• বিসিবি প্রেসিডেন্টস কাপ ২০২০
  • " />

     

    আফিফ-নাসুমে পিষ্ট মাহমুদউল্লাহ একাদশ

    আফিফ-নাসুমে পিষ্ট মাহমুদউল্লাহ একাদশ    

    নাজমুল একাদশ ২৬৪/৮, ৫০ ওভার (আফিফ ৯৮, মুশফিক ৫২, শুক্কুর ৪৮*, হৃদয় ২৭, রুবেল ৩/৫৩, এবাদত ২/৬০, সুমন ১/৫২)
    মাহমুদউল্লাহ একাদশ ১৩৩ অল-আউট, ৩২.১ ওভার (সোহান ২৮*, লিটন ২৭, মিরাজ ১৬, নাসুম ৩/২৩, রাহি ৩/৩৪, রিশাদ ২/২৬) 
    নাজমুল একাদশ ১৩১ রানে জয়ী


    প্রেসিডেন্টস কাপে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় স্কোর তাড়া করার একটা চাপ হয়তো ছিল। তবে সেটি মাহমুদউল্লাহ একাদশকে পিষ্ট করলো দারুণভাবেই। ২৬৪ রানতাড়ায় শুরু থেকেই খেই হারিয়ে ফেলেছে তারা, প্রয়োজনীয় জুটিটা আসেইনি। ১৯তম ওভার শেষ হওয়ার আগেই ৭৮ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে পথ হারিয়ে আর ফেরা হয়নি তাদের, একদিকে অপরাজিত থাকা নুরুল হাসান সোহানকে সঙ্গ দেওয়ার মতো কেউই থাকেননি। তাদেরকে সহজেই হারিয়ে ফাইনালের পথে একধাপ এগিয়ে গেছে নাজমুল একাদশ, ৩ ম্যাচে তাদের পয়েন্ট ৪, সমানসংখ্যক ম্যাচে মাহমুদউল্লাহ একাদশের ২।  

    প্রথমে ব্যাটিং করে আফিফ হোসেনের ৯৮, মুশফিকুর রহিমের ৫২ রানের সঙ্গে ইরফান শুক্কুরের ৩১ বলে অপরাজিত ৪৮ রানে ভর করে নাজমুল একাদশ ব্যাটিংয়ে ভাল একটা দিন কাটিয়েছিল। রান-আউট হয়ে সেঞ্চুরি মিস করেছেন দারুণ খেলা আফিফ, তবে মুশফিকের সঙ্গে তার চতুর্থ উইকেটে ১৭৮ রানের জুটিই ভিত গড়ে দিয়েছে তাদের, শুরুতে ৩১ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলার পর। 

    শুরুতে ফিল্ডিং নেওয়ার যথার্থতাও প্রমাণ করেছিলেন মাহমুদউল্লাহর পেসাররা। আগেরদিন ধুঁকতে থাকা সৌম্য সরকার এদিন শুরুতেই দুই চার মারলেন, তবে এর একটি মিড-অফের নাগালের একটু বাইরে ছিল। ঠিক তার পরের বলেই অফস্টাম্পের অনেক বাইরে করা রুবেলের বলটা স্টাম্পে ডেকে এনেছেন তিনি। ড্র্যাগড অন হয়েছেন অধিনায়ক শান্তও, পার্থক্য-- তার উইকেটের ডেলিভারিটা ছিল একটু ভেতরে। 


    এতক্ষণ একপ্রান্তে থেকে ভাল কিছু শট খেলা পারভেজ হোসেন ইমন একটা জীবনও পেয়েছিলেন এবাদতের বলে, তবে সুমন খানের প্রথম বলেই হয়েছেন এলবিডব্লিউ। সে ওভারেই আফিফের বিপক্ষে আরেকটি ক্লোজ কল ছিল, আম্পায়ার এবার নাকচ করেছেন। ১ রানে দাঁড়িয়ে পরিস্কারভাবে জীবন পেয়েছেন মুশফিকও, স্লিপে এবাদতের বলে ক্যাচ ছেড়েছিলেন মিরাজ। 

    দুজন এরপর ভুগিয়ে গেছেন মাহমুদউল্লাহ একাদশকে। মুশফিক অবশ্য শুরুতে ছিলেন বেশ ধীরগতির, যা শট খেলার খেলেছেন আফিফই। পুরো ইনিংসে মুশফিক চার মেরেছেন মাত্র একটি, তাও একেবারে শেষে গিয়ে। আফিফ অবশ্য শুরু থেকেই ছিলেন বেশ আক্রমণাত্মক। ড্রাইভ করেছেন, খেলেছেন রিভার্স স্কুপের মতো শটও। ৬৯ বলে ফিফটি পূরণ করেছেন, তখন পর্যন্ত মেরেছিলেন ৬টি চার। 


    এরপর আরও ৬টি চারের সঙ্গে মেরেছেন ১টি চার, সেঞ্চুরি ছাড়িয়ে আরও দূরেই হয়তো নজর ছিল তার। তবে মুশফিকের সঙ্গে ভুল বুঝাবুঝিতে হয়নি সেটি। প্রথমে কল করেও ক্রিজে ফিরেছেন মুশফিক, সে সময় না পেয়ে ফিরে যেতে হয়েছে আফিফকে। মুশফিকও অবশ্য বেশিক্ষণ টেকেননি আর, ফিফটির পরপরই টপ-এজড হয়েছেন এবাদতের বলে। এরপর প্রথম ম্যাচের নায়ক ইরফান শুক্কুর ও তৌহিদ হৃদয় বেশ খানিকটা এগিয়ে নিয়েছেন নাজমুল একাদশকে। দুজনের জুটিতে উঠেছে ৪৬ বলে ৭০। ২৯ বলে ২৭ করে এবাদতের দ্বিতীয় শিকার হয়ে ফিরেছেন হৃদয়, তবে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ছিলেন শুক্কুর। মাঝে তাসকিনের রান-আউট পেরিয়ে শুক্কুর তার অপরাজিত ইনিংসে ৪টি চারের সঙ্গে মেরেছেন ২টি ছয়। এবাদতের ২টির সঙ্গে রুবেল নিয়েছেন ৩টি উইকেট, উইকেট না পেলেও ১০ ওভারে মাত্র ৩২ রান দিয়েছেন রাকিবুল হাসান। 

    রানতাড়ায় শুরুতেই ইমরুলের উইকেট হারিয়ে চাপে পড়েছিল মাহমুদউল্লাহ একাদশ, আল-আমিনের লেংথ বলে ক্রিজে আটকে থেকে ব্যাট চালিয়ে ইনসাইড-এজড হয়েছিলেন তিনি, যদিও আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত ঠিক মানতে পারছিলেন না তিনি। অন্যদিকে লিটন শুরুতে দারুণ কিছু শট খেলেছেন, তবে ৫ চারে ২৭ রানের ইনিংস যতোটা আয়েসী ছিল, সেভাবেই নাসুমের সোজা বলে ব্যাট নামাতে না পেরে হয়েছেন এলবিডব্লিউ। 

    আগে থেকেই ভুগছিলেন মুমিনুল, একাধিকবার সুযোগ দিয়ে বেঁচেও গিয়েছিলেন। অবশেষে আবু জায়েদ রাহির বেরিয়ে যাওয়া বলে খোঁচা দিয়ে ফিরেছেন তিনি। নাসুম এরপর নিয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ দুই উইকেট-- অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ হয়েছেন এলবিডব্লিউ, মাহমদুল হাসান জয় টেনে খেলতে গিয়ে মিড-অফে দিয়েছেন ক্যাচ। শান্ত আক্রমণাত্মক অধিনায়কত্ব করে গেছেন। নাসুমকে সরিয়ে এনেছেন রিশাদকে, নতুন বলে সুযোগ না পেলেও উইকেট পেয়েছেন রাহিও। সাব্বির রহমান রাহির বেশ বাইরের বলে ব্যাট চালিয়ে ক্যাচ দিয়েছেন, আর মিরাজকে করেছেন বোল্ড। এ দুজনের সোহানের সঙ্গে যথাক্রমে ১৯ আর ২৫ রানের জুটি ছিল। পরেরটিই ইনিংসে সর্বোচ্চ, মাহমুদউল্লাহ একাদশের দুর্দশার খেরোখাতা যেন সেটি। 

    শেষ দুই ব্যাটসম্যান সুমন খান ও রুবেল হোসেন সোহানকে তেমন সঙ্গ দিতে পারেননি অনুমিতভাবেই, প্রথমজন স্লিপে রিশাদের বলে ক্যাচ দেওয়ার পর পরেরজন হয়েছেন রান-আউট। নাজমুল একাদশ ও মাহমুদউল্লাহ একাদশের ব্যাটিংয়ের এদিনের ব্যবধানটা আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে তাতেই।