• কোপা আমেরিকা ২০২১
  • " />

     

    মেসির গোল ও জোড়া অ্যাসিস্টে সেমিফাইনালে আর্জেন্টিনা

    মেসির গোল ও জোড়া অ্যাসিস্টে সেমিফাইনালে আর্জেন্টিনা    

    ফুলটাইম স্কোর: আর্জেন্টিনা ৩-০ ইকুয়েডর


     শেষ যেবার কোপা আমেরিকা জিতেছিল আর্জেন্টিনা সেই ১৯৯৩ সালেই শেষ সেমিফাইনাল খেলেছিল ইকুয়েডর। কোপা আমেরিকা জেতা না হলেও গত তিন আসরেই সেমিফাইনাল খেলেছে আর্জেন্টিনা। মেসির গোল আর দুই অ্যাসিস্টে ব্যাতিক্রম হল না এবারও। মেসির দারুণ ফ্রি-কিকের সাথে রদ্রিগো ডি পল আর লাওতারো মার্টিনেজের গোলে ৩-০ ব্যবধানের জয়ে সেমিফাইনালে পৌঁছে গেছে আর্জেন্টিনা।   

    ম্যাচের শুরুতে ছন্দ খুঁজে পেতে বেগ পেতে হয়েছে দুই দলকেই। গোলমুখে আক্রমণ অবশ্য তাতে থামেনি। ম্যাচের দুই মিনিটের মাথায়ই ইকুয়েডরের রক্ষণের মাঝে লিয়ান্দ্রো পারেদেসের পাস লাওতারো মার্টিনেজকে খুঁজে নিলে সেখান থেকে জোরালো শট নেন তিনি। তবে গোলরক্ষক গালিন্দেজ সেবার প্রস্তুত থাকায় বিপদ ঘটেনি ইকুয়েডরের। এরপরে দুই দলই বেশ কিছুক্ষণ ছন্নছাড়া পাসিং করে।



    তবে ম্যাচের ১৪ মিনিটের মাথায় গিয়ে আর্জেন্টিনা পেয়েছিলো সুবর্ণ সুযোগ। জারমান পেজ্জেলার লম্বা থ্রু থেকে আগুয়ান গোলরক্ষক গালিন্দেজের মাথার ওপর দিয়ে সুকৌশলে বল নিয়ে যান লাওতারো। তবে তাঁর সাথে দৌড়াতে থাকা ডিফেন্ডার আরবোলেদা সেটা আগেই আঁচ করতে পেরে পোস্ট বরাবর চলে গেলে লাওতারোর নেওয়া শট দারুণভাবে হেডে ফিরিয়ে দেন। 

    এই সুযোগের পর থেকেই আর্জেন্টিনা চেপে বসে ইকুয়েডরের ওপর। ১৬ মিনিটে একজনকে কাটিয়ে বক্সে ঢুকে জোরালো শট নিয়েছিলেন মেসি। ডিফেন্ডার সেই শটে বাধ সাধলে লাওতারোর পায়ে গিয়ে বল পড়লে ফিরতি শট অবশ্য তিনি পোস্টে রাখতে পারেননি। সেখান থেকেই কর্নারে মেসি বল ভাসিয়েছিলেন পেজ্জেলার উদ্দেশ্যে, বুক দিয়ে নামিয়ে শট নিলে পেজ্জেলার শট গিয়ে লাগে জালের কোণে। 

    ২২ মিনিটের মাথায় এসেছিল আরেকটি দারুণ সুযোগ। মিডফিল্ড থেকে গ্রুয়েজো বল পিছনে বাড়াতে গেলে একেবারে ফাঁকায় দাড়িয়ে থাকা মেসির পায়ে ঠেলে দেন তিনি। কোন ডিফেন্ডারের চাপ না থাকায় সময় নিয়ে মেসি বল নিয়ে এগিয়ে যান, গোলরক্ষকের হাতের নিচ দিয়ে শটটি গোলমুখে মারেন। তবে শট গিয়ে লাগে পোস্টে। স্বভাববিরুদ্ধ এই মিস মেসির নিজেরই মেনে নিতে যেন কষ্ট হচ্ছিলো। 

    সেই মিসের পরে খেলায় অবশ্য দেখা গিয়েছিলো ফাউলের ফুলঝুরি। একের পর এক বাজে ফাউলের দেখা মিলেছে এমনকি একবার জিওভান্নি লো সেলসোকে দুজন মিলে দৃষ্টিকটু স্লাইড দিলেও কোন কার্ড বের হয়নি রেফারির পকেট থেকে। এরই মাঝে ৩৮ মিনিটের মাথায় দারুণ সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেননি ইকুয়েডর অধিনায়ক এনার ভ্যালেন্সিয়া। এস্তুপিনানের অসাধারণ এক ক্রসে লাফিয়ে উঠে মাথা লাগালেও সংযোগটা একেবারেই হয়নি, অপর পোস্টের পাশ দিয়ে বেরিয়ে যেতে গেলে আনহেল মেনা শরীর বাড়িয়ে তাতে পা লাগানোর চেষ্টা করেও পারেননি। 

    ৪০ মিনিটের মাথায় গিয়ে অবশেষে গোলের দেখা পায় আর্জেন্টিনা। ফাঁকায় গঞ্জালেজেকে বল ছাড়া হলে ডি বক্সের বাইরে বেরিয়ে এসে গালিন্দেজ তাকে রুখে দেন। তবে সেখান থেকে বল গিয়ে পড়ে মেসির পায়ে। বক্সে দাড়িয়ে থাকা ডি পলের উদ্দেশ্যে মেসি বল বাড়ালে তিনি গোললাইনে দাড়িয়ে থাকা দুই ডিফেন্ডারকে ফাঁকি দিয়ে ঠাণ্ডা মাথায় বল জালে জড়ান। 

    ৪৫ মিনিটের মাথায় আর্জেন্টিনা এগিয়ে যেতে পারত আবার। ধূর্ততার সাথে ফ্রি-কিক থেকে মেসি খুঁজে নেন গঞ্জালেজকে। হেডটা গঞ্জালেজ দিয়েছিলেন ভালই, গালিন্দেজ লাফিয়ে পড়ে সেটা প্রতিহত করলে ফিরতি শটে গঞ্জালেজ বল জালে জড়ানোর দারুণ সুযোগ পেলেও মাটিতে পড়ে থাকা গালিন্দেজের গা বরাবর মারেন তিনি। এর পরের আক্রমণেই সমতা ফেরাতে পারত ইকুয়েডর। মেনার দারুণ এক ক্রস ফাঁকায় থাকা ভ্যালেন্সিয়ার মাথা খুঁজে পেলেও সংযোগটা একেবারেই না হওয়ায় এবারও তিনি বল গোলমুখেও রাখতে পারেননি। প্রথমার্ধ তাই এক গোলের ব্যবধানে এগিয়েই শেষ করে আর্জেন্টিনা। 

    দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই বলের দখল নেয় আর্জেন্টিনা। গোলমুখে অবশ্য সুবিধা করে উঠতে পারছিল না তারা। স্রোতের বিপরীতে বরং ৫৮ মিনিটের মাথায় সুযোগ পেয়ে যায় ইকুয়েডর। এস্তুপিনানের বাড়ানো বলে ভ্যালেন্সিয়া বাঁ প্রান্ত থেকে নেন জোরালো শট, দক্ষতার সাথেই অবশ্য তাকে প্রতিহত করেন এমি মার্টিনেজ। 

    এরপর থেকেই বেশ কয়েকবার আর্জেন্টিনার রক্ষণের পরীক্ষা নেয় ইকুয়েডর। ৬৪ মিনিটের মাথায় এস্তুপিনানের ক্রস গিয়ে গঞ্জালেজের মাথায় লাগলে পোস্ট ঘেঁষে বেরিয়ে যায় বল। তবে বড় সুযোগ এসেছিল ৭০ মিনিটের মাথায়। মেনার ভাসান বলে ফাঁকায় দাঁড়ানো ভ্যালেন্সিয়া আবারও হেড থেকে বল গোলমুখে রাখতে ব্যর্থ হন। বদলি নামা গঞ্জালো প্লাতা ৮০ মিনিটের মাথায় পরীক্ষা নিয়েছিলেন এমি মার্টিনেজের, একজনকে কাটিয়ে বের হয়ে প্লাতা জোরালো নিচু শট নিলেও প্রস্তুত ছিলেন মার্টিনেজ।

    বলের দখল রাখতে মনযোগী ইকুয়েডর ছিল সমতা ফেরাতে মরিয়া। সেই চাপই যেন পেয়ে বসে তাদের, নিজেদের অর্ধে করে বসে ভুল। রক্ষণে নড়বড়ে পাসিং করতে থাকলে মেসি আর ডি মারিয়ার সম্মিলিত প্রেসিংয়ে বল হারান ডিফেন্ডার। সেখান থেকে ফাঁকায় দাঁড়ানো লাওতারোর উদ্দেশ্যে মেসি বল বাড়ালে বক্সের ভেতর থেকে জোরালো শটে বল জালে জড়াতে ভুল করেননি তিনি।

    গোল খেয়ে একেবারেই ভেঙে পড়ে ইকুয়েডরের রক্ষণ। ফলস্বরূপ ৯০ মিনিটের মাথায় রক্ষণ চিরে বের হয়ে যাওয়া ডি মারিয়াকে ফেলে দেন হিনকাপি। প্রথমে পেনাল্টি দিলেও ভিএআর দেখে পরে সিদ্ধান্ত বদলে ফ্রি-কিক দেন রেফারি; আর তাতেই কপাল পুড়ে হিনকাপি আর ইকুয়েডরের। সিদ্ধান্ত বদলে তাকে দেওয়া হয় লাল কার্ড। আর বক্সের মাথায় বিপদজনক জায়গায় ফ্রি-কিক পেয়ে যায় আর্জেন্টিনা। পুরো ম্যাচে দারুণ খেললেও মেসিকে হয়ত প্রথমার্ধের মিসটা একটু ভাবাচ্ছিল। পেনাল্টির সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হলেও এরকম এক জায়গায় ফ্রি-কিক পেয়ে সেই আক্ষেপ ঘুচানোর স্পৃহা তার চোখেমুখে ছিল পরিষ্কার। ইকুয়েডরের দেয়ালের তোয়াক্কা না করে গোলরক্ষকের দিকেই জোরালো ফ্রি-কিক থেকে বল তিনি জড়িয়ে দেন জালের একদম ওপরের কোণায়। মেসির দারুণ ফ্রি-কিকে পূর্ণতা পায় আর্জেন্টিনার সফল এক রাত। 

    এবারের কোপায় আর্জেন্টিনার ১০ গোলের মধ্যে মেসির সরাসরি অবদান ৮ গোলেই। এদিনের গোলে গোলসংখ্যা চারে নিয়ে গিয়ে টুর্নামেন্টের শীর্ষ গোলদাতার স্থানটা আরও পাকাপোক্ত করেছেন তিনি। জাতীয় দলের জার্সি গায়ে শিরোপাখরা ঘোচানোর দায়িত্ব এবার মেসি যেন তুলে নিয়েছেন সম্পূর্ণ নিজের কাঁধেই। সেই লক্ষ্যেই ৭ জুলাই সকাল ৭ টায় দ্বিতীয় সেমিফাইনালে কলম্বিয়ার বিপক্ষে মাঠে নামবেন মেসিরা।