• ফ্রেঞ্চ লিগ ওয়ান
  • " />

     

    গোলশূন্য ম্যাচেও উত্তাপ ছড়িয়ে গেল মেসি'র প্রথম 'লে ক্লাসিক'

    গোলশূন্য ম্যাচেও উত্তাপ ছড়িয়ে গেল মেসি'র প্রথম 'লে ক্লাসিক'    

    এল ক্লাসিকো’ আজ উত্তাপ ছড়িয়েছে, কোন সন্দেহ নেই। মো সালাহ ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে গিয়ে কাঁদিয়েছেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে, ম্যাচ একপেশে হলেও অল রেডদের আক্রমণ ছিল চোখ ধাঁধাঁনো। তবে রমরমা রবিবারের শেষ প্রদর্শনীটা হয়েছে আরো উত্তেজনায় ভরপুর- ভিএআর, অফসাইডে গোল বাতিল, আক্রমণাত্মক ফাউল, খেলা বন্ধ থাকা, অরেঞ্জ ভেলোড্রোম স্টেডিয়ামভর্তি ‘উগ্র’ মার্শেই সমর্থক, এবং লাল কার্ড- স্কোরলাইন ০-০ হলেও সবমিলিয়ে ফ্রেঞ্চ ‘লে ক্লাসিক’ ছিল বারুদ-বিনোদনে ঠাঁসা। 

    ম্যাচের তাল শুরু থেকেই পারদের উঁচুতে, বিশেষ করে মার্শেই সমর্থকদের স্লোগান আর তুমুল হট্টগোলে এ ম্যাচ যে কোন পিএসজি খেলোয়াড়-সমর্থকের জন্য আলাদা মানসিক চাপ তৈরি করে। ম্যাচের একদম শুরুর সেকেন্ড থেকেই ৩-৪-২-১ এর আগ্রাসী ফরমেশনে পিএসজিকে চাপে রাখার চেষ্টা করেছে মার্শেই। গোল হতে পারত ঠিক ৩ মিনিটের মাথাতেই, দিমিত্রি পায়েতের বাঁকানো ফ্রি কিক নিমেষেই বক্সে মিলিকের কাছে, জোরালো হেডে অবশ্য বলটা উপর দিয়েই বেরিয়ে গেছে। 

    ফরাসি লিগের সবচেয়ে বড় ডার্বি বলে কথা, উত্তেজনার পারদ উঁচুতে থাকাটা স্বাভাবিক। তবে বড় কারণ অন্য, ডাগআউটের দুই কোচই আর্জেন্টাইন- আবার দুইজনই গুরু মানেন একই কোচকে। লিডসের মার্সেলো বিয়েলসার সিস্টেমের ভক্ত হোর্হে সাম্পাওলি খেলেছেন সমান্তরাল আর আড়াআড়ি বল নিয়ে। প্রেসিং লাইন ভেঙ্গে মাঠকে বড় করে বল নিয়ে এগিয়ে গেছেন পায়েত, আর পেছনে ইঞ্জিনের মত বল বের করছিলেন গুন্ডোজি। আর্সেনালে ব্রাত্য হয়ে পড়া খেলোয়াড়কে দলের মূল শক্তি বানিয়েছেন এই সাম্পাওলিই। অন্যদিকে বিয়েলসার একসময়ের প্রিয় ডিফেন্ডার পচেত্তিনো খেলেন ৪-২-৩-১ ফরমেশনে, যেখানে তার সামনের চারজনেরই দায়িত্ব পকেট স্পেস বের করে বক্সে বিপজ্জনক সুযোগ তৈরি করা। পুরো ম্যাচেও হয়েছে তাই, সামনে এমবাপের সঙ্গে মেসির ওয়ান-টু, আর নেইমারের ফ্রি রোলের সমান্তরালে মারিয়ার ড্রিফটিং রান একের পর এক ভয়াবহ আক্রমণ এসেছে মার্শেই বক্সে।

    এই পকেট স্পেস ধরেই বল বের করে এনেছেল নুনো মেন্ডেস, যিনি আজ ছিলেন পিএসজির জন্য ত্রাতা। ম্যান মার্কারকে বোকা বানিয়ে নেইমার বল নিয়ে বাড়িয়েছিলেন বক্সে, সেটা ক্লিয়ার করতে গিয়েই বল নিজের জালে জড়িয়ে দেন পেরেস। কিন্তু ভিএআরে দেখা গেল, ইঞ্চি পরিমাণ দূরত্বের কারণে অফসাইডে ছিলেন নেইমার। ঠিক একই ঘটনা ঘটল মার্শেইয়ের সঙ্গেও, মিলিকের করা গোল বাতিল হয়ে যায় ভিএআর চেকে অফসাইডের কারণে।

    মার্শেই-পিএসজি ম্যাচ মানেই কার্ডের ছড়াছড়ি। গত বছর সেপ্টেম্বরের সেই ‘কুখ্যাত’ ম্যাচে দেখানো হয়েছিল পাঁচ লাল কার্ড। শেষ দেখায় লাল কার্ড পেয়ে মাঠ ছেড়েছিলেন পায়েত। আর এবার সেই খাতায় নাম লিখিয়েছেন আশরাফ হাকিমি। ৫৫ মিনিটে চেনগিজ উন্দেরকে ধাক্কা দিয়ে লাল কার্ড দেখেন ভিএআর চেকের পর। এদিকে অতিরিক্ত কথাকাটাকাটির জন্য হোর্হে সাম্পাওলিকে সতর্ক করা হয় ম্যাচের শুরুতেই। 

    ম্যাচ প্রথমার্ধে যতটুকু না হয়েছে, তার চেয়ে বেশি সময় রেফারির স্টপওয়াচ ছিল থেমে। মার্শেই সমর্থকরা পুরো ৯০ মিনিট ধরে ছুঁড়েছেন বোতল, প্লাস্টিকের গ্লাস; মাঠে ফাটিয়েছেন আলোকসজ্জাও! পিএসজি খেলোয়াড়দের প্রত্যেকের চোখে মারা হয়েছে সবুজ লেজার, আর রেফারির সিদ্ধান্ত পছন্দ না হলে তিনিও বাদ যাননি। ৫৩ মিনিটে নেইমারের নেওয়া কর্নারের সময় তাকে স্ট্যান্ড থেকে ঘিরে রাখা হয়েছে ব্যারিকেড দিয়ে, ক্রমাগত বোতল ধেয়ে আসছিল তার দিকেই। ভাগ্যক্রমে বাজে কিছু ঘটেনি।

    তবে পিএসজির জন্য বড় ভরসা ছিল মেসি-এমবাপের সমন্বয়। ডিফেন্সে ৪-৪-২ ন্যারো ব্লক ফরমেশনকে সহজেই ভেঙ্গে একেকজন বল নিয়ে এগিয়ে গেছেন। ৩০ মিনিটের মাথায় লম্বা বল থেকে মার্কারকে বোকা বানিয়ে ভিতরে ঢুকেও গেছিলেন এমবাপে, কিপারও ছিলেন অসহায়। শেষ পর্যন্ত বল ডিফ্লেক্ট হয়ে নেইমার পাঠাতে পারেননি জালে, কিপার লোপেজ আর লেফট সেন্টারব্যাক পেরেজের নৈপুন্যে সে যাত্রায় বেঁচে যায় মার্শেই।

    দ্বিতীয়ার্ধে ট্যাকটিকাল পরিবর্তন দেখা গেছে দুই দলেই। ভেরাত্তি অ্যাবডমেন ইনজুরিতে পড়ায় মেসি খেলেছেন একটু নিচে নেমে এসে, বল পাঠিয়েছেন মাঝমাঠ থেকে নেইমার আর এমবাপের দিকে। অন্যদিকে পায়েতও খেলছিলেন নিচে, গুন্দোজি নাম্বার সিক্স রোল থেকে সুইচ করেন নাম্বার এইটে, আর উন্দেরও ডান ফ্ল্যাংক থেকে কাটব্যাক করে খেলছিলেন।

    হাকিমির লাল কার্ডের পর কিছুটা কোনঠাসা ছিল পিএসজি, স্লটের বাইরেও পচেত্তিনোকে বাধ্য হয়েই স্কোয়াডে আনতে হয়েছে পরিবর্তন। অবশ্য শেষ পর্যন্ত মার্শেইর সামনের তিনজন আক্রমণের শেষ ভাগে কাজের কাজ করতে পারেননি। বক্সের বাইরে থেকে পায়েত ফ্রি কিক পাঠিয়েছেন জালের অনেক ওপর দিয়ে, ম্যাচের সময় তখন ৬০ মিনিট। বদলি হিসেবে কনরাদ দে লা ফুয়েন্তের বিপজ্জনক শর্ট ক্রস দুইবার বাইরে মেরেছেন উন্দের। মেসি দ্বিতীয়ার্ধে চেষ্টা করেছেন ঠিকই, সুযোগও পেয়েছিলেন। তার হেড করা বল অবশ্য দুর্দান্ত সেইভে মার্শেইকে বাঁচিয়েছেন লোপেজ। ৮৩ মিনিটে এমবাপেকে ফাঁকা পেয়ে বাড়িয়েছিলেন বল, কিন্তু উইলিয়াম সালিবার সময়মত ট্যাকেলে সেবারও হতাশ হতে হয় পিএসজিকে।

    ম্যাচের শেষ পর্যন্তই ছিল উত্তেজনা, ১০ জন নিয়ে খেলা পিএসজিকে একদম চেপে ধরেছিল আগ্রাসী মার্শেই। কিন্তু ড্র নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হলো দুই দলকে। কিন্তু বলার অপেক্ষা রাখে না, গোলশূণ্য ড্র’তেও রমরমা রবিবারের শেষ ম্যাচ অবশ্য ছিল যথেষ্ট বিনোদনপূর্ণ।