো স্পাইক। বল তার ব্যাটে লেগেছে, অথচ ব্রুকস সেটি বুঝতেই পারেননি! নিজেদের দলের নেওয়া সফল রিভিউয়ের সংখ্যা এমন অতি-আত্মবিশ্বাস জোগালো কিনা ব্রুকসে, সেটা কে জানে।