• ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ
  • " />

     

    প্রিমিয়ার লিগে নতুনদের মাঝে যাদের দিকে থাকবে আলাদা নজর

    প্রিমিয়ার লিগে নতুনদের মাঝে যাদের দিকে থাকবে আলাদা নজর    

    শনিবার থেকে শুরু হচ্ছে প্রিমিয়ার লিগের নতুন মৌসুম। ক্লাবগুলো খেলোয়াড় বেচা-কেনার কাজে ব্যস্ত। তবে করোনাভাইরাসের কারণে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার দলবদলের বাজারে জৌলুস কম। চেলসি বাদে অন্য সব ক্লাবই রয়েসয়ে খরচ করছে এবার। তবে এরপরও নতুন মৌসুমের আগেই দারুণ কিছু খেলোয়াড়কে প্রিমিয়ার লিগে নিয়ে এসেছে, যাদের সামর্থ্য আছে প্রিমিয়ার লিগকে নিজেদের আলোয় আলোকিত করার। চলুন এমন কিছু নতুন প্রিমিয়ার লিগে আসা খেলোয়াড়দের সম্পর্কে জেনে নিই, ২০২০-২১ মৌসুমে যাদের দিকে চোখ রাখতে হবে।

    টিমো ভের্নার (চেলসি)

    ডিয়েগো কস্তা চেলসি ছেড়ে যাওয়ার পর স্ট্রাইকার পজেশনটি নিয়ে বেশ ভুগতে হয়েছে চেলসিকে। আলভারো মোরাতা, গনজালো হিগুয়াইন, অলিভিয়ের জিরুদের কাউকে দিয়েই কাজ হয়নি চেলসির। তাই দীর্ঘ সময় ধরে একজন ভালো স্ট্রাইকারের সন্ধানে ছিল দলটি। আর জার্মান ক্লাব লাইপজিগের গোলমেশিন টিমো ভের্নারকেই শেষ পর্যন্ত মনে ধরে ক্লাবটির। শেষ পর্যন্ত ৪৮ মিলিয়ন পাউন্ড খরচ করে তাকে দলে টেনেছে চেলসি।

    স্টুটগার্টের একাডেমি থেকে উঠে আসা ভের্নার ২০১৬ সালে লাইপজিগে যোগ দেন। প্রথম মৌসুমেই বুন্দেসলিগায় ২১ গোল করে সাড়া ফেলে দেন এই ফরোয়ার্ড। এরপর থেকে শুধু ছুটেই চলেছেন এই জার্মান স্ট্রাইকার। গত মৌসুমে ৪৫ ম্যাচ খেলে ৩৪ গোল করেছেন, একটা সময় গোলের দিক দিয়ে বায়ার্ন গোলমেশিন রবার্ট লেভানডফস্কিকে পাল্লা দিয়েছেন তিনি। প্রিমিয়ার লিগের গতিময়তার সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারলে চেলসির আক্রমণভাগের পুরোধা হতে খুব বেশি সময় লাগার কথা নয় তার। আর আশপাশেও পাচ্ছেন কাই হাভার্জ, হাকিম জিয়েখ, ক্রিশ্চিয়ান পুলিসিচ, ম্যাসন মাউন্টদের মতো দারুণ সব প্রতিভাদের।

    হাকিম জিয়েখ (চেলসি)

    ২০১৮-১৯ মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগের সেই বিখ্যাত আয়াক্স দলের অন্যতম সদস্য জিয়েখ। গতি, টেকনিক, ফিনিশিং, বুদ্ধিদীপ্ত পাসিং; আক্রমণভাগের সেরা খেলোয়াড় হতে যেসব গুণাবলী থাকা প্রয়োজন তার সবই আছে এই মরোক্কানের মাঝে। আয়াক্সের মতো ২০১৮-১৯ মৌসুমটি তারও স্বপ্নের মতোই কেটেছে। সেই মৌসুমে ৪৯ ম্যাচ খেলে ২১ গোল করেছিলেন তিনি, আর সব মিলিয়ে চার মৌসুমে আয়াক্সের হয়ে ১৬৫ ম্যাচ খেলে করছিলেন ৪৯ গোল।


    অভিজ্ঞ রাইট উইঙ্গার উইলিয়ান আর্সেনালে চলে গেছেন। তাই নতুন মৌসুমে জিয়েখের ওপর দায়িত্ব এবং প্রত্যাশা দুটিই বেশি থাকবে।

    রদ্রিগো মোরেনো (লিডস ইউনাইটেড)

    ৩০-এ পা দিতে যাওয়া একজন ফুটবলারের জন্য ৩০ মিলিয়ন ইউরো খরচ করেছেন মার্সেলো বিয়েলসা। অনেকেই প্রশ্নবোধক চিহ্ন জুড়ে দিয়েছেন দলবদলটির সঙ্গে। তবে আদতে বিয়েলসা আসলে দারুণ একজন খেলোয়াড়কেই দলে টেনেছেন। বিয়েলসার খেলার ধরনেও সঙ্গে মানিয়ে নিতেও খুব বেশি অসুবিধা হওয়ার কথা নয় তার। আক্রমণভাগের যেকোনো পজেশনেই খেলতে পারেন, কাউন্টার অ্যাটাকে প্রতিপক্ষের জন্য মূর্তিমান আতঙ্ক হয়ে উঠতে পারেন এই স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড।

    কাই হাভার্জ (চেলসি)

    বায়ার লেভারকুজেনের এই ২১ বছর বয়সী প্লেমেকারকে দলে টানতে বেশ কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে চেলসিকে। দীর্ঘ সময় দরকষাকষি করেও লেভারকুজেনের কাছ থেকে তার ড্যাম একরত্তিও কমাতে পারেনি তারা। ক্লাব রেকর্ড ৮০ মিলিয়ন ইউরো খরচ করেই শেষ পর্যন্ত তাকে প্রিমিয়ার লিগে নিয়ে এসেছেন। প্রতিভাবান তারুণে ঠাঁসা চেলসির আক্রমণভাগকে হাভার্জের সংযোজন আরও ভয়ংকর করে তুলবে।


    মাত্র ২১ বছর বয়স হলেও জার্মান জাতীয় দল এবং বুন্দেসলিগায় নিয়মিত খেলার অভিজ্ঞতা হয়ে গেছে তার। অ্যাটাকিং মিড থেকে নিয়ে নাম্বার টেন অথবা প্রয়োজনের রাইট উইংয়েও খেলতে পারেন হাভার্জ। নিঃসন্দেহে ২০২০-২১ মৌসুমে ফুটবলের ভক্তদের চোখ থাকবে এই জার্মানের ওপর, দীর্ঘমেয়াদে চেলসির জন্য অনেক কার্যকরী হয়ে উঠতে পারেন তিনি।

    ফেরান তোরেস (ম্যানচেস্টার সিটি)

    স্প্যানিশ ক্লাব ভ্যালেন্সিয়া থেকে ২০ মিলিয়ন পাউন্ড খরচ করে ফেরান তোরেসকে দলে টেনেছে ম্যানচেস্টার সিটি। মৌসুমজুড়ে স্পেনে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখানোর পর পেপ গার্দিওলার নজরে এসেছিলেন এই তরুণ উইঙ্গার। নিজের ২০ তম জন্মদিনের আগেই সিনিয়র পর্যায়ে একশ-র বেশি প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলা হয়ে গেছে তোরেসের।


    আরও পড়ুন

    লিভারপুল থেকে লিডস : প্রিমিয়ার লিগে এবার যা যা অপেক্ষা করছে আপনার জন্য


    গত মৌসুমে লা লিগায় ৩৪ ম্যাচে মাঠে নেমেছেন তিনি। চ্যাম্পিয়নস লিগেও ৬ ম্যাচ খেলেছিলেন তোরেস। সবমিলিয়ে গত মৌসুমে ৬ গোল এবং ৮ অ্যাসিস্ট করেছেন তিনি। গোল-অ্যাসিস্টের পরিসংখ্যান অবাক করা না হলেও তার সক্ষমতা নিয়ে কারও কোনও সন্দেহ নেই। ভ্যালেন্সিয়ার অ্যাকাডেমি পরিচালক হোসে হিমেনেজের মতে, তোরেস তার খেলা দিয়ে যে কাউকে ‘অবাক করে দিতে পারে’। ভ্যালেন্সিয়ার স্থানীয় পত্রিকা লাস প্রভিন্সিয়াসের ফুটবল সাংবাদিক পেদ্রো কাম্পোসের মতে, সে ‘বিস্ফোরক’। এককথায় ইউরোপিয়ান ফুটবলের উঠতি তাঁরাদের মাঝে অন্যতম এই তোরেস।

    তোরেসের সক্ষমতা নিয়ে বলতে গিয়ে তাকে অসাধারণ উইঙ্গার হিসেবে বর্ণনা করেন কাম্পোস, “সে একজন বিশুদ্ধ উইঙ্গার। সে আক্রমণে ওঠার নিজের শক্তি এবং দক্ষতার পূর্ণ ব্যবহার করে। খেলোয়াড়দের পাশ দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া, ড্রিবলিং এবং নিখুঁত হেডার তার বিশেষত্ব। রক্ষণে কিছুটা দুর্বল সে, আক্রমণে উঠলে সেখান থেকে ফরে নিজের জায়গা কাভার করতে কিছুটা কষ্ট হয় তার। তবে আক্রমণে সে ইউরোপের সবচেয়ে বিস্ফোরক খেলোয়াড়দের একজন, আর আক্রমণটাই তো তার মূল কাজ।”

    ডনি ভ্যান ডি বিক (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড)

    গত মৌসুমে দলবদলের বাজারে কম অর্থ ঢালেনি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। তবে এক ব্রুনো ফার্নান্দেজ বাদে আর কেউই তেমন ধারাবাহিক ছিলেন না। তবে  ব্রুনোর মতোই কার্যকরী হয়ে উঠতে পারেন ৪০ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে আয়াক্স  থেকে ওল্ড ট্রাফোর্ডে আসা মিডফিল্ডার ভ্যান ডি বিক।


    আক্রমণভাগে সদা জাগ্রত, মুভমেন্টে বেজোড় এবং অত্যন্ত পরিশ্রমী খেলোয়াড় হিসেবে খ্যাতি রয়েছে ডি বিকের। ম্যাচের প্রায় পুরো সময় একই তালে প্রেস করেও যেতে পারেন। ২০১৮-১৯ মৌসুমে আয়াক্সের সাফল্যের পেছনে বড় অবদান ছিল ভ্যান ডি বিকের। গত মৌসুমের শেষভাগে ইউনাইটেডের আক্রমণভাগকে বেশ জ্বলে উঠতে দেখা গেছে। মিডফিল্ডে ব্রুনো-ফ্রেডরা কলকাঠি নেড়েছেন, আক্রমণে রাশফোর্ড-মার্শিয়ালরা আলো ছড়িয়েছেন। আর এই সমন্বয়ের মাঝে আরেকজন তরুণ সম্ভাবনাময় মিডফিল্ডারের উপস্থিতি আক্রমণের ধার বাড়িয়ে দেবে বহুগুণ। তাই এই মৌসুমে এখন পর্যন্ত ইউনাইটেডের তরুণ ডাচ মিডফিল্ডারের দিকেও দৃষ্টি রাখতে হবে ২০২০-২১ মৌসুমে।

    হামেস রদ্রিগেজ (এভারটন)

    ২০১৪ বিশ্বকাপের পর থেকে ক্যারিয়ার শুধু নিচের দিকেই গেছে কলম্বিয়ান হামেস রদ্রিগেজের। রিয়াল মাদ্রিদ, বায়ার্ন মিউনিখ হয়ে এখন আবারও ফিরেছেন প্রিয় কোচ কার্লো আনচেলত্তির দলে। রিয়াল অথবা বায়ার্নের মতো দলগুলোতে প্রত্যাশার ভার অনেক বেশি ছিল তার ওপর। সেই চাপ আর চোটের মিশেলে সময়টা খুব ভালো যায়নি হামেসের। অবশেষে প্রিমিয়ার লিগে এসেছেন, তবে তথাকথিত কোনো বড় ক্লাবের হয় নয়, মিডটেবিল দল এভারটনে।

    নতুন এই চ্যালেঞ্জের জন্য তিনি কতটা তৈরি, সেটা নিয়ে কারও কারও সন্দেহ থাকতে পারে। তবে তার ভিশন, মধ্যমাঠ থেকে খেলা গড়ে দেওয়ার সক্ষমতা আর দর্শনীয় সব ফিনিশের জোরে এভারটনে নিজের সেরা সময় ফিরে পাওয়ার দারুণ একটা সুযোগ পেয়েছেন এই কলম্বিয়ান। সেটা কতটা কাজে লাগাতে পারেন তিনি, সেটা দেখতে চোখ রাখতে হবে তার দিকেও।