• বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপ ২০২০
  • " />

     

    চট্টগ্রামকে আঁধারে ডুবিয়ে চ্যাম্পিয়ন খুলনা

    চট্টগ্রামকে আঁধারে ডুবিয়ে চ্যাম্পিয়ন খুলনা    

    জেমকন খুলনা ১৫৫/৭, ২০ ওভার (মাহমুদউল্লাহ ৭০*, জাকির ২৫, আরিফুল ২১, নাহিদুল ২/১৯, শরিফুল ২/৩৩, মোস্তাফিজ ১/২৪)
    গাজী গ্রুপ চট্টগ্রাম ১৫০/৬, ২০ ওভার (সৈকত ৫৩, মোসাদ্দেক ১৯, শামসুর ২৩, শহিদুল ২/৩৩, আল-আমিন ১/১৯, শুভাগত ১/৮)
    খুলনা ৫ রানে জয়ী ও বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপ চ্যাম্পিয়ন 


    শহিদুল ইসলামের শেষ বলটি লো-ফুলটস, নাহিদুল ইসলাম তাতে ছয় মারলেন। কিন্তু চট্টগ্রামের ডাগ-আউটে জেঁকে বসা নিকষ আঁধারে উজ্জ্বলতা ফেরাতে পারলো না সেটি, বরং উল্লাসে মাতলো খুলনা। শেষ বলের আগেই যে সব শেষ হয়ে গেছে চট্টগ্রামের। মাহমুদউল্লাহর ৪৮ বলে ৭০ রানের ইনিংসে ভর করে ১৫৫ রান করা জেমকন খুলনা গাজী গ্রুপ চট্টগ্রামকে আটকে দিয়েছে ১৫০ রানে, সৈকত আলির ৪৫ বলে ৫৩ রান যথেষ্ট হয়নি চট্টগ্রামের। বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপের ফাইনালে তাই শেষ হাসি মাহমুদউল্লাহ-মাশরাফিদের খুলনারই। 

    টুর্নামেন্টজুড়েই গাজী গ্রুপ চট্টগাম ছিল আত্মবিশ্বাসী, টসে জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্তেও ছিল তারই প্রতিফলন। তবে নিজেদের বোলিংয়ের শেষ ওভারেই যেন মোমেন্টাম হারিয়ে ফেললো তারা, সৌম্য সরকারের করা সে ওভারে ১৭ রান তুলে খুলনাকে ১৫৫ পর্যন্ত নিয়ে গেলেন মাহমুদউল্লাহ। রানতাড়ায় এরপর চট্টগ্রাম গুবলেট পাকিয়ে ফেললো অসময়ে উইকেট হারিয়ে। শেষদিকে সৈকত একটু চেষ্টা করলেন, তবে ততক্ষণে আসলে দেরি হয়ে গেছে তাদের। 

    টুর্নামেন্টের সেরা ওপেনিং জুটি লিটন-সৌম্যর কাছে যেমন শুরু চেয়েছিল চট্টগ্রাম, তেমন পারেননি তারা। মাশরাফিকে চার-ছয় মারা সৌম্য চতুর্থ ওভারে শুভাগতর বলে ক্রিজে আটকে থেকে বোল্ড হয়েছেন, পরের ওভারে আল-আমিনের বলে এলবিডব্লিউ মিঠুন। রিভিউ নিয়েও বাঁচেননি তিনি। সৈকতকে নিয়ে এরপর কিছুক্ষণ ছিলেন লিটন, তবে সৈকত শুরুতে ছিলেন বড্ড ধীরগতির। প্রথম ১৪ বলে তিনি করেছিলেন মাত্র ৬ রান। ৯ম ওভারে লিটনের রান-আউটে দুর্দশা বেড়েছে চট্টগ্রামের, সমানসংখ্যক বলে ২৩ রান করে ফিরেছেন লিটন। প্রথম ১০ ওভারে চট্টগ্রাম তুলেছিল ৬২, পরেরধাপে তাদের প্রয়োজন ছিল ৯৪। 
     


    শামসুরের সঙ্গে সৈকতের জুটি ঝুলিয়ে রেখেছিল চট্টগ্রামের আশা, তবে ২১ বলে ২৩ করে হাসানকে তুলে মারতে গিয়ে এদিন আর নায়ক হওয়া হয়নি শামসুরের। একপাশে সৈকতকে রেখে এরপর চেষ্টা করেছেন মোসাদ্দেক, শেষ ২ ওভারে ২৯ যখন প্রয়োজন, ১৯তম ওভারের শেষ বলে ছয় মেরে শেষ আশাটা দিয়েছিলেন তিনি চট্টগ্রামকে। শেষ ওভারে প্রয়োজন ছিল ১৬ রান, শহিদুলের ওপরই ভরসা রেখেছিলেন মাহমুদউল্লাহ। কদিন আগেই বাবাকে হারিয়েছিলেন শহিদুল, বায়ো-সিকিউর বলয় ছেড়ে যাওয়া পেসার ফিরেছেন ফাইনালেই। টুর্নামেন্টে খুলনার সফলতম বোলার হতাশ করেননি, শেষে গিয়ে ওই ছয়টা দিলেও গর্জন তো তারই। আরেক পেসার আল-আমিন মাঝের ওভারগুলিতে ছিলেন দুর্দান্ত। 

    তবে শেষ পর্যন্ত খুলনার নায়ক আসলে মাহমুদউল্লাহই। ৭ম ওভারে ৪৩ রানে তৃতীয় উইকেট যাওয়ার পর জেমকন খুলনা অধিনায়ক ক্রিজে এসেছিলেন, রিভিউ লাইফলাইন পেরিয়ে, ভুল বুঝাবুঝির বলি হয়ে ব্যাটিং-সঙ্গী রান-আউট হয়ে ফেরার পরও থাকলেন তিনি। তার ৪৮ বলে ৭০ রানের অপরাজিত ইনিংসই শেষ পর্যন্ত ফাইনালে গড়ে দিয়েছে পার্থক্য। শেষ ওভারে ১৭ রানসহ শেষ ৩ ওভারে খুলনা তুলেছে ৩৫ রান, এর মাঝে ২৮ রানই তার। 

    টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নামা খুলনার শুরুটা হয়েছিল বীভৎস,নাহিদুলের টসড-আপ ডেলিভারিটা জায়গা থেকে তুলে মারতে গিয়ে টাইমিং করতে না পেরে মিড-অফে ক্যাচ তুলেছিলেন জহুরুল ইসলাম, ইনিংসের প্রথম বলেই। এরপর দুই ছয়, শরিফুলকে ইমরুল, নাহিদুলকে জাকির। তবে জহুরুলের পরিণতি হয়েছে ইমরুলেরও, অবশ্য তিনি আরেকটু দূরে নিতে পেরেছিলেন, ধরা পড়েছেন লং-অফে। মিডউইকেটে মিঠুনের হাতে একটা কঠিন সুযোগ দিয়ে বেঁচে যাওয়া জাকির এরপর নাহিদুলকে দুই চার মেরেছিলেন, তবে ডিপ মিডউইকেটে ক্যাচ দিয়েছেন মোসাদ্দেককে টেনে মারতে গিয়ে। 

    পাওয়ারপ্লেতে উঠেছিল ৪২ রান। ধুঁকতে থাকা খুলনার ভরসা তখন মাহমুদউল্লাহ, রাকিবুলের বলে সুইপ করতে গিয়ে মিস করে এলবিডব্লিউ হলে ক্ষণিকের জন্য হার্টবিট হয়তো মিস করে গেল তাদের। সঙ্গে সঙ্গেই রিভিউ করলেন মাহমুদউল্লাহ, বেশ কিছুক্ষণ তাকে টেনশনে রাখার পর বল ট্র্যাকিং দেখালো, ইমপ্যাক্ট ছিল বাইরে। 

    তবে খুলনাকে শুরুতেই চেপে ধরার কাজটা চট্টগ্রাম করেছে দারুণ, পাওয়ারপ্লের পর ৪ ওভারে হয়েছিল মাত্র একটি বাউন্ডারি, প্রথম ১০ ওভারে উঠেছিল ৬৩ রান। ১১তম ওভারে মাহমুদউল্লাহ ছয়, চার মারলেন, তবে পরের ওভারেই শরিফুলের শর্ট বলে ধরা পড়লেন আরিফুল, আপার-কাট করতে গিয়ে এজড হয়ে ধরা পড়লেন লিটনের হাতে। ১১-১৫, এই ৫ ওভারে এসেছে ৭টি বাউন্ডারি। 

    সে মোমেন্টাম অবশ্য ছুটে গেছে, ১৬তম ওভারে শরিফুলের শর্ট বলে টপ-এজড হয়ে ফিরেছেন শুভাগত, এরপর শামিম নেমে ভুল বুঝাবুঝিতে হয়েছেন রান-আউট, মাহমুদউল্লাহর জন্যই নিজের উইকেটটা বিলিয়ে দিয়ে এসেছেন তিনি। খুলনার লড়াই করার স্কোর আর তার আগেই থেমে যাওয়া-- এ দুইয়ের ব্যবধানের চাপটা অফিসিয়ালি যেন এরপর গিয়ে পড়েছে তাদের অধিনায়কের হাতে। 

    পরের দুই ওভারে ১৮ রান উঠেছে, মাশরাফি একটা চার মেরে ফিরেছেন। তবে চট্টগ্রামের বোলিং আক্রমণের পঞ্চম বোলারের অপশনের ফাঁকে ঢুকে পড়েছেন মাহমুদউল্লাহ। শেষ ওভারে সৌম্যর কাছ থেকে দুই চার ও এক ছয়ে তুলেছেন ১৭ রান। এর আগেই ফিফটি পূর্ণ করেছিলেন তিনি ৩৯ বলে, এরপর ৯ বলে করতে পেরেছেন ১৯।