• ইউরো ২০২০
  • " />

     

    কিক অফের আগে: বদলে যাওয়া ইতালির সামনে 'আনপ্রেডিক্টেবল' স্পেন এবং মধ্যমাঠের 'ট্যাকটিক্যাল লড়াই'

    কিক অফের আগে: বদলে যাওয়া ইতালির সামনে 'আনপ্রেডিক্টেবল' স্পেন এবং মধ্যমাঠের 'ট্যাকটিক্যাল লড়াই'    

    ইউরো সেমিফাইনাল

    ইতালি-স্পেন

    ওয়েম্বলি স্টেডিয়াম

    ৬ জুলাই, রাত ১টা


    একদল টুর্নামেন্টে তিনবারের চ্যাম্পিয়ন, আরেকদল একবারের। বিশ্বকাপে ইতালির চেয়ে ভালো রেকর্ড খুব বেশি দলের নেই, নির্দিষ্ট করে বললে সেটা শুধু ব্রাজিল ও জার্মানির। কিন্তু ইউরোর ক্ষেত্রে ব্যাপারটা উলটো। বিস্ময়করভাবে ইতালি ইউরোতে জিতেছে মাত্র একবার, সেখানে স্পেন এর মধ্যেই জিতেছে তিনবার। আজকের ম্যাচটা দুই দলের আরেকটি শিরোপার দিকে যাওয়ার বড় একটা ধাপ।



    সেই ধাপে ইতালির পক্ষেই পাল্লাটা বেশি ভারি হওয়ার কথা। এই টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত সম্ভবত সবচেয়ে বেশি মুগ্ধ করার মতো। গ্রুপ পর্বের টানা তিনটি ম্যাচ জিতেছে অনায়াসেই। নিজেদের ইতিহাসের টানা সবচেয়ে বেশি জয়ের সাথে ক্লিন শিটের রেকর্ডও গড়েছিল। শেষ ষোলোতে অস্ট্রিয়ার সাথে একটু ভুগলেও কোয়ার্টারে আরেক ফেবারিট বেলজিয়ামকে নির্ধারিত সময়ে হারিয়েই উঠেছে সেমিতে। কাতানেচ্চিওর অন্ডি ছেড়ে বেরিয়ে ইতালি যেন এবার উড়ছে মুক্ত পাখির মতো।

    সেদিক দিয়ে স্পেন কাগজে কলমে কিছুটা পিছিয়ে থাকবে। ইউরোর আগে তাদের পক্ষে বাজি ধরার লোকও বেশি ছিল না। সেমিতেও হয়তো খুব বেশি মানুষ দেখেননি তাদের। গত কয়েকটা বড় আসরে স্পেন বেশিদূর যেতে পারেনি। লুইস এনরিকের এই দলটা এবার তরুণ। শুরুটাও ভালো ছিল না তাদের। প্রথম দুই ম্যাচে গোলের দেখা পায়নি, একঘেয়ে ফুটবল খেলার অপবাদও শুনতে হচ্ছিল। যদিও পরের দুই ম্যাচে সেটা তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়েছে স্পেন। স্লোভাকিয়ার জালে পাঁচ গোল দেওয়ার পর শেষ ষোলোতে ক্রোয়েশিয়ার সঙ্গে ম্যাচেও হয়েছে গোলের পর গোল। সেখানে অবশ্য অতিরিক্ত সময়ে ৫-৩ গোলে জিতে স্পেন পা রেখেছে শেষ আটে। সুইজারল্যান্ডের সাথে কোয়ার্টারেও নির্ধারিত সময়ের খেলা ১-১ গোলে ড্র ছিল। খুব ভালো না খেলেই শেষ পর্যন্ত টাইব্রেকে স্পেন উঠে গেছে সেমিতে।

    তবে দুই দলের একটা জায়গায় মিল আছে, এনরিকে ও মানচিনির মধ্যমাঠই তাদের মূল ভরসা। ইতালির ক্ষেত্রে ইম্মোবিলে এখনো সেভাবে জ্বলে উঠেনি, গোল করার কাজটা মিডফিল্ডারদের করতে হচ্ছে। সেই কাজটা তো খুব ভালোভাবে করছেনই, একই সঙ্গে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণও নিজেদের পায়ে রাখছেন। জর্জিনহো ডিফেন্সিভ মিডের কাজটা খুব ভালোভাবে করে যাচ্ছেন। নিকো বারেল্লা দেখাচ্ছেন, কেন গত মৌসুমে তিনি সিরি আর সেরা মিডফিল্ডার ছিলেন। আগের ম্যাচেও গোলটা এসেছে তার পা থেকেই। মার্কো ভেরাত্তি শুরু থেকে না খেললেও এখন দেখাচ্ছেন, কেন তিনি এই সময়ের সেরা ডিপ লায়িং প্লেমেকারদের একজন। এখন পর্যন্ত তার চেয়ে বেশি ফরোয়ার্ড পাস ইউরোতে দিয়েছেন শুধু কেভিন ডি ব্রুইন। জোড়া গোল করেও তাই ম্যানুয়েল লোকাতেল্লিকে বসে থাকতে হচ্ছে বেঞ্চে। এমনকি বদলি নেমে মাতেও পেসিনাও গোল পাচ্ছেন। মানচিনির হাতে তাই অন্তত পাঁচজন মিডফিল্ডার আছেন, যারা এই ইউরোতে নেমে আলো ছড়িয়েছেন।

    স্পেনও ইতালির মতো বল নিজেদের কাছে রাখতেই পছন্দ করে। তাদের খেলার ধরনই অবশ্য এমন, এনরিকের স্পেনও তার ব্যতিক্রম নয়। সার্জিও বুস্কেটস করোনায় আক্রান্ত হয়ে শুরুর দিকে ছিলেন না। পড়তি বয়সে এখনো তিনি ডিফেন্সিভ মিডে এনরিকের মূল ভরসা। তবে এনরিকের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছেন অন্য দুই মিডফিল্ডার। ইউরোতে যদি গত বছর হতো তাহলে হয়তো এই মিড তিনি পেতেন না। এখন যে দুজন খেলছেন, একজন ১৯ বছর বয়সী পেদ্রি। তিনি বার্সার মূল দলে নিয়মিত খেলছেন গত মৌসুম থেকে। এবারের ইউরোতে প্রথম একাদশে তার থাকাটাই ছিল বিস্ময়ের। এখানে এবার তিনি সম্ভবত স্পেনের মিডের সবচেয়ে বড় ক্রিয়েটিভ সোর্স। আরেকজন কোকেও ফর্ম হারিয়ে খুঁজছিলেন কিছুদিন। কিন্তু এখন জায়গা করে নিয়েছেন একাদশে।

    দিন শেষে তাই স্পেনের মিডফিল্ডের সাথে ইতালির মিডফিল্ডের লড়াইটাই গড়ে দিতে পারে ব্যবধান।

    দলের খবর

    ইতালির জন্য বড় ধাক্কা হচ্ছে, লেফটব্যাক স্পিনাজ্জোলাকে পাচ্ছেন না মানচিনি। আগের ম্যাচেই অ্যাকিলিস টিয়ারে ইউরো শেষ হয়ে গেছে তার, মাঠের বাইরে থাকতে পারেন বেশ কয়েক মাস। এবারের ইউরোতে বাঁদিক দিয়ে তার জন্যই আক্রমণ শাণাতে পারছিল ইতালি, তাকে হারানো ইতালির জন্য বড় আঘাত। এমারসনের জায়গা নেওয়ার কথা তার, এছাড়া ইতালি আগের ম্যাচের দল নিয়েই নামতে পারে।

    স্পেনের একটা পরিবর্তনও হচ্ছে সম্ভবত। আগের ম্যাচে পেশীতে চোট পেয়ে উঠে গিয়েছিলেন পাবলো সারাবিয়া। তার জায়গায় আজ নামার কথা দানি অলমোর

     

    সম্ভাব্য একাদশ

    ইতালি

    দোন্নারুমা, কিয়েলিনি, বনুচ্চি, ডি লরেঞ্জো, এমারসন, জর্জিনহো, বারেল্লা, ভেরাত্তি, ইনসিনিয়ে, কিয়েসা, ইম্মোবিলে

    স্পেন

    সিমন, পাউ তোরেস, লাপোর্ত, আলবা, আজপিলিকুয়েতা, বুস্কেটস, পেদ্রি, কোকে, অলমো, ফেরান তোরেস, মোরাতা

     

    আগের দেখায় কী হয়েছিল?

    গত তিন ইউরোতেই ইতালির সঙ্গে দেখা হয়েছে স্পেনের। ২০০৮ সালে স্পেন জিতেছিল টাইব্রেকে। এরপর ২০১২ ইউরোতে দুই দলের দেখা হয়েছিল দুইবার। গ্রুপ পর্বে ১-১ গোলের ড্রয়ের পর ফাইনালে ইতালিকে উড়িয়ে দিয়েছিল স্পেন। ২০১৬ ইউরোতে আবার দ্বিতীয় রাউন্ডে স্পেনকে বিদায় করে দেয় ইতালি। দুই কোচেরও দেশের হয়ে দেখার ইতিহাস আছে। ১৯৯৪ বিশ্বকাপে ইতালি-স্পেনের দেখা হয়েছিল কোয়ার্টার ফাইনালে, সেই ম্যাচে দুই দলের স্কোয়াডে ছিলেন দুই কোচ মানচিনি-এনরিকের। মানচিনি যদিও নামার সুযোগ পায়নি, এনরিকে চোট পেয়ে উঠে গিয়েছিলেন। সেবার ইতালি খেলেছিল ফাইনাল।