• ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ
  • " />

     

    উলভসের 'সিলভা-চমক' এবং ইউরোপের সবচেয়ে দামী ১০ টিনএজ ফুটবলারের গল্প

    উলভসের 'সিলভা-চমক' এবং ইউরোপের সবচেয়ে দামী ১০ টিনএজ ফুটবলারের গল্প    

    ক্লাব রেকর্ড ফি দিয়ে পোর্তোর টিনএজ সেনসেশন ফাবিও সিলভাকে দলে ভিড়িয়েছে উলভস। পর্তুগিজ কোচ নুনো এস্পিরিতো সান্তো উলভসের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই পর্তুগালের সেরা প্রতিভাগুলোকে ক্লাবটিতে নিয়ে আসার চেষ্টা করছেন। ডিওগো জটা, রুবেন নেভেস, জোয়াও মুতিনহোরা তার অধীনে খেলেই প্রিমিয়ার লিগে আলো ছড়াচ্ছেন।


    এবার ‘নেক্সট রোনালদো’ খ্যাত ১৮ বছর বয়সী ফাবিও সিলভাকেও মলিনক্সে আনলেন সান্তো। পাঁচ বছরের চুক্তিতে প্রায় ৪০ মিলিয়ন ইউরো খরচ করে তাকে দলভুক্ত করেছে উলভস। এই সুযোগে চলুন জেনে নেওয়া যাক দলবদলের বাজারে সবচেয়ে দামী টিনএজারদের সেরা দশজন কারা।

    ১. কিলিয়ান এমবাপে - মোনাকো থেকে পিএসজি - ১৮০ মিলিয়ন ইউরো

    ২০১৭ সালে মোনাকো থেকে মাত্র ১৮ বছর বয়সী এমবাপেকে দলে টানতে ১৮০ মিলিয়ন ইউরো খরচ করেছিল পিএসজি। কোনো টিনএজারের জন্য ফুটবল ইতিহাসে এর আগে এত অর্থ খরচ করেনি কোনো দল। মোনাকোকে লিগ জেতানো এমবাপের জন্য কাড়ি কাড়ি অর্থ খরচ করে অবশ্য লোকসান হয়নি পিএসজির। দ্রুতই পিএসজির সেটআপের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে নিজের সেরাটা দিয়ে খেলতে থাকেন এমবাপে। পিএসজিকে অসংখ্য শিরোপা এনে দিয়েছেন, ফ্রান্সের হয়ে বিশ্বকাপও জিতেছেন। মাত্র ২১ বছর বয়সে বিশ্ব ফুটবলের অন্যতম মুখ্য চরিত্র হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলেছেন এই তরুণ।

    ২. জোয়াও ফেলিক্স - বেনফিকা থেকে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ - ১২৬ মিলিয়ন ইউরো

    ২০১৮-১৯ মৌসুমে পর্তুগিজ ক্লাব বেনফিকার হয়ে তার উত্থান। ওই মৌসুমে ক্লাবটির হয়ে ২০ গোল করেছিলেন ফেলিক্স। বিশেষভাবে ইউরোপা লিগে তার কিছু গোল সবার নজরে এসেছিল। বার্সেলোনার কাছে আতোঁয়ান গ্রিজমানকে ছেড়ে দেওয়ায় তার বদলি হিসেবে কাউকে খুঁজছিল ডিয়েগো সিমিওনের অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ।


    ক্লাব রেকর্ড ১২৬ মিলিয়ন ইউরো খরচ করে তাকে বেনফিকা থেকে স্পেনের রাজধানীতে নিয়ে আসে অ্যাটলেটিকো। স্পেনে প্রথম মৌসুমটি খুব একটা ভালো যায়নি তার। চোট, নতুন পজেশন, ভিন্ন সেটআপ আর সিমিওনের দর্শনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে কষ্ট হয়েছিল। তবে মৌসুমের শেষদিকে এসে অ্যাটলেটিকোর জার্সিতে জ্বলে ওঠার প্রতিশ্রুতি দেখা গেছে তার খেলায়।

    ৩. মাথিয়াস ডি লিট - আয়াক্স থেকে জুভেন্টাস - ৮৫.৫ মিলিয়ন ইউরো

    আয়াক্সের টিনএজ অধিনায়ককে পাওয়াটা খুব সহজ ছিল না ইতালিয়ান চ্যাম্পিয়ন জুভেন্টাসের জন্য। বিশ্বের অন্যতম সেরা উঠতি সেন্টার ব্যাক, সঙ্গে দারুণ নেতৃত্বগুণ, তুরিনের কিংবদন্তি ডিফেন্ডারদের উত্তরসূরি হিসেবে ডি লিটের চেয়ে ভালো আর কে হতে পারত! তাই তো বার্সেলোনার ব্যাপক আগ্রহ থাকার পরও শেষ পর্যন্ত ৮৫ মিলিয়ন ইউরোর বেশি খরচ করে ডি লিটকে দলে টানার দৌড়ে জয়ী হয় জুভেন্টাস। ফেলিক্সের মতো নতুন ক্লাবে ডি লিটের প্রথম মৌসুমটাও ভালো কাটেনি। তবে সংশ্লিষ্টদের আশা, ২০২০-২১ মৌসুম দিয়ে আবারও ফর্মে ফিরবেন ডি লিট।

    ৪. অ্যান্থনি মার্শিয়াল - মোনাকো থেকে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড - ৬০ মিলিয়ন ইউরো

    ২০১৫ সালে ১৯ বছর বয়সী অ্যান্থনি মার্শিয়ালের জন্য যখন ৬০ মিলিয়ন ইউরো খরচ করেছিল ম্যান ইউনাইটেড, ব্রিটিশ মিডিয়া তখন সেটিকে ‘অর্থের অপচয়’ হিসেবে বর্ণনা করেছিল। ইউনাইটেডে মানিয়ে নিতে তার কিছুটা সময় লেগেছে, মাঝে জোসে মরিনহোর অধীনে সময়টা ভালো কাটেনি। অবশেষে ওলে গানার সোলশারের আমলে নিজেকে খুঁজে পেয়েছেন মার্শিয়াল। গত মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগে ৩২ ম্যাচ খেলে ১৭ গোল করেছেন মার্শিয়াল, নিজেকে ইউনাইটেডের মূল সেন্টার ফরোয়ার্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছেন। দেরিতে হলেও জ্বলে উঠেছেন মার্শিয়াল, অর্থটা একেবারে পানিতে ঢালেনি ইউনাইটেড।

    ৫. রদ্রিগো  - সান্তোস থেকে রিয়াল মাদ্রিদ - ৪৫ মিলিয়ন ইউরো

    সাম্প্রতিক সময়ে ব্রাজিলিয়ান তরুণ খেলোয়াড়দের দিকে নজর দিয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। ল্যাটিন আমেরিকার দেশটির সেরা তরুণ ফুটবলারদের ছেঁকে তুলে আনছে সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে। ২০১৮-১৯ মৌসুমে তাকে দলে অন্তর্ভুক্ত করে সেই মৌসুমের বাকি অংশ তাকে সান্তোসেই ধারে খেলিয়েছিল মাদ্রিদ। গত মৌসুমে মাদ্রিদের মূল দলের সঙ্গে যোগ দেন রদ্রিগো। ধীরে ধীরে মাদ্রিদের সেটআপের সঙ্গে মানিয়ে নিচ্ছেন এই তরুণ, মাদ্রিদে তার প্রথম মৌসুমে প্রতিশ্রুতিশীল খেলা দেখিয়েছেন তিনি।

    ৬. ভিনিসিয়ুস জুনিয়র - ফ্লামেঙ্গো থেকে রিয়াল মাদ্রিদ - ৪৫ মিলিয়ন ইউরো

    রদ্রিগোর আগে ভিনিসিয়ুসকেও ব্রাজিলের ঘরোয়া লিগ থেকে তুলে এনেছিল রিয়াল মাদ্রিদ। ২০১৮-১৯ মৌসুমে দুই গোল করেছিলেন এই তরুণ। মাঠে প্রাণবন্ত উপস্থিতি আর অ্যাথলেটিসিজম দিয়ে নজর কাড়লেও তার ফিনিশিংয়ে দুর্বলতা চোখে পড়ার মতো। তবুও মাদ্রিদের আশা, একসময় মাদ্রিদের আক্রমণভাগের দায়িত্বভার সামলাবেন ভিনিসিয়ুস-রদ্রিগোরা।


    ৭. ফাবিও সিলভা - পোর্তো থেকে উলভস - ৪০ মিলিয়ন ইউরো

    পোর্তোর ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সী ফুটবলার হিসেবে ২০১৯ সালে ১৭ বছর বয়সে অভিষেক হয় ফাবিও সিলভার। ২০১৮-১৯ মৌসুমে পোর্তোর অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ইউয়েফা ইয়ুথ লিগ জয়ে সামনে থেকে অবদান রেখেছিলেন তিনি। আর তখন থেকেই পর্তুগালের অন্যতম সেরা উঠতি তারকার তকমা পেয়ে যান সিলভা। যদিও গত মৌসুমে পোর্তোর হয়ে ২০ ম্যাচে মাত্র ৩ গোল করেছিলেন, তবে তার টেকনিক এবং বল পায়ে মুভমেন্ট উলভসের গতিময় আক্রমণভাগকে আরও ভয়ংকর করে তুলতে পারে। আর তরুণ খেলোয়াড়দের বিশ্বমানের করে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে হাতযশ রয়েছে উলভস কোচের।

    ৮. লুক শ - সাউদাম্পটন থেকে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড - ৩৭.৫ মিলিয়ন ইউরো

    জোসে মরিনহোর অধীনে ইউনাইটেডে ভুগতে হয়েছিল তরুণ লেফটব্যাক লুক শ-কে। তবে ওলে গানার সোলশার আসার পর ২০১৮-১৯ মৌসুমটি বেশ ভালো কেটেছিল তার, লিগে ২৯ ম্যাচে শুরু থেকে খেলেছিলেন। গত মৌসুমে ফর্ম না পড়লেও শেষ দিকে চোটে পড়ায় মৌসুমের শেষটা বাইরে থাকতে হয়েছে তাকে।


    ৯. ওয়েইন রুনি - এভারটন থেকে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড - ৩৭ মিলিয়ন ইউরো

    একসময় ব্রিটিশ ফুটবলের সবচেয়ে দামী টিনএজার ছিলেন ওয়েইন রুনি। এভারটন থেকে ম্যান ইউনাইটেডে আসার পর ক্লাবটির সর্বকালের সর্বোচ্চ গোল সংগ্রাহক হয়েছেন তিনি। পাঁচবার লিগ শিরোপা এবং একবার চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেছেন। ক্যারিয়ারের শেষের দিকে স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হয় তার। তবুও আধুনিক যুগে ইউনাইটেডের কিংবদন্তিদের কাতারেই রাখা হয় তাকে।

    ১০. রেনাতো সানচেস - বেনফিকা থেকে বায়ার্ন মিউনিখ - ৩৫ মিলিয়ন ইউরো

    রেনাতো সানচেসের বায়ার্ন মিউনিখ যাত্রাকে নির্দ্বিধায় এই তালিকায় সবচেয়ে ব্যর্থ দলবদলের তকমা দেওয়া যায়। বেনফিকায় ভালো পারফর্ম করছিলেন রেনাতো, ২০১৬ সালে পর্তুগালের ইউরো জয়েও উজ্জ্বল তারা হয়ে ছিলেন তিনি। সেসব দেখেই ৩৫ মিলিয়ন ইউরো খরচ করে তাকে দলে টেনেছিল বায়ার্ন। তরুণ খেলোয়াড়দের বেছে নিতে পটু বায়ার্নের এই সিদ্ধান্তটি মোটেই কাজে দেয়নি। জার্মান চ্যাম্পিয়নদের হয়ে চার মৌসুমে ৫৩ ম্যাচ খেলে মাত্র ২ গোল করেছিলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত সানচেসকে ফ্রেঞ্চ ক্লাব লিলের কাছে ছেড়ে দেয় বায়ার্ন। লিলে গিয়ে অবশ্য আবারও ফর্মে ফেরার ইঙ্গিত দিচ্ছেন তিনি।