• বিশ্বকাপ বাছাই
  • " />

     

    কাতার বিশ্বকাপের দৌড়ে কারা এগিয়ে, কোন মহাদেশ থেকে কীভাবে কতগুলো দেশ সুযোগ পাবে...

    কাতার বিশ্বকাপের দৌড়ে কারা এগিয়ে, কোন মহাদেশ থেকে কীভাবে কতগুলো দেশ সুযোগ পাবে...    

    ২০১৯ সালের জুন মাসে এশিয়ান কোয়ালিফায়ারের মধ্য দিয়ে মাঠে গড়িয়েছিল ২০২২ বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব। লম্বা এই বাছাইপর্ব করোনা মহামারীর কারণে বন্ধ ছিল লম্বা সময় ধরে। তবে শত বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে কনমেবল বাছাইপর্ব প্রায় শেষ পর্যায়ে, শেষ হতে খুব একটা দেরি নেই ইউরোপেরও। প্রতি অঞ্চলের বাছাইপর্ব কীভাবে কাজ করে, সব মহাদেশের বাছাইপর্ব কেমন গিয়েছে, কার সামনে সমীকরণ এখন কেমন সেসবই এখানে তুলে ধরা হল। 

     

    ইউরোপ

    মোট ৫৫টি দল নিয়ে শুরু হওয়া ইউরোপিয়ান কোয়ালিফিয়ারে ছিল ১০টি গ্রুপ। ইউরোপ থেকে বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পাবে মোট ১৩টি দল। কোয়ালিফিয়ারের ১০টি গ্রুপের চ্যাম্পিয়নরা সরাসরি বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ পাবে। বাকি ৩টি দল নির্ধারণের জন্য অনুষ্ঠিত হবে প্লেঅফ। এই প্লেঅফে খেলবে ১০টি গ্রুপের গ্রুপ রানার-আপ আর ইউয়েফা নেশন্স লিগের শীর্ষ স্থানীয় ২টি দল যারা কোয়ালিফায়ারে নিজ গ্রুপে চ্যাম্পিয়ন বা রানার-আপ নয়। এই ১২টি দল নিয়ে অনুষ্ঠিত হবে দুই রাউন্ডব্যাপী নকআউট পর্ব।

     

    এক নজরে কোয়ালিফায়েরর গ্রুপের শীর্ষস্থানীয় দলসমুহ:

    গ্রুপ এ: ১৩ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপের শীর্ষে আছে পর্তুগাল। ১১ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে সার্বিয়া।

    গ্রুপ বি: ১৩ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপের শীর্ষে আছে স্পেন। ৯ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে সুইডেন।

    গ্রুপ সি: ১৪ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপের শীর্ষে আছে ইতালি। ৮ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে সুইজারল্যান্ড।

    গ্রুপ ডি: ১২ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপের শীর্ষে আছে ফ্রান্স। ৫ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে ইউক্রেন।

    গ্রুপ ই: ১৬ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপের শীর্ষে আছে বেলজিয়াম। ৭ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে চেক প্রজাতন্ত্র। 

    গ্রুপ এফ: ১৮ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপের শীর্ষে আছে ডেনমার্ক। ১১ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে স্কটল্যান্ড থাকলেও ১০ পয়েন্ট নিয়ে তাদের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে ইসরায়েল। 

    গ্রুপ জি: গ্রুপের শীর্ষ স্থানীয় নেদারল্যান্ডস ও দ্বিতীয় স্থানে থাকা নরওয়ে উভয়েরই পয়েন্ট ১২। ১১ পয়েন্ট নিয়ে দৌড়ে ভালোভাবেই আছে তুরস্ক।

    গ্রুপ এইচ: গ্রুপের শীর্ষে থাকা ক্রোয়েশিয়া ও দ্বিতীয় স্থানে থাকা স্লোভেনিয়া উভয়েরই পয়েন্ট ১৩।

    গ্রুপ আই: ১৬ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপের শীর্ষে আছে ইংল্যান্ড। তবে দ্বিতীয় স্থানের জন্য চলছে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। সমানসংখ্যক ম্যাচ খেলে ১২,১১,১০ পয়েন্ট নিয়ে যথাক্রমে দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ স্থানে আছে আলবেনিয়া, পোল্যান্ড ও হাঙ্গেরি। 

    গ্রুপ জে: ১৫ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে আছে জার্মানি। ১১ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছে আর্মেনিয়া। তবে ১০ ও ৯ পয়েন্ট নিয়ে খুব বেশি পিছিয়ে নেই রোমানিয়া ও উত্তর ম্যাসিডোনিয়া। 

     

    কনমেবল

    ১০টি দল নিয়ে অনুষ্ঠিত হওয়া দক্ষিণ আমেরিকার কোয়ালিফায়ার থেকে সরাসরি বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পাবে প্রথম ৪টি দল। বিশ্বকাপে জায়গা করে নেওয়ার জন্য ৫ম দলকে লড়তে হবে আন্তর্জাতিক প্লেঅফে।

     

    এক নজরে কনমেবল কোয়ালিফায়ারে দলগুলোর বর্তমান অবস্থান:

    • ১ম: ব্রাজিল (২১ পয়েন্ট)

    • ২য়: আর্জেন্টিনা (১৫ পয়েন্ট)

    • ৩য়: ইকুয়েডর (১৩ পয়েন্ট)

    • ৪র্থ: উরুগুয়ে (১২ পয়েন্ট)

    • ৫ম: কলম্বিয়া (১০ পয়েন্ট)


     

    কনক্যাকাফ

    মোট ৩৫টি দেশ নিয়ে তিন ধাপে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এই অঞ্চলের কোয়ালিফায়ার। প্রথম রাউন্ডে ফিফা র‍্যাঙ্কিং অনুযায়ী এই অঞ্চলের ৬-৩৫ নম্বর দল নিয়ে ৬টি গ্রুপ করা হয়েছিল। প্রতি গ্রুপে ছিল ৫টি দল। প্রতি গ্রুপের চ্যাম্পিয়নরা পরবর্তী রাউন্ডে উত্তীর্ণ হয়েছিল। এই ৬টি দল রাউন্ড রবিন পদ্ধতিতে হোম ও অ্যাওয়ে ম্যাচে একে অপরের মুখোমুখি হওয়ার পর শীর্ষস্থানীয় ৩টি দল পরের রাউন্ডে উত্তীর্ণ হয়। সেখানে জয়ী তিন দল কানাডা, এল সালভাদোর ও পানামা শেষ রাউন্ডে মুখোমুখি হয় ফিফা র‍্যাঙ্কিং অনুযায়ী এই অঞ্চলের শীর্ষ ৫ দলের (কোস্টারিকা, হন্ডুরাস, জ্যামাইকা, মেক্সিকো, যুক্তরাষ্ট্র)। এই ৮টি দল রাউন্ড রবিন ফরম্যাটে হোম ও অ্যাওয়ে ম্যাচে একে অপরের মুখোমুখি হবে। শেষ রাউন্ডে এখন পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়েছে মাত্র ৩টি ম্যাচ। মোট ১৪টি ম্যাচ হওয়ার পরে প্রথম তিন দল সরাসরি বিশ্বকাপে জায়গা করে নিবে। আর চতুর্থ দলকে খেলতে হবে আন্তর্জাতিক প্লেঅফ।

     

    এক নজরে কনক্যাকাফ কোয়ালিফায়ারের শেষ রাউন্ডে দলগুলোর বর্তমান অবস্থান:

    • ১ম: মেক্সিকো (৭ পয়েন্ট)

    • ২য়: কানাডা (৫ পয়েন্ট)

    • ৩য়: যুক্তরাষ্ট্র (৫ পয়েন্ট)

    • ৪র্থ: পানামা (৫ পয়েন্ট)

     

    আফ্রিকা

    মোট ৫৪টি দেশ নিয়ে আয়োজিত আফ্রিকান কোয়ালিফায়ার মোট তিন রাউন্ডে বিভক্ত। প্রথম রাউন্ডে ফিফা র‍্যাঙ্কিংয়ের নিম্নস্থানীয় ২৮টি দল ড্রয়ের পর নিজেদের মধ্যে দুই লেগে মুখোমুখি হয়। জয়ী ১৪টি দল পরের রাউন্ডে বাকি ২৬ দলের সাথে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। দ্বিতীয় রাউন্ডে ড্রয়ের ভিত্তিতে মোট ৪০টি দলকে ৪ দল বিশিষ্ট ১০টি গ্রুপে ভাগ করা হয়। এখন পর্যন্ত প্রতিটি দল ২টি করে ম্যাচ খেলেছে। ১০টি গ্রুপের চ্যাম্পিয়নরা এর পরের রাউন্ডে ড্রয়ের ভিত্তিতে হেড টু হেড পদ্ধতিতে বিশ্বকাপে জায়গা করে নেওয়ার জন্য লড়বে, বিজয়ী ৫টি দল সরাসরি বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পাবে। 

     

    এক নজরে আফ্রিকান কোয়ালিফায়ারের দ্বিতীয় রাউন্ডের গ্রুপ:

     

    গ্রুপ এ: সমান ৪ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপের শীর্ষে আছে আলজেরিয়া ও দ্বিতীয় অবস্থানে বুরকিনা ফাসো।

    গ্রুপ বি: ৬ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপের শীর্ষে আছে তিউনিসিয়া। ৩ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে জাম্বিয়া।

    গ্রুপ সি: ৬ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপের শীর্ষে আছে নাইজেরিয়া। ৩ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে লাইবেরিয়া।

    গ্রুপ ডি: ৪ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপের শীর্ষে আছে আইভরি কোস্ট। ৩ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে ক্যামেরুন।

    গ্রুপ ই: ৪ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপের শীর্ষে আছে মালি। ২ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে কেনিয়া। 

    গ্রুপ এফ: ৬ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপের শীর্ষে আছে লিবিয়া। ৪ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে মিশর।

    গ্রুপ জি: ৪ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপের শীর্ষে আছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ৩ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে ঘানা।

    গ্রুপ এইচ: ৬ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপের শীর্ষে আছে সেনেগাল। ৪ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে নামিবিয়া।

    গ্রুপ আই: ৪ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপের শীর্ষে আছে গিনি বিসাউ। ৩ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে মরক্কো।

    গ্রুপ জে: সমান ৪ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপের শীর্ষে আছে তানযানিয়া ও দ্বিতীয় অবস্থানে বেনিন। 

     

    এশিয়া

    ফিফা র‍্যাঙ্কিংয়ের নিচের সারির ১২ দল নিয়ে দুই লেগ হেড টু হেড পদ্ধতিতে হয়েছিল প্রথম রাউন্ড যেখান থেকে ৬টি দল পরের রাউন্ডে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। জয়ী দলগুলোর মধ্যে ছিল বাংলাদেশও। বাকি ৩৪ দলের সাথে এই ছয় দলকে নিয়ে শুরু হয়েছিল দ্বিতীয় রাউন্ড যেখানে ৫ দল বিশিষ্ট মোট ৮টি গ্রুপ করা হয়েছিল। গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন আর রানার-আপদের নিয়ে শেষ রাউন্ডে ৬ দল বিশিষ্ট দুটি গ্রুপ করা হয়। শেষ রাউন্ডে প্রতি দল এখন পর্যন্ত খেলেছে দুটি করে ম্যাচ। প্রতি গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন ও রানার-আপ সরাসরি বিশ্বকাপে জায়গা করে নিবে আর তৃতীয় হওয়া দুই দল নিজেদের মধ্যে দুই লেগের প্লেঅফ খেলবে। সেখানে জয়ী দল এরপর খেলবে আন্তর্জাতিক প্লে-অফ।

    এক নজরে গ্রুপগুলোর অবস্থা:

    গ্রুপ এ: ৬ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপের শীর্ষে আছে ইরান। ৪ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে দক্ষিণ কোরিয়া।

    গ্রুপ বি: সমান ৬ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপের শীর্ষে আছে অস্ট্রেলিয়া ও দ্বিতীয় অবস্থানে আছে সৌদি আরব।

     

    ওশেনিয়া

    মোট ১১টি দেশ নিয়ে হতে যাওয়া এই অঞ্চলের কোয়ালিফায়ারে ফিফা র‍্যাঙ্কিংয়ের ভিত্তিতে গঠন করা হবে ২টি গ্রুপ। গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন আর রানার-আপ পরের রাউন্ডে দুই লেগ পদ্ধতিতে খেলবে ফাইনাল ও সেমিফাইনাল। বিজয়ী দলকে বিশ্বকাপে জায়গা করে নিতে খেলতে হবে আন্তর্জাতিক প্লেঅফ। তবে এই অঞ্চলের কোয়ালিফায়ারের কোনও ম্যাচ এখনো অনুষ্ঠিত হয়নি। কোনও সুচি ঘোষণা করা না হলেও ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে এই কোয়ালিফায়ার মাঠে গড়ানোর কথা।।