• চ্যাম্পিয়নস লিগ
  • " />

     

    পিএসজিকে হারিয়ে সিটিকে স্বপ্নের ফাইনালে নিয়ে গেলেন 'রিয়াদ মহারাজ'

    পিএসজিকে হারিয়ে সিটিকে স্বপ্নের ফাইনালে নিয়ে গেলেন 'রিয়াদ মহারাজ'    

    এই ফাইনালের জন্য তৃষিত অপেক্ষা ছিল পেপ গার্দিওলার। এই ফাইনালের জন্য ম্যানচেস্টার সিটির এত কাড়ি কাড়ি টাকা বিনিয়োগ। সেই ফাইনাল এলো অবশেষে রিয়াদ মাহরেজের হাত (পড়ুন পা) ধরে। গালফ ডারবি বলুন বা এল ক্যাশিকো বলুন, পিএসজিকে ২-০ (অ্যাগ্রিগেট ৪-১) গোলে সহজেই হারিয়েই ম্যান সিটি উঠে গেল স্বপ্নের ফাইনালে। চ্যাম্পিয়নস লিগে তাদের প্রথম ফাইনাল, আর গার্দিওলার ১০ বছর পর কাটল সেমির অভিশাপ।

    ম্যাচ শুরুর আগে হুট করে টিভি পর্দায় সাদা মাঠ দেখে মনে হতে পারে বুঝি বরফ। প্রশ্ন উঠতে পারে, মে মাসে ইংল্যান্ডে বরফ এলো কোত্থেকে? বরফ নয় অবশ্য, শিলাবৃষ্টিতেই ইতিহাদ প্রায় সাদা হয়ে ছিল ম্যাচের আগে থেকে। সেই সাদাতেই ফুল ফোটালেন রিয়াদ মাহরেজ, তার দুই গোলেই নিশ্চিত হয়ে গেছে সিটির ফাইনাল।


    আরও পড়ুন: যে ৫ জায়গায় বাজিমাত করেছেন গার্দিওলা


    ম্যাচের আগেই একটা ধাক্কা খায় পিএসজি। কিলিয়ান এমবাপে কাফ ইনজুরিতে ঘরোয়া লিগের ম্যাচ খেলেননি। আজকের ম্যাচের স্কোয়াডে ছিলেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত ফিট হয়ে একাদশে থাকতে পারলেন না। তার জায়গায় মাঠে নেমেছিলেন মাউরো ইকার্দি। কিন্তু এমবাপের অভাব মাঠে প্রতি পদে পদেই টের পেয়েছে তারা।

    মরিজিও পচেত্তিনো ম্যাচের আগেই বলেছিলেন, পিএসজি আক্রমণাত্মক ও দ্রুত ফুটবল খেলবে। ম্যাচের শুরু থেকেই সেই বার্তা দিয়েছে দল। বল পেলেই দ্রুত আক্রমণে যাচ্ছিল পিএসজি। ম্যাচের প্রথম বড় মুহূর্তটা হতে পারত ৭ মিনিটে। বক্সে একটা বল এসে পড়লে সেটা ক্লিয়ার করতে গিয়ে জিনচেংকো, পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। সঙ্গে সঙ্গেই ভিএআর থেকে তাকে সেটা বদলানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। রিপ্লেতে স্পষ্ট দেখা যায়, বল সিটি ডিফেন্ডারের হাতে লাগেনি। এই যাত্রা হাঁফ ছেড়ে বাঁচে সিটি।

    মিনিট চারেক পরেই বড় লাইফলাইন পেয়ে যায় তারা। শুরুটা করেছিলেন এডারসন, তার দারুণ একটা পাস থেকে বাঁদিকে বল পান জিনচেংকো। তার পাস থেকে কেভিন ডি ব্রুইনের শট ব্লক হয়ে ফিরে আসে, কিন্তু ফিরতি বলটা ডানে পেয়ে যান মাহরেজ। দুর্দান্ত ফর্মে থাকা সিটি ফরোয়ার্ড ডান পায়ে বল জড়িয়ে দেন জালে। আগের লেগেও গোল পেয়েছিলেন, ২০১৮ সালে সাদিও মানের পর দ্বিতীয় ইংলিশ লিগে খেলা ফুটবলার হিসেবে দুই লেগে গোল পেলেন।

    পিএসজির সমীকরণ অবশ্য এই গোলের জন্য বদলে যায়নি। তাদের দুইটি গোলই দরকার ছিল। গোল খেয়ে শোধ করার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে তারা। সেটা পেয়েই গিয়েছিল, বক্সের ভেতর সেট পিস থেকে মার্কিনিয়সের দারুণ হেড ছিল। কিন্তু সেটা পোস্টে লেগে ফিরে আসে, একটুর জন্য আগের লেগের পুনরাবৃত্তি করতে পারেননি পিএসজির ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডার। খানিক পর এই অর্ধের সম্ভবত সবচেয়ে বড় সুযোগটা পান আনহেল ডি মারিয়া। এডারসনের বলটা প্রেসিং করে নিয়ে নেন ডি মারিয়া, তখনও এডারসন পোস্টেই ছিলেন না। বক্সের বাইরে থেকে তার শট চলে যায় পোস্টের পাশ ঘেঁষে, কিন্তু সেটা গোল হওয়া উচিত ছিল।

    এরপর দুই দলই খানিকটা গুছিয়ে নেয়, সেরকম আর পরিষ্কার সুযোগ পাচ্ছিল না কেউ। ক্রসের দিকেই মনোযোগ দিয়েছে দুই দল, কিন্তু ডিফেন্ডাররা ক্লিয়ার করছিলেন বল। প্রথমার্ধের শেষ দিকে আরেকটা দারুণ সুযোগ পেয়ে যায় সিটি। মাহরেজের বক্সের ভেতর থেকে নেওয়া শট ঠেকিয়ে দেন নাভাস, ফিরতি বলে বার্নাডো সিলভার শট কিম্বেম্বের গায়ে লেগে চলে যায় বাইরে। পিএসজি তাই ম্যাচেই থাকে।

    দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকে পিএসজি গোলের জন্য মরিয়া হয়ে উঠতে থাকে। এবারও সিটির রক্ষণ ছিল অটল। নেইমারের শট ক্লিয়ার করেন জিনচেংকো, গোলের মতোই একটা উদযাপন হয়ে যায় মাঠে। ফিল ফোডেনের একটা শট এর মধ্যে ঠেকিয়ে দিয়েছিলেন নাভাস। কিন্তু ৬৩ মিনিটে ম্যাচের ভাগ্যটা পুরোপুরি নিশ্চিত করে দেন মাহরেজ। এবার দারুণ একটা প্রতিআক্রমণের পর ফোডেন আর ডি ব্রুইনের ওয়ান টু হয়ে যায়। ফোডেনের লো ক্রস গিয়ে পরে মাহরেজের পায়ে, বাঁ পায়ে ফাঁকা পোস্টে বল ঠেলে দেন। এর মধ্যেও যখন এমবাপে বেঞ্চে বসে থাকেন, নিশ্চিত হয়ে যায় এই ম্যাচে আর নামা হচ্ছে না তার।

    এই গোলের পর যদি সিটির জয় নিয়ে সামান্য অনিশ্চয়তা থাকে, সেটা নিশ্চিত করে দিয়েছে পিএসজি নিজেরাই। আরও নির্দিষ্ট করে বললে আনহেল ডি মারিয়া। ফার্নান্দিনহোকে মাড়িয়ে লাল কার্ড দেখেছেন, সেটা নিয়ে ম্যাচের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে বেশ উত্তেজনা। ভেরাত্তি-জিনচেংকো কার্ড দেখেছেন এর মধ্যে।

    এরপর স্বাভাবিকভাবেই সিটি চেপে বসেছে দশ জনের পিএসজির ওপর। ডি ব্রুইনের শট বাঁচিয়ে দিয়েছেন নাভাস, সম্ভবত ম্যাচসেরা ফোডেনের আরও একটি দারুণ একক চেষ্টা পোস্টে লেগে চলে গেছে বাইরে। সিটি মূলত এরপর ব্যস্ত ছিল বল দখলে রাখার। শেষ দিকে আগুয়েরো, জেসুসদের নামিয়ে গার্দিওলা বার্তা দিয়েছেন তিনি জয় নিয়ে নিশ্চিতই ছিলেন। পিএজসিও একজন কম নিয়ে আর কিছু করতে পারেনি। টানা দ্বিতীয় ফাইনালের স্বপ্ন তাই অধরাই রয়ে গেল তাদের। নেইমারদের ইউরোপের তাজ পরার অপেক্ষা বাড়ল আরেকটু।