• অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশ সফর ২০২১
  • " />

     

    আফিফ মানে ভয়ডরহীন ক্রিকেট

    আফিফ মানে ভয়ডরহীন ক্রিকেট    

    শামীম পাটোয়ারীর ব্যাটিং দেখলেই আপনি বলবেন 'ভয়ডরহীন'। সে তুলনায় আফিফকে ব্যাট করতে দেখে তা খুব বেশি মনে হওয়ার কথা না। আফিফ সেভাবে শামীমের মতো সরাসরি প্রতিপক্ষ বোলারের মনে ভয়ের সঞ্চার করতে পারেন না ঠিক, তবে তাঁর ব্যাটিংটাও সমানভাবে ভয়ডরহীনই। আফিফের ১২৪.২৯ স্ট্রাইক রেট আসলে যা বলতে পারছে না!

    ইতোমধ্যে আফিফ হোসেন ধ্রুব টি-টোয়েন্টি খেলে ফেলেছেন ২০টি। এর মধ্যে ব্যাট হাতে নামার সুযোগ হয়েছে ১৬ ম্যাচে। তাতে ত্রিশোর্ধ্ব ইনিংস আছে তিনটি। দুই অঙ্কের রান করার আগেই আউট হয়ে ফিরেছেন আটবার। এর বাইরে যে পাচঁটি ইনিংসে দুই অঙ্কের রান করতে পেরেছেন সেগুলোর তিনটিতেই স্ট্রাইক রেট ছিল ১১৫ এর নিচে। বাকি দুটির একটি অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে ১৭ বলে ২৩, আরেকটা এর আগের সিরিজে জিম্বাবুয়ের সাথে ৫ বলে ১৪। আফিফের সক্ষমতা সম্পর্কে আদতে পুরোপুরিভাবে ধারণা দিতে পারছে না এই সব পরিসংখ্যান! 

    সেই সক্ষমতাকে এখন বলতে হয় নির্বাচকেরা চিনতে পেরেছিলেন। এবং সেজন্যে তাঁরা আফিফে স্থির থেকেছেন। নির্বাচকদের প্রশংসা শোনার খুব একটা সুযোগ হয় না। তবে আফিফের ক্ষেত্রে তাদের এই অবস্থান প্রশংসার দাবিই যে রাখছে! সাথে যোগ করতে হয় টিম ম্যানেজমেন্টকেও। অভিষেকের পর দীর্ঘ বিরতি শেষে আবার ফেরার পর বাংলাদেশ যতটি টি-টোয়েন্টি খেলেছে, আফিফ ছিলেন সব কটিতেই। 

    অভিষেকে অদ্ভুতভাবে শুন্যে রানে আউট হওয়ার অনেকদিন পর আফিফ আবার ফিরেছিলেন আফগানিস্তান ও জিম্বাবুয়েকে নিয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজে। সেখানে ওই ৫২ রানের ইনিংসের পরের তিন ম্যাচে ১৬,৭,২। এরপর ভারতে বাংলাদেশ গেলে সেখানেও আফিফের খাতায় রানের অভাব।

    ভারতের বিপক্ষে দুই ইনিংস মিলে ৬ রান শেষে টাইগাররা গেল পাকিস্তানে। সেখানে প্রথম ম্যাচে আফিফের স্কোর থেমে গেল ৯ রানেই। পরের ম্যাচে অবশ্য ২১ করেছেন, যদিও সেটি করতে তাঁর লেগেছে ২০ বল। পরের সিরিজে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে কোন ম্যাচেই আর তাঁর ব্যাট করার প্রয়োজন পড়লো না। নিউজিল্যান্ডে গিয়ে প্রথম ম্যাচেই খেলে ফেললেন ৪৫ রানের ওই ইনিংসটা। কিন্ত পরের দুই ম্যাচে রান যথাক্রমে ৮ ও ২। এরপর? বাংলাদেশে সাধারণত যা হয় আরকি! ফিসফিস শুনতে পাওয়া গেল, 'চলেনা'!

    জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সেই ইনিংসের মহিমা কমিয়ে দেওয়ার সুযোগ নেওয়া হলো সেটি শুধুমাত্রই প্রতিপক্ষ 'জিম্বাবুয়ে' হওয়ার কারণে! আফিফও তাই বেছে নিলেন উপযুক্ত মঞ্চ। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেললেন ম্যাচজয়ী ত্রিশোর্ধ্ব রানের এক ইনিংস! অস্ট্রেলিয়ার এই দলের ব্যাটিংয়ে অভিজ্ঞতার অভাব কথাটা যেমন সত্য, তেমনি এটিও ষোলো আনা সত্য যে অস্ট্রেলিয়ার এই দলে টি-টোয়েন্টিতে তাদের সেরা পাচঁ উইকেট শিকারীর চারজনই খেলছেন! সেই তাদের বিপক্ষে ভয়ডরহীন 'কুল অ্যান্ড কাম' মনোভাবে আফিফের ফিনিশিংটা তাই প্রশংসার দাবিদার। 

    ভয়ডরহীনতার প্রমাণ মেলে আসলে আফিফের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের ত্রিশোর্ধ্ব তিনটি ইনিংসেই। প্রথমটিতে দলের নেই ৬০ রানে ৬ উইকেট, তখনো ৮.৩ ওভারে লাগে ৮৫ রান। ২৬ বলে ৫২ রান করে এরপর আফিফ যখন ফিরছেন, বাংলাদেশের জয় তখন নিশ্চিত। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে খেললেন ৩৩ বলে ৪৫ রানের ইনিংস, ২১১ রানের লক্ষ্য তাড়ার জন্যে যা যথেষ্ট হলো না যদিও। আজকে অপরাজিত ৩১ বলে ৩৭ রানের বদৌলতে ম্যাচ শেষে প্রেজেন্টেশনে তাঁর ডাক পড়লো দ্বিতীয়বারের মতো।

    দুটি ম্যাচেই বাংলাদেশ পড়েছিলো চাপে, সেখান থেকে উদ্ধার করে হলেন ম্যান অব দ্যা ম্যাচ। এমন ম্যাচ উইনারই তো আমরা চাই! তাঁরাই কি ম্যাচ উইনার না যারা 'প্রায়' হারা ম্যাচও জিতিয়ে দেন? ২৬ বলে ৫২ করে তো সে কারণেই আফিফ ম্যাচসেরা হয়েছিলেন। ১২১ খুব বড় লক্ষ্য না হলেও ৫৯ রানে ৪ উইকেট যখন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশ হারায়, তখন সেটি খুব সহজও ছিল না। পরবর্তীতে আফিফ দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে যা সহজই বানিয়ে ছাড়লেন!

    দল পড়েছে ভীষণ চাপে, অথচ তুমি থাকবে শান্ত। চাপকে তাড়িয়ে দিয়ে ভয়কে উড়িয়ে ফেলে তুমি এগুবে লক্ষ্যের পথে। আফিফ তো আজ তাই করলেন। এবং সেটিই কি আসলে ভয়ডরহীন ক্রিকেট না? 

    ডট দিলেই বাড়ছে আস্কিং রেট, সেটি কমাতে গিয়ে উইকেট দিয়ে আসা যাবে না। রিস্ক নিতে হবে, তবে সেটি হতে হবে ক্যালকুলেটিভ। সবকিছুর উর্ধ্বে আছে অদৃশ্য ওই চাপ, হারাতে হবে সেটিকেও। আর এসবেরই পিছনে তো কাজ করে 'ভয়'। ডট দিলে আস্কিং রেট বাড়ার ভয়, সেটি কমাতে গিয়ে উইকেট হারানোর ভয়, রিস্ক নেওয়ার ভয়। এতসব 'ভয়' জয় করে খেলে জেতানোর পর্যায়ে নিয়ে যাওয়াকেও তো 'ভয়ডরহীন' ক্রিকেট বলে!