• টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনাল ২০২১
  • " />

     

    শামিতে শুরু, সাউদিতে শেষ রোমাঞ্চকর ৫ম দিন, অপেক্ষা 'গ্র্যান্ড ফিনালে'র

    শামিতে শুরু, সাউদিতে শেষ রোমাঞ্চকর ৫ম দিন, অপেক্ষা 'গ্র্যান্ড ফিনালে'র    

    ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনাল, সাউদাম্পটন 
    ৫ম দিন, স্টাম্পস
    ভারত ১ম ইনিংস ২১৭ অল-আউট, ৯২.১ ওভার (রাহানে ৪৯, কোহলি ৪৪, রোহিত ৩৪, গিল ২৮, আশ্বিন ২২, জেমিসন ৫/৩১, ওয়াগন্যার ২/৪৭, বোল্ট ১/৪৬, সাউদি ১/৬৪) ও ২য় ইনিংস ৬৪/২, ৩০ ওভার (রোহিত ৩০, পুজারা ১২*, কোহলি ৮*, সাউদি ২/১৭) 
    নিউজিল্যান্ড ১ম ইনিংস ২৪৯ অল-আউট, ৯৯.২ ওভার (কনওয়ে ৫৪, উইলিয়ামসন ৪৯, ল্যাথাম ৩০, সাউদি ৩০, শামি ৪/৭৬, ইশান্ত ৩/৪৮, আশ্বিন ২/২৮, জাদেজা ১/২০) 
    ভারত ৩২ রানে এগিয়ে


    অন্তত এমন একটা দিনের পর আপনি ভাবতেই পারেন, যদি আরেকটু সময় থাকত! দুই শীর্ষস্থানীয় দলের লড়াইয়ের রোমাঞ্চ, যখন কেউ কাউকে ছেড়ে কথা বলছে না, চলছে রোমাঞ্চকর দ্বৈরথ! অবশ্য ব্যাপারটা হয়তো অন্যদিক দিয়েও ভাবা যায়, এমন কন্ডিশন, সংকুচিত হয়ে আসা ম্যাচে হয়তো বাড়তি রোমাঞ্চের একটা রেশ আছে, যখন সবকিছুর পর লড়াইটা সময়ের সঙ্গেও! আবহাওয়া বাগড়া বাধানোর পর ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম ফাইনালের থাকল আর একটি দিন- ৬ষ্ঠ দিন বা রিজার্ভ ডে। আবহাওয়ার পূর্বাভাস ভাল- সেটি তেমনই থাকলে শেষদিন হতে পারে ৯৮ ওভার। এবং ম্যাচের যা অবস্থা, তাতে সম্ভব সবরকম ফলই। দ্বিতীয় ইনিংসেও সতর্ক ব্যাটিংয়ের কারণে শেষদিন তাই নিরাপদ হতে আরও কিছুক্ষণ কাটাতে হবে ভারতকে। 

    ৩২ রানে পিছিয়ে থাকা ভারত শেষ সেশনের শুরুতে পেয়েছিল ব্যাটিংয়ের জন্য এখন পর্যন্ত সবচেয়ে ভাল কন্ডিশনের একটি, অবশ্য তারা থেকেছে সতর্ক। তবে টিম সাউদির জোড়া আঘাতে ফিরে গেছেন দুই ওপেনার- শুবমান গিলের পর রোহিত শর্মা। নাইটওয়াচম্যান না পাঠিয়ে এসেছেন বিরাট কোহলি, চেতেশ্বর পুজারার সঙ্গে অপরাজিত থেকে দিন শেষ করেছেন তিনি, ভারতের লিড গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৩২ রান- যে লিড নিয়ে প্রথম ইনিংস শেষ করেছিল নিউজিল্যান্ড। পুজারা অপরাজিত আছেন ৫৫ বল খেলে। 

    দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুতেই মুভমেন্টের আভাস থাকলেও সেটি ঠিক কাজে লাগেনি নিউজিল্যান্ডের। ব্রেকথ্রু পেতে প্রয়োজন পড়েছে সাউদির কারুশিল্পের। ১১তম ওভারে গিয়ে তার স্ক্র্যাম্বলড সিমের ভেতরের দিকে ঢোকা বলটা মিস করে গেছেন গিল, মাইকেল গফের এলবিডব্লিউর সিদ্ধান্তটা রিভিউও করেননি এরপর। অবশ্য ধস ধরনের কিছু নামতে দেননি রোহিত ও পুজারা। নিউজিল্যান্ডের লিড পেরিয়ে যেতে ভারতকে অপেক্ষা করতে হয়েছে ১৬তম ওভার পর্যন্ত। 



    ২২তম ওভারে নিল ওয়াগন্যার এসেছিলেন, এর আগেই এসেছিলেন কাইল জেমিসন। প্রথম ইনিংসের মতো আবারও আঁটসাঁট বোলিং করেছেন তিনি, তবে উইকেটের দেখা পাননি এখনও। সাউদাম্পটনের আলো কমে আসার পর জ্বলেছে ফ্লাডলাইট, আবারও জ্বলে উঠেছেন সাউদিও। রোহিতকে কয়েকটা আউটসুইং আর সোজা বলের পর দারুণ ইনসুইংয়ের সেট-আপে ফেলেছেন- ইনসুইংটা রোহিত ছেড়েই দিয়েছেন পুরোপুরি। আবারও গফ দিয়েছেন আউট, আবারও রিভিউ করেননি ব্যাটসম্যান, যদিও এবার উইকেটে থাকত আম্পায়ারস কল। শেষের আগের ওভারে সাউদির বাউন্সার লেগেছিল কোহলির হেলমেটে, বাই থেকে সেটি হয়েছে চার। তবে আপাতত টলেননি তিনি। 

    এর আগে প্রথম দুই সেশন গিয়েছিল দুই রকম- প্রথমটিতে নিউজিল্যান্ডের ওপর চেপে বসেছিলেন শামিরা, দ্বিতীয়টিতে উইকেট আসলেও নিউজিল্যান্ড তুলেছিল মূল্যবান রান। আর উইলিয়ামসন খেলেছেন ৪৯ রানের মাস্টারক্লাস। দেরিতে শুরু হওয়া খেলার পর নিউজিল্যান্ডের ওপর চড়াও হয়েছিলেন ভারতীয় পেসাররা, মোহাম্মদ শামির নেতৃত্বে। নিরন্তর দারুণ লাইন-লেংথ হিট করে যাওয়া তারা পেয়েছিলেন পুরস্কার, অধিনায়ক হিসেবে কোহলির বোলিং-পরিবর্তন ছিল দারুণ, ফিল্ডিংয়ে ভারতীয়রাও ছিলেন অসাধারণ। সকাল থেকেই ইংলিশ কন্ডিশনের সেই কাঙ্খিত ‘ফুলিশ’ লেংথটা হিট করতে পেরেছিলেন ভারতীয় পেসাররা। জাসপ্রিত বুমরাহর সঙ্গে ইশান্ত শর্মাকে এনেছিলেন কোহলি, বুমরাহ লেংথ হিট করলেও ইশান্তের প্রথম লক্ষ্য ছিল আড়াআড়ি খেলার অভ্যাস থাকা রস টেইলরের প্যাড। দিনের প্রথম ৭ ওভারে উঠেছিল মাত্র ৫ রান। 

    ভারত প্রথম ব্রেকথ্রু পেয়েছে শামিতে ভর করে। দিনের প্রথম ওভারে এসেই বলকে কথা বলিয়েছেন তিনি, একটু ফুললেংথে পেয়ে তাকে ড্রাইভ করে একটা চারও মেরেছিলেন টেইলর। প্রথম ঘন্টায় নিউজিল্যান্ড উইকেট না হারালেও প্রথম ড্রিংকস ব্রেকের পরই আঘাত করেছেন শামি- তার ফুললেংথের বলে ড্রাইভ করতে গিয়েছিলেন টেইলর, এক্সট্রা কাভারে ডানদিকে ঝাঁপিয়ে দারুণ এক ক্যাচ নিয়েছেন শুবমান গিল। 
     


    শামি শেষ পর্যন্ত ৫ উইকেট পাননি, তবে ইনিংসের সেরা বোলার ছিলেন তিনিই।/আইসিসি


    এরপর আবারও বোলিং পরিবর্তন করে ইশান্তকে এনেছেন কোহলি- রাউন্ড দ্য উইকেট থেকে তার ভেতরের দিকে ঢোকা বলে আগবাড়িয়ে খোঁচা দেওয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখতে পারেননি হেনরি নিকোলস, দ্বিতীয় স্লিপ থেকে ডানদিকে ঝাঁপিয়ে আরেকটি ভাল ক্যাচ নিয়েছেন রোহিত শর্মা। লাঞ্চের আগে শেষ উইকেটটা ছিল সবচেয়ে দুর্দান্ত। এবার শামিকে এনেছিলেন কোহলি- বিজে ওয়াটলিংকে ক্রিজে আটকে রাখার পরিকল্পনা সফলভাবে বাস্তবায়ন করেছেন যিনি। ফুললেংথ থেকে নিপড অ্যাওয়ে ডেলিভারিটা ওয়াটলিংয়ের ডিফেন্স চিড়ে ভেঙেছে মিডল-অফের চূড়া। 

    লাঞ্চের পর প্রথম ঘন্টায় নিউজিল্যান্ড তুলেছিল ৪৫ রান, কলিন ডি গ্র্যান্ডোমের উইকেট হারিয়ে, যিনি ঠিক অলরাউন্ডারের ভূমিকা পালন করার আগেই শামির অফস্টাম্পের বাইরে থেকে বেশ তীক্ষ্ণ মুভমেন্ট মিস করে এলবিডব্লিউ হয়েছিলেন। ভারতের দ্বিতীয় নতুন বল নেওয়ার পর থেকেই আক্রমণাত্মক ছিল নিউজিল্যান্ড। কাইল জেমিসন নেমে মেরেছেন ম্যাচের প্রথম ছয়, যদিও ঠিক পরের বলেই শামির বাউন্সারে স্কয়ার লেগে ক্যাচ দিয়েছেন তিনি। তবে তার আগে ক্যামিওতে ভারতকে প্রথম লেজের ঝাপটা দিয়েছিল নিউজিল্যান্ড। নিল ওয়াগন্যার বেশিক্ষণ টেকেননি, রবিচন্দ্রন আশ্বিনের বাড়তি পেসে এজড হয়ে তিনিও ধরা পড়েছেন স্লিপে রাহানের হাতে, যেটি রাহানে নিয়েছেন দ্বিতীয়দফায়। 

    এতক্ষণ টিকে থাকা উইলিয়ামসন খেলেছেন দৃঢ়চেতা ইনিংস, পেসারদের বিপক্ষে খুব বেশি ফুল বা ওয়াইডে না পেলে আক্রমণাত্মক শটই খেলেননি তিনি। অবশ্য ফিফটি পাওয়া হয়নি তার, ইশান্ত শর্মার বাড়তি বাউন্সের বলে এজড হয়ে দ্বিতীয় স্লিপে কোহলির হাতে ধরা পড়েছেন, এর আগে ৪৯ রান করতে খেলেছেন ১৭৭ বল, যা তার ক্যারিয়ারের কমপক্ষে ৪০ রানের ইনিংসের মাঝে সবচেয়ে ধীরগতির। 

    উইলিয়ামসন থাকার সময়ই ভারতের প্রথম ইনিংসের স্কোর পেরিয়ে গিয়েছিল নিউজিল্যান্ড, এরপর তাদের আরেকটু এগিয়ে নিয়েছেন সাউদি। ১টি চারের সঙ্গে মেরেছেন ২টি ছয়, শেষ উইকেটের কারণে চা-বিরতিও পিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত জাদেজাকে আরেকটি ছয় মারার পরপরই স্টাম্প ছেড়ে খেলতে গিয়ে হয়েছেন বোল্ড, যেটি আগে লেগেছিল তার প্যাডে। এর আগে সাউদির বিপক্ষে একটা ব্যর্থ রিভিউও করেছিল ভারত কট-বিহাইন্ডের, আশ্বিনের বলে। শামি শেষ পর্যন্ত ৫ উইকেট পাননি, তবে ইনিংসের সেরা বোলার ছিলেন তিনিই।