• লা লিগা
  • " />

     

    অবশেষে বার্সেলোনাকে হারালো সিমিওনের অ্যাটলেটিকো

    অবশেষে বার্সেলোনাকে হারালো সিমিওনের অ্যাটলেটিকো    

    ফুলটাইম
    অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ ১-০ বার্সেলোনা


    আগামী মাসে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদে ডিয়েগো সিমিওনের ৯ বছর পূর্ণ হবে। এই ৯ বছরে অ্যাটলেটিকোর ভোল পালটে গেছে। ক্লাব পার করেছে তার ইতিহাসের সেরা সময়। কিন্তু এই ৯ বছরে লা লিগায় অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ বার্সেলোনার বিপক্ষে খেলেছে ১৭ বার। এর ভেতর ১১ বার হেরেছে অ্যাটলেটিকো, বাকি ৬ বার হয়েছে ড্র। অ্যাটলেটিকো এই ১৭ ম্যাচে গোল খেয়েছে  ২৭টি, বিপরীতে দিতে পেরেছে ১৩টি। অ্যাটলেটিকো গোলরক্ষক এই ৯ বছরে বার্সার বিপক্ষে ক্লিনশিট রাখতে পেরেছেন লিগে মাত্র একবার। বার্সেলোনা ডিয়েগো সিমিওনের জন্য এতোদিন অপয়া হয়ে ছিল। তবে এবার আর নয়। সেই ধারায় ছেদ পড়ল অবশেষে। তাও নাটকীয় এক গোলে। আর বার্সেলোনা আবার পেল হারের স্বাদ।   

    কুফা কাটানোর রাতে এই জয়ের মাহাত্ম্য আরও বেড়ে গেছে পয়েন্ট টেবিলের কারণে। লা লিগায় এখন সবার ওপরে রিয়াল সোসিয়েদাদ। তার নিচে সমান ২০ পয়েন্ট নিয়ে আছে অ্যাটলেটিকো। কিন্তু ৮ ম্যাচে খেলার অ্যাটলেটিকোর হাতে ম্যাচ আছে একটি বেশি। আর বার্সেলোনা মৌসুমের তৃতীয় হারে পয়েন্ট টেবিলের ১০-এ ঠাঁই পেয়েছে। ৮ ম্যাচ শেষে ৩ জয়, ৩ হার, ও দুই ড্র বার্সার দুর্দশা ফুটিয়ে তুলছে পুরোপুরি। অ্যাটলেটিকোর কাছে হারে তার সঙ্গে যোগ হয়েছে আরও কিছু দুঃসংবাদ।


    ম্যাচের নিষ্পত্তি হয়েছে অদ্ভুত এক মুহুর্তে। এমন মুহুর্তের মুখোমুখি মার্ক আন্দ্রে টের স্টেগান আগে কখনও হননি। আর হবেন কি না সেই নিয়েও সন্দেহ থাকতে পারে। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে অ্যাটলেটিকো নিজেদের বক্স থেকে বল ক্লিয়ার করেছিল। সেই বল ধরতে প্রায় মাঝবৃত্তের কাছাকাছি চলে গিয়েছিলেন স্টেগান। ইয়ানিক কারাস্কো সেই বল পাখির চোখ করেছিলেন। দারুণ ফার্স্ট টাচে সামনে বসে পড়া স্টেগাননে চলন্ত অবস্থায় নাটমেগ করে মিডফিল্ড থেকেই সরাসরি বল জালে পাঠিয়ে দেন কারাস্কো। সম্ভাব্য সবচেয়ে খারাপ সময়ে গোল হজম করে বার্সা যায় বিরতিতে। অবশ্য ওই মুহুর্তটা হজম করতে বেশ খানিকটা সময়ই লাগার কথা খোদ অ্যাটলেটিকো খেলোয়াড়দেরও।

    ওয়ান্ডা মেট্রোপলিটানোতে অবশ্য বার্সার শুরুটা মন্দ ছিল না। আন্টোয়ান গ্রিযমান ম্যাচের দুই মিনিটের ভেতর নিজের সাবেক ক্লাবের বিপক্ষে গোল করতে পারতেন। কিন্তু কাছের পোস্ট থেকে তার ফ্লিক চলে যায় ওপর দিয়ে। শুরুর ওই ঝলকানির পর বার্সা মিলিয়ে গেছে, অ্যাটলেটিকো বার্সার ঘাড়ের ওপর চেপে বসেছে। ১১ মিনিটে মার্কাস ইয়োরেন্তে বক্সের ভেতর থেকে জোরালো শট স্টেগানের বারপোস্ট কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন। এরপর বিরতির আগ পর্যন্ত গোছালো অ্যাটলেটিকোর বিপক্ষে বল পেতেই ধুঁকেছে বার্সা। বিরতির আগে অ্যাটলেটিকোর গোলে স্টেগানের বড় অবদান থাকলেও এগিয়ে যাওয়াটা প্রাপ্যই ছিল তাদের।

    লিওনেল মেসি শুরুটা ভালো করেছিলেন। কিন্তু তিনিও বাকিদের মতো হারিয়ে নিজেকে খুঁজেছেন। আন্তর্জাতিক বিরতির ভ্রমণ, ধকল সবকিছুই তার খেলায় বড় প্রভাব ফেলে গেছে। পুরো ম্যাচে তেমন কিছুই করতে পারেননি তিনি। তবে সেরা সুযোগটা পেয়েছিলেন ৪১ মিনিটে। জর্দি আলবার পাস অনেকটা হতচকিত করে দিয়েছিলেন তাকে বক্সের ভেতর। অনেক সময় পেয়েছিলেন বলে বোধ হয় নিজেও অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছিলেন। বাইলাইনের কাছে গিয়ে এরপর সোজা বল মেরেছেন ইয়ান অবলাকের কাছে।

    দ্বিতীয়ার্ধে অবলাক বার্সাকে ভালো ভুগিয়েছেন। দুইবার তিনি ক্লেমেন্ত ল্যাংলেটের হেড ঠেকিয়ে দিয়ে বার্সাকে ম্যাচে ফিরতে দেননি। দুই ঘটনাই অবশ্য দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম দশ মিনিটের ভেতর ঘটে গেছে। এরপর অ্যাটলেটিকো দ্বিতীয় গোলের নেশায় খেলে গেছে বার্সাকে দর্শক আসনে বসিয়ে। লুইস সুয়ারেজ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ম্যাচে ছিলেন না। সেদিক দিয়ে তার সাবেক ক্লাব বেঁচেই গেছে। ডিয়েগো কস্তাও নেমেছেন শেষদিকে বল হোল্ড করতে, আরেকটু সচেষ্ট হলে হয়ত দ্বিতীয় গোলটি অ্যাটলেটিকো পেয়েই যেত। বরাবরের মতোই গোলের বেশিরভাগ আক্রমণে কারাস্কোর অবদান ছিল বাকিদের চেয়ে একটু আলাদা। 

    সময়ের সঙ্গে বার্সার দুঃসংবাদের পাল্লাও ভারী হয়েছে মাদ্রিদে। জেরার্ড পিকে অনাকাঙ্খিত চোটে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে মাঠ ছেড়েছেন। তার চোখের ভাষা বলে দিয়েছে লম্বা সময়ের জন্য মাঠের বাইরে থাকতে হতে পারে তাকে। আনসু ফাতি তো আগেই বাদ পড়েছেন। তার জায়গায় নামা উসমান ডেম্বেলেও প্রথমার্ধে কাঁধে চোট পেয়ে বার্সা সমর্থকদের ভয় ধরিয়ে দিয়েছিলেন। পরে অবশ্য তিনি পুরো ম্যাচই খেলেছেন। কিন্তু সার্জি রবার্তোও চোট নিয়ে খেলেছেন পুরো ম্যাচ।

    ফিলিপ কৌতিনহো অবশ্য চোট থেকে সেরে মাঠে ফিরেছিলেন দ্বিতীয়ার্ধে। সার্জিনহো ডেস্টও নেমেছিলেন। শেষদিকে মার্টিন ব্রাথওয়েটকেও চেষ্টা করেছেন রোনাল্ড কোমান। কিন্তু কোনোকিছুতেই লাভ হয়নি তার। সব শেষ সুযোগটা রবার্তোই পেয়েছিলেন। কিন্তু তার ডিফ্লেকটেড শটও গেছে বাইরে দিয়ে।

    এতোসব কিছুর মধ্যে বার্সা চাইলে একটি জায়গায় স্বস্তি খুঁজতে পারে। যদিও তাতেও খুব বেশি লাভ নেই। ১৯৯০-৯১ মৌসুমের পর লিগে সবচেয়ে বাজে শুরু করেছে বার্সা। সেবারও ৮ ম্যাচ শেষে বার্সা পেয়েছিল ১১ পয়েন্ট। সেই দলের কোচ ছিলেন কিংবদন্তী ইয়োহান ক্রুইফ। কিন্তু সেবার শেষ পর্যন্ত লা লিগা জিতেছিল বার্সা। সে দলের সদস্যও ছিলেন রোনাল্ড কোমান। আপাতত অতীত ছাড়া আর গতি নেই বার্সার! আর সেই অতীতটাই মুছে ফেলে স্বস্তি খুঁজছেন সিমিওনে।