• ক্রিকেট, অন্যান্য
  • " />

     

    'ওয়েল, এমএস, মিশন কমপ্লিট'

    'ওয়েল, এমএস, মিশন কমপ্লিট'    

    আপনার মনে হতেই পারে, আইডিটা হ্যাকড-ট্যাকড হলো কিনা তার। 

    ব্যাকগ্রাউন্ডের গানটা শুনলে মনে হবে আপনি দূরপাল্লার বাসে করে কোথাও যাচ্ছেন। ভিডিওর স্লাইডশোর ছবিগুলিতে তেমন চাকচিক্য নেই, এডিটিংয়ের মুন্সিয়ানা নেই। বারকয়েক দেখলে একটা ক্রমধারা নজরে পড়বে, তবে সেটা ঠান্ডা মাথায় খেয়াল করার সময় নেই তখন। গুগল করবেন, বেশ কয়েক ঘন্টা আগের নিউজ। টুইটার বা ফেসবুকের হোমফিড বারবার রিফ্রেশ দিতে থাকুন, প্রশ্নবোধক আর আশ্চর্যবোধক চিহ্নের ছড়াছড়ি। ‘সত্যিই’? ‘এর মানে কি!

    ‘লিঙ্ক ইন বায়ো’ আর ‘পেইড পার্টনারশিপের’ সঙ্গে স্টোরিতে ‘সোয়াইপ আপ’-এর যুগে ২৭ মিলিয়নের বেশি ফলোয়ারযুক্ত ইন্সটাগ্রাম আইডি থেকে এমন পোস্ট এলে আপনার এমন প্রতিক্রিয়া হতেই পারে। এবার ক্যাপশনটা খেয়াল করুন। তা কোনো সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার, অথবা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিয়ে বেশ সচেতন কেউ লিখেছেন-- সে দাবি করার জোরালো কোনও উপায় নেই। যতিচিহ্নের প্রয়োগে খুব সতর্কতা নেই, বর্ণের ‘ক্যাপিটালাইজেশন’-এর কেমন অদ্ভুত ব্যবহার, তেমনি সংখ্যাটাও অনেকের কাছেই গোলমেলে ঠেকবে। 

    ১৯২৯ ঘন্টা। মানে ৭টা ২৯। এ পর্যন্ত ব্যাখ্যা করে আবারও আতি-পাতি করে আপনি হয়তো নিশ্চয়তা খুঁজছেন।

    আগের ছয় মাস কোনো পোস্ট আসেনি এই আইডি থেকে, এমনকি মাঝে পর্দায় তার চরিত্রে অভিনয় করা একজনের সঙ্গে ঘটে যাওয়া চূড়ান্ত ঘটনার পরও। সেই তিনি যখন এমন একটা ভিডিও পোস্ট করে লিখবেন, ‘১৯২৯ ঘন্টা’ থেকে আমাকে অবসর-নেওয়া-একজন হিসেবে বিবেচনা করবেন, আপনার প্রতিক্রিয়া ওপরের মতো হলে আপনাকে দোষ দেওয়া যায় কি? 

    তবে এরপরই হয়তো আপনার মাথায় আসবে, মাহেন্দ্র সিং ধোনি এমন করতেই পারেন। কোনও সংবাদ সংস্থা নিশ্চিত করবে তা। এবার বিদায়-ফেয়ারওয়েল-গুডবাইয়ের স্রোতের সঙ্গে পরিসংখ্যান, ছবি, নিজের সেরা মুহুর্ত-- হয়তো ওয়াঙ্খেড়ের মতো করে কান পাতলেই আপনি শুনবেন, নিঃশব্দ ছবিতেও মিশে আছে ‘ধোনি, ধোনি’। 

    সেটি ক্রমশ বাড়তে থাকবে।

    ____________


    সেই ইন্সটাগ্রাম পোস্টে ফিরে যান, খালেদ মাসুদ পাইলটকে দেখতে পাবেন আপনি। পরপর দুটি ছবিতে ধোনির অভিষেক ইনিংসে তার রান-আউটের ছবি। 

    মোহাম্মদ রফিকের বলটা স্কয়ার লেগে খেলে সিঙ্গেল নিতে চেয়েছিলেন, মোহাম্মদ কাইফ শুরুতে সাড়া দিলেও পরে ফিরিয়ে দিয়েছেন। তাপস বৈশ্য পড়ে যাওয়ার আগে থ্রো-টা করলেন, মাসুদ পড়ে যাওয়ার আগে ভাঙলেন স্টাম্প। এমএস ধোনি, অভিষেকে গোল্ডেন ডাক। 

    মাসুদ ১৬ আগস্ট ঢাকা থেকে রাজশাহী যাচ্ছেন। বিমানে চড়ার আগে একটা পোস্ট করলেন নিজের আন-অফিশিয়াল ফেসবুক পেইজ থেকে ধোনির একট ছবি দিয়ে, ‘গার্ড অফ অনার ফ্রম মাই হার্ট’। 

    রাজশাহী পৌঁছানোর পর তাকে পাওয়া গেল। একাডেমিতে যাবেন বিমানবন্দর থেকে সরাসরি, ফুটবল খেলার জন্য তৈরি হয়েই ঢাকা থেকে গেছেন সেখানে। ধোনির প্রথম ম্যাচের কথা বলতেই মাসুদ বলে উঠলেন, “রান-আউট হয়ে গেল”। “আমাকে একজন ভারতীয় সাংবাদিক ফোন করেছিলেন, আমার মাধ্যমে প্রথম রান-আউট হয়েছিল ধোনি, এটা নিয়ে আমার মনোভাব জানতে। সবাই তো আউট হবেই। আর ধোনি তো তখন আলাদা কেউ না, টেন্ডুলকার বা গাঙ্গুলি না।” 

    খুব স্বাভাবিকভাবে প্রায় একইরকম প্রতিক্রিয়া লম্বা-চুলের ধোনিকে দেখা সে ম্যাচে বাংলাদেশ অধিনায়ক হাবিবুল বাশার সুমনেরও, “যদি বলি, প্রথম দেখাতেই মনে হয়েছিল, এতো বড় ক্রিকেটার হবে, ভারতের এতো বড় অধিনায়ক হবে, তা তো না। সত্যি কথা বলতে চুলটাই আলাদা করে নজরে পড়েছিল। তেমন কিছু মনে হয় নাই। তবে ম্যাচের আগে যখন প্রতিপক্ষ নিয়ে স্টাডি হচ্ছিল, তখন আমাদের বলা হয়েছিল, এ হার্ড-হিটিং ব্যাটসম্যান। গেমপ্ল্যানের সময় এমন বলা হয়েছে, এটুকুই মনে আছে।”
     


    বাংলাদেশ দিয়ে শুরু হয়েছিল যার...


    তবে ধোনিকে আলাদা করে চিনতেন মোহাম্মদ আশরাফুল, “আমি তো প্রচুর খেলা ফলো করতাম। ও জাতীয় দলে আসার আগে নাইরোবিতে ভারত ‘এ’ দলের হয়ে খেলেছিল। সেঞ্চুরি করেছিল। তো আমি সেসব খেলা দেখেছিলাম। তখন থেকে আসলে একটু ভিন্ন মনে হয়েছিল। কারণ, তার আগে ভারতের যারা উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান সুযোগ পেতেন, তাদের চেয়ে ভাল ক্রিকেটার মনে হয়েছে।” 

    নব্বইয়ের দশকের মধ্যভাগ থেকে ধোনির আগে ভারতের ওয়ানডে দলের উইকেটকিপারদের নামের দিকে তাকান-- নয়ন মঙ্গিয়া, সাবা করিম, মান্নভ প্রসাদ, সামির দিঘে, বিজয় দাহিয়া, দীপ দাসগুপ্ত, অজয় রাত্রা, পার্থিভ প্যাটেল, দীনেশ কার্তিক, এবং এদের মাঝে রাহুল দ্রাবিড়! ১০ বছরে ১০ জন। শেষের জনকে অবশ্যই আপনি উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান বলবেন না। 

    অ্যাডাম গিলক্রিস্ট, কুমার সাঙ্গাকারায় মজে থাকা কেউ ভারতের উইকেটকিপারের লম্বা তালিকার দিকে তাকিয়ে ক্লান্ত হতেই পারেন। 

    ধোনি কেনিয়া ও পাকিস্তান ‘এ’ দলের সঙ্গে সেই ত্রিদেশীয় সিরিজে ম্যাচসেরা হয়েছিলেন। সে সিরিজটা সম্প্রচারিত হয়েছিল টেলিভিশনে। ভারত ‘এ’ কেনিয়ার সঙ্গে হেরেছিল, তবে পাকিস্তান ‘এ’-কে ফাইনালে হারিয়ে হয়েছিল চ্যাম্পিয়ন। ধোনির ওপেনিং সঙ্গী ছিলেন গৌতম গম্ভীর, ভারত ‘এ’ দলের অধিনায়ক ছিলেন সাইরাজ বাহুতুলে। পাকিস্তানের অধিনায়ক ছিলেন মিসবাহ-উল-হক। আশরাফুলেরে মতো কেউ কেউ ধোনিকে দেখেছিলেন সেবার।

    ধোনিকে শীঘ্রই দেখেছিল ক্রিকেট বিশ্ব। 

    ____________
     

    ধোনির যখন অভিষেক, ফেসবুক সে বছর মাত্র ‘প্রতিষ্ঠা’ করেছেন মার্ক জাকারবার্গ। ভারত তখনও পাকিস্তানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলে। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের খেলা হলে অনলাইনে, অথবা মাঠে বাড়তি ঝাঁঝের ব্যাপার আসেনি। ঢাকায় বাংলাদেশের ভেন্যু বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম, চট্টগ্রামে এম এ আজিজ। 

    ধোনি খেলেছিলেন, বাংলাদেশের বিপক্ষে এমন প্রথম ৪টি ম্যাচের ২টিই হেরেছিল ভারত। ঢাকায় তার দ্বিতীয় ম্যাচে, এরপর বিশ্বকাপে পোর্ট অফ স্পেনে। 

    “ততদিনে ধোনি তো প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে বলা যায় ভারত দলে। তবে তখনও তো অধিনায়ক হয়নি, যে ধোনি নিয়ে কথা বলছি আমরা এখন, সেটা তো অধিনায়ক হওয়ার পর। তখনও যে ধোনিকে আলাদা করে দেখব, তা ছিল না। তবে আমার মনে হয়, অধিনায়ক হওয়ার পরই ধোনির পরিপূর্ণতা”, বাশার ৩ বছর আগে-পরে ধোনিকে দেখেছিলেন এভাবে। 

    পোর্ট অফ স্পেনে ধোনি ক্যাচ দিয়েছিলেন রফিকের বলেই। ভারত বিদায় নিয়েছিল বিশ্বকাপ থেকে। ক্ষোভের আগুনে পুড়েছিল দ্রাবিড়দের ঘরবাড়ি, ধোনিও বাদ যাননি। সেই ইনস্টাগ্রাম পোস্টে একটা ছবি আছে, ধোনির ছবি পোড়ানো হচ্ছে। 

    ভারতে ফিরে তিনি রাঁচি ফিরতে পারেননি, তার বাড়ির সামনে তখন ক্ষুব্ধ জনতার ভীড়।

    টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ বা তখনকার আইসিসি ওয়ার্ল্ড টি-টোয়েন্টিতে ধোনি গেলেন অধিনায়ক হিসেবে। বিসিসিআই টি-টোয়েন্টিকে তখনও ‘সিরিয়াসলি’ নেয়নি, এমনকি তাদের প্রেসিডেন্টকে এ টুর্নামেন্ট খেলতে রাজি করাতে রীতিমতো ‘রাজনীতি’র আশ্রয় নিয়েছিলেন আইসিসির তখনকার প্রেসিডেন্ট এহসান মানি। টেস্টখেলুড়ে দেশগুলির মাঝে শুধু ভারতই একেবারে নতুন অধিনায়ক পাঠিয়েছিল সেবার। দলটাও ছিল মোটামুটি তরুণ। বিশ্বকাপ ভরাডুবির পর গ্রেগ চ্যাপেল চলে গেছেন, সে টুর্নামেন্টে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল লালচাঁদ রাজপুতকে। 

    শেষ ওভারে জোগিন্দর শর্মা নাকি হারভাজান সিং-- এমন দোলাচলের পর জোগিন্দরের হাতে বল দিয়েছিলেন ধোনি। মিসবাহর ডেথ-স্কুপ এরপর, তারপর ইতিহাস। জোগিন্দরের আন্তর্জাতিক অভিষেকও বাংলাদেশের বিপক্ষে, ধোনির সঙ্গে ওই একই ম্যাচে। 

    জোহানেসবার্গে ফাইনালের প্রেজেন্টেশনে রবি শাস্ত্রি ধোনিকে সম্বোধন করছিলেন ‘মাহেন্দ্র’ হিসেবে। ধোনি প্রতিটা প্রশ্নের জবাব দেওয়ার আগে শাস্ত্রির হাত থেকে মাইক্রোফোনটা নিয়ে নিচ্ছিলেন কেন-- সেটা নিশ্চিত নয়। শাস্ত্রিও যেন ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলেন না, কী করবেন। ধোনি প্রেজেন্টেশনে গিয়েছিলেন স্লিভলেস পরে। তা নিয়ে সমালোচনা হয়েছিল। 

    এবারও ভারত ফিরে রাঁচি যেতে পারলেন না ধোনি। সেখানে উল্লসিত জনতার ভীড়। 

    ধোনি বুঝে গেলেন, মাঠে কী হচ্ছে তা দিয়ে নিজেকে মূল্যায়ন করার চেষ্টা বৃথা। 

    তবে ধোনির ভারত সেই টুর্নামেন্টটা জিতে তর্কসাপেক্ষে এগিয়ে আনল আইপিএল নামের এক টুর্নামেন্ট, এরপর আক্ষরিক অর্থেই বদলে গেল ক্রিকেট। 

    ____________
     

    “এটা ৯০ শতাংশ ভাগ্য। আর ১০ শতাংশ স্কিল। তবে ওই ১০ শতাংশ বাদ দিয়ে চেষ্টা করতে যেও না।” 

    অধিনায়কত্ব নিয়ে রিচি বেনোর বিখ্যাত উক্তি। 

    কীসে হয় সেরা অধিনায়ক? যে কটা দিক দিয়ে ক্রিকেট অনন্য এক খেলা, অধিনায়কত্ব তার মধ্যে একটা। সেদিন স্কাই স্পোর্টসে মাইক আথারটনের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করছিলেন নাসের হুসেইন আর শেন ওয়ার্ন। হুসেইনের মনে করেন, মাঠে অধিনায়কের একটা ‘গাট ফিলিং’ থাকা চাই। যদি ভুলও হয়, যাতে সেটা নিজের ভুল হয়। ওয়ার্নের মতে, খেলার ধরনটা গুরুত্বপূর্ণ। দিনশেষে কেউ পরিসংখ্যান মনে রাখে না, মনে রাখে খেলার স্টাইল। 

    মাশরাফি বিন মুর্তজা অনেকবারই বলে এসেছেন, তিনি ভাগ্যে বিশ্বাস করেন প্রবলভাবে। আর অনেক সিদ্ধান্তের পেছনেই ‘মনে হয়েছে’ ধরনের ব্যাপার থাকে। তামিম ইকবালের মতে, মাশরাফির সঙ্গে একটা ‘জ্বীন’ আছে। হুসেইনের পর্যবেক্ষণ, এই গাট ফিলিং আপনার আসবে ‘পর্যাপ্ত পরিমাণ’-এ ম্যাচ খেলার পর। 

    ধোনিকে নিয়ে কথা হলে তাই ক্রিকেটের এই অনন্য অধিনায়কত্বের ব্যাপারটাই সবার আগে আসতে বাধ্য। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর চ্যাম্পিয়নস ট্রফি-- তিনটি বৈশ্বিক ট্রফি জেতা একমাত্র অধিনায়ক ধোনি। ভারতকে টেস্টের এক নম্বরেও তুলেছিলেন তিনি আইসিসি র‍্যাঙ্কিংয়ে। বাশার মনে করেন, আবেগ নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতাটাও গুরুত্বপূর্ণ অধিনায়কের জন্য, নাহলে পুরো দলের ওপর চাপ পড়ে। ধোনির সবচেয়ে বড় গুণ ছিল এটি।


    ধোনি জিতেছেন সবকিছুই


    টাইগার পতৌদির গল্প, কপিল দেবের ‘৮৩ বিশ্বকাপের রূপকথা, আজহারউদ্দিনের ‘পরে-গিয়ে-সবকিছু-নিয়ে-সংশয়’কালিন সময়ের পর গাঙ্গুলির দাদাগিরি-- মোটা-দাগে ভারতের অধিনায়কত্বের গল্প এমন। শচীন টেন্ডুলকার ফিট করে যেতে পারেননি, রাহুল দ্রাবিড়ের সঙ্গে গ্রেগ চ্যাপেল মিলে একটা খচখচে সময়ের পর অনীল কুম্বলের দ্বারস্থ হওয়া বলে দেয়, উইকেটকিপারের মতো অধিনায়কত্বেও থিতু হতে পারছিল না ভারত।

    কুম্বলের অবসরের পর ২০০৮ সালে পাকাপাকিভাবে টেস্ট অধিনায়কত্বও পেলেন ধোনি। ভারত থিতু হলো। ঘটলো চেন্নাই সুপার কিংস। 

    ধোনি হয়ে উঠলেন ভারত তথা বিশ্ব-ক্রিকেটের অন্যতম ‘ক্ষমতাধর ব্যক্তি’। সবচেয়ে ধনী ক্রিকেটার। চেন্নাইয়ের মালিক এন শ্রীনিবাসন বিসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট, পরে আইসিসিতে ‘বিগ-থ্রি’ ঘটাতে যাওয়ার অন্যতম হর্তাকর্তা। 

    ডিআরএস কিংবা দুই নতুন বলের নিয়ম-- ভারত ভেটো দিয়েছে বরাবর। ধোনিও প্রকাশ্যেই বিরোধিতা করে এসেছেন এসবের। ডিআরএস নিয়ে তিনি বলেছিলেন, “আমি যদি লাইফ-জ্যাকেট কিনি, যেটার কোনও ওয়ারেন্টি নেই, তাহলে সেটা একটু ঝামেলার। বিশেষ করে ডিআরএসে যখন বিশাল পরিমাণ টাকা খরচ করতে হচ্ছে আপনার। আমি এর জন্য কিছু ওয়ারেন্টি চাই। যখন এটা আসবে, তখন আমার আপত্তি থাকবে না”। 

    আপনি ধন্দে পড়ে যেতে পারেন, কোনও অধিনায়ক নাকি ক্রিকেট-প্রশাসক-- কে কথা বলছেন! 

    ২০১১ বিশ্বকাপে ভারতের কোচ ছিলেন গ্যারি কারস্টেন। তবে গ্রেগ চ্যাপেলই বলে গিয়েছিলেন, ধোনির মাঝে আলাদা কিছু দেখেছিলেন তিনি। বিসিসিআইও আস্থা রেখেছিল তার ওপর। এর চেয়ে বলা ভাল, শ্রীনিবাসনের আস্থাভাজন ছিলেন তিনি। তবে ক্রিকইনফোতে সিদ্ধার্থ মঙ্গা লিখেছিলেন, আর সবার মতো শ্রীনিবাসনের ফোনটাও ধোনি ধরতেন না। এমনকি একটা আলাদা ফোন দিয়ে হটলাইনের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন শ্রীনিবাসন, ফল হয়নি তাতেও। 

    ২০১১-১২ সালে নির্বাচকরা ওয়ানডে অধিনায়কত্ব থেকে বাদ দিতে চেয়েছিলেন ধোনিকে, ভেটো দিয়েছিলেন শ্রীনিবাসন। পরে সরে যেতে হয়েছিল নির্বাচককেই। গাঙ্গুলি ও দ্রাবিড়কেও ওয়ানডে দল থেকে বাদ দিতে ভূমিকা রেখেছিলেন ধোনি, পরে বলেছিলেন, তার দল কেমন চান সেটা নিয়ে পরিষ্কার তিনি, নির্বাচকদের জানিয়েছেন সেটাই। তবে গাঙ্গুলি বা দ্রাবিড়, দুজনের কেউই প্রশংসা করতে পিছপা হন না তার। 

    তার দল চেন্নাইকে দুর্নীতির অভিযোগে নিষিদ্ধও করা হয়েছিল আইপিএল থেকে। মুডগাল কমিটির সামনে ধোনিকে সাক্ষী দিতে যেতে হয়েছিল, পরে ‘নিস্কৃতি’ পেয়েছিলেন ‘সব অভিযোগ’ থেকে। 

    ____________
     

    “যতক্ষণে না দাঁড়ি বসছে, ততক্ষণে বাক্যটা পূর্ণ হয়নি”। ২০১১ বিশ্বকাপ ফাইনালের আগে বলেছিলেন ধোনি। 

    অধিনায়কত্ব যদি ক্রিকেটে অনন্য হয়, তাহলে ক্রিকেট-উন্মাদনায় ভারত অনন্য। সেই উন্মাদনাকে নতুন মাত্রা দিয়েছিলেন তিনি।  

    ইংল্যান্ডে আপনি রোলিং স্টোনের মিক জ্যাগার থেকে শুরু করে ‘হ্যারি পটার’ ড্যানিয়েল র‍্যাডক্লিফ বা ‘শার্লক’ বেনেডিক্ট কামারব্যাচকে গ্যালারিতে বসে খেলা দেখতে দেখবেন, ক্যামেরা হুট করে তাদের দিকে তাক করলে দেখবেন তারা গল্প করছেন বা হাততালি দিচ্ছেন। হয়তো এড শিরান বা ড্যামিয়েন লুইসের সঙ্গে গ্যারেথ সাউথগেটকে বিয়ার বা শ্যাম্পেন হাতে দেখবেন।  

    তবে ভারতের ক্ষেত্রে সেটা আলাদা। আইপিএলের কথা বাদ দিন, ২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালের পর শাহরুখ খান তাই মাঠে নেমে এসে সবাইকে আলাদা আলাদা করে জড়িয়ে ধরবেন, বেজে উঠবে চাক দে ইন্ডিয়ার থিমসং। ২০১১ বিশ্বকাপে আমির খান ভারতের পতাকা উঁচিয়ে ধরবেন, একটা গ্যালারিঠাসা বলিউড দেখবেন আপনি। একটু পর পর তাদের দিকে ক্যামেরা তাক করা হবে, মাঠ উল্লাস করে উঠবে। 

    কিন্তু, মাঠের সেই অ্যাকশন যেন শাহরুখ-আমিরদেরও সাধ্যের বাইরে। বলিউডে আর যাই হোক, চিত্রনাট্য থাকে, ‘মাল্টিপল-টেক’-এর অপশন থাকে। ক্রিকেটে থাকে না। লর্ডসের ব্যালকনিতে সৌরভ গাঙ্গুলির জার্সি খুলে পাকানো তাই ‘দাদাগিরি’র প্রতিক। 

    ২ এপ্রিল ২০১১ সালে ওয়াঙ্খেড়েতে মাহেন্দ্র সিং ধোনি যা করে দেখিয়েছিলেন, সেটি ছাপিয়ে গিয়েছিল সবকিছুকে। নিজেকে যুবরাজ সিংয়ের আগে তুলে এনেছিলেন ব্যাটিং অর্ডারে, বিশ্বকাপ-জ্বরে কাঁপতে থাকা একটা জাতির সামনে নিজেকে রেখেছিলেন আশ্চর্য রকমের নির্লিপ্ত। যেন এর জন্যই গড়া তার মনন। 

    নুয়ান কুলাসেকেরাকে ছয় মেরে ভারতকে ২৮ বছর পর বিশ্বকাপ এনে দিলেন, এরপর অন্য সবাই হয়তো ছুটতো দিগ্বিদিক, কিংবা গলা ফাটানো চিৎকারে ছাপিয়ে যেতে চাইত ওয়াঙ্খেড়ের গর্জন। ধোনির ব্যাটটা ক্ষণিকের জন্য থমকে দাঁড়ালো, এরপর সেটাকে তিনি ঘুরিয়ে আনলেন একবার তলোয়ারের মতো করে। ধোনির এই অ্যাকশনের পেছনে পরিচালক থাকলে সেটা তিনি নিজেই, তার ওই মুহুর্তের ‘মনে হওয়া’ এর কারিগর। অথবা আগে থেকে ভেবে রেখেছিলেন কী করবেন। 
     


    অ্যাকশন... কাট!


    অবসরের আগেই যে তাকে নিয়ে সিনেমা বানানো হবে, তাতেও বোধহয় তাই আশ্চর্য হওয়ার কিছু থাকেনা। 

    ধোনি সেদিন ম্যাচসেরা হয়েছিলেন। পুরো টুর্নামেন্টে ৩৪ না পেরুনো তিনি সেদিন অপরাজিত ছিলেন ৯১ রানে। ধোনি ‘ফিনিশ’ করে এসেছিলেন। জেতা ম্যাচে ওয়ানডে ইতিহাসে তার চেয়ে বেশি অপরাজিত আর কেউ থাকেননি এখন পর্যন্ত, তার চেয়ে বেশি রান করেননি কেউ। রানিং বিটুইন দ্য উইকেটেও ধোনি 'ফিনিশ' করতে পারতেন আগেভাগেই।

    ওয়ানডেতে ৫০-এর ওপরে গড়ে ১০ হাজার বা এর বেশি রান আছে মাত্র দুজনের- বিরাট কোহলি ও ধোনি। ধোনির এই গড়ের পেছনে যে ওই ‘ফিনিশ’ করে আসার অনেক বড় অবদান, তা তো না বললেও চলে! 

    ধোনি এবারও প্রেজেন্টেশনে গেলেন স্লিভলেস পরে, ঠিক ৪ বছর আগে জোহানেসবার্গের ‘বুল-রিং’-এ শাস্ত্রির সামনে যেভাবে গিয়েছিলেন। এবার আর শাস্ত্রির হাত থেকে মাইক্রোফোন নিয়ে নিলেন না, তবে সেখানেও মজা করলেন, ‘শ্রীশান্ত আর আশ্বিন’কে নিয়ে প্রশ্ন করা নিয়ে। 

    ততদিনে শাস্ত্রি আর ‘মাহেন্দ্র’ বলে সম্বোধন করেন না ধোনিকে, ধোনি হয়ে গেছেন ‘এমএস’। শাস্ত্রি প্রায়ই কথা শুরু করতেন এভাবে, ‘ওয়েল, এমএস’। ‘মাহি’ হয়ে গেছে ভারতের ‘গৃহস্থালি’ নাম। 

    ওয়াঙ্খেড়েতে ‘দাঁড়ি’ বসিয়ে বাক্যটা পূর্ণ করেছেন ধোনি।

    ____________

    লর্ডস, ২০১৪। 

    দ্বিতীয় ইনিংসে রবীন্দ্র জাদেজার বলে অদ্ভুত এক কান্ড করে বসলেন ধোনি। স্পিনে তিনি কিপিং করতে গেলেন সাধাণত মিডিয়াম পেসারের বলে কিপার যেখানে থাকেন, সেখানে। ভুবনেশ্বর কুমারের বলে স্টাম্পের ওপর আসছিলেন, বাঁহাতি ব্যাটসম্যান হলে জাদেজার বলে পিছিয়ে যাচ্ছিলেন। 

    কমেন্টেটররা ধন্দে পড়ে গেলেন। আদতে ধোনি কী করতে চাইছেন। এই ট্যাকটিকসের অর্থ কী, নাকি শুধুই ‘ফাঙ্কি’ হতে চাচ্ছেন তিনি! ধোনি পরে ব্যাখ্যা করেছিলেন তার এই পেছনে দাঁড়ানোর কারণ। আইন অনুযায়ী, লেগসাইডে বিহাইন্ড দ্য স্কয়ারে দুজন ফিল্ডার রাখা যাবে না। তবে ধোনি লেগ গালি ও লেগ স্লিপ, দুটির সঙ্গে রাখতে চাচ্ছিলেন ডিপ স্কয়ার লেগও। তিনজন যেহেতু রাখতে পারবেন না, তাই কোহলিকে লেগ-গালি থেকে স্কয়ারে নিয়ে গেলেন, নিজে পেছনে গেলেন। ফাইন-এজ হলে নিজে ধরবেন, থিক-এজ হলে কোহলি, আর সুইপ করলে ডিপের ফিল্ডার। 

    তবে এজন্য কট-বিহাইন্ড বা স্টাম্পিং-- স্পিনে উইকেটকিপিংয়ের মূল দুটি অস্ত্রকে সমীকরণ থেকে সরিয়ে নিলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত সে ট্যাকটিকস কোনও কাজে এলো না, শুধু হলো সমালোচনা। অবশ্য ধোনির এই কাজে অনুপ্রাণিত হয়ে কদিন পর টি-টোয়েন্টি ব্লাস্টে উস্টারশায়ার মইন আলির বোলিংয়ে খেলেছিল উইকেটকিপার ছাড়াই, মানে গ্লাভস-প্যাড খুলে বেন কক্স গিয়েছিলেন বাউন্ডারির কাছে। আইন বাধা দেয়না সেটিতেও। 
     


    'দ্য কুল'


    বেঙ্গালুরুতে ধোনির ট্যাকটিকস অবশ্য কাজে দিয়েছিল। ৩ বলে ২ রান, ২ বলে ২ সেট ব্যাটসম্যানের উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসার পর ১ বলে দরকার ২। স্ট্রাইকে শুভাগত হোম, নন-স্ট্রাইকে মোস্তাফিজুর রহমান, বোলিংয়ে হারদিক পান্ডিয়া। পান্ডিয়ার স্লোয়ার মিস করলেন শুভাগত, ধোনি আগে থেকেই প্রস্তুত ছিলেন এক হাতের গ্লাভস খুলে নিয়ে। বল ধরে থ্রো করলেন না, মোস্তাফিজের সঙ্গে ‘রেস’-এ নামলেন। জিতলেন। জন্ম নিল ধোনির অন্যতম ‘আইকনিক’ এক মুহুর্তের। 

    ধোনি উইকেটকিপিংয়ে বরাবরই চেষ্টা করেছেন ‘আউট-অফ-দ্য-বক্স’ কিছু করতে। যদিও পেছন না ঘুরেই থ্রো বা তীক্ষ্ণ স্টাম্পিং-- ধোনির আগেও করেছেন অনেক দক্ষ উইকেটকিপারই। তবে স্টাম্পিংয়ে ধোনি সব ফরম্যাট মিলিয়ে সবার চেয়ে এগিয়ে। 

    বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম সেরা উইকেটকিপার মাসুদ ধোনিকে উইকেটকিপার হিসেবে ‘টেকনিক্যালি সাউন্ড’ মনে করেন না, তবে বলেন ‘সেইফ-হ্যান্ড’। 

    “ধরেন ইংল্যান্ডের জ্যাক রাসেল ছিলেন। তার কিপিং দেখতেই মজা লাগত, এতো সুন্দর। ধোনির উইকেটকিপিং শৈল্পিক না। তবে মিস করে না। ব্যাটিং-ও তাই। ম্যাচ সেন্স ভাল। এই টেকনিক নিয়েই গোটা বিশ্বে কতো রান করেছে। আর অধিনায়কত্বে তো তার মতো ক্ষুরধার মস্তিস্ক আমি খুব বেশি দেখিনি।”

    ধোনির সঙ্গে খেলতে পেরে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করেন তিনি। 

    ধোনিকে নিজের একজন হিরো মনে করেন রাসেলের দেশের জস বাটলার। 

    ধোনি যেদিন অবসরের ঘোষণা দিলেন, সেদিন ভারতের স্বাধীনতা দিবস। চেন্নাই সুপার কিংসের মতে, যেখানে তারা ক্যাম্প করছেন, সেখানকার সূর্যাস্তের সময় ৭টা ২৯। 

    নিতান্ত কাকতাল হচ্ছে, ভারতের স্বাধীনতার ঠিক ১৬ বছর পর, একইদিনে জন্মেছিলেন রাসেল। 

    ____________


    কুইজ টাইম। 

    সামাজিক যোগাযোগ-মাধ্যমে নিজের অবসরের ঘোষণা দেওয়া প্রথম ‘কিংবদন্তী’ ভারতীয় ক্রিকেটার কে? 

    উত্তর- বীরেন্দর শেওয়াগ। 

    ক্রিকেট-ক্যারিয়ারে আজীবন ব্যাটিংয়ের টেকনিক-প্রচলিত পদ্ধতিকে বুড়ো আঙুল দেখানো শেওয়াগ নিজের ৩৭তম জন্মদিনে টুইটারে নিজের অবসরের ঘোষণা দিয়েছিলেন। শেওয়াগ দল থেকে বাদ পড়েছিলেন। ধোনি বাদ পড়েননি। বিশ্বকাপের পর স্বীকৃত কোনও ম্যাচই খেলেননি। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এক বছর পিছিয়ে গেছে, চল্লিশের ওপারে গিয়েও সুযোগ পাবেন, তেমনটা হয়তো ভাবেননি তিনি। 

    প্রচুর ‘হিউমার’ওয়ালা শেওয়াগ অবসরকেও দেখেছিলেন সেভাবেই। তিনি এ কাজটিও করেছিলেন নিজের মতো করে, ‘ডিড ইট মাই ওয়ে!’ শচীন টেন্ডুলকারের আত্মজীবনীর নামই ‘প্লেয়িং ইট মাই ওয়ে’। শেওয়াগ জ্যোতিষশাস্ত্রে বিশ্বাস করেন না বলে ওয়ানডেতে খেলতেন জার্সি নম্বর ছাড়াই। শচীনকে বেশ কয়েকবার অধিনায়কত্বের প্রস্তাব দেওয়া হলেও নেননি তিনি। 

    এসব উপাত্ত থেকে আপনি এ অনুসিদ্ধান্তে আসতেই পারেন, প্রত্যেকেরই আলাদা আলাদা ভঙিমা আছে, অন্তত যারা প্রচলিত নিয়মে আর দশজনের চেয়ে একটু আলাদা। শচীনের জন্য তাই আলাদা ম্যাচ আয়োজন করা হয়। শেওয়াগ বিদায় বলেন টুইটারে। ধোনি বিদায় বলেন অকস্মাত, ইনস্টাগ্রামে।
     


    সামরিক পোশাকে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা 


    ২০১৪ সালে টেস্টকেও তিনি বিদায় বলেছিলেন এভাবেই। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট ড্র করার পর একটা স্টাম্প তুলে নিয়ে ব্যাটিংয়ে সঙ্গী রবি আশ্বিনকে বলেছিলেন, “আই অ্যাম ডান”, “খেল খতম”। ২০১৩ থেকে ২০১৪ সালের ডিসেম্বর- এক বছরে ভারত হেরেছিল চারটি অ্যাওয়ে সিরিজ। ধোনি শুধু নেতৃত্ব নয়, ছেড়ে দিয়েছিলেন সে ফরম্যাটই। 

    ধোনি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে আলাদা করে কথা বলেন না। ২০০৮ সালের পর তার তেমন কোনও সাক্ষাতকার আপনি কোথাও পাবেন না। তবে সংবাদ সম্মেলনে তার ‘স্মরণীয়’ উক্তির অভাব নেই। কখনও সাংবাদিককে পাশে বসিয়ে তাকে দিয়েই তার প্রশ্নের উত্তর দিয়ে নিয়েছেন, কখনও ব্যবহার করেছেন সরল কিংবা অদ্ভুত উপমা-- “মরলেন তো মরলেন। কীভাবে মরলেন, তাতে কিছু যায় আসে না।” 

    অবসরের ক্ষেত্রে হয়তো ধোনিও তার সেই স্টাইলই অনুসরন করলেন। যাকে বুঝা যাবে না, যাকে নিয়ে আলোচনা চলবে, যাকে নিয়ে নির্দিষ্ট কোনও সিদ্ধান্তে আসা যাবে না। 

    ২০১৯ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে মার্টিন গাপটিলের থ্রোয়ের পর জায়ান্ট স্ক্রিনে ভেসে উঠছিল “ম্যাজিক থ্রি লেটার ওয়ার্ড”। ৩৫০তম ওয়ানডে, শুরুর মতো শেষেও রান-আউট, সবকিছু কেমন ছন্দময়। 

    শুরুর মতো শেষের পরও একটা রেকর্ডে বাংলাদেশ মিশে থাকলো ধোনির ক্যারিয়ারে। এক ভেন্যুতে সবচেয়ে বেশি রান করেছেন তিনি ঢাকায়, মিরপুরের শের-ই-বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে। 

    ____________

     

    ২০১১ বিশ্বকাপের পর সেনাবাহিনীর সাম্মানিক লেফট্যানেন্ট কর্নেল করা হয়েছিল ধোনিকে। সামরিক বাহিনীর প্রতি ধোনির আলাদা একটা টান আছে তার। জ্যাকেট থেকে শুরু করে ব্যাগ, ক্যাপ কিংবা কিপিং গ্লাভস-- সবকিছুতেই এর ছাপ থাকে। বিশ্বকাপে তার কিপিং গ্লাভসে সেই বাহিনীর প্রতিক ব্যবহার করতে দেওয়ার জন্য আইসিসির কাছে আলাদা করে অনুরোধও করেছিল বিসিসিআই, যেটি শেষ পর্যন্ত নাকচ হয়েছিল। 

    বিশ্বকাপের পর ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে সামরিক দায়িত্বও পালন করেছিলেন তিনি। এমনিতে জানুয়ারির এক তারিখে নিজের ব্যক্তিগত পিস্তল নিয়ে রেঞ্জে গিয়ে শুটিংয়ের ধারা মানেন। বাইকপ্রীতির সঙ্গে সামরিক-প্রীতিও প্রবল তার। 

    সেনাবাহিনীর এক অনুষ্ঠানেই ধোনি একবার দুই লাইন গেয়েছিলেন। এমনিতে কিশোর কুমারের ভক্ত, তবে সে গানটা ছিল মুকেশের, যার বাংলা অনুবাদ (ইংরেজি থেকে করা) এমন, “আমি মুহুর্তের কবি, আমার অস্তিত্ব ক্ষণিকের… আমার গল্প ক্ষণিকের...  কেউ যদি আমাকে মনে রাখত!
    ... কিন্তু কেন আমাকে মনে রাখবে, কেন এই ব্যস্ত পৃথিবী আমার জন্য সময় অপচয় করবে…” 

    ধোনির অবসরের ইন্সটাগ্রামে পোস্ট করা ভিডিওর ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজছিল এই গানটাই। তার উল্লেখিত সময়টাও সামরিক কায়দায় দেওয়া। অবসরপ্রাপ্ত বা ‘রিটায়ার্ড’-এর ক্ষেত্রে ইংরেজি বর্ণ ‘আর’ বড় অক্ষরে লিখেছেন তিনি, সাধারণত সামরিক বাহিনীর অবসপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা লেখেন বন্ধনীর মাঝে ছোট অক্ষরে। ধোনি ভারতের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলেছেন ‘শুধু’। ধোনির ইনস্টাগ্রাম আইডি হ্যাকড হয়নি। তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারটাকেই শুধু আর্কাইভড করলেন তিনি।