• প্রীতি ম্যাচ
  • " />

     

    করোনাকে বুড়ো আঙুল, নাম্বার টেন জীবন : নেপালের বিপক্ষে জয়ে যা পেল বাংলাদেশ

    করোনাকে বুড়ো আঙুল, নাম্বার টেন জীবন : নেপালের বিপক্ষে জয়ে যা পেল বাংলাদেশ    

    নেপালের বিপক্ষে প্রথম প্রীতি ম্যাচে ২-০ গোলে জিতেছে বাংলাদেশ। আট মাস পর ফুটবল ফিরেছে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে। বাংলাদেশ দল প্রত্যাশামতোই ফল এনে দিয়েছে, তবে বৈশ্বিক মহামারি চলার সময় যেভাবে খেলা ফেরার কথা ছিল তা আর হয়নি। এরপরও সব আকর্ষণ ছিল মাঠের ফুটবলকে ঘিরেই।

    করোনাকে বুড়ো আঙুল

    সাইডবেঞ্চের খেলোয়াড়রা সবাই মাঠে প্রবেশ করেছেন মুখে মাস্ক লাগিয়ে। জাতীয় সঙ্গীতের সময়ও খেলোয়াড়রা কাঁধে কাধ মিলিয়ে দাঁড়াননি। টিম ফটোসেশনেও দূরত্ব বজায় রেখেছিলেন খেলোয়াড়রা। এই রীতিগুলো মেনে চলার একটাই লক্ষ্য, সাধারণ মানুষের কাছে সতর্কবার্তা পৌঁছে দেওয়া। কিন্তু মাঠ থেকে যে বার্তা খেলোয়াড়রা দিতে চাইলেন, তা পৌঁছায়নি গ্যালারি পর্যন্তও। সামাজিক দূরত্বকে পাত্তা না দিয়েই মাঠে বসে খেলা দেখেছেন দর্শকেরা। 

    বাফুফের মাঠে দর্শক রাখার সিদ্ধান্তটাই ছিল অবাক করা। যদিও স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে ২৫ হাজার গ্যালারির স্টেডিয়ামে মাত্র ৮ হাজার দর্শক প্রবেশের অনুমতি দিয়েছিল বাফুফে। শেষ সময়ে সংখ্যাটা কমিয়ে ৭ হাজারেও নামিয়ে আনা হয়েছিল। কিন্তু কথা আর কাজের সমীকরণ মেলানো গেল না ম্যাচের দিন।


    বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ম্যাচ শুরুর দুই ঘন্টা আগে থেকেই সমর্থকেরা হাজির হতে শুরু করেছিলেন। ধীরে ধীরে সে সংখ্যাটা কেবল বেড়েছে। ম্যাচ শুরুর পর একটা সময় প্রায় কাণায় কাণায় পূর্ণ হয়ে গিয়েছিল বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম। সঠিক সংখ্যাটা জানা না গেলেও সহজেই আন্দাজ করা যায় বাফুফের বেধে দেওয়া ৭ হাজার দর্শক প্রবেশের ‘আইন’ কার্যকর হয়নি মোটেই। গ্যালারিতে ছিল না সামাজিক দূরত্বের বালাই। গাদাগাদি করেই গ্যালারি মাতিয়েছেন দর্শকেরা।
         
    যদিও তাতে দায় আছে দর্শকদেরও। ওয়ারি থেকে খেলা দেখতে আসা শাখওয়াত রনি নামের এক ভক্ত জানিয়েছেন, বাংলাদেশের খেলা আছে শুনেই করোনাভাইরাসে কথা আর মাথায় আসেনি তার। আট মাস বিরতির পর মাঠে আসতে আর তর সইছিল না তার। রনির মতো একই কথা বলেছেন মাঠে উপস্থিতি আরও জনা দশেক সমর্থক।


    নতুন জীবন পাবেন জীবন?

    আবাহনীর হয়ে নিয়মিতই নাম্বার টেনের ভূমিকায় খেলেন নাবিব নেওয়াজ জীবন। কিন্ত জাতীয় দলে এলেই তিনি হয়ে যান মূল স্ট্রাইকার। শারীরিক সক্ষমতায় কিছুটা পিছিয়ে থাকায় লোন স্ট্রাইকারের ভূমিকায় বল হোল্ড আপ করার ক্ষেত্রে দুর্বলতাও হরহামেশা প্রকাশ পেয়ে যায় জীবনের। কিন্তু নাম্বার টেনের ভূমিকায় খেললেই যেন বদলে যায় তার ভাগ্য।

    গত বছর ভূটানের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচে তিন বছর পর জাতীয় দলের হয়ে গোল করেছিলেন জীবন। খরা কাটানোর ম্যাচেও নাম্বার টেনের ভূমিকায় খেলেছিলেন তিনি। এরপর এক বছরের বেশি সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর এবারও সুযোগ পেলেন নিজের পছন্দের জায়গায়। ভূটান ম্যাচের পর আবার পেলেন গোল।

    ম্যাচ শেষে জেমি ডে নিজেও স্বীকার করে নিয়েছেন জীবন নাম্বার টেনের ভূমিকাতেই ভালো। কিন্তু দলে একজন জাত স্ট্রাইকারের অভাবে জীবনকে নাম্বার টেনের ভূমিকায় খেলাতে পারেন না তিনি। তবে পরিপূর্ণ নাম্বার টেন হতে চাইলে জীবনকে আরও পথ পাড়ি দিতে হবে বলে মত তার, “জীবন নাম্বার টেন হিসেবেই ভালো। কিন্তু ওকে এই পজিশনে খেলানো সম্ভব হয় না। মতিন ফিরলে হয়ত নাম্বার টেনের ভূমিকায় নিয়মিত খেলার সুযোগ আসবে। তবে নাম্বার টেনকে রক্ষণেও কাজ করতে হয়। শারীরিক ভাবে জীবনকে আরও শক্তিশালী হতে হবে।”  
     


    সুমন রেজার সময় প্রয়োজন আরও

    নেপালের বিপক্ষে বাংলাদেশ দলে অভিষেক হয়েছে দুইজনের। গোলরক্ষক আনিসুর রহমান জিকো ও স্ট্রাইকার সুমন রেজা প্রথমবারের মতো খেলেছেন জাতীয় দলের হয়ে। শুরুটা সুমন ভালো করেছিলেন। সাদ উদ্দিন ও জীবনের সঙ্গে বেশ কয়েকবার আক্রমণভাগে তার সমন্বয়ও ছিল দেখার মতো। শুরু থেকেই প্রতিপক্ষকে প্রেস করে গেছেন, লং বলে নেপালের রক্ষণের পেছনের খালি জায়গাতেও রান নিয়েছেন বেশ কয়েকবার। যদিও জেমি ডে বলছেন অন্য কথা, সুমনের সময় প্রয়োজন আরও, “সুমন আসলে যথাযথ ট্রেনিং পায়নি। মাঠে ও প্রচুর খেটেছে। কিন্তু অযথাই দৌড়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে আগেভাগে। সে কারণেই প্রথমার্ধের পর ওকে আর মাঠে নামানো যায়নি। সঠিক কোচিং পেলে এই সমস্যাগুলো ও কাটিয়ে উঠতে পারবে।”  

    সুমন দ্বিতীয়ার্ধে আর মাঠে নামেননি। তবে জিকো খেলেছেন পুরো ম্যাচ। যদিও প্রথম ম্যাচে বড় কোনো পরীক্ষা দিতে হয়নি তাকে। দ্বিতীয়ার্ধে নেপাল যখন সমতায় ফেরার জন্য মরিয়া হয়ে ছিল, তখন দুটি রুটিন সেভে তাদের আটকে দেওয়ার কাজটা অবশ্য ঠিকঠাকই করেছেন তিনি।


    আরও পড়ুনঃ বঙ্গবন্ধুতে প্রাণ ফেরালেন জীবন-সুফিল


    জামালের জোড় হবেন মানিক?

    ৪-২-৩-১ জেমি ডের অধীনে বাংলাদেশের পুরোনো ফরমেশন। নেপালের বিপক্ষেও এর হেরফের হয়নি। বেশিরভাগ সময়ই জামাল ভূঁইয়ার সঙ্গে সোহেল রানা খেলেন ডাবল পিভোটের ভূমিকায়। তবে জামাল সঙ্গী হিসেবে এদিন পেয়েছিলেন মানিক হোসেন মোল্লাকে। মাঠে যতক্ষণ ছিলেন, সোহেল রানার চেয়ে কোনো অংশে খারাপ করেননি তিনি। ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হিসেবে বেশ আক্রমণাত্মকই ছিল তার অ্যাপ্রোচ। প্রথমার্ধে প্রায় ২৫ গজ দূর থেকে দারুণ একটি শট করেছিলেন তিনি। কিন্তু নেপাল গোলরক্ষক কিরণ কুমারের দুর্দান্ত সেভের পর বারপোস্টে বল লাগায় আর গোল পাওয়া হয়নি তার।

    জামাল যখন আক্রমণে উঠেছেন তখন আবার রক্ষণে দ্বিগুণ মনোযোগী হয়েছেন মানিক। রক্ষণের শিল্ড হিসেবে কাজটা শেষ পর্যন্ত ভালোভাবেই সেরেছেন তিনি।

    জয়ের আনন্দেে ভেসে যাওয়ার সুযোগ নেই

    দশ মাস পর বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ফুটবলে ফিরল। ভরা গ্যালারি দেখছে দারুণ দুইটি দারুণ গোলও। সবমিলিয়ে ফুটবলে ফেরার দিনটা মনে রাখার মতোই হয়েছে বাংলাদেশের জন্য। কিন্তু এরপরও এই জয়ে তেমন উচ্ছ্বাস নেই জেমির। নেপালের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচ দুইটি কাতার ম্যাচের প্রস্তুতি হিসেবেই দেখছেন তিনি। প্রথম ম্যাচে কোনো খেলোয়াড় চোটে পড়েনি, জয়ের চেয়ে বরং তাতেই স্বস্তি বেশি বাংলাদেশ কোচের, “খেলোয়াড়রা চোটে পড়েনি, সেটাই বড় পাওয়া। এই জয়ের আনন্দে ভেসে যাওয়ার সুযোগ নেই। কাতারের মুখোমুখি হওয়ার আগে এগুলো আমাদের জন্য প্রস্তুতি ম্যাচ। এটা ছিল অনেকটা প্রাক মৌসুম ম্যাচ জয়ের মতো।”