• বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপ ২০২০
  • " />

     

    মুশফিকের মেজাজ হারানোর ম্যাচে বরিশালকে বিদায় করে এগিয়ে গেল ঢাকা

    মুশফিকের মেজাজ হারানোর ম্যাচে বরিশালকে বিদায় করে এগিয়ে গেল ঢাকা    

    বেক্সিমকো ঢাকা ১৫০/৮, ২০ ওভার (ইয়াসির ৫৪, মুশফিক ৪৩, আকবর ২১, মিরাজ ২/২৩, রাব্বি ২/৪০, শুভ ১/৩২, তাসকিন ১/২১) 
    ফরচুন বরিশাল ১৪১/৯, ২০ ওভার (আফিফ ৫৫, অঙ্কন ১৫, মিরাজ ১৫, আল-আমিন ২/২২, মুক্তার ৩/১৮, শফিকুল ৩/৩৯, রবি ১/১৫)
    ঢাকা ৯ রানে জয়ী


    মুশফিকুর রহিমের মেজাজ হারানোর ম্যাচে বেক্সিমকো ঢাকা এলিমিনেট করে দিয়েছে ফরচুন বরিশালকে। দুই দলেরই ব্যর্থ টপ-অর্ডারের পর মিডল-অর্ডারে হাল ধরে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টায় বরিশাল ঢাকার কাছ থেকে থেমেছে ৯ রান দূরে। এলিমিনটরের জয়ের পর ঢাকা এখন অপেক্ষা করবে প্রথম কোয়ালিফায়ারে গাজি গ্রুপ চট্টগ্রাম ও জেমকন খুলনার বিপক্ষে হারা ম্যাচের। আর অপেক্ষাকৃত দূর্বল দল নিয়েও গ্রুপপর্বে শেষ ম্যাচে দারুণ জয়ে প্লে-অফে আসা বরিশালকে থামতে হচ্ছে এখানেই। 

    সতীর্থ নাসুম আহমেদের ওপর এ ম্যাচে দুইবার চড়াও হয়েছেন মুশফিক, পরেরবার তো তাকে মারতে যাবেন, এমন ভাব ছিল স্পষ্টই। সঙ্গে কী উইকেট, কী বাউন্ডারি-- মুশফিকের অভিব্যক্তি আসলে বুঝাতে পারছিল না দুইয়ের পার্থক্য। ১৭তম ওভারে আফিফ হোসেন র‍্যাম্প করতে গিয়ে ক্যাচ তুলেছিলেন, মুশফিক সেটিই নিয়েছেন। তবে শর্ট ফাইন লেগে দাঁড়ানো নাসুমও চেষ্টা করেছিলেন শুরুতে, মুশফিকের সঙ্গে সংঘর্ষটাও হয়নি শেষ পর্যন্ত। তখন পর্যন্ত ঢাকা ও বরিশালের জয়ের মাঝে পার্থক্য হয়ে ছিলেন আফিফই। 

    ১১তম ওভারের শেষ বলে তামিম ইকবাল আউট হওয়ার সময় বরিশালের রান ছিল ৫৯, ৩ উইকেটে। আগে ব্যাটিং করা ঢাকা সে সময়ে তুলেছিল ৬০ রান, ওই ৩ উইকেটেই। বরিশাল অবশ্য শুরুতে ভাল করারই ইঙ্গিত দিয়েছিল, তবে শফিকুলের বেরিয়ে যাওয়া বলটা স্টাম্পে ডেকে এনে প্রথম বিপত্তি ঘটালেন সাইফ হাসান। এরপর একদিকে ভুগলেন পারভেজ হোসেন ইমন, রবিউল ইসলাম রবিকে ডাউন দ্য গ্রাউন্ডে খেলতে গিয়ে লাইন মিস করে হলেন বোল্ড। তামিম নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি একেবারেই, মুক্তারকে পুল করতে গিয়ে ডিপ স্কয়ার লেগের সীমানায় ধরা পড়ার আগে করেছেন ২৮ বলে ২২। বরিশালের আশা এরপর ঠেকেছিল আগের ম্যাচে শেষদিকে ঝড় তোলা আফিফ ও তৌহিদ হৃদয়ের ওপরই। আফিফ চড়াও হলেন, একদিকে শুধু উইকেট আগলে রাখার কাজটাই করতে পারলেন ভুগতে থাকা হৃদয়। আল-আমিন জুনিয়রের পরপর দুই বলে হৃদয় ও সোহরাওয়ার্দি শুভ ফিরলে অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছিল ঢাকা। 

    অসম বাউন্স ও ধীরগতির উইকেটেও আফিফের টাইমিং ভালই হচ্ছিল, শফিকুলকে ছয় মেরে ৩২ বলে করলেন ফিফটিও। এর আগে অবশ্য একবার রান-আউট হতে পারতেন, হৃদয়ের সঙ্গে ভুল বুঝাবুঝিতে ক্রিজের মাঝে গিয়ে থমকে দাঁড়ালেও আল-আমিন থ্রোটা ঠিকঠাক নিতে না পারায় হয়নি সেটি। শেষ পর্যন্ত আউট হলেন শফিকুলের বলেই, সে ক্যাচ নিয়েই মুশফিকের ওই মেজাজ হারানো। অবশ্য ম্যাচে মুশফিকের এমন আচরণের শিকার নাসুম হয়েছেন সে নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো, ১৩তম ওভারে আরেকবার ফিল্ডিংয়ে এমন করেছিলেন তিনি। 

    আফিফের উইকেটের পর বরিশালকে জিততে করতে হতো অসাধারণ কিছু, পরের দুই ওভারে ২৫ রান উঠলেও শেষ ৬ বলে প্রয়োজন ছিল ২০ রান, ওভারের প্রথম ও পঞ্চম বলে মুক্তার আলি দুটি চার দিলেও ঢাকাকে পার করিয়েছেন ঠিকই। 

    এর আগে শুরুতে দ্রুত উইকেটের চাপ সামলে মুশফিকুর রহিমের ৩০ বলে ৪৩, ইয়াসির আলি রাব্বির ৪৩ বলে ৫৪ ও আকবর আলির ৯ বলে ২১ রানে ভর করে ১৫০ পর্যন্ত যেতে পেরেছিল বেক্সিমকো ঢাকা। পাওয়ারপ্লেতে ৩ উইকেটে ২৪ রানের পর প্রথম ১০ ওভারে ৫৪ রানের পর ১৫০-কে ভাল পুনর্গঠন মনে হতেই পারে, তবে ঢাকার সম্ভাবনা ছিল আরেকটু সামনে এগুনোর। তবে মুশফিক, ইয়াসির বা আকবর-- তিনি ব্যাটসম্যানই আউট হয়েছেন অসময়ে, ঢাকাও তাই সেই অর্থে উড়ান দিতে পারেনি আর। টসে হেরে ফিল্ডিং নিয়ে বরিশাল শুরু থেকেই চেপে বসেছিল ঢাকার ওপর। আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান নাইম শেখের পর আরেক ওপেনার সাব্বির রহমান ও আল-আমিন জুনিয়রও ফিরে গেছেন বলতে গেলে কিছু না করেই। মিরাজের বলে নাইম, তাসকিনের বলে আল-আমিন ক্যাচ দেওয়ার পর সাব্বির বোল্ড হয়েছেন সোহরাওয়ার্দি শুভর বলে, তাসকিন প্রথম ৩ ওভারে গুণেছিলেন মাত্র ৯ রান। 

    ইয়াসিরকে নিয়ে এরপর পুনর্গঠনের কাজটা শুরু করেছিলেন মুশফিক। তবে যা কিছু আক্রমণ তার সবই তিনি করবেন-- এমন নীতি কাজে আসেনি। ৪ চার ও ১ ছয়ের ইনিংস শেষ হয়েছে তার কামরুল ইসলাম রাব্বিকে স্লগ করতে গিয়ে টপ-এজড হয়ে। এরপরের চেষ্টা ছিল আকবরের, রাব্বিকে ছয়-চারের পর মিরাজকে আরেকটি চার মারলেন, তবে মিরাজকে স্লগ করতে গিয়ে কাউ কর্নারে ধরা পড়েছেন তিনি, ১৬তম ওভারে গিয়ে। প্রথম ৩০ বলে ২৮ রান করা ইয়াসির নিজের ইনিংসের গিয়ার বদলেছিলেন, এরপর ফিফটি পূর্ণ করেছেন ৩৯ বলে। তবে শেষ ওভারের প্রথম বলে রাব্বিকে আড়াআড়ি খেলতে গিয়ে হয়েছেন এলবিডব্লিউ, রিভিউ নিয়েও বাঁচেননি। এরপর একটি চারের বিপরীতে হয়েছে দুটি রান-আউট, ঢাকাও আটকে গেছে তাই দেড়শতেই। 

    শেষ পর্যন্ত যথেষ্ট হয়েছে সেটিই। বোলারদের ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দারুণভাবে ব্যবহার করেছেন মুশফিক, বরিশালকে রানতাড়ায় জেঁকে বসতে দেননি। তবে দিনশেষে সামনে এসেছে তার মেজাজ, ঢাকার উল্লাস ছাপিয়েও হয়তো আসবে নাসুমকে মারতে উদ্যত মুশফিকের ওই ছবিটাই।