• চ্যাম্পিয়নস লিগ
  • " />

     

    ডানপিটে নাপোলি আর পুরোনো বার্সার পার্থক্য গড়ে দিলেন মেসিই

    ডানপিটে নাপোলি আর পুরোনো বার্সার পার্থক্য গড়ে দিলেন মেসিই    

    ফুলটাইম
    বার্সেলোনা ৩-১ নাপোলি


    নাপোলি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত লড়াই করে গেল এক  তালে। মাঝে কিছুক্ষণ খেলল বার্সেলোনা। তাতেই তিন গোলে এগিয়ে দিয়েছিল তারা। আসলে খেললেন লিওনেল মেসি। বার্সেলোনার চেহারা বদলায়নি, মেসি নির্ভরতাও কমেনি। প্রথমার্ধের শেষদিকে নাপোলি ম্যাচে ফিরল, পরের অর্ধে তো পুরোটা সময় বার্সার নাভিশ্বাস উঠিয়ে দিল জেনেরো গাত্তুসোর দল। গোল যা হওয়ার সব হলো প্রথমার্ধেই। দ্বিতীয়ার্ধে বার্সা রক্ষণ করে গেল শুধু। দলে মেসির মতো কেউ থাকলে পার পেয়ে যাওয়া যায় বারবার। সেই মেসিই পার্থক্য হয়ে দাঁড়ালেন ম্যাচে। বার্সেলোনাও মচকালো না। রোম, অ্যানফিল্ডের দুঃসহ স্মৃতি দুই একবার মনে করিয়ে দিলেও, ন্যু ক্যাম্পে আর তেমন কিছু ঘটতে দিল না বার্সা।

    জয়টা বড় স্বস্তি হয়ে এসেছে বার্সার জন্য। লা লিগায় দুঃসহ মৌসুম শেষে নাপোলির বিপক্ষে বার্সাকে নিয়ে শঙ্কা ছিল। প্রথম লেগের ১-১ ফলও খুব একটা উৎসাহ যোগাতে পারছিল না। সে হিসেবে ৩-১ গোলের জয়টা বার্সা চাইলে আত্মবিশ্বাসের পুঁজি হিসেবে দেখতে পারে। এবার বার্সা রওয়ানা দেবে লিসবনের উদ্দেশ্যে, কোয়ার্টার ফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ বায়ার্ন মিউনিখ।


    ন্যু ক্যাম্পে বার্সাকে চমকে দিয়ে শুরুটা দারুণ করেছিল নাপোলি। আগের লেগে গোল করা ড্রিস মার্টেনস ২ মিনিটের ভেতর এগিয়ে দিতে পারতেন নাপোলিকে। ভাগ্যক্রমে বক্সের ভেতর বল এসেছিল তার কাছে, ক্রস ভলিটা ঠিকঠাক পায়ে লাগেনি, গিয়ে লেগেছে বারপোস্টে। বার্সা তখন কেঁপে উঠেছে একবার।

    কিন্তু ১০ মিনিটে উলটো নাপোলিকেই কাঁপিয়ে দিয়েছে বার্সা। ইভান রাকিটিচের কর্নার থেকে হেডে গোল করেছেন ক্লেমেন্ত ল্যাংলেট। এর আগে একবার ডিয়েগো ডেমেকে ধাক্কাও দিয়েছেন। ভিএআর বিতর্ক থামাতে পারেনি, গোল বহালই রেখেছেন রেফারি। বার্সাও এরপর ম্যাচে ফিরেছে।

    মেসি গোল করবেন, ন্যু ক্যাম্পে উঠবে ‘মেসি মেসি’ রব। সাধারণ বানিয়ে ফেলা দৃশ্যটা এবার ফাঁকা মাঠে করলেন মেসি। ২৩ মিনিটে বার্সার আক্রমণের শুরু হয়েছিল মার্ক আন্দ্রে টের স্টেগানের গোলকিক থেকে। একে একে দলের সবাই সেই বলে টাচ করেছেন। দশম খেলোয়াড় লুইস সুয়ারেজ বাম প্রান্তে বল তুলে দিয়েছিলেন মেসির পায়ে। মেসি কাট করে ভেতরে ঢুকেছেন, একজন, দুইজন, তিনজনকে কাটিয়ে করে ঢুকে গেছেন বক্সের ভেতর। এরপর স্লিপ কেটে পড়েও গিয়েছিলেন। কিন্তু এসব পরিস্থিতিতে মেসি হাল ছাড়েন না, এবারও ছাড়লেন না। বাকিরা নাগাল পাওয়ার আগেই গিয়ে বলের দখল তার পায়ে।  নাপোলির আরও দুই ডিফেন্ডারের ফাঁক দিয়ে আড়াআড়ি শটে করেছেন চোখ ধাঁধানো এক গোল। মন্ত্রমুগ্ধের কয়েক সেকেন্ডে মেসি নিজের মাহাত্ম্যটা আরেকবার বুঝিয়ে দিয়ে গেছেন ওই মুহুর্তে।

    ২৯ মিনিটে আরেক গোল করে বসেছিলেন মেসি। দূরের পোস্টে মারিও রুইকে ছিটকে দিয়ে বুক দিয়ে দারুণভাবে বল নামিয়ে এনেছিলেন বার্সা অধিনায়ক। এরপর বাম পায়ে কাছের পোস্টে দুর্দান্ত এক ফিনিশ।  এই বস্তু আটকানো সম্ভব না, এই ভেবে নাপোলি তখন রাগে-ক্ষোভে ম্যাচ ছেড়ে দিতে পারত। নাপোলির কপাল খুলেছে ভিএআর চেকে। বল রিসিভ করার সময় মেসির বাহুতে আলতো টাচ খেয়ে গেছে বল, গোল তাই বাতিল।


    কিন্তু মেসিকে আর থামানো যায়নি। ৪০ মিনিটে তিনি পিছু নিলেন কালিদু কৌলিবালির। নাপোলি ডিফেন্ডার বক্সের ভেতর ঢুকছিলেন,  তার কাছ থেকে মেসি  পেছন থেকে বল ছিনিয়ে নিতে গেলেন। বল ক্লিয়ার করার আপ্রাণ চেষ্টায় চকিত কৌলিবালি মারলেন বেদম এক লাথি। দুইজনই পড়ে গেলেন। প্রায় সাড়ে চার মিনিট পর রেফারি মাঠের বাইরে হাইলাইটস  দিলেন পেনাল্টির সিদ্ধান্ত। মেসি তখনও ফিট হতে পারেননি। আক্ষরিক অর্থেই নিজের শরীর বিলিয়ে দিয়ে পেনাল্টি আদায় করে নিয়েছেন, কিন্তু সেই কিকটি আর তাই নিতে পারলেন না তখন। লুইস সুয়ারেজ চ্যাম্পিয়নস লিগে প্রথমবারের মতো পেনাল্টি থেকে গোল পেলেন বিরতির ঠিক আগে।

    ৩-০ গোলের লিডে তখন বার্সা কোয়ার্টার ফাইনাল দেখছে। কিন্তু সব গড়বড় পাকালো রাকিটিচ বক্সের ভেতর মার্টেনস্কে ফাউল করে বসলে। বিরতির আগে পেনাল্টি পেয়ে গেল নাপোলিও। লরেঞ্জো ইনসিনিয়ে গোল করে লাইফলাইন এনে দিলেন নাপোলিকে।  দ্বিতীয়ার্ধে নাপোলিকে সেটা সাহায্য করলো ভালোভাবেই। বার্সার অর্ধেই খেলা গড়াল বেশিরভাগ সময়। আর প্রতি আক্রমণে চাপ সামালের চেষ্টা করে গেল বার্সা। সার্জিও বুস্কেটস, আর্তুরো ভিদাল- দুইজনই নিষেধাজ্ঞার কবলে ছিলেন না দলে। ফ্র্যাঙ্কি ডি ইয়ং ফিরেছিলেন, বুস্কেটসের জায়গায় নেমে বার্সার মিডফিল্ডকে তিনি স্বস্তি দিলেন অনেকটাই। বিশেষ করে দ্বিতীয়ার্ধে তার অবদানটা দরকারি হয়ে পড়েছিল বার্সার জন্য।

    গাত্তুসো হাল ছাড়লেন না, মাতেও পলিতানো হার্ভিং লোজানোদের নামিয়ে আক্রমণে ধার বাড়ালেন। মেক্সিকান স্ট্রাইকার লোজানো নেমেই প্রায় কাজের কাজটা করে দিচ্ছিলেন, কিন্তু অল্পের জন্য তার হেড তখন গেল বাইরে দিয়ে। তখনও ম্যাচে বাকি প্রায় ২০ মিনিট।

    ৭৯ মিনিটে মাঠে নামা আর্কাদিউজ মিলিক গোল করেই ফেলেছিলেন। রেফারির অফসাইড ফ্ল্যাগে তখন স্বস্তি ফিরেছে বার্সায়। লোজানো এরপর হেড লাগিয়েছেন বারপোস্টে, সেটা গোলে পরিণত হলে টের স্টেগানের আফসোসের অন্ত থাকত না। কিকে সেতিয়েন এরপর রক্ষণাত্মক হয়ে গেছেন পুরোপুরি। আন্টোয়ান গ্রিযমানকে তুলে মনচু আর শেষদিকে সুয়ারেজের বদলি হিসেবে জুনিয়র ফিরপোকে নামিয়ে নাপোলির লাগাম টেনে ধরেছেন বার্সা কোচ।  

    এই নিয়ে টানা ১৩ বারের মতো চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠল বার্সেলোনা। পরের পথটা দুর্গম। এক লেগের ম্যাচে বায়ার্ন মিউনিখের বিপক্ষে নিশ্চিতভাবেই ফেভারিট নয় বার্সা। এক্স ফ্যাক্টর ওই মেসিই। তিনি ম্যাজিক দেখালে বার্সা পারবে, তিনি না ব্যর্থ হলে বার্সার সম্ভাবনা কমে যাবে বহুগুণে! যা হবার হবে সব এক ম্যাচেই!

     

    বার্সেলোনা একাদশ
    টের স্টেগান, সেমেদো, পিকে, ল্যাংলেট, আলবা, রবার্তো, ডি ইয়ং, রাকিটিচ, মেসি, সুয়ারেজ, গ্রিযমান

    নাপোলি একাদশ
    অস্পিনা, ডি লরেঞ্জো, মানোলাস, কৌলিবালি, মারিও রুই, ফাবিয়ান, ডেমে, জিলেনস্কি, কায়েহন, মার্টেনস, ইনসিনিয়ে