• প্রীতি ম্যাচ
  • " />

     

    কিক অফের আগে : ফুটবল ফেরার ম্যাচে নেপালের চেয়ে বাংলাদেশের বড় প্রতিপক্ষ কাতার

    কিক অফের আগে : ফুটবল ফেরার ম্যাচে নেপালের চেয়ে বাংলাদেশের বড় প্রতিপক্ষ কাতার    

    কবে, কখন 
    বাংলাদেশ-নেপাল 
    মুজিববর্ষ আন্তর্জাতিক ফুটবল সিরিজ 
    প্রথম ম্যাচ 
    ১৩ নভেম্বর, বিকাল ৫.০০ 
    বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম 


    নেপাল সংবাদ সম্মেলন করে গেছে বাফুফের কক্ষেই। বাংলাদেশ কোচ জেমি ডে ভরা মজলিশের সে কক্ষে যাবেন না। অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়ারও তাই মত। গতকাল নেপাল দলের একজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। জেমি-জামালরা তাই আরেকটু সতর্ক, ম্যাচের আগেরদিন সংবাদ সম্মেলন করলেন বাফুফে ভবনের নিচে। শঙ্কা আছে, সবকিছুর পরও স্বস্তি আছে। ফুটবল মাঠে ফেরার স্বস্তি। নেপালের সঙ্গে দিয়ে ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক খেলায় ফিরছে বাংলাদেশ। মাঝের সময়টা কেড়ে নিয়েছে করোনাভাইরাস, আট মাস পরও সেই মহামারির ভেতরেই স্বাভাবিকতায় ফেরার লড়াই বাংলাদেশের। 

    ম্যাচটা হতে পারত শুধুই ফুটবল ফেরার উপলক্ষ্য। জেমি ডে বাংলাদেশে ফিরে বারবার সে কথাই বলছিলেন। কিন্তু সে সমীকরণও ম্যাচের দুদিন আগে বদলে গেছে। বাংলাদেশকে ভাবতে হচ্ছে নতুন করে। ডিসেম্বরের ৪ তারিখ কাতারের বিপক্ষে বিশ্বকাপ ও এশিয়া কাপ বাছাইয়ের ফিরতি লেগের ম্যাচ বাংলাদেশের। নেপালের বিপক্ষে দুটি প্রীতি ম্যাচ তাই এখন সেই প্রস্তুতির একমাত্র সুযোগ। জেমি ডের কাছে ফলও গুরুত্বপূর্ণ নয়। তার চোখ কাতারের ম্যাচে, নেপালের ম্যাচে ফল যাই আসুক তা নিয়ে মাথাব্যথা নেই। 

    “নেপালের বিপক্ষে ফল আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ না। হারি, জিতি আর বা ড্র করি তা নিয়ে আমার তেমন মাথাব্যথা নেই। আমার ফোকাস কাতার ম্যাচে, এর আগে সবাইকে প্রস্তুত করে তোলা। হ্যাঁ, আমি কাল জিততে চাই, ১৭ তারিখের ম্যাচেও জিততে চাই। কিন্তু একটানা জিতেই যেতে হবে এমনটা আমি বিশ্বাস করি না। কাতারের বিপক্ষে যদি আমরা একটা দারুণ লড়াই করতে পারি, তাহলে আমি পরের ৪ ম্যাচও হারতে রাজি আছি”, জেমি ডের সব চিন্তা এখন কাতার ম্যাচকে ঘিরেই।


    নেপালের সঙ্গে দুটি প্রীতি ম্যাচ আর কাতার পৌঁছে আরও দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ- সবগুলোই এখন জেমি ডের জন্য ‘প্রস্তুতি ম্যাচ’। তবে ফুটবল ফেরার ম্যাচের তকমাটা হারাচ্ছে না তাতে। ইউরোপে ফুটবল বাংলাদেশের মতো বড় বিরতিতে যায়নি। এরপরও প্রভাব রেখে গেছে ওই বিরতি। ‘অনিয়মিত’ ফলগুলো নিয়মিত ঘটনা হয়ে যাচ্ছে এখন ইউরোপে। ধারাবাহিকতা ফিরে পেতে লড়তে হচ্ছে বড় দলগুলোকেও, খেলোয়াড়দের চোটে পড়ার হারও বেড়েছে। সে হিসেবে আট মাসের বিরতির পর মাঠে কী হতে যাচ্ছে সেটা অনুমান করাই কঠিন এখন। বাংলাদেশের ৩৬ জনের স্কোয়াড এরই মধ্যে কমে গেছে চোটের কারণে। ম্যাচটা কেমন হবে জেমি ডে একটা আঁচ দিয়ে রাখছেন। তিনি বলছেন, দুই দলের খেলায় ভুল-ভ্রান্তি আগের চেয়ে বাড়বে, খেলায় ধারও খুঁজে পাওয়া যাবে না আগের মতো। তার একটাই চাওয়া, খেলোয়াড়রা যাতে ইনজুরি ছাড়াই দুটো ম্যাচ পার করে দিতে পারে। তাতেই দল কাতার ম্যাচের জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবে বলে বিশ্বাস তার। 


    আরও পড়ুন : রানা বিশ্রামে, ২৩ জনের বাংলাদেশ দলে সুমন-বাবলু 


    আন্তর্জাতিক ফুটবলে বাংলাদেশের সবশেষ জয় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। চলতি বছর জানুয়ারিতে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে এরপর আর একটি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। সেমিফাইনালে বুরুন্ডির বিপক্ষে হারের পর মার্চ নাগাদ শুরু হলো করোনার হানা। পুরো বছর যেখানে আন্তর্জাতিক ম্যাচ নিয়ে ব্যস্ত থাকার কথা ছিল বাংলাদেশের, সেখানে বছরের শেষে এসে ফুটবলের এই ব্যস্ততা অপ্রত্যাশিতই ছিল অনেকটা। সেই ফুটবল ফিরছে দর্শক নিয়েও। সামাজিক দূরত্বের নিয়ম মেনে মাঠে উপস্থিত থাকতে পারবেন ৮ হাজার সমর্থক। দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে মাঠে খেলা ফেরানোর এই প্রক্রিয়ায় তাই বাফুফের প্রশংসা পাওনা। 

    কৃতিত্ব আছে নেপালেরও। বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচের জন্য অনুশীলন শুরু করতে না করতেই সাতজন খেলোয়াড় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের ছাড়াই ঢাকায় এসেছে নেপাল। ম্যাচের ৪৮ ঘন্টা আগেও নতুন করে একজন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। সংখ্যাটা বাড়ার শঙ্কাও আছে। সব বাধা-বিপত্তি সরিয়ে খেলায় ফেরার লড়াই তাদেরও। 

    করোনাজর্জর নেপাল মূল দলের খেলোয়াড়দের ছাড়াই মাঠে নামবে বাংলাদেশের বিপক্ষে। বাংলাদেশের চেয়ে অনুশীলনেও কম সময় পেয়েছে তারা। নেপালের মূল কোচ ইয়োহান কালিনও দলের সঙ্গে আসেননি ভ্রমণ জটিলতায়। হেড কোচের দায়িত্ব পালন করছেন বাল গোপাল মহারাজন। তিনি অবশ্য এতো বিপত্তির পরও বাংলাদেশকে অতীতের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, “বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে আগেও আমরা সমর্থকদের সামনে খেলেছি। শেষ চার-পাঁচ বছর এমন পরিস্থিতিতে খেলেও আমরাই শ্রেয়তর দল ছিলাম। আগামীকালও বাংলাদেশ দর্শকদের সমর্থন পাবে। তবে আমরা গত কয়েক বছরে এই পরিস্থিতিতেই ভালো করে দেখিয়েছি। এবারও ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে চাই।” 

    ফিফা র‍্যাঙ্কিংয়ে নেপাল বাংলাদেশের চেয়ে ১৭ ধাপ এগিয়ে। বিশ্বকাপ ও এশিয়া কাপ বাছাইপর্বে বাংলাদেশ জয়ের দেখা না পেলেও ৫ ম্যাচ খেলে একটি জয় পেয়েছে নেপাল। সবশেষ ৫ দেখাতেও একবারই বাংলাদেশের কাছে হেরেছে তারা। সেটাও ২০১৩ সালে। সবশেষ ২০১৮ সালের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে এই বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামেই নেপালের কাছে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচ হেরে বাদ নিয়েছিল বাংলাদেশ। গেল ডিসেম্বরে এসএ গেমসেও অনুর্ধ্ব-২৩ দলের বিপক্ষেও হারই জুটেছিল জেমি ডের দলের। 

    বাংলাদেশ অধিনায়ক জামালের কাছে ম্যাচটা তাই ‘প্রতিশোধের’। তিনি নেপালকে হারিয়ে প্রতিশোধ নিতে চান। যদিও প্রীতি ম্যাচের জয় বাংলাদেশের ক্ষতে প্রলেপ যোগাতে পারবে না। তাই প্রতিপক্ষ নেপাল হলেও ছায়া হয়ে থাকছে আসলে কাতার ম্যাচ।