বোলারদের ম্যাচে মাহমুদউল্লাহ একাদশকে পার করালেন মুমিনুল-সোহান
তামিম একাদশ ১০৩ অল-আউট, ২৩.১ (৪৭) ওভার (তানজিদ তামিম ২৭, বিজয় ২৫, মাহাদি ১৯, রুবেল ৩/১৬, সুমন ৩/৩১, মিরাজ ২/২, বিপ্লব ২/১৭)
মাহমুদউল্লাহ একাদশ ১০৬/৫, ২৭ (৪৭) ওভার (সোহান ৪১*, মুমিনুল ৩৯, সাইফউদ্দিন ২/৮, তাইজুল ২/২৭, মোস্তাফিজুর ১/১৪)
মাহমুদউল্লাহ একাদশ ৫ উইকেটে জয়ী
বোলারদের ম্যাচ। প্রেসিডেন্টস কাপে দ্বিতীয় ম্যাচকে এক কথায় বলা যায় এটিই। ১০৩ রানে গুটিয়ে যাওয়ার পর মাহমুদউল্লাহ একাদশকে এক সময় ০ রানে ৩ উইকেটে পরিণত করে রোমাঞ্চ জাগিয়েছিল তামিম একাদশ। তবে মুমিনুল হকের পর নুরুল হাসান সোহান পার করেছেন মাহমুদউল্লাহ একাদশকে। অবশ্য দুজনকেই আউট করার সুযোগ পরে নিতে পারেননি তামিমরা।
বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে টসে হেরে ব্যাটিং করা তামিমদের ইনিংস ছিল যেন ভিডিও গেমের মতো, এবড়োথেবড়ো পথে দৌড়াতে গিয়ে বারবার হোঁচট খেয়ে যেন প্রথম লেভেলটাই পেরুনো হলো না। অবশ্য পথটা যে খুব এবড়োথেবড়ো ছিল তা নয়, তবে তামিম একাদশের ব্যাটসম্যানরা হোঁচট খেয়েছেন বারবার। ফল-- ৪৭ ওভারে নেমে আসা ইনিংসেরও অর্ধেক না পেরুতেই অল-আউট তারা।
মাহমুদউল্লাহদের ইনিংসের শুরুতেও একই দশা, ব্যাটসম্যানরা যেন হাঁটছিলেন সে পথেই। মোস্তাফিজের প্রথম বলটা ফুললেংথ থেকে ভেতরের দিকে ঢুকছিল, নাইম শেখ এলবিডব্লিউ হয়েছেন তাতেই। এরপর সাইফউদ্দিনের নিচু হওয়া বলে নাগাল পাননি লিটন দাস, আউট হওয়ার পর হতাশায় ব্যাটটা আছাড়ই মেরেছিলেন এই ওপেনার। ইমরুল কায়েস এরপর কাভারে মোহাম্মদ মিঠুনের দারুণ ক্যাচের শিকার।
ঝড় সামলে সবকিছু একটু শান্ত করতে হতো মাহমুদউল্লাহ-মুমিনুলকে, সেটিই করছিলেন তারা। মাহমুদউল্লাহ রান করা নিয়ে তেমন মরিয়া হননি, মুমিনুল অবশ্য সুযোগ পেলে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছিলেন। ৭ম ওভারে সাইফকে ফ্লিক করে প্রথম চারটি মেরেছিলেন তিনিই। তাদের টিকে থাকাই সব, ম্যাচের পরিস্থিতি তখন এমন। দুজন মিলে টিকলেন প্রায় ১১ ওভার, তাইজুল এসে ফেরালেন মাহমুদউল্লাহকে। রাউন্ড দ্য উইকেট থেকে ভেতরের দিকে ঢোকা বলে ফ্রন্টফুট ক্লিয়ার করে খেলতে গিয়ে মিস করেছিলেন অধিনায়ক।
১০ম ওভারে মাহাদি হাসানকে এনে দুই স্লিপ এনেছিলেন তামিম, তবে দ্বিতীয় স্লিপ সরে নেওয়ার পরই মুমিনুল ক্যাচ তুলেছিলেন সেখানে। তামিম একাদশ সুযোগ হাতছাড়া করেছে আরও, ১ রানেই সোহান ক্যাচ তুলেছিলেন, আগে দারুণ এক ক্যাচ নেওয়া মিঠুন এবার স্লিপে ছেড়েছেন সহজ একটি। সে ক্যাচ নিলে ৪০ রানেই ৫ উইকেটে পরিণত হতে পারত মাহমুদউল্লাহ একাদশ।
সোহান-মুমিনুলের জুটিতে উঠেছে ৩৮ রান, ম্যাচের প্রেক্ষাপটে যা বেশ মূল্যবানই। তাইজুলের ভেতরের দিকে ঢোকা বলে কাট করতে গিয়ে স্টাম্পে বল ডেকে এনে ফিরতে হয়েছে মুমিনুলকে, ৬২ বলে ৩৯ রান করেছেন তিনি ৬ চারে।
তামিম এরপর আবার ভীড়েছেন মোস্তাফিজের কাছে, এরপর এনেছেন সুপার সাব লেগস্পিনার মিনহাজুল আফ্রিদিকে। উহ, আহ ছাড়া এরপর আর কিছু ছিল না তামিমদের জন্য, শেষদিকে সোহান ২৯ রানে ক্যাচ তুলেছিলেন, মিডউইকেটে সামনে ডাইভ দিয়ে নাগাল পেলেও রাখতে পারেননি শাহাদাত হোসেন দিপু। সোহান শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ছিলেন ৩৮ বলে ৪১ রানে, ৬টি চারের সঙ্গে মেরেছেন ১টি ছয়।
মোস্তাফিজ-সাইফউদ্দিন পরের ইনিংসে যা করলেন, প্রথম ইনিংসে শুরুতে সেটি করেছিলেন রুবেল হোসেন, এরপর সুমন খান। আগেরদিন বৃষ্টি নেমেছিল প্রথম ইনিংসের ৩ ওভার পর, এদিনও তাই। এদিন অবশ্য বৃষ্টির আগেই পড়েছে উইকেট। তামিম ইকবাল হয়তো একটু সময় চাচ্ছিলেন, তবে রুবেল হোসেন সেটি দিলেন না। ব্যাক অফ আ লেংথ থেকে বলের তীক্ষ্ণ মুভমেন্টে সামনের দিকে ঝুঁকে ব্যাট ছোঁয়াতে ব্যর্থ তামিম আম্পায়ারের দিকে ফিরেও চাইলেন না, হাঁটা দিলেন, এমনই প্লাম্ব ছিলেন তিনি।
প্রায় দেড়ঘন্টার বিরতির পর আবারও খেলা শুরু হলো, আরেক তামিম-- তানজিদ হাসান শুরুটা করেছিলেন দারুণ। এবাদতকে দুই চারের পর রুবেলের ফ্রি-হিটে ফ্রন্টফুল ক্লিয়ার করে আরেকটি মারলেন, তার ব্যাটিংয়ের সময় পথটা এবড়োথেবড়ো মনে হচ্ছিল না মোটেও। তবে রুবেলের শর্ট অফ আ লেংথ বলটা পড়তে ভুল করে হলেন লিডিং-এজড, ১৮ বলে ২৭ রান করেই ফিরলেন। এক বল পর আবারও সফল রুবেল, এবার লেগস্টাম্পের বাইরের বলে লিডিং-এজড মিঠুন, কাভারে মুমিনুলের হাতেই ধরা পড়েছেন তিনিও।
একপ্রান্তে প্রথম বদলি বোলার হিসেবে আসা সুমন খানকে এনামুল হক বিজয় স্বাগত জানিয়েছিলেন চার মেরে, তবে সেই সুমনই একটু পর তামিম একাদশের জন্য হয়ে উঠেছেন ভয়ঙ্কর। ৬ বল, ৩ উইকেট। শাহাদাত হোসেন দিপু বাড়তি বাউন্সের বলে ব্যাট সরাতে না পেরে হয়েছেন এজড, মোসাদ্দেক হোসেন অফস্টাম্পের অনেক বাইরের বলে কীসের যেন মোহে পড়ে খোঁচা মেরেছেন। এতক্ষণ ধরে টিকে থাকা বিজয় মিডউইকেট দিয়ে ছয় মারার পরের বলেই ডিপ ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ধরা পড়েছেন-- একটা বল ছিল আরেকটির ‘মিরর ইমেজ’। বিজয় শুরুতেই একটা জীবন পেয়েছিলেন, ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট থেকে সাব্বির ডিরেক্ট থ্রো-তে স্টাম্প ভাঙলে তাকে ফিরতে হতো অনেক আগেই।
এরপর দুই দলের মাঝে একটু ইঁদুর-বিড়াল দৌড় খেলা হলো যেন। শূন্যতেই গালিতে এবাদতের বলে ক্যাচ দিয়েছিলেন মাহাদি হাসান, মিরাজের হাত ফসকে বেরিয়ে গেল সেটি। মাঝে সুমনকে চার-ছয় মারার পর বিপ্লবের বলে কাভারে মুমিনুলের হাতে আরেকদফা জীবন পেলেন, তবে ঠিক পরের লেগস্পিনিং ডেলিভারিতেই হলেন এজড। ২৩ বলে ১৯, মাহাদি থামলেন সেখানেই।
সাইফউদ্দিন জীবন পেয়েছিলেন লিটন দাসের হাতে, ওয়াইড লং-অনে লিটন ক্যাচটা নিলেও শরীর চলে গিয়েছিল বাউন্ডারির বাইরে। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে সাইফ বোল্ড হয়েছেন মিরাজের বলেই। এর আগে আম্পায়ারের চোখে শর্ট অফার না করা তাইজুল মিরাজের বলে এলবিডব্লিউ, আর এক ছয়ের পর বিপ্লবের অনেক বাইরের ও অনেক শর্ট বলে কোনো এক রকমে কাভারে ক্যাচ দিয়েছিলেন শরিফুল।