• ভারতের অস্ট্রেলিয়া সফর
  • " />

     

    ক্রিকেট ও জীবনে যে কারণে 'ইনক্রেডিবল ইন্ডিয়া'কে উপেক্ষা করবেন না আপনি

    ক্রিকেট ও জীবনে যে কারণে 'ইনক্রেডিবল ইন্ডিয়া'কে উপেক্ষা করবেন না আপনি    

    লাল গালিচা, পুষ্পবৃষ্টি। একটা সাজানো ঘোড়ার গাড়ি। একটা কবরস্থান।

    ইন্টারনেটে ঘুরে বেড়ানো দুটো ভিডিও ক্লিপ, আর একটা ছবি। এই ছবি-ভিডিগুলি ভারতের আলাদা তিন রাজ্যের। যেখানে আলাদা তিন সংস্কৃতি। আলাদা তিন ভাষা। অস্ট্রেলিয়া জয়ের পর আজিঙ্কা রাহানে ফিরেছেন মুম্বাইয়ে, তার নিজের বাসায়। থাঙ্গারাসু নাটারাজান তামিলনাড়ুতে তার গ্রামের বাড়িতে। মোহাম্মদ সিরাজ হায়দরাবাদে নেমেই গেছেন বাবার কবরে। একটা ছবি, অথবা একটা ছোট ভিডিও ক্লিপ-- হয়তো সবকিছু বলবে না, তবে জানাবে বেশ কিছু, দেবে ইঙ্গিত। 

    ****

    যদি আপনি বাংলাদেশে থাকেন, নিজের বাসায় একটা টিভির (বা টিভিকার্ড) সঙ্গে ক্যাবল লাইন থাকে (নিজস্ব ডিশ বা সেট-টপ বক্স নয়), তাহলে এই কাজটা হয়তো আপনি করেছেন-- ক্যাবল অপারেটরকে বলে খেলা দেখার জন্য কোনো একটা নির্দিষ্ট চ্যানেল দেওয়ার অনুরোধ। এবং সেটি ভারতভিত্তিক কোনো চ্যানেল হওয়ার সম্ভাবনা খুবই বেশি। ভারত শুধু বাংলাদেশকে তিনদিকের সীমান্তে ঘিরে নেই, এই ব্যাপারেও আপনি ভারতকে উপেক্ষা করতে পারবেন না পুরোপুরি। 

    বেশ কয়েক বছর ধরেই ভারতের এমন ‘বড়’ সফর-- সাধারণত ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ায়-- হলে তাদের দেশের ব্রডকাস্টিং কোম্পানি আলাদা প্রোডাকশন টিমের সঙ্গে আলাদা কমেন্ট্রি টিম পাঠায়। এমন কাজ ইংল্যান্ডও করে। 

    তবে কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে এবার এই সিরিজের স্বত্ত্ব পাওয়া ভারতভিত্তিক সনি নেটওয়ার্ক সেটি করতে পারেনি। হার্শা ভোগলেরা তাই কমেন্ট্রি দিয়েছেন মুম্বাইয়ের স্টুডিও থেকেই, ইংল্যান্ডের শ্রীলঙ্কা সফরে স্কাইয়ের নাসের হুসেইন, মাইক আথারটনরাও তাই করছেন। কমেন্টেটরদের সাধাণত টেস্ট ম্যাচে এখন আধা ঘন্টার ‘স্টিন্ট’ থাকে, মানে এর পরপর তাদের রোস্টার বদলে যায়। দুই বা তিন এমন সেশনের পর সনি নিয়ে গেছে অস্ট্রেলিয়ার ফক্সের কমেন্ট্রিতে-- মার্ক হাওয়ার্ড, শেন ওয়ার্ন, মার্ক ওয়াহদের কাছে। অস্ট্রেলিয়ার গ্লেন ম্যাকগ্রার সঙ্গে ইংল্যান্ডের নিক নাইট যেমন এ সিরিজের কমেন্ট্রি দিতে ভারত গেছেন, তেমনি অস্ট্রেলিয়ায় ইংল্যান্ড থেকে গেছেন ইসা গুহ (সুনীল গাভাস্কার অস্ট্রেলিয়া গেছেন, তবে তিনি কমেন্ট্রি দিয়েছেন চ্যানেল সেভেনে)। 

    বাংলাদেশে থেকে তাই লাইভ ফুটেজ একই হলেও গ্রাফিক্স বা কমেন্ট্রি-- প্রায় সবই আপনি আলাদা দেখেছেন বা শুনেছেন অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডে থাকা কারও থেকে। ভারতের গ্যাবা জয়ের মুহুর্তে তাই সঞ্জয় মাঞ্জরেকারের কমেন্ট্রি শুনেছেন আপনি, মার্ক হাওয়ার্ডের নয়। আবার আপনার কাছে ইংরেজি বা হিন্দি কমেন্ট্রি শোনার অপশনও ছিল।

    মাঠে বসে দেখার সঙ্গে টিভিতে দেখার মাঝেই শুধু পার্থক্য নেই তাই, কোথায় থেকে, কোন চ্যানেল বা মাধ্যমে দেখছেন, নির্ভর করছে সেটির ওপরও। এটা একটা প্যাকেজ। সে প্যাকেজে আছে বিজ্ঞাপনও। 

    **** 

    বাংলাদেশে বসেও তাই আপনি ভারতের কোনো কোম্পানির ‘সারোগেট অ্যাডভার্টাইজিং’-এর সামনে পড়েছেন। সাধাণত যেসব পণ্যের -- যেমন মদ বা সিগারেট-- সরাসরি প্রচার নিষিদ্ধ, তারা একই নামের অন্য একটা পণ্যের বিজ্ঞাপন করে একটা ট্যাগলাইন দিয়ে, তাতে আপনি ওই পণ্যের নামটা জানেন। এটিই ‘সারোগেট অ্যাডভার্টাইজিং’। ইংল্যান্ডে প্রথম মদের ক্ষেত্রে এটি করা হলেও সাম্প্রতিক সময়ে ভারতে বেশ প্রচলিত এটি। ভারত-অস্ট্রেলিয়া সিরিজে অন্তত চারটি এমন পণ্যের বিজ্ঞাপন ছিল এই ব্রডকাস্টিং নেটওয়ার্কে। সঙ্গে বিলাসবহুল গাড়ি, কোনো অনলাইন রিটেইল কোম্পানি, মোটরবাইকের চাকা, এমনকি যে চকলেট-- সেটিও খুব একটা সস্তা নয়। বিজ্ঞাপনের ‘টার্গেট অডিয়েন্স’-এর কথা ধরলে, এর সবগুলিই একটা নির্দিষ্ট ‘শ্রেণি’র দিকে ইঙ্গিত করে। আকাশ-সংস্কৃতির প্রবন্ধ-রচনা পেরিয়ে ইন্টারনেটের সুফল-কুফলের এই যুগের পার্থক্যটাও আপনি টের পাবেন তাই। 
     


    ক্রিকেট-বাজারে ভারতের এই দাপটের মোটামুটি চূড়ায় থাকা অবস্থায় এসব দেখে আপনার মনে হতেই পারে, তিন ফরম্যাটের এই সময়ে ভারতে ক্রিকেটটা ধর্ম হিসেবে থাকলেও হয়তো এর বার্তাবাহক বদলে গেছে। নেহায়েত বেভারেজ বা নিছক জুতার সোল জোড়া লাগানোর আঠার সময় পেরিয়ে গেছে হয়তো। আইপিএলে মাঠ গমগম করলেও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ভারতেও তাই গ্যালারি (কোভিড-পূর্ব সময়ের কথা আপাতত) ফাঁকা দেখবেন আপনি। 

    ****

    হার্শা ভোগলে হাসছেন। 

    অ্যাডিলেডের ৩৬-এর ভস্ম থেকে মেলবোর্নে জেগে ওঠার পর সিডনির গ্রেট এসকেপ পেরিয়ে গ্যাবায় অস্ট্রেলিয়ান দুর্গের সামনে হাজির হওয়ার আগে ভারত তাদের অধিনায়ককে হারিয়েছে, মাত্র গুণতে শেখা কোনো বাচ্চার নাগালের বাইরে চলে গেছে বোলিং লাইন আপের অপশন, হারিয়েছে দলের সেরা অলরাউন্ডার, সেরা স্পিনারকে। 

    সিডনি টেস্ট শেষ হওয়ার পর রবি আশ্বিন কৌতুক করছিলেন, হয়তো গ্যাবায় গিয়ে ম্যাচ শুরুর আগে ড্রেসিংরুমে রাহানে যাদেরকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখবেন, সবাইকেই বলবেন নেমে পড়তে। একাদশের এই অভুতপূর্ব চেহারার কথা বলতে গিয়েই হাসছিলেন ভোগলে, যারা খেলছেন তাদেরকে ছোট করছেন না কোনোভাবেই, সেটিও ব্যাখ্যা করলেন একটু পর। 

    হয়তো কোভিড-১৯-এর সঙ্গে জড়িয়ে থাকা কোয়ারেন্টিন বা আইসোলেশন না থাকলে সে একাদশের চেহারা অন্যরকম হতো, চোটের বদলি হিসেবে দেশ থেকে কাউকে উড়িয়ে নেওয়ার ঘটনা তো হরহামেশাই ঘটে। ভারতের স্কোয়াডে থাকা প্রায় সব ক্রিকেটারই আইপিএল থেকে সরাসরি অস্ট্রেলিয়া গেছেন, বায়ো-সিকিউরড বলয়ে তারা কাটিয়েছেন দীর্ঘদিন। 

    রাহানে তার স্ত্রী-মেয়েকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়া গিয়েছিলেন। দেশের হয়ে খেলবেন, বেঁচে থাকলে বাবা এমনই চাইতেন বলে সিরাজ বাবার শেষকৃত্যে ফেরেননি। বিরাট কোহলি নিজের সন্তানের জন্মের সময় স্ত্রীর পাশে থাকবেন বলে ছুটি পেয়েছেন, তবে নেট বোলার নাটারাজান থেকে গেছেন অস্ট্রেলিয়াতেই। 

    গ্যাবায় ভারত প্রথমে খেলতে আপত্তি জানিয়েছিল, কুইন্সল্যান্ডের কড়া কোয়ারেন্টিনের নিয়মের কারণে। শেষ পর্যন্ত সেটি হয়েছে। রাহানে অধিনায়ক হবেন, সেটি জানা ছিল আগেই। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা ভারতের পেস বোলিং আক্রমণের নেতৃত্বে এসেছেন ২ টেস্টের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন সিরাজ, তার সঙ্গী নাটারাজন একের পর এক চোটের কারণে এ সফরেই অভিষেক করেছেন ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টির পর টেস্টেও। 

    শুধু ভোগলে কেন, ভারতের এই অদ্ভুত অবস্থা দেখে হয়তো জীবনের অনিশ্চয়তার এই খেল দেখে হেসেছিলেন আপনিও। 

    **** 

    চেতেশ্বর পুজারা গুজরাটের। গুজরাট রুক্ষ, শুষ্ক রাজ্য। পুজারার আইপিএল চুক্তি নেই। ঘরোয়া লিস্ট ‘এ’-তে রেকর্ড বেশ ভাল হলেও শুধু ভারত যে সীমিত ওভারে তাকে বিবেচনা করে না তা নয়, আইপিএলের কোনো দল তাকে যোগ্য মনে করে না। ওটিটি কন্টেন্টের যুগে তিনি যেন ধুঁকতে থাকা থিয়েটারের একক অভিনয়। ঋষভ পান্ট উত্তরাখান্দের, হিমালয়ের স্নিগ্ধতার কোলঘেঁষা জায়গার। তবে তিনি আইপিএলের হটকেক। উইকেটকিপিংটা গড়বড় করলেও তার টেস্ট ব্যাটিংয়ের ধাঁচ এ যুগের উপযোগি খুব, কার্যকরীতা তর্কসাপেক্ষ। টি-টোয়েন্টির কারণে আক্রমণাত্মক ক্রিকেটের যে সংক্রমণ, তার বাহক তিনি। বেশি বিশ্বস্ত ঋদ্ধিমান সাহার বদলে তাই তাকেই খেলিয়েছে ভারত। 

    সিডনিতেও পুজারা ও পান্ট- দুজন মিলে খেলেছেন দুই বিপরীতমুখী ইনিংস। পান্ট সেখানে জয়ের অসম্ভব আশা জুগিয়েছিলেন, আর পুজারা গ্রেট এসকেপের সবচেয়ে বড় ফুটোটা তৈরি করেছিলেন হারের বেড়াজালে। সিরিজে পুজারার অতি-ধীরগতির স্কোরিং-রেটের সমালোচনাও হয়েছে, তার ব্যাটিংয়ের আসল মর্মার্থ যেন ভুলেই গিয়েছিলেন তারা। তবে পুজারা ইমমোভেবল অবজেক্ট, যাকে টলানো যায় না। আর পান্ট আনস্টপেবল ফোর্স, যাকে থামানো যায় না। 


    ‘ইমমোভেবল অবজেক্ট’-এর সঙ্গে যখন ‘আনস্টপেবল ফোর্স’-এর সংঘর্ষের নাম ইররেসিস্টেবল প্যারাডক্স। যদিও এই প্যারাডক্স পরম গতি বা পরম স্থিতির মতো-- আদতে এমন কিছু নেই। তবে ক্রিকেট পিচের দুই দিকে যখন এ দুই রকম ব্যাপার থাকে, সেটা প্রতিপক্ষের সবচেয়ে বড় দুঃস্বপ্ন। 

    পান্ট টার্নে বিট হওয়ার পরের বলেই আক্রমণ করেছেন, মেরেছেন ছয়। ওয়ার্ন বলেছেন, এটা অবিশ্বাস্য সাহস। পান্ট বেসামাল হয়ে পড়ে যাওয়ার আগেও মিডল করেছেন বল। গ্যাবায় পুজারার অন্তত ৯ বার শরীরে আঘাত লেগেছে বলের, অস্ট্রেলিয়া তাকে টলাতে পারেনি। প্রতিবারই কমেন্টেটররা বলেছেন, ‘নাস্টি ব্লো’। ‘অবিশ্বাস্য সাহস’ শুধু আক্রমণে দরকার পড়ে না, রক্ষণেও লাগে। 

    এরপর জশ হ্যাজলউডের সামনে পান্ট। ইটস ফুল, ইটস ডাউন দ্য গ্রাউন্ড, ইট উইল বি অ্যাট লিস্ট ওয়ান… সাইনি, হিজ গট এ ইনজুরি ইন গ্রোয়িন… ইট গোওওজ অ্যাজ ফার অ্যাজ দ্য ফেন্স… 

    ইন্ডিয়া ইনক্রেডিবল। রিশাভ পান্ট ইজ দ্য স্টার। ইন্ডিয়া উইন দ্য টেস্ট, দে উইন দ্য সিরিজ, দে উইন দ্য হার্টস অ্যান্ড মাইন্ডস অফ অল ক্রিকেট ফ্যান্স অল অ্যারাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড… 

    আইপিএল আর না আইপিএল, রুক্ষতা-স্নিগ্ধতা, আক্রমণ-রক্ষণ, ইমমোভেবল অবজেক্ট আর আনস্টপেবল ফোর্সের মিশ্রণে ভারত জয় করেছে গ্যাবা। জয় করেছে ইতিহাস। 

    মার্ক হাওয়ার্ডের ওই কমেন্ট্রি বাংলাদেশে বসে টিভিতে দেখলে আপনি শুনতে পাননি। ইউটিউবে গেলে পাবেন। 

    ***** 

    কুনাল নায়ারের জন্ম ইংল্যান্ডে। বড় হয়েছেন ভারতে। উচ্চশিক্ষার জন্য গিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে। মার্কেটিংয়ে গ্রেড তোলা সহজ বলে সেটি বেছেছিলেন। নতুন দেশে একলা নায়ারকে সঙ্গ দিয়েছিল থিয়েটার, অভিনয়ের ইচ্ছা সেখান থেকেই। নায়ার তারকা হয়েছেন বিগব্যাং থিওরির ডক্টর রাজেশ কুত্রোপলি চরিত্র দিয়ে। যেখানে তিনি ভারতীয় এক অ্যাস্ট্রোফিজিসিস্ট। তার চরিত্র যেমন অফুরন্ত ভালবাসা পেয়েছে, তেমনি ভারতে সমালোচনাও হয়েছে, ‘বেশি স্টেরিওটাইপ’ নাকি সেটি। পরিবার ধনী, বলিউড স্টাইলের মেলোড্রামাটিক।, কথায় কথায় ভারতের জনসংখ্যা, আর্থ-সামাজিক অবস্থার কথা বলে উল্লেখ করেন, ভারতে ফিরতে চান না তিনি। কিন্তু সেখানেও ক্রিকেট তার সবচেয়ে পছন্দের খেলা। 

    নায়ারের জীবন বিচিত্রে ভরা। বাস্তব জীবনেও নায়ার ক্রিকেটের ভক্ত। তার আত্মজীবনীর নাম-- ইয়েস, মাই অ্যাকসেন্ট ইজ রিয়াল। ভারতের জয়ের পর ইন্সটাগ্রামে ছবি পোস্ট করেছেন তিনি-- জয় হিন্দ ক্যাপশনে। সে ছবিতে রাহানের ডান কাঁধের পেছনে নাটারাজান, বাঁ কাঁধের পাশে সিরাজ। 


    সেই রাহানে লাল গালিচায়। মেয়ে কোলে, পাশে স্ত্রী। চারপাশে ক্যামেরা, গোলাপের পাপড়ি ঝড়ছে। দেখে বুঝা যায়, নিজের অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিংয়ের চত্বর সেটি তার। বিল্ডিং সোসাইটি সংবর্ধনা দিচ্ছে তাকে। একটু পর কথা বললেন, হিন্দি নয়, হয়তো মারাঠি সেটি। 

    নাটারাজান একটা ঘোড়ার গাড়িতে উঠলেন, পাশে পুলিশ। গলায় ইয়া বড় মালা। পাটাতনে দাঁড়িয়েই কেউ যেন লাফাচ্ছেন, কোভিড-১৯ এর সময়ে তার মুখে মাস্ক, হাতে গ্লাভস। হাত নেড়ে নেড়ে অভিনন্দনের জবাব দিচ্ছিলেন। জনতার আওয়াজ আর বাজনা শোনা গেল শুধু, ভাষাটা নয়। হয়তো তখনও মেয়েকে দেখেননি তিনি, ঘরে ফিরে দেখবেন। 

    সিরাজ একটা কবরের পাশে দাঁড়িয়ে। কবরের ওপর একজন গোলাপ রাখছেন, পাশে তিনি দুহাত তুলে দাঁড়িয়ে মুনাজাত করছেন। কবরের ফলকে আরবি হরফে কিছু লেখা। বাবাকে চাইলেও আর দেখতে পারবেন না তিনি। 

    এ তিনজন ভারতের সমাজের তিন অংশের। তিনজনের মাতৃভাষা আলাদা। সংস্কৃতি আলাদা। সনির বিজ্ঞাপনে এই ‘ডাইভারসিটি’ দেখা যায়নি। তবে এ তিনজনের মতো বাকিরা আছেন বলেই হয়তো ‘ইন্ডিয়া’ ‘ইনক্রেডিবল’। ডাউন-আন্ডারে বদলে যাওয়া এই সময়ে এই ভারত জন্ম দিয়েছে অসাধারণ এক গল্পের। স্কোয়াড ঘোষণার পর কোহলিকে শুধু এক টেস্টের জন্য দেখা যাবে, অস্ট্রেলিয়ান সংবাদমাধ্যমে শিরোনাম ছিল এমন। এ সিরিজের পর সেখানে অন্য সুর, ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া আলাদা করে ধন্যবাদও জানিয়েছে ভারতকে। 

    আপনি টেস্ট ক্রিকেট বা ক্রিকেট, এবং এর ওপর আরোপিত জীবনের গল্প ভালবাসলে, আপনার ভারতকে উপেক্ষা করার দরকার নেই আপাতত।