• বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপ ২০২০
  • " />

     

    নেট সেশন : 'প্রাপ্য' জায়গায় থাকা চট্টগ্রাম নাকি 'অনুমিত' মঞ্চের খুলনা?

    নেট সেশন : 'প্রাপ্য' জায়গায় থাকা চট্টগ্রাম নাকি 'অনুমিত' মঞ্চের খুলনা?    

    বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপ ২০২০ ফাইনাল
    গাজী গ্রুপ চট্টগ্রাম-জেমকন খুলনা 

    কবে, কখন
    ১৮ ডিসেম্বর, ২০২০
    বাংলাদেশ সময় ৪.৩০ টা (১৬৩০)


    দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার জয়ের পর মোহাম্মদ মিঠুন সরাসরিই বলেছিলেন, গাজী গ্রুপ চট্টগ্রাম যেভাবে খেলেছে এই টুর্নামেন্টে, ফাইনাল খেলাটা প্রাপ্য তাদের। ক্রিকেটে প্রাপ্য বা প্রাপ্য নয় ধরনের কথার যৌক্তিকতা কতখানি, সে আলোচনায় না গিয়ে দেখলে, আদতে মিঠুনের কথার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করার সুযোগ নেই তেমন। বেক্সিমকো ঢাকা, জেমকন খুলনাকে ১০০-এর নিচে অল-আউট করে দিয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করেছিল তারা, গ্রুপপর্বে ৮ ম্যাচের মধ্যে জিতেছিল ৭টিতেই। প্রথম কোয়ালিফায়ারে খুলনার কাছে হোঁচট খেলেও পরের সুযোগে ঠিকই ঢাকাকে পিষ্ট করে ফাইনালে গেছে তারা। 

    সে হিসেবে খুলনার শুরুটা একটু এবড়োথেবড়োই ছিল-- প্রথম ম্যাচে আরিফুল হকের অতিমানবীয় পারফরম্যান্সে জয়ের পর টানা দুই হার। এরপর টানা তিন জয় তাদেরকে প্লে-অফে এনেছে। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে থেকেই ফেভারিট ধরা হচ্ছিল দলটাকে, শেষ পর্যন্ত তারা ফাইনালে এসেছে প্রথম কোয়ালিফায়ারে জিতে সরাসরি। সরাসরি প্রাপ্য না বলা হলেও ফাইনালের জায়গাটা যেন খুলনার জন্য অনুমিতই ছিল।

    ফাইনালে খুলনা পাচ্ছে না সাকিব আল হাসানকে। টুর্নামেন্টজুড়েই ব্যাটিংয়ে নিস্প্রভ ছিলেন সাকিব, যদিও শেষ ম্যাচে ফর্মে ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। তবে তার আঁটসাঁট বোলিং খুলনা মিস করবে নিশ্চিতভাবেই। আর সাকিব না থাকা মানে টিম কম্বিনেশনে অদল-বদল করা, অবশ্য শেষদিকে যোগ দেওয়া মাশরাফি বিন মুর্তজা শেষ ম্যাচে নিয়েছেন টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো ৫ উইকেট, ‘অভিজ্ঞতার’ ভাঁড়ার তাই খুব খালি হচ্ছে না তাদের।  


    চট্টগ্রাম শেষদিকে কম্বিনেশন নিয়ে কাঁটাছেঁড়া করেছে, শেষ ম্যাচে তো প্রথমবারের মতো খেলানো হয়েছিল নাদিফ চৌধুরিকেও। জিয়াউর রহমানকে আগেই বাদ দেওয়া হয়েছে, তবে প্রথম কোয়ালিফায়ারে একজন বাড়তি বোলিং অপশনের অভাব ছিল তাদের। খুলনার তুলনায় চট্টগ্রামের মিডল-অর্ডার একটু কম পরীক্ষার ভেতর দিয়ে গেছে, তবে শেষদিকে অধিনায়ক মোহাম্মদ মিঠুনের রানে ফেরা তাদের জন্য বাড়তি স্বস্তিরই হওয়ার কথা চূড়ান্ত লড়াইয়ের আগে। অবশ্য কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের মতে, অভিজ্ঞতায় ঘাটতি থাকলেও তার মিডল অর্ডার ঠিকই আছে, দরকার পড়লেই ‘ডেলিভার’ করবেন তারা। 

    এমনিতে চট্টগ্রামের শক্তি টপ-অর্ডার, টুর্নামেন্টের শীর্ষ রান-সংগ্রাহক তাদের লিটন দাস, সেরা ছয়ে আছেন লিটনের ওপেনিং সঙ্গী সৌম্য সরকারও। চট্টগ্রামের বাঁহাতি পেস-আক্রমণও ‘ডেলিভার’ করেছে সবসময়ই, মোস্তাফিজুর রহমান উইকেটশিকারির তালিকায় যেমন শীর্ষে, শীর্ষ পাঁচে আছেন শরিফুল ইসলামও। তবে কোয়ালিফায়ারে খুলনার কাছেই উড়ে গিয়েছিল চট্টগ্রাম, জহুরুল ইসলাম থেকে শুরু করে ইমরুল কায়েস-- খুলনার সব ব্যাটসম্যানই চড়াও হয়েছিলেন। খুলনার ক্ষেত্রে চিত্রটা এমনই-- পারফরম্যান্সগুলি এসেছে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে। 

    বিপিএলের বদলি হিসেবে বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপ আয়োজন করেছে বিসিবি, বিদেশী ক্রিকেটার না থাকাটা একদিক দিয়ে শাপেবরই বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের জন্য। বিপিএলের বাইরেও একটা বাড়তি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট আয়োজন ক্রিকেটারদের দাবির ভেতরই ছিল একসময়। শুক্রবারের ফাইনালে মাহমুদউল্লাহ বা মোহাম্মদ মিঠুন- শিরোপা হাতে যিনিই হাসুন না কেন, সেটি প্রাপ্য হোক বা না হোক, হাসবে এই টুর্নামেন্টও। 


    রঙ্গমঞ্চ
    শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়াম, মিরপুর

    এক ভেন্যুতে সবকটি ম্যাচ, মিরপুরের জন্য এ টুর্নামেন্ট ছিল বড় ধরনের চ্যালেঞ্জই। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বেশ কয়েকটি উইকেটে খেলা হয়েছে, শিশির-কুয়াশা সঙ্গী করেও মিরপুরের উইকেট উৎরে গেছে ভালভাবেই। ফাইনাল শুরু হবে বিকালে, ফলে শিশিরের প্রভাবটা থেকেই যাচ্ছে। 

    টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত টসে জিতে আগে ব্যাটিং করেছে দুই দল-- তৃতীয় ম্যাচে জেমকন খুলনা, শেষ দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে বেক্সিমকো ঢাকা-- হেরেছে দুই দলই। অবশ্য ফাইনাল বলে রানতাড়ার চাপটা টসজয়ী অধিনায়ক নিতে চাইবেন কিনা, দেখতে হবে সেটিও। 

    যাদের ওপর চোখ

    লিটন দাস

    টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ রান তার, লিটন ছন্দেই আছেন। অবশ্য এবার লিটন খেলছেন একটু ভিন্নধাঁচে, ইনিংস বড় করার দিকে বেশ মনযোগী তিনি। টি-টোয়েন্টিতে ক্যারিয়ার স্ট্রাইক রেট ১৩৫ হলেও এবার ব্যাটিং করেছেন ১২০ স্ট্রাইক রেটে, তবে দুটি অপরাজিত ইনিংসে গড় পঞ্চাশের বেশি। বড় মঞ্চে লিটনের একটা ইনিংস গড়ে দিতে পারে ম্যাচের পার্থক্যই। 

    মাশরাফি বিন মুর্তজা 

    এ টুর্নামেন্টে মাশরাফির যাত্রা কিছুটা ঢাকা থেকে খুলনা যাওয়ার পথে চুয়াডাঙ্গা গিয়ে যোগ দেওয়ার মতো, তাও কোন ট্রেনে যাবেন সেটি নিশ্চিত ছিল না। গ্রুপপর্বে ২ ম্যাচ বাকি থাকতে লটারির মাধ্যমে খুলনা দলে এসেছেন, দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে তো ঝলকই দেখিয়েছেন। ট্রেন যেটিই হোক, মাশরাফি পথটা চেনেন ঠিকই। সে ট্রেন এখন শেষ স্টপেজের আগে, ঠিকঠাক খুলনাকে পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে অবদান রাখতে পারবেন তিনি? 


    সম্ভাব্য একাদশ

    খুলনার ক্ষেত্রে বড় প্রশ্ন-- সাকিবের বদলি হিসেবে খেলবেন কে। এমনিতেও শহিদুল ইসলামকে আগেই হারিয়ে ফেলেছে তারা। অলরাউন্ডার হিসেবে অপশন সালমান খেলেননি এক ম্যাচও। সেক্ষেত্রে ব্যাটসম্যান বিজয় বা স্পিনার অপু-- এ দুই অপশনের দিকে যেতে পারে তারা। 

    জেমকন খুলনা 

    মাহমুদউল্লাহ (অ), ইমরুল কায়েস, আল-আমিন হোসেন, শামিম হোসেন পাটোয়ারি, আরিফুল হক, শুভাগত হোম, হাসান মাহমুদ, জাকির হাসান, জহুরুল ইসলাম, মাশরাফি বিন মুর্তজা, এনামুল হক বিজয়/নাজমুল ইসলাম অপু

    স্পিন আক্রমণ, আর অলরাউন্ডার-- চট্টগ্রামের মেলাতে হবে এ কম্বিনেশন। জিয়াউর না খেললে স্পিনে রাকিবুল নাকি সনজিত, নাকি সৈকত আলিকে বাদ দিয়ে এ দুজনই? 

    গাজী গ্রুপ চট্টগ্রাম 

    মোহাম্মদ মিঠুন (অ), সৌম্য সরকার, শামসুর রহমান, মোসাদ্দেক হোসেন, নাহিদুল ইসলাম, নাদিফ চৌধুরি, লিটন দাস, মোস্তাফিজুর রহমান, শরিফুল হাসান, রাকিবুল হাসান, সৈকত আলি/সনজিত সাহা


    সংখ্যার খেলা 

    • টুর্নামেন্টে ১ বার অল-আউট হয়েছে চট্টগ্রাম, খুলনা ২ বার 
    • রানের ব্যবধানে দুটি বড় জয়ই খুলনার (৪৮ রানে বরিশাল, ৪৭ রানে চট্টগ্রামের বিপক্ষে), উইকেটের ব্যবধানে দুটি বড় জয়ই চট্টগ্রামের (ঢাকা ও খুলনার বিপক্ষে ৯ উইকেটে) 
    • সবচেয়ে বেশি ৩০৬টি বল খেলেছেন লিটন দাস 
    • সবচেয়ে বেশি ১২টি ক্যাচ নিয়েছেন শামিম হোসেন পাটোয়ারি

    তারা বলেন 

    “তারা খুবই ভালো দল, সবাই জানে যে সৌম্য-লিটন খুব ভালো ব্যাটিং করছে। লিটন এই টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। ওদের বোলিং আক্রমণ ভালো। তো আমার মনে হয় যে ওদের প্রতি ফোকাস বেশি না করে আমরা আমাদের আত্মবিশ্বাসের ওপর যদি বিশ্বাসটা বেশি রাখি, তাহলে মনে হয় আমাদের জন্য ভালো হবে এবং দলের জন্যও ভালো।” 

    মাহমুদউল্লাহ, জেমকন খুলনা অধিনায়ক

    “আমি মনে করি টি-টোয়েন্টি হচ্ছে অভিজ্ঞ ক্রিকেটারের খেলা। মাঠের ভিতরে যাদের যত ভালো মাথা থাকবে, তারাই ম্যাচ জিতবে। সেদিক দিয়ে খুলনা অনেক এগিয়ে আছে। কারণ তাদের অনেকগুলো বড় বড় ক্রিকেটার আছে। আমাদের ছেলেদের হয়তো ওই অভিজ্ঞতা নাই, খুব বেশি ফাইনাল ম্যাচও তারা খেলেনি। যেহেতু দর্শক নাই, এটা একটা বড় ধরনের অ্যাডভান্টেজ। দর্শক থাকলে হয়তো একটু চিন্তার বিষয় ছিল। কারণ ওই চাপটা নেওয়া ছেলেদের জন্য অনেক কঠিন হয়ে যেত। দর্শক না থাকায় একটু শান্তিতে আছি। পুরা টুর্নামেন্টে আমাদের একটা ধারাবাহিকতা ছিল, এ ম্যাচটাও সেভাবে খেলতে পারলে আমাদের একটা ভালো অ্যাডভান্টেজ থাকবে।” 

    মোহাম্মদ সালাউদ্দিন, গাজী গ্রুপ চট্টগ্রাম হেড কোচ