• " />

     

    মার্শাল-মুমিনুলদের মঙ্গল হোক

    মার্শাল-মুমিনুলদের মঙ্গল হোক    

    এক হাতে ব্যাট, আরেক হাতে ক্যাপ। ব্যাটে কোনো স্টিকার নেই, সাদা ক্যাপে লোগো থেকে থাকলেও ক্যামেরার নাগালে আসেনি। আল-আমিন হোসেন একপাশে দাঁড়িয়ে তালি দিচ্ছেন, আম্পায়ার মাসুদুর রহমান বাউন্ডারির সংকেতটা শেষ করে আনছেন। মার্শাল আইয়ুব ছবিটার প্রধান 'অঙ্গ', যে ছবিটায় উচ্ছ্বাস নেই, আনন্দে ভেসে যাওয়ার ছাপ নেই। গত বছরের অক্টোবর মাসের ছয় তারিখ, মিরপুরে শের-এ-বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে তোলা ছবি। ঢাকা মেট্রোপলিসের হয়ে জোড়া সেঞ্চুরি করেছেন মার্শাল, খুলনা বিভাগের সঙ্গে। তাঁর দ্বিতীয় সেঞ্চুরিতেই ম্যাচটা বাঁচিয়েছিল ঢাকা মেট্রো। মার্শাল আইয়ুব, এক ত্রাতার নাম। সে ম্যাচে মার্শালের দুই সতীর্থ মাহমুদউল্লাহ ও আবু হায়দার এখন ভারতে, জাতীয় দলের সঙ্গে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। মার্শাল সদ্যই শেষ করলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগের খেলা। লিগে দুই সেঞ্চুরি করেছেন, ৬ ম্যাচে ৫৬.২০ গড়ে লিগ-সর্বোচ্চ ৫৬২ রান তাঁর।

     

    তাঁর সেঞ্চুরিতেই উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে শেষ ম্যাচটা ড্র করেছে মধ্যাঞ্চল, চ্যাম্পিয়ন হয়েছে দ্বিতীয়বারের মতো। এই সেঞ্চুরির পরের ছবিটা কেমন, তা জানা যায় না। বয়স ২৭ পেরিয়ে গেছে, আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারটা থমকে আছে তিন ম্যাচে ২০.৮৩ গড়ে ১২১ রানের ট্যালিতেই। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের পরের ফ্রেমে কোনো ছবি তোলা হবে কিনা তাঁর, সেটাও তো জানা যায় না!

     

    মুমিনুল হকের সে তুলনায় ‘নিশ্চিত’ ভবিষ্যতই। বাংলাদেশ পরের যে টেস্ট খেলতে নামবে, সেখানে চোট বা অন্য কোনো ‘অনিবার্য’ সমস্যা না থাকলে তাঁর জায়গা হওয়ার কথা। এবি ডি ভিলিয়ার্সের টানা ১২ ম্যাচে ফিফটির রেকর্ডটা ছুঁতে পারেননি, এ নিয়ে কতো সমবেদনা ঝড়েছিল মুমিনুলকে নিয়ে। শেষ যে টেস্টটা খেলতে নেমেছিলেন, করেছিলেন ৪০ রান। দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে দ্বিতীয় টেস্টে ওই এক ইনিংসই ব্যাট করেছিল বাংলাদেশ, টেস্টের চারদিনই যে বুকে টেনেছিল বৃষ্টি। ওয়ানডেতেই ‘পকেট ডায়নামো’র জায়গা হয় না, ‘টেস্ট স্পেশালিস্ট’ এর তকমা গায়ে নিয়ে, সেখানে টি-টোয়েন্টি তো কোন সুদূরের পথ! বাংলাদেশের 'সেরা সময়'টাতে তাই মুমিনুল থাকেন না। তা নাই থাকুন আন্তর্জাতিক আঙ্গিনায়, তাই বলে তো ক্রিকেট খেলাটা থেমে থাকে না!

     

    শুধু মুমিনুল নয়, বছর পাঁচেক আগে শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা অলক কাপালি বা রকিবুল হাসানদেরও যেমন ক্রিকেট থেমে নেই। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে বাংলাদেশের হয়ে প্রথম ট্রিপল সেঞ্চুরি করা রকিবুল এই বিসিএল-এও করেছেন একটা ডাবল সেঞ্চুরি। কাপালির সঙ্গে তিনিও আছেন শীর্ষ রান সংগ্রাহকের তালিকার শীর্ষ পাঁচে। আর আছেন শামসুর রহমান। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটটা কি তাঁর জন্যও শুধু আক্ষেপই হয়ে থাকবে?

     

    সানজামুল ইসলাম বা আবু জায়েদ অবশ্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের স্বাদই পাননি এখনও। প্রথম শ্রেণীর অভিষেকের বছর ছয় পেরিয়ে যাচ্ছে, সানজামুল-জায়েদের সামনের পথটা খুব সংক্ষিপ্ত নয় তবুও। সেখানে নিজের দীর্ঘ পথটা ফেলে এসেছেন মোহাম্মদ শরীফ। ১৭ বছর বয়সে এক প্রকার জোর করেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আনা হয়েছিল শরীফকে, প্রথম শ্রেণীতে ভাল করেছিলেন বলে। শরীফের শরীর সহ্য করেনি, চোট থেকে ফিরে এসে আবার কথা বলেনি ফর্ম। মাঝে আইসিএল যাওয়া-আসা, তবে শরীফের ভাগ্যটা এখন ঘরোয়া ক্রিকেটের ওপরই। ঢাকা বা মধ্যাঞ্চলের পরীক্ষিত সেনানী বটে শরীফ, তবে জাতীয় দলে ফেরার ইচ্ছাটা বোধহয় এখন আর অবচেতন মনেও উঁকি দেয় না তাঁর! অন্যদের চেয়ে লিগে দুই ম্যাচ কম খেলেছেন, তবে শীর্ষ উইকেটশিকারীর তালিকায় ঠিকই আছেন দ্বিতীয়তে।

     

    শীর্ষে যিনি, তাঁর অবস্থাটা মুমিনুলের ঠিক উল্টো। ১৫৩ ওয়ানডের বিপরীতে টেস্ট তাই মাত্র ১২ টা, আব্দুর রাজ্জাকের শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচও ২০১৪ সালে। একসময় বাংলাদেশের প্রধান স্পিনারই এখন দলে ব্রাত্য, চোট-ফর্ম মিলিয়ে কি চলে গেছেন বিবেচনার বাইরেই? লিগে ৬ ম্যাচে ৩৮ উইকেট, সঙ্গে ইনিংসসেরা ৫৮ রানে ৭ উইকেটের ফিগার কি পারবে নির্বাচকদের একটা বার্তা দিতে?

     

    বার্তাটা কি সোহাগ গাজীও দিতে চেয়েছিলেন? ৬ ম্যাচে ১৮ উইকেট নিয়ে তালিকার চতুর্থ অবস্থানে আছেন, তবে ৪৮.৬১ গড়টা একটু বেমানানই বটে।

     

    গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সময় ঘরোয়া ক্রিকেট চালানোটা যেমন বেমানান ভেবেছিল বিসিবি। ঘরের মাটিতে বিশ্বকাপ আয়োজনের সঙ্গে ঘরোয়া ক্রিকেটের চাপটা বোধহয় তাঁরা নিতে চান নি। এবার অবশ্য আয়োজনের বালাই নেই। বালাই নেই কারও আগ্রহেরও। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ডামাডোলে বিসিএল এর ‘আগ্রহ’ হারিয়ে যাওয়াই স্বাভাবিক। তবে বিসিএল হারিয়ে গেলে মার্শাল-মুমিনুল-রাজ্জাক-শরীফরা তো বেঁচে থাকার অবলম্বনের একটা অংশও হারাতেন! বিসিবি সাধুবাদ পেতেই পারে, প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটটা চালিয়ে যাওয়ার জন্য। আর মুমিনুল নাহয় অপেক্ষা করে থাকুন আবার বাংলাদেশের টেস্ট খেলতে নামার জন্য। মার্শাল অপেক্ষা করে থাকুন আবার নির্বাচকদের একটা ‘ফোন-কল’এর জন্য, তিন ম্যাচ তো নিজেকে প্রমাণের জন্য ‘প্রমাণ’ সময় নয়! রাজ্জাক-গাজীরা আশায় ঘর বাঁধুন, জাতীয় দলের দরজাটা তাঁদের জন্য বন্ধ হয়ে যায়নি এটা ভেবে!

     

    প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট এটা ভেবে বেঁচে থাকুক, দিনের শেষে সূতিকাগার হওয়ার যোগ্যতা তো তারই!

     

    ততক্ষণ পর্যন্ত মঙ্গল হোক, মার্শাল-মুমিনুল-রাজ্জাক-গাজীদের।