• ফ্রেঞ্চ লিগ ওয়ান
  • " />

     

    প্যারিসের কুরুক্ষেত্রে নেইমারসহ লাল কার্ড দেখলেন ৫ জন

    প্যারিসের কুরুক্ষেত্রে নেইমারসহ লাল কার্ড দেখলেন ৫ জন    

    পিএসজি-মার্শেইয়ের ম্যাচ ফ্রান্সের বিখ্যাত ডার্বি। কিন্তু লে ক্লাসিকের শেষে ফুটবল আর শিরোনাম হলো না। প্যারিস ফুটবলের বদলে দেখল কুরুক্ষেত্রে। নির্ধারিত সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর রেফারি দুই দলের মোট ৫ জন খেলোয়াড়কে দেখিয়েছেন লাল কার্ড। পিএসজির ৩ জনের ভেতর আছেন নেইমারও দেখেছেন লাল কার্ড। সবমিলিয়ে পুরো ৯০ মিনিটে রেফারিকে হলুদ কার্ডই দেখাতে হয়েছে মোট ১৭ বার। যুদ্ধ যুদ্ধ ম্যাচ ঘরের মাঠে মার্শেইয়ের কাছে ১-০ গোলে হেরেছে পিএসজি। এই নিয়ে লিগ আঁ-তে টানা দ্বিতীয় ম্যাচ হারল ফ্রেঞ্চ চ্যাম্পিয়নরা।

    মার্শেইয়ের আলভারো গঞ্জালেজের মাথায় পেছন থেকে চড় বসিয়ে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছেড়েছেন নেইমার।  ম্যাচ শেষে নেইমার দাবি করেছেন মাঠে তার কাছ থেকে বর্ণবাদী মন্তব্যের শিকার হয়েছেন তিনি। যদিও অগ্নজালেজ নেইমারের দাবি উড়িয়ে দিয়েছেন।

    টুইটারে করা পোস্টে গঞ্জালেজের শাস্তিও দাবি করেছেন ব্রাজিলিয়ান ফুটবলার। ম্যাচের পরে নেইমার গঞ্জালেজকে উদ্দেশ্য করে টুইটারে লিখেছেন, "আমার একমাত্র আফসোস ওর পেছনে ঘুষি না মেরে সামনে মারতে না পারা।"


    যেভাবে যুদ্ধে পরিণত হলো ম্যাচ
    দুই দল শুরুর থেকেই বেশ শরীর নির্ভর ফুটবল খেলছিল। ম্যাচের প্রথম ১৩ মিনিটেই রেফারি হলুদ কার্ড দেখিয়েছিলেন ৪ বার। ১১ মিনিটে নেইমার আর দিমিত্রি পায়েত বল দখলের লড়াইয়ে হাতাহাতি করে দুইজনই হলুদ কার্ড দেখেন।

    এগিয়ে থেকেই বিরতিতে গিয়েছিল মার্শেই। কিন্তু মার্শেই ডিফেন্ডার গঞ্জালেজের সঙ্গে তার আগে থেকেই বাদানুবাদ শুরু হয়েছিল নেইমারের। বিরতির সময়ও নেইমারকে টিভিতে "বর্ণবাদ" শব্দটি ব্যবহার করতে শোনা গেছে। দ্বিতীয়ার্ধেও দুই দলের খেলায় আঁচ কমেনি। 
     


    যোগ করা সময়ের পঞ্চম মিনিটে (৯৫) মার্শেইয়ের একটি গোলকিকের আগেও নেইমার আর গঞ্জালেজ কথা কাটাকাটি করছিলেন। এরপর ওই গোলকিকের দখক নিতে মাঝমাঠে দারিও বেনেদেত্তো গুঁতো মেরে বসেন স্বদেশী লিয়ান্দ্রো পারেদেসকে। দুই আর্জেন্টাইনের ওই ঘটনা দিয়েই মুহুর্তেই ম্যাচ পরিণত হয়ে যায় যুদ্ধে।

    পারেদেস বেনেদেত্তোর ধাক্কায় পড়ে গিয়ে সঙ্গে সঙ্গে উঠে তার ওপর চড়াও হন। এই নিয়ে হাতাহাতি শুরু হয়ে যায় দুইদলের খেলোয়াড়দের। জটলার ভেতর অন্যদিকে মার্শেইয়র জর্ডান আমাভি আর  পিএসজির  লেভিন কুরযাওয়া দুইজনই একে অপরকে লাথি মেরে বসেন। রেফারি সঙ্গে আমাভি,কুরযাওয়া, পারেদেস, বেনেদেত্তো সবাইকেই লাল কার্ড দেখিয়ে মাঠ থেকে বের করে দেন।

    নেইমারের কান্ড অবশ্য রেফারি নিজে দেখেননি। ভিএআরের পরামর্শে মাঠের বাইরে গিয়ে রিপ্লে দেখে পরে নেইমারকেও মাঠ ছাড়া করেন তিনি।

    ১৭ হলুদ কার্ড লিগ আঁ-র একবিংশী শতাব্দীর ইতিহাসে এক ম্যাচে সর্বোচ্চ।

    কী বলছেন নেইমার?
    ম্যাচের পর পর দুই ঘন্টার ব্যবধানে নেইমার টুইট করেছেন দুইটি। প্রথম টুইটে লিখেছেন, "আমার একটাই আফসোস অ্যা**লের মুখে মারা উচিত ছিল ঘুষিটা।" প্রথম টুইটটি নেইমার করেছিলেন ম্যাচ শেষের পরপর।

    এর প্রায় আরও বেশ কিছুক্ষণ পর নেইমার গঞ্জালেজের শাস্তি দাবি করেছেন। সমালোচনা করেছেন ভিএআরেরও। লিখেছেন, "ভিএআর দিয়ে আমার সিংস্রতা বিচার করা সহজ। এখন আমি চাই যে বর্ণবাদী আমাকে মাঠে  "বানর মা**দ বলে গালি দিল তার ছবিটাও সামনে আসুক। এরপর? আমি রেইনবো ফ্লিক করলে, আমাকে শাস্তি দেওয়া হয়। আমি চড় দিলে মাঠ থেকে বের করে দেওয়া হয়। ওদের কী হবে? এখন ওদের কী হবে?"



    মার্শেই কোচ বলছেন বর্ণবাদে জায়গা নেই ফুটবলে
    মার্শেই কোচ আন্দ্রেস ভিয়াস বোয়াসের কপালটা মন্দই বলতে হবে। ২০১১ সালের পর প্রথমবারের মতো পিএসজিকে হারিয়েছে মার্শেই। এই জয়টা তার জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকার কথা ছিল। কিন্তু ম্যাচ শেষে সেসব ম্লান হয়ে গেছে। ম্যাচ শেষে তিনি অবশ্য নেইমারের দাবি নিয়ে কিছুটা সংশয়ই প্রকাশ করেছেন, "ফুবটলে বর্ণবাদের জায়গা নেই। অবশ্য বরদাশত করা উচিত না। কিন্তু আমার মনে হয় না ম্যাচে এমন কিছু ঘটেছে। যদিও আমি এখনও নিশ্চিত নই। আমাকে আরও যাচাই করতে হবে।"

    ম্যাচ কেমন হলো?
    করোনাভাইরাস থেকে সেরে ওঠার পর নেইমার, আনহেল ডি মারিয়া দুইজনই ছিলেন পিএসজির একাদশে। তবে তাদের কেউই তেমন ছন্দে ছিলেন না।

    ৩১ মিনিটে পায়েটের ফ্রি কিক থেকে কোণাকুণি ভলিতে গোল করেন থোভান। দ্বিতীয়ার্ধে পিএসজির আক্রমণে ধার বেড়েছিল যদিও। তবে মার্শেই গোলরক্ষক স্টিভেন মাঁদাদার অন্তত দুইটি দারুণ সেভ পিএসজিকে আর ম্যাচে ফিরতে দেয়নি। এর ভেতর নেইমারও একবার স্লাইড মেরে গোলের সামনে থেকে বল জালে জড়াতে ব্যর্থ হয়েছেন। দ্বিতীয়ার্ধে বেনেদেত্তো, ডি মারিয়া দুইজনেরই একটি করে গোল বাতিল হয়েছে ভিএআরে।

    এই নিয়ে ৩৬ বছর পর লিগ আঁ-তে লিগের প্রথম দুই ম্যাচেই হারল পিএসজি। ৩৬ বছর আগে সেবার লিগে ১৩-তম হয়ে শেষ করেছিল প্যারিসিয়ানরা। লঁসের সঙ্গে লিগের প্রথম ম্যাচেও কোনো গোল করতে পারনি থমাস তুখলের দল। লিগের দুই ম্যাচে কোনো গোল করতে না পেরে হারের ঘটনা পিএসজি দেখেছিল সবশেষ ১৯৭৮ সালে। চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনাল খেলার ২১ দিন পর পিএসজির এই ফর্ম তুখলের জন্য দুশ্চিন্তার কারণও।

    পিএসজি-মার্শেই সাম্প্রতিক রেষারেষি
    দুই ক্লাবের রেষারেষির ঐতিহ্য পুরোনো। বয়সে পিএসজির মার্শেইয়ের তুলনায় নবীন ক্লাব। ১৯৯৩ সালে ফ্রান্সের প্রথম দল হিসেবে চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেছিল মার্শেই। এবার পিএসজি চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে ওঠার পর মার্শেই আর পিএসজি সমর্থকদের ঝাঁঝ বেড়েছিল আরেক দফা। চ্যাম্পিয়নস লিগর ফাইনালের দিন পরে বাধ্য হয়ে মার্শেই পুলিশ ওই শহরে পিএসজির জার্সি নিষিদ্ধ করেছিল। এর আগে সেমিফাইনালে পিএসজি সমর্থকদের হেনস্তা করার অভিযোগ উঠেছিল একদল মার্শেই সমর্থকদের বিরুদ্ধে।

    চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে পিএসজির হারের পর মার্শেই সমর্থকেরা উল্লাস করেই শিরোনাল হয়ে গিয়েছিল। মার্শেইতে সে রাতে আতশবাজি ফুটিয়ে আর রাস্তায় মিছিল করে পিএসজির হার উদযাপন করেছিলেন সমর্থকেরা। সাম্প্রতিক এসব ঘটনা ম্যাচের আগেই ক্লাসিকের উত্তাপ বাড়িয়ে গিয়েছিল আরও বেশি।