• বিসিবি প্রেসিডেন্টস কাপ ২০২০
  • " />

     

    সেঞ্চুরির পরও মাহাদিকে ছাপিয়ে যাওয়া হলো না মুশফিকের

    সেঞ্চুরির পরও মাহাদিকে ছাপিয়ে যাওয়া হলো না মুশফিকের    

    তামিম একাদশ ২২১/৯, ৫০ ওভার (মাহাদি ৮২, তামিম ৩৩, দিপু ৩১, তাইজুল ২০*, আল-আমিন ৩/৪৩, নাঈম ২/২৮, রিশাদ ২/২১) 

    নাজমুল একাদশ ১৭৯ অল-আউট, ৪৫.৪ ওভার (মুশফিক ১০৩, শুক্কুর ২৪, শরিফুল ৪/৩৭, মোস্তাফিজ ৩/১৫, সাইফউদ্দিন ২/৪১)
    তামিম একাদশ ৪২ রানে জয়ী 


    মাহাদি হাসান ও মুশফিকুর রহিম-- দুজন খেললেন দুই ধাঁচের ইনিংস। মাহাদি নেমেছিলেন ১০৮ রানে ৭ উইকেট যাওয়ার পর, মুশফিক নেমেছিলেন ১৪ রানে ২ উইকেট যাওয়ার পর। অন্যদিকে খুব বেশি উইকেট হারানোর চাপ সামলানোর সামর্থ্য ছিল না মাহাদির, তিনি খেললেন আক্রমণাত্মক ইনিংস। মুশফিকের সে সুযোগটা ছিল, ব্যক্তিগতভাবে চাপে থাকলেও সেসব সামলে তিনি খেললেন গোছানো ইনিংস। মাহাদিকে ছাপিয়ে সেঞ্চুরি করলেন মুশফিক, টুর্নামেন্টে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে। ইরফান শুক্কুরের সঙ্গে জুটির পর হুট করে বেশ চাপে পড়ে গেলেও মুশফিক ছিলেন দুর্দান্ত, তবে শেষটা করা হলো না তার। শেষ পর্যন্ত শেষ হাসি তাই ওই মাহাদিরই। শেষ হাসি শরিফুলের, মোস্তাফিজের। প্রতি দলের দুটি করে ম্যাচশেষের পর সবাই জিতেছে এখন একটি করে ম্যাচ। 

    টুর্নামেন্টে প্রথমবার ২০০-পেরুনো তামিম একাদশের বিপক্ষে রানতাড়ায় সতর্ক শুরুর পরও চাপে পড়ে গিয়েছিল নাজমুল একাদশ, মোস্তাফিজের পরপর দুই ওভারে ফিরেছেন সাইফ ও শান্ত যথাক্রমে মিড-অফে ও ফিরতি ক্যাচ দিয়ে ফেরার পর। শুরুতে জীবন পাওয়া সৌম্যও ধুঁকেছেন, এরপর সাইফের ওভার দ্য উইকেট থেকে ইয়র্কার মিস করে এলবিডব্লিউ হওয়ার আগে করেছেন ৪৭ বলে ৯ রান। 

    মুশফিকের সঙ্গে যোগ দেওয়া আফিফ একবার টপ-এজড হয়েও উইকেটকিপার আকবর বল খুঁজে না পাওয়ায় বাঁচলেও টিকলেন না খুব বেশিক্ষণ, শরিফুলের বলে এলবিডব্লিউ হওয়ার আগে তিনি করেছেন ২৭ বলে ৯ রান। শরিফুলের সে আগুনে স্পেলে পুড়েছেন তৌহিদ হৃদয়ও, লেংথ থেকে নীচু হওয়া বলে ইনসাইড-এজে বোল্ড হয়েছেন আগের ম্যাচের অন্যতম নায়ক। হৃদয় ফিরলেও ছিলেন আরেক নায়ক-- শুক্কুর। মুশফিকের সঙ্গে এবার ফিরতি লড়াই শুরু হয়েছে তার। 

     


    তাইজুলের করা ২৮তম ওভারে একটু উহ-আহ হয়েছিল মুশফিককে নিয়ে, তবে এরপর থেকে মুশফিক থিতু হয়েছেন দারুণভাবে। ৬৩ বলে সিঙ্গেল নিয়ে ফিফটি পূর্ণ করেছেন, স্ট্রাইক বদল করে গেছেন নিয়মিত। শুক্কুর তাকে বেশ ভাল সঙ্গ দিয়েছেন, স্ট্রেইট ড্রাইভে বাউন্ডারিও ছিল তার দারুণ। এ জুটি ভেঙেছে শুক্কুরের রান-আউটে। এর আগে একবার ডিরেক্ট থ্রো থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন মুশফিক, তবে এবার শুক্কুর শিকার হলেন মুশফিকের সঙ্গে তার ভুল বুঝাবুঝিতে। ৫৯ রানের জুটিতে শুক্কুর করেছিলেন ৪০ বলে ২৪ রান। 

    এরপর উঠোউঠি আরও দুই উইকেট নেই-- শরিফুলকে যথাক্রমে তুলে মারতে গিয়ে ও পুল করতে গিয়ে  ফিরেছেন নাঈম ও রিশাদ। মুশফিক এরপর চলে গেলেন ফাস্ট-ফরোয়ার্ড মোডে। তাইজুলের এলবিডব্লিউর আবেদন ছাপিয়ে রিভার্স সুইপের টপ-এজে চার, শরিফুলকে স্লগ করে ছয় মেরেছেন মিডউইকেট দিয়ে। এরপর মাহাদিকে স্কুপ করে চার। 

    সাইফকে পরপর দুই বলে যথাক্রমে রিভার্স স্কুপ ও পুল করে চার মেরে সেঞ্চুরিতে গেছেন ১০৩ বলে। তবে সেঞ্চুরি অবশ্য ম্যাচের প্রেক্ষাপটে ততক্ষণে তাৎপর্যহীন হয়ে পড়েছে নাজমুল একাদশের জয় তো ঝুলছিল মুশফিকের টিকে থাকার ওপরই। তামিমের আরেক ট্রাম্পকার্ড হয়ে এলেন মোস্তাফিজ, তাকে রিভার্স স্কুপ করতে গিয়ে ধরা পড়লেন মুশফিক। এরপর সময়ের অপেক্ষা, তাসকিনকে আউট করে সেটি পূরণ করলেন সাইফ।   


    আর নায়ক বনে গেলেন শেষ পর্যন্ত ওই মাহাদিই। ৯ম উইকেটে তাইজুলের সঙ্গে যিনি যোগ করেছেন ৯৫ রান, নিজে করেছেন ৫৭ বলে ৮২, ৯ চার ও ৩ ছয়ে। মাঝে নামা বৃষ্টি বাধার আগেই আক্রমণাত্মক ছিলেন মাহাদি, রিশাদ-আল-আমিনকে দুই চারের পর নাঈমকে ওয়াইড লং-অন দিয়ে ছয় মেরেছিলেন। বৃষ্টির পর তাসকিনকে দারুণ কাভার ড্রাইভে চার মেরে শুরু করলেন, মুগ্ধকে আপার-কাটে আর মেরে করলেন ফিফটি। 

    মাহাদি নিজেকেও ছাড়িয়ে গেলেন সৌম্যর করা ৪৯তম ওভারে। প্রথমে লো-ফুলটসে ছয়ের পর পুল করে পাঠালেন ইস্টার্ন গ্যালারিতে, লং-অফ দিয়ে চারের পর মিসফিল্ড থেকে কাভার দিয়ে চার পেলেন আরেকটি। শেষ পর্যন্ত মুগ্ধকে স্কুপ করতে গিয়ে হয়েছেন বোল্ড। তবে তাইজুল অপরাজিত ছিলেন ৪৩ বলে ২০ রান করে। 

    এদিনও টসে জিতে ফিল্ডিংয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত, এ নিয়ে টানা তিন ম্যাচেই অধিনায়করা নিলেন এমন সিদ্ধান্ত। তানজিদ তামিম আল-আমিনকে দুই চার মেরে শুরু করেছিলেন, তবে আবারও আক্রমণাত্মক হতে গিয়ে বিপদ ডেকে এনেছেন পুল করতে গিয়ে টপ-এজড হয়ে। এনামুল হক বিজয় তাসকিন আহমেদের বেরিয়ে যাওয়া বলে এজড হয়ে স্লিপে সৌম্যর ভাল ক্যাচে পরিণত হয়েছেন, এর আগে তামিমের সঙ্গে তার জুটি ছিল ৩০ রানের। 

    পাওয়ারপ্লেতে ২ উইকেট হারালেও ৪৯ রান তুলেছিল তামিম একাদশ, টুর্নামেন্টের গতিধারায় রান-রেটের হিসেবে যাকে ভালই বলতে হবে। তাসকিন, আল-আমিন, মুগ্ধর পর নাঈমকে এনেছিলেন শান্ত, নিজের দ্বিতীয় ওভারে মিঠুনকে ফিরিয়েছেন এই অফস্পিনার। মিঠুন সুইপ করতে চেয়েছিলেন, মিস করে হয়েছেন বোল্ড। 
     


    এতক্ষণ টিকে ছিলেন তামিম, তবে একপাশের উইকেটের যাওয়া-আসার মাঝে নিজেকে খোলসের ভেতর ঢুকিয়েছিলেন তিনি। ইনিংসে ৪টি চার মেরেছেন, তবে এর সবকটিই ৮ম ওভারের আগে। ১৬তম ওভারে নাঈমের বাইরের বলে সামনে ঝুঁকে খেলতে গিয়ে ভারসাম্য হারিয়ে এজড হয়েছেন তিনিও, কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলেন স্লিপে ক্যাচটা ঠিকঠাক হয়েছে কিনা সেটির আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত জানতে। ৪৫ বলে ৩৩ করে ফিরেছেন তিনি। 

    শাহাদাত হোসেন দিপু ও মোসাদ্দেক হোসেনের জুটি উইকেটে একটু লাগাম পরিয়েছিল, মোসাদ্দেক অবশ্য টিকে থাকার দিকেই মনযোগের সবটুকু দিয়েছিলেন। দিপু শট খেলেছেন, দুটি চারের সঙ্গে রিশাদকে ইনসাইড-আউটে মারা ছয়টা তার হাইলাইটস। তাদের ৪০ রানের জুটি ভেঙেছেন রিশাদ, তামিমের মতো সামনে ঝুঁকে খেলতে গিয়ে এজড হয়েছেন মোসাদ্দেকও, ৪৬ বলে ১২ রানের কষ্টসাধ্য ইনিংসটা শেষ হয়েছে তার। 

    বিজয়-মিঠুনের পর একাদশের তৃতীয় উইকেটকিপার হিসেবে টুর্নামেন্টে নিজের প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমেছিলেন আকবর আলি। রিশাদের প্রথম বলে কাট করতে গিয়ে এজড হওয়া থেকে বেঁচেছিলেন, তবে টিকতে পারেননি বেশিক্ষণ। আল-আমিনকে ফ্লিক করতে গিয়ে মিড-অনে বেশ আলগা ক্যাচ দিয়েই ফিরেছেন তিনি। 

    দিপু এতক্ষণ যেমন আশাজাগানিয়া ব্যাটিং করেছিলেন, আউট হয়েছেন ততোটা হতাশাজনকভাবেই। রিশাদের লেগস্টাম্পের বেশ বাইরের বলে শট খেলতে গিয়ে ফাইন লেগে আল-আমিনের আগে ধরা পড়েছেন, ৫২ বলে করেছেন ৩৩ রান। শেষটা হুড়মুড় করেই হবে, সাইফউদ্দিনের এরপরের শটটা বলছিল এমনই। আল-আমিনকে ক্রিজ ছেড়ে খেলতে গিয়ে বলের নাগাল না পেয়ে বোল্ড হলেন তিনি, ১৫ ওভারেরও বেশি থাকতে ৮ম উইকেট হারিয়ে ফেলল তামিম একাদশ। 
    তবে মাহাদি গল্পটা বদলে দিলেন। মুশফিক রানসংখ্যায় তাকে ছাড়িয়ে গেলেও ছাপিয়ে যেতে পারলেন না।