• অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশ সফর ২০২১
  • " />

     

    টি-টোয়েন্টিতে অনন্য ডাবলের সামনে দাঁড়িয়ে সাকিব

    টি-টোয়েন্টিতে অনন্য ডাবলের সামনে দাঁড়িয়ে সাকিব    

    আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে সবচেয়ে বেশি উইকেট কার? ১০৭ উইকেটকে বাড়িয়ে নেওয়ার সুযোগ আর নেই লাসিথ মালিঙ্গার। প্রশ্নটার উত্তর তাই বদলে যেতে পারে কিছুদিন পরেই। কিন্ত সেই উত্তরে কার নাম আসবে? লাইনে সবার সামনে আপাতত দাঁড়িয়ে আছেন তিনজন। নব্বইয়ের বেশি উইকেট যদিও আছে চারজনের। তবু মালিঙ্গার মতো অবসরে চলে যাওয়ায় আফ্রিদিরও ৯৮ উইকেট স্থিরই থাকছে। কিন্ত বাকি তিনজনের যেমন একশ উইকেটের মাইলফলক অর্জনের সুযোগ রয়েছে সামনে, তেমনি আছে মালিঙ্গাকে ছাড়িয়ে যাওয়ার হাতছানিও! 

    হাতছানিটা সবচেয়ে কাছ থেকে দেখতে পাচ্ছেন টিম সাউথি। একশ উইকেটের থেকে তিনি আর মাত্র একটি উইকেট দূরে। তবে উইকেটের হিসাবে বেশ কাছে থাকলেও আপাতত সে মাইলফলকের সবচেয়ে নিকটে আছেন সাকিব আল হাসানই। সাকিবের সমান ৯৫ উইকেট থাকলেও রশিদ খান বর্তমানে দ্যা হান্ড্রেডেই ব্যস্ত। এই তিনজনের মধ্যে শুধুমাত্র সাকিবই বর্তমানে ব্যস্ত আছেন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পাচঁ টি-টোয়েন্টির সিরিজে পাচঁটি উইকেট নিতে পারলে সাকিবই হবেন টি-টোয়েন্টির হান্ড্রেড ক্লাবের দ্বিতীয় বোলার।

    মালিঙ্গা, সাউথি, আফ্রিদি, রশিদ খান, সাকিব- টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারীর এ ক্রমটা বদলে যেতে পারে সামনের বিশ্বকাপেই। এই পাচঁজন বাদে পঞ্চাশের বেশি উইকেট নিতে পেরেছেন আরও ৩৪ জন। মানদন্ডটা আরও দশ বাড়িয়ে ৬০ উইকেটের বেশি করলে দেখা যায় সে তালিকায় আছেন মাত্র ১৬ জনই। আশির বেশি উইকেট যে দুজন নিয়েছেন তাদেরও উইকেট সংখ্যা বাড়ানোর আর সুযোগ নেই। সাঈদ আজমল ও উমর গুলের 'ফুল স্টপ' বসে যাওয়া ক্যারিয়ারে শিকার ৮৫ উইকেট। 

     প্রশ্ন আসবে, উইকেটগুলো এসেছে কাদের বিপক্ষে? সেক্ষেত্রে দুটি ভাগ করে নেয়া যেতে পারে। এক ভাগে সহযোগী দেশগুলোর সাথে আফগানিস্তান, আয়ারল্যান্ড ও জিম্বাবুয়ে এবং অন্য ভাগে বাকি দলগুলো। প্রথম ভাগের দলগুলোর সাথে সাকিবের ৩০ ইনিংসে শিকার ৪২ উইকেট। বাকি দলগুলোর সাথে ৪৮ ইনিংসে নিয়েছেন ৫৩ উইকেট। তবে সাকিব সবার ক্ষেত্রেই বলা যায় 'ইকোনমিকাল'। তুলনামুলক দুর্বল ভাবা দলগুলোর বিপক্ষে তার ইকোনমি ৬.৭১, বিপরীতে সবলদের বিপক্ষে তার ইকোনমিও ৬.৯০ এর উপরে যায়নি। 

    অবশ্য যে দলের সঙ্গেই খেলা হোক না কেন, দলের সেরা ব্যাটসম্যানেরা তো শুরুর দিকেই খেলে থাকেন। এবং সেখানেই আসলে লুকিয়ে সাকিবের মাহাত্ম্য। সাকিবের ৯৫ উইকেটের ৭২টিই তো প্রতিপক্ষ দলের প্রথম পাচঁ ব্যাটসম্যানের। আর এর ৮৮.৪ শতাংশ উইকেটই প্রতিপক্ষ দলের টপ ও মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানের। যেখানে সাকিবের ১১.৬% এর বিপরীতে লাসিথ মালিঙ্গার ২৭.১% উইকেটই প্রতিপক্ষ দলের শেষ চার ব্যাটসম্যানের। 

    প্রতিপক্ষ দলের ব্যাটসম্যানদের যত আগেভাগে প্যাভিলিয়নে ফিরিয়ে দেয়া যায় ততই তো লাভ। এ কাজে অবশ্য সাকিবকে উস্তাদই বলা যায়। বিপক্ষ দলের ব্যাটসম্যানের রান দুই অঙ্কের ঘরেই পৌছায়নি, এমন অবস্থায় ব্যাটসম্যানকে সাকিব আউট করে দিয়েছেন ৪৩ বার৷ সাকিবের আরেকটা গুণকেও কিন্ত এড়িয়ে যাওয়া যাচ্ছে না! যখন যেখানেই প্রয়োজন, তিনি হাজির এবং সফল। যেমন পাওয়ারপ্লেতে, তেমনই মিডল ওভারে, কম যান না ডেথ ওভারেও! পাওয়ারপ্লেকে একটি ভাগ ধরে এর পরের দশ ওভারকে আরও দুটি ভাগ এবং শেষের চার ওভারকে আরেকটি ভাগ ধরে চারটি ভাগ করলে দেখা যায় প্রতিটি পর্যায়েই সাকিবের উইকেট সংখ্যা বিশ ছাড়িয়ে গেছে৷ 

    মালিঙ্গাকে ছাড়িয়ে যেতে সাকিবের প্রয়োজন এখনো ১৩ উইকেট। তবে আরও পাচঁটি উইকেট পেলে সাকিব একটি অনন্য রেকর্ডের মালিক হবেন, যেটি সাকিব বাদে শুধুমাত্র মালিঙ্গারই করার খুব ভালো সুযোগ ছিল। ব্যাটসম্যান মালিঙ্গাকে সেজন্যে রানের খাতায় যোগ করতে হতো আরও ৮৬৪টি রান। তার ক্যারিয়ার ১৩৬ রানেই থেমে যাওয়াতে সে সম্ভাবনা আর জীবিত নেই। রেকর্ডটার মালিক হতে হলে আসলে পুরণ করতে হয় দুটি শর্ত- একশ উইকেট, সাথে এক হাজার রান।

    এখন পর্যন্ত শুধু মালিঙ্গাই টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে একশের বেশি উইকেট নিতে পেরেছেন৷ রশিদ-সাউথিরা সে অর্জনের কাছে থাকলেও হাজার রানের বেশ দূরেই আছেন তারা। অন্যদিকে সাকিবের চলমান টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে রান সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে গেছে বেশ আগেই৷ রেকর্ডটা তার থেকে তাই খুবে দূরে নয়৷ সেজন্যে একশ উইকেটের মাইলফলক পুর্ণ করার সাথে সাথে আরেকটি ডাবলের রেকর্ডও হবে তার৷ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে একমাত্র তিনিই হবেন যে রেকর্ডের মালিক। এবং তিনিই যে 'একমাত্র' থাকতে যাচ্ছেন বহুদিন, সেটাও বলা যায় বিনা হিসাব-নিকাশেই!