• আইপিএল ২০২১
  • " />

     

    রেকর্ড রানেও হলো না মুম্বাইয়ের, শেষ বলে জয় কোহলিদের

    রেকর্ড রানেও হলো না মুম্বাইয়ের, শেষ বলে জয় কোহলিদের    

    গ্রুপ পর্ব, আবু ধাবি (টস- মুম্বাই/ ব্যাটিং)
    মুম্বাই ইন্ডিয়ানস ২৩৫/৯, ২০ ওভার (কিষান ৮৪, সূর্যকুমার ৮২, রোহিত ১৮, হোল্ডার ৪/৫২, অভিষেক ২/৪, রশিদ ২/৪০)
    সানরাইজারস হায়দ্রাবাদ ১৯৩/৮, ২০ ওভার (পান্ডে ৬৯*, রয় ৩৪, অভিষেক ৩৩, নিশাম ২/২৮, বুমরাহ ২/৩৯, কোল্টার-নাইল ২/৪০)
    ফলাফল: মুম্বাই ৪২ রানে  জয়ী
     
    গ্রুপ পর্ব, দুবাই (টস- বেঙ্গালুরু/ বোলিং)
    দিল্লি ক্যাপিটালস ১৬৪/৫, ২০ ওভার (শ ৪৮, ধাওয়ান ৪৩, হেটমায়ার ২৯, সিরাজ ২/২৫, ক্রিশ্চিয়ান ১/১৯, চেহেল ১/৩৪)
    রয়্যাল চ্যালেঞ্জারস বেঙ্গালুরু ১৬৬/৩, ২০ ওভার (ভারত ৭৮*, ম্যাক্সওয়েল ৫১*, ডি ভিলিয়ার্স ২৬, নরকিয়া ২/২৪, অক্ষর ১/৩৯)
    ফলাফল: বেঙ্গালুরু ৭ উইকেটে  জয়ী

           
    গ্রুপ পর্বের শেষ দিনে আইপিএল দেখল উত্তেজনাময় ম্যাচ, চার-ছয়ের ফুলঝুরি। তবে পয়েন্ট তালিকায় আসেনি কোনও পরিবর্তন। শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে শ্রীকার ভারত-গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের ১১১* রানের জুটির পর ভারতের শেষ বলের ছয়ে বেঙ্গালুরু জয় পেলেও রান রেটে পিছিয়ে থাকায় তিনেই শেষ করে এলিমিনেটর খেলতে হবে তাদের। অপর ম্যাচে মরুর বুকে ঝড় তুলে ইশান কিষানের ৮৪ ও সূর্যকুমার যাদবের ৮২ রানে নিজেদের আইপিএল সর্বোচ্চ ২৩৫ রানের সংগ্রহ দাঁড় করিয়েছিল মুম্বাই। প্লেঅফে উঠতে তাদের জিততে হত ১৭১ রানে। আবু ধাবির ব্যাটিং পিচে মানিশ পান্ডের ৬৯* রানে সেই সম্ভাবনা হায়দ্রাবাদ ভেস্তে দিলেও ৪২ রানের জয় পেয়েছে মুম্বাই। তবে রান রেটে বিপুল ব্যবধানে এগিয়ে থাকায় প্লেঅফে জায়গা করে নিয়েছে কলকাতাই।   

    প্লেঅফে উঠতে হল টসে জিতে মুম্বাইকে ব্যাটিং নিতে হত, হলও সেটাই। ১৭১ রানে জয়ের লক্ষ্য নিয়ে মুম্বাইয়ের দুই ওপেনার রোহিত শর্মা ও ইশান কিষান শুরুটাও করল তেড়েফুঁড়ে। জেসন হোল্ডারের করা চতুর্থ ওভারে এল ২২ রান। ঐ ওভারের শেষ বলে ৪ মেরে মাত্র ১৬ বলে নিজের ফিফটি পূর্ণ করেন কিষান, যা এই মৌসুমে দ্রুততম ফিফটি। পাওয়ারপ্লের শেষ ওভারে রশিদ খান আক্রমণে এলে ১৮ রানে রোহিত থামলে পাওয়ারপ্লে শেষে মুম্বাইয়ের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৮৩/১।

    কিষানের ছন্দপতনের কোনও চিহ্ন না থাকলেও উইকেটে এসে খুব একটা সুবিধা করতে না পেরে হোল্ডারের শিকার হয়ে ১০ রানে ফিরে যান হার্দিক পান্ডিয়া। পরের ওভারের প্রথম বলেই উইকেটের পিছনে ক্যাচ দিয়ে উমরান মালিকের শিকার হয়ে ৩২ বলে ৮৪ রান করে থামতে হয় কিষানকে। কাইরন পোলার্ডকে সাথে নিয়ে সূর্যকুমার যাদব এরপর উইকেটে থিতু হতে কিছুটা সময় নেন। সেই চাপের সুযোগ নিয়েই আক্রমণে এসেই পরপর দুই বলে অভিষেক শর্মা ফেরান পোলার্ড ও জিমি নিশামকে। রশিদের শিকার হয়ে এরপর ৯ রানে ক্রুনাল পান্ডিয়াও ফিরলে অপর প্রান্তে থাকা সূর্যকুমার গিয়ার পাল্টান, ২৪ বলে পূর্ণ করেন তার ফিফটি।

    অপর প্রান্তে উইকেট আসা যাওয়ার মিছিলের মাঝেও সূর্যকুমার তার তাণ্ডব চালিয়ে যান। অন্যদিকে নাথান কোল্টার নাইলের পর শেষ ওভারে পীযূষ চাওলাকেও ফিরিয়ে মোহাম্মদ নবীর ক্যাচে হোল্ডার ফেরান সূর্যকুমারকেও। সেটা ছিল এই ম্যাচে নবীর ৫ম ক্যাচ, যা আইপিএলের এক ম্যাচে সর্বোচ্চ।  ৪০ বলে ৮২ রান করে ফিরলেও সূর্যকুমার মুম্বাইকে নিয়ে গিয়েছেন ২৩৫ রানে, যা তাদের আইপিএল ইতিহাসের সর্বোচ্চ।

    প্লেঅফে উঠতে হল হায়দ্রাবাদকে ৬৪ রানে বেঁধে ফেলতে হত মুম্বাইকে। ৫ ওভারেই দুই ওপেনার অভিষেক শর্মা ও জেসন রয় ৬০ রান তুলে সেই সম্ভাবনা ভেস্তে দেয়। পাওয়ারপ্লের শেষ ওভারে ট্রেন্ট বোল্টের শিকার হয়ে ফেরার আগে রয় করেন ২১ বলে ৩৪ রান।

    পাওয়ারপ্লেতে ৭০ রান তোলার পরের ওভারে নিশামের শিকার হয়ে ১৬ বলে ৩৩ রান করে ফেরেন অভিষেকও। এরপরে চাওলার শিকার হয়ে মোহাম্মদ নবী ফেরার পরের ওভারের প্রথম বলেই আব্দুল সামাদও ফিরে যান নিশামের শিকার হয়ে। প্রিয়াম গার্গক নিয়ে অবশ্য এরপর প্রতি আক্রমণে যান মানিশ পান্ডে। জাসপ্রিত বুমরাহর শিকার হয়ে গার্গ ২৯ রানে ফিরলেও ৩০ বলে নিজের ফিফটি পূর্ণ করেন পান্ডে।

    পান্ডেকে এক প্রান্তে বেঁধে ফেলে নাথান কোল্টার নাইলের আঘাতে হোল্ডার আর বুমরাহর বলে রশিদকে ফির‍িয়ে জয় প্রায় নিশ্চিত করে ফেলে মুম্বাই। কোল্টার নাইল এরপর ঋদ্ধিমান সাহাকেও ফেরালে ৪২ রানের জয় পায় মুম্বাই। ২০১৮ সালের পর এবারও প্লেঅফে কোয়ালিফাই করতে না পারায় সেই জয় তাই হয়ে থাকে শুধুই সান্ত্বনার।  

     

     

    অন্যদিকে নিজেদের শেষ ম্যাচ থেকে দিল্লির হারানোর কিছু না থাকলেও বেঙ্গালুরুর ছিল দ্বিতীয় স্থানে যাওয়ার সম্ভাবনা। টসে জিতে ভিরাট কোহলি তাই দিল্লিকে ব্যাটিংয়ে পাঠালে দিল্লিকে ভালো শুরু এনে দেন দুই ওপেনার শিখর ধাওয়ান ও পৃথ্বী শ। দুজনে মিলে পাওয়ারপ্লেতে তুলে ফেলেন ৫৫ রান।

    ৮৮ রানের ওপেনিং জুটি ভেঙে ধাওয়ানকে ৪৩ রানে এরপর ফেরান পার্পল ক্যাপের দৌড়ে সবার আগে থাকা হারশাল পাটেল। পরের ওভারেই যুজবেন্দ্র চেহেলের শিকার হয়ে শও থামেন ৪৮ রানে। পরের ওভারে ড্যান ক্রিশ্চিয়ান এসেই ঋশাভ পান্টকে ফেরালে কিছুটা চাপে পড়ে দিল্লি। সেই চাপে খুব একটা সুবিধা করতে না পেরে সিরাজের শিকার হয়ে ১৮ রান করে ফিরে যান স্রেয়াশ আইয়ার।

    অন্য প্রান্তে থাকা শিমরন হেটমায়ার ছিলেন সপ্রতিভ। শেষ ওভারে সিরাজের বলে কোনও বাউন্ডারি বে করতে না পেরে শেষ বল মাঠছাড়া করতে গিয়ে থামেন ২৯ রানে, বেঙ্গালুরুর সামনে দিল্লি দাঁড় করায় ১৬৫ রানের লক্ষ্য।

    লক্ষ্যতাড়ায় নেমে প্রথম তিন ওভারেই আনরিখ নরকিয়ার শিকার হয়ে ফিরে যান দুই ওপেনার দেবদূত পাডিকাল ও কোহলি। এবি ডি ভিলিয়ার্সকে নিয়ে আর কোনও বিপদ ঘটতে না দিয়ে শ্রীকার ভারত পাওয়ারপ্লেতে বেঙ্গালুরুকে নিয়ে যান ২৯ রানে।

    পাওয়ারপ্লের পরেও হাত খোলার সুযোগ তেমন পাননি দুই ব্যাটসম্যান। সেই চাপে অক্ষর পাটেলের শিকার হয়ে ২৬ বলে ২৬ রান করে ফিরে যান ডি ভিলিয়ার্স। উইকেটে গ্লেন ম্যাক্সওয়েল এলেই অবশ্য ম্যাচের দৃশ্যপটে আসে পরিবর্তন। তার সাহচর্যে আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়ে ৩৭ বলে নিজের প্রথম আইপিএল ফিফটি তুলে নেন ভারত।

    দুজন গিয়ার পাল্টালে শেষ দুই ওভারে সমীকরণ হয়ে দাঁড়ায় ৭ উইকেট হাতে নিয়ে ১৯ রান। কিন্তু ১৯তম ওভারে এসে এদিন দুর্দান্ত বল করা নরকিয়া দেন মাত্র ৪ রান। আভেশ করা শেষ ওভারের প্রথম বলে চার মেরে পরের বলে ফিফটি পূর্ণ করেন ম্যাক্সওয়েল ৩২ বলে। দারুণভাবে এরপর আভেশ ঘুরে দাঁড়ালে শেষ বলে প্রয়োজন ছিল ছয় রান। দুর্দান্ত ভারত তুলির শেষ আঁচড়টা দেন ছয় দিয়েই, রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে ৫২ বলে ৭৮* রানের ইনিংস খেলে বেঙ্গালুরুকে এনে দেন অসাধারণ জয়। তবে রান রেটে পিছিয়ে থাকায় ১৮ পয়েন্ট নিয়ে চেন্নাইয়ের পিছে থেকেই শেষ করেছে বেঙ্গালুরু।