• অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশ সফর ২০২১
  • " />

     

    লো-স্কোরিং ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার স্বস্তির জয়

    লো-স্কোরিং ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার স্বস্তির জয়    

    বাংলাদেশ বনাম অস্ট্রেলিয়া, মিরপুর (টস- বাংলাদেশ/ ব্যাটিং)
    বাংলাদেশ ১০৪/৯, ২০ ওভার (নাইম ২৮, মাহেদি ২৩, আফিফ ২১, সোয়েপসন ৩/১২, টাই ৩/১৮, হেজলউড ২/২৪)
    অস্ট্রেলিয়া ১০৫/৭, ১৯ ওভার (ক্রিশ্চিয়ান ৩৯, অ্যাগার ২৭, মোস্তাফিজ ২/৯, মাহেদি ২/১৭, নাসুম ১/১৭)

     

    অস্ট্রেলিয়া ৩ উইকেটে জয়ী


    তিনে তিন হয়েছিল বাংলাদেশের, নিশ্চিত হয়েছিল সিরিজ জয়ও। আরেকটা বাংলাওয়াশের আশাও হয়ত ছিল মাহমুদউল্লাহ-বাহিনীর। তবে মাত্র ১০৫ রানের লক্ষ্যে ড্যান ক্রিশ্চিয়ানের ১৫ বলে ৩৯ রানের বিস্ফোরক ইনিংসে অবশেষে জয় পেয়েছে অস্ট্রেলিয়া। আরও একদিন মোস্তাফিজুর রহমান মিরপুরে অজিদের কাছে দুষ্পাঠ্য থেকে গেলেও ঘাম ঝরিয়ে ম্যাচ জিতেছে সফরকারীরা। 

    ১০৫ রানের লক্ষ্যে শুরুটা একেবারেই ভাল হয়নি অস্ট্রেলিয়ার। প্রথম ওভারেই মাহেদি হাসানের বলে বোল্ড হয়ে ফিরে যান অধিনায়ক ম্যাথিউ ওয়েড। সিরিজের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক মিচেল মার্শের জায়গায় এদিন তিনে নামেন ড্যান ক্রিশ্চিয়ান। প্রথম ওভারে চার মেরেই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন কোন ভুমিকায় আজ তিনি আগে নেমেছেন। সেটা তিনি পুরোপুরি করেও দেখালেন ৪র্থ ওভারে, তাও সাকিব আল হাসানের বলে! ঐ ওভারে ৫ ছয়ে তিনি নেন ৩০ রান। এক ওভারেই যেন বাংলাদেশেকে যেন ম্যাচ থেকে ছিটকে দেন তিনি। পরের ওভারে ধীর গতিতে খেলতে থাকা বেন ম্যাকডারমটকে মাত্র ৫ রানে ফেরান নাসুম আহমেদ। পাওয়ারপ্লের শেষ ওভারে মোস্তাফিজুর রহমান আক্রমণে আসলে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ক্যাচ দিয়ে ফিরতে হয় ক্রিশ্চিয়ানকেও। তবে এর আগেই করে ফেলেছিলেন মাত্র ১৫ বলে ৩৯ রান। ক্রিশ্চিয়ান ঝড়ে পাওয়ারপ্লেতে অস্ট্রেলিয়া তোলে এই সিরিজের সর্বোচ্চ (৪৯) রান।

    বোলিংয়ে ভুলে যাওয়ার মতই একটি দিন কাটছিল সাকিবের। ৮ম ওভারে আবারও আক্রমণে এসে মার্শের কাছে খেয়ে বসেন ছয়। তবে ওভারের শেষ বলে মার্শের জোরালো স্ট্রেইট ড্রাইভে কোনোভাবে আঙ্গুল ছোঁয়ালে স্টাম্প ভেঙে যাওয়ায় দুর্ভাগ্যজনকভাবে ফিরতে হয় নন-স্ট্রাইকিং প্রান্তে থাকা মইসেস হেনরিকসকে। অপ্রত্যাশিত সেই ডিসমিসালে ম্যাচে হুট করেই প্রাণ ফিরে আসে, বাংলাদেশ শিবিরে ফেরে আত্মবিশ্বাস। দশম ওভারে আক্রমণে এসে দারুণ এক কাটারে অ্যালেক্স ক্যারিকে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন মোস্তাফিজ। প্রথম ওভারে উইকেট মেইডেনের পর এই ওভারেও এক উইকেট নিয়ে রান দেন মাত্র ২। 

    ঐ ওভারে মোস্তাফিজের ওয়াইড ইয়র্কারে মার্শ কট বিহাইন্ড হয়েছিলেন নাকি সেটা নিয়ে ছিল প্রশ্ন। ব্যাট মাটিতে লাগায় শব্দ হয়েছিল মনে করেই রিভিউ নেয়নি বাংলাদেশ। তবে সেটা নিয়ে আক্ষেপের কোনও সুযোগই রাখেননি মাহেদি। পরের ওভারেই তাকে বোল্ড করে শক্তভাবেই ম্যাচে ফেরান বাংলাদেশকে, অস্ট্রেলিয়ার স্কোর হয়ে দাঁড়ায় ৬৩-৬।  

    এরপর অবশ্য অ্যাশটন অ্যাগার ঠাণ্ডা মাথায় দলকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন জয়ের দিকে। মোস্তাফিজের করা ১৭তম ওভারে বেশ কয়েকবার পরাস্ত হয়েছিলেন। সেখান থেকেই হয়ত শরিফুল ইসলামের পরের ওভারে চড়াও হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। চার মারার পরে আরও একবার বৃত্তের ভেতরে থাকা ফিল্ডারকে পার করে বাউন্ডারি বের করতে গেলে সেই প্রচেষ্টায় বাগড়া দেন শামীম হোসেন পাটওয়ারি, দারুণভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে ক্যাচ নিয়ে তাকে ফেরান। অবশ্য ফেরার আগে ২৭ বলে ২৭ রানের ইনিংস খেলে নিজের কাজটা সেরে গেছেন। অ্যান্ড্রু টাই আর অ্যাশটন টার্নার এরপর আর কোনও বিপদ ঘটতে দেননি। মোস্তাফিজের বোলিং ফিগার ছিল আগের দিনের চেয়েও ভাল: ৪-১-৯-২! তবে বিফলে গেছে সেই স্পেল, ৩ উইকেটের জয়ে অজিরা সিরিজে খুলেছে জয়ের খাতা।

    ম্যাচে এদিনও দুই বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের বিপক্ষে ডানহাতি অফ স্পিনার অ্যাশটন টার্নারকে দিয়েই আক্রমণ শুরু করেন অজি অধিনায়ক ওয়েড। প্রথম ওভারটা রয়েসয়েই খেলে দুই রান তোলে দুই ওপেনার। চলতি সিরিজে বাংলাদেশের ওপেনিং জুটি একেবারেই সুবিধা করতে পারেনি। ভাগ্যের দুয়ার এই ম্যাচেও খোলেনি, গত সিরিজের সেরা খেলোয়াড় সৌম্য সরকারের বিভীষিকারও তাই অবসান ঘটেনি। জশ হ্যাজলউডের লাফিয়ে ওঠা বল আড়াআড়ি ব্যাটে খেলতে গিয়ে মিড অফে ক্যারির সহজ ক্যাচে প্যাভিলিয়নে ফিরে যান ১০ বলে ৮ রান করে।

    ক্রিজে এসে ৫ম ওভারেই ফিরে যেতে পারতেন সাকিব আল হাসানও। বোলার অ্যাশটন অ্যাগার যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী হলেও তার রিভিউয়ের আর্তিতে সাড়া দেননি ওয়েড। রিপ্লেতে অবশ্য দেখা যায় রিভিউ নিলে বিপদে পড়তে পারতেন সাকিব। ঐ যাত্রায় বেঁচে যাওয়ায় তাই আর পাওয়ারপ্লেতে উইকেট না হারিয়ে বাংলাদেশ তোলে ৩০ রান।

    ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলেও এদিন তা কাজে লাগাতে পারেননি সাকিব। হ্যাজলউডের বলে বেশ ভুগছিলেন। তাকে স্কুপ করার পরেই তার সেই ট্রেডমার্ক গুডলেন্থ বলে উইকেটের পিছে ক্যাচ দিয়ে ২৬ বলে ১৫ রান করে শেষ হয় সাকিবের ভোগান্তি। আগের দিন ফিফটি পাওয়া অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ এসেই সিরিজে প্রথম খেলতে নামা মিচেল সোয়েপসনের কাছে এলবিডব্লিউ হয়ে শুন্য রানে ফিরে যান, সিরিজে যা তার দ্বিতীয় ডাক। সোয়েপসনকে পড়তে বেশ বেগ পেতে হয় বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের। পরের বলেই দারুণ এক গুগলিতে এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরতে হয় নুরুল হাসানকেও।  

    এক প্রান্তে উইকেট আসা যাওয়ার মিছিল চললেও অন্য প্রান্ত আগলে ছিলেন মোহাম্মদ নাইম শেখ। তবে একেবারেই সুবিধা করতে পারছিলেন না, সোয়েপসনকে তো একেবারেই খেলতে পারছিলেন না। আগের বলেই কয়েক সেন্টিমিটারের জন্য এলবিডব্লিউ রিভিউ আবেদনে বেঁচে যান। পরের বলেই গুগলি পড়তে না পেরে সজোরে সুইপ করতে গেলে বল আকাশে ভাসিয়ে দেন। ওয়েড সহজেই তা লুফে নিলে শেষ হয় তার ৩৫ বলে ২৮ রানের ইনিংস। সোয়েপসন সিরিজে প্রথম নেমেই লেগ স্পিনের জাল বুনে ৪ ওভারে নিয়েছেন ৩ উইকেট, রান গুনেছেন মোটে ১২!

    ১৫ ওভার শেষে মাত্র ৭০ রান ওঠায় অপর প্রান্তে থাকা আফিফ হোসেন ধ্রুব’র ওপরে রানের চাকা সচল করার চাপও ক্রমশই বাড়ছিল। অ্যাগারের ওভারটা শুরুও করেছিলেন গ্যালারিতে বল আছড়ে ফেলে। ঐ ওভারেই স্লগ সুইপ করতে গিয়ে ডিপ মিডউইকেটে মইসেস হেনরিকসের হাতে ক্যাচ দিয়ে শেষ হয় তার ১৭ বলে ২১ রানের ইনিংস।

    উইকেট আসা যাওয়ার মিছিলে এরপর যোগ দেন শামীম হোসেন পাটওয়ারি, মাত্র ৩ রান করেই অ্যান্ড্রু টাইয়ের অফ কাটারে বিভ্রান্ত হয়ে ক্যারির হাতে সহজ ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান তিনি। ১০০ স্পর্শ করাই মনে হচ্ছিল দুষ্কর হয়ে উঠবে বাংলাদেশের। তবে মাহেদি হাসানের শেষ ওভারের দুই বাউন্ডারিতে সেটা সম্ভব হয়। চড়াও হওয়ার কোনও বিকল্প ছিল না, টানা বাউন্ডারি বের করতে গিয়েই টাইয়ের বল আকাশে ভাসিয়ে শেষ হয় তার ১৬ বলে ২৩ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস। শেষ বলে শরিফুল ইসলামও টাইয়ের বলে ফিরে গেলে বাংলাদেশ থামে ১০৪ রানে। ছোট পুঁজি নিয়ে লড়াই করেও অবশ্য এদিন আর শেষ রক্ষা হয়নি স্বাগতিকদের। পাঁচ ম্যাচের সিরিজ যদিও ৩-১ ব্যবধানে এগিয়েই রয়েছে বাংলাদেশ।