• ফুটবল, অন্যান্য
  • " />

     

    ট্যাকটিকসে হাতেখড়ি-৬ : 'জোন ১৪' এর অতল গহ্বরে

    ট্যাকটিকসে হাতেখড়ি-৬ : 'জোন ১৪' এর অতল গহ্বরে    

    ফুটবল মাঠকে ট্যাকটিক্যাল জোনে ভাগ করে সে অনুযায়ী খেলোয়াড়দের প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যাপারটা শুরু করেন কিংবদন্তী ম্যানেজার আরিগো সাচ্চি। সাচ্চি জোনাল মার্কিংয়ের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে চারটি পারিপার্শ্বিকতার ধারণা প্রথমবারের মতো অবতারণা করেন। সাচ্চির ভাষায়, "আমার খেলোয়াড়রা সবসময় চারটি পারিপার্শ্বিকতার দিকে খেয়াল রাখবে। বল, ফাঁকা জায়গা (স্পেস), প্রতিপক্ষ দলের খেলোয়াড়ের অবস্থান এবং নিজের দলের খেলোয়াড়দের অবস্থান।”

    সাচ্চি ফুটবল মাঠকে গোলবার থেকে গোলবার পর্যন্ত উল্ম্ব রেখা টেনে ৫টি ভাগে ভাগ করেন। বাম ও ডান উইং, বাম ও ডান অর্ধশুন্যভাগ (হাফ স্পেস) এবং মধ্যভাগ (সেন্টার)। পরবর্তীতে লুই ভ্যান হাল এই বিভাজনকে আরো খানিকটা বিস্তৃত করেন, ভ্যান হাল মাঠকে লম্বালম্বি তিনটি ভাগে ভাগ করেন - দুই উইং এবং সেন্টার। এবং আড়াআড়ি তিনি আরো ছয়টা দাগ টানেন। ফলে ফুটবল মাঠ ১৮টি আয়তক্ষেত্রে ভাগ হয়ে যায়। পরবর্তীতে স্পোর্টস সায়েন্সের গবেষকেরা ভ্যান হালের এই বিভাজনকে ভিত্তি ধরেই বিভিন্ন বিশ্লেষণ চালিয়েছেন এবং ট্যাকটিকস বোর্ডে এখনো এই ১৮টি জোনের বিভাজনই মানা হয়ে থাকে।

     

    সাচ্চির বিভাজন

     

    'জোন ১৪' কী এবং কীভাবে এলো?

    ২০০২ সালের মাঝামাঝির দিকে লিভারপুলের জন মুরস বিশ্ববিদ্যালয়ের স্পোর্টস সায়েন্সের অধ্যাপক টম রাইলি ঘোষণা দিলেন তিনি ফুটবল মাঠের ম্যাজিক স্পট আবিষ্কার করে ফেলেছেন, সে জায়গাটার নাম 'জোন ১৪'! কি জাদু আছে এই জায়গায়? এই 'জোন ১৪' নাকি এমন এক জায়গা যেখান থেকে আধুনিক ফুটবলের সবচেয়ে বেশি গোল এবং গোলের সুযোগ তৈরী হয়। ফুটবল মাঠে ডি বক্সের ঠিক সামনের জায়গাটাই জোন ১৪। প্রফেসর রাইলির ১৯৯৮ এবং ২০০২ বিশ্বকাপের সমস্ত ম্যাচের তথ্য উপাত্ত এবং পরিসংখ্যানের বিশ্লেষণ সেরকমটাই জবাব দিয়েছে।

    তখনকার ঝানু কোচ এবং ফুটবল বিশ্লেষকরা এই গবেষণা দেখে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলেন, আরে এ আবার নতুন কি! আসলেই নতুন নয়, কারণ রাইলি ফুটবল মাঠের যে জায়গাটাকে জোন ১৪ বলে চিহ্নিত করেছেন সেই একই জায়গা অনেক দিন ধরেই ফুটবল বিশ্বে ‘দা হোল’ বা গহ্বর নামে পরিচিত। টম রাইলির গবেষণার গুরুত্ব ছিল আসলে অন্য জায়গায়, তিনিই প্রথম নিয়মতান্ত্রিকভাবে ফুটবল মাঠকে ১৮টি জোনে ভাগ করেন, যা এখনো বেসিক ম্যানেজারিয়াল ট্রেনিংয়ের প্রথম পাঠ বলে বিবেচিত। আর ঋদ্ধ ম্যানেজারেরা যতই দাবী করুন তাঁরা ‘হোল’ সম্পর্কে জানেন, টম রাইলি এবং পরবর্তীতে তাঁর সহকর্মীদের গবেষণা 'জোন ১৪' সম্পর্কে ফুটবল প্রেমীদের ধারণা পুরোপুরি পরিবর্তন করে দিয়েছিল।

     

    ১৮টি জোন এবং 'জোন ১৪'

     

    ১৪ এর মাহাত্ম্য

    গবেষণালব্ধ ফলাফলে দেখা যায় একটি সফল ফুটবল দলের সাথে ১৪ং জমির ব্যবহার সরাসরি সম্পর্কিত। রাইলি তাঁর গবেষণাপত্রে ১৯৯৮ বিশ্বকাপ এবং ২০০০ এর ইউরোর তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে একটি সফল ফুটবল দলের চারটি অনন্য বৈশিষ্ট্য তুলে ধরেন -

    ১। জোন ১৪ এর আশেপাশের জোনগুলোতে(১১,১৩,১৭) সফল পাসের সংখ্যা অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি।

    ২। জোন ১৪ এর ভেতর থেকে বাইরে বের হওয়া এবং অন্য জোন থেকে 'জোন ১৪' এর ভেতরে আসা সফল পাসের সংখ্যা অন্যান্য দলের তুলনায় বেশি।

    ৩। জোন ১৪ এর ভেতর বল আদান-প্রদানের হার অন্যান্য দলের তুলনায় বেশি।

    ৪। জোন ১৪-তে ফিরে পাওয়া বলের দখল থেকে গোলের সুযোগ তৈরী করবার হার অন্যদের থেকে বেশি।

     

    এই চারটি বৈশিষ্ট্যের সবচেয়ে বড় উদাহরণ ফ্রান্স জাতীয় দল (১৯৯৮-২০০০)। তাদের ঐ সময়কার সকল অ্যাসিস্টের ৮১.৩% এসেছে 'জোন ১৪' থেকে। এবং শতকরা ৮৫.৬ ক্ষেত্রে গোলে শট নেওয়া হয়েছে ঐ 'জোন ১৪' থেকেই! আরেকটি বড় উদাহরণ হল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড (১৯৯৮-১৯৯৯)। ট্রেবল জেতা সেই মৌসুমে ইউনাইটেডের সিংহভাগ গোল এসেছে ঐ 'জোন ১৪' থেকেই, অ্যাসিস্টের মাধ্যমে।


    আরো পড়ুনঃ

    ট্যাকটিকসে হাতেখড়ি-৪ঃ একজন শূন্যসন্ধানী বা 'রমডয়টারের' গল্প


     

    কীভাবে 'জোন ১৪' কে কাজে লাগানো যায়? 

    বাস্তব জগতের যুদ্ধে যেমন এলাকা দখলের ব্যাপার আছে, তেমনি বোঝাই যাচ্ছে যে, ফুটবল মাঠে যারা ১৪নং এলাকাটার দখল নিতে পারবে তারাই যুদ্ধ জয়ের সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনা তৈরী করতে পারবে। কিন্তু কীভাবে এই দখলটা নেওয়া যায়? মার-মার-কাট-কাট করে নিশ্চয়ই নয়! মনে রাখা ভাল যে, দখল নেওয়া বলতে বোঝানো হচ্ছে ‘হোল’ এর ভেতর বলের দখল নেওয়া, বল ছাড়া সৈন্য সামন্ত নিয়ে পাহারা দেওয়া নয়!

    টম রাইলির গবেষণা থেকে এই জোনকে সবচেয়ে ভালভাবে ব্যবহার করার ব্যাপারে কিছু চমৎকার তথ্য উপাত্ত পাওয়া যায়। যেমন, একটি খুব সাধারণ প্রশ্ন সকলের মনেই আসবে, জোন ১৪ থেকে বল কোন দিকে যাবে? সফল দলগুলোর পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখা যায় যে, আক্রমণাত্মক খেলা এবং বলের ফরোয়ার্ড পাসিং হচ্ছে 'জোন ১৪' থেকে সবচেয়ে বেশি গোল এবং গোলের সুযোগ তৈরী করে দেয়।

    এর মানে হচ্ছে একবার ১৪নং অঞ্চলে বলের দখল পেলে খেলোয়াড়ের উচিৎ বল ওয়াইড চ্যানেলের দিকে না ঠেলে সামনের দিকে বাড়ানো। কারণ পরিসংখ্যান বলে, ১৪নং থেকে উইং এর দিকে বাড়ানো পাস থেকে মাত্র ২৬% সুযোগ শেষ পর্যন্ত গোলে পরিণত হয় যেখানে ডি-বক্সের দিকে বাড়ানো পাসের ক্ষেত্রে এই সম্ভাবনা প্রায় ৪৮%! তবে এর মানে কিন্তু ক্রস করা খারাপ তা কিন্তু নয়।

    'জোন ১৪' এর মতো ক্রসও গোলের আরেকটি নির্ভরযোগ্য উৎস। যেখানটায় সমস্যা সেটা হল, ১৪নং এলাকায় বল নিয়ে আসার পর সেখান থেকে বল উইংয়ের দিকে বাড়িয়ে ওয়াইড চ্যানেলে পরিবর্তন করাটা ফলপ্রসু নয়। 'জোন ১৪'-তে আপনার পায়ে যদি বল থাকে, তাহলে সবচেয়ে লাভজনক পদক্ষেপ হবে বল সামনে এগিয়ে দেওয়া, পাশে বা পেছনে নয়।

     

    স্পেনের পাসিং এর টার্গেট সবসময়ই জোন ১৪

    আর্সেনালের জোন ১৪ তে ফরোয়ার্ড পাসিং

     

    আরেকটা সাধারন জিজ্ঞাসা হতে পারে, বল কতক্ষণ ১৪নং এলাকায় থাকবে? এই প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে, গড়ে ২.৭ সেকেন্ড বা তার কম সময়ের জন্য যদি বল 'জোন ১৪'-তে থাকে, তবে সেখান থেকে গোল বা গোলের সুযোগ তৈরী হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। এর থেকে বেশি সময় কাটালে গোল হওয়ার সম্ভাবনাও হ্রাস পেতে থাকবে।

    ৮ সেকেন্ডের বেশি সময় ধরে যদি বল ১৪নং স্টেশনে কাটায় তবে গোলের সম্ভাবনা চলে যাবে শূন্যের কোঠায়। কাজেই 'জোন ১৪'-কে দক্ষভাবে ব্যবহার করতে হলে দ্রুত বল সামনে বাড়াতে হবে। ডি-বক্সের আশেপাশে যত বেশি সময় ধরে বল ঘুরপাক খাবে বলের জালে জড়ানোর সম্ভাবনা ততই কমবে।

     

    জোন ১৪ থেকে যত দ্রুত বল আগানো যাবে গোলের সম্ভাবনা ততই বাড়বে

     

    আরো একটা ফলপ্রসু কৌশল হতে পারে হাই প্রেসিং। ১৪নংএ যদি হাই প্রেসিং করে কোন দল বলের দখল ফেরত পেতে পারে তবে গোলের সম্ভাবনা আরো বেড়ে যাবে। ইউর্গেন ক্লপের 'হেভি মেটাল গেগেনপ্রেসিং' এই নীতিতে বিশ্বাসী ছিল; তাঁর উত্তরসূরী থমাস টুশ্চেলও একই কাজ করে যাচ্ছেন ডর্টমুন্ডে। বল ছাড়াই ১৪নং এর আশেপাশে অ্যাটাকারদের দিয়ে প্রেসিং করালে তৎক্ষণাৎ বল ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা বহুগুণে বেড়ে যায়। এবং আপনার অস্ত্রাগারে যদি রবার্ট লেফানডফস্কি বা পিয়েরে এমেরিক অবামায়াং এর মতো গতিময় ফরোয়ার্ড থাকে, তাহলে প্রতিপক্ষ কিছু বুঝে ওঠার আগেই বল জাটকা মাছের মতো গোলের জালে আটকা পড়ে যেতে বাধ্য। 

     

     

    ১৪নং এলাকায় গেগেনপ্রেসিং


    আরো পড়ুনঃ

    ট্যাকটিকসে হাতেখড়ি-২ঃ গেগেনপ্রেসিং


    আর যদি প্রতিপক্ষের রক্ষণের কারণে ১৪নং এলাকা দুর্ভেদ্য দেয়াল হয়ে যায়, তখন? হ্যাঁ, এই সম্ভাবনা সবসময়ই থাকে যে প্রতিপক্ষের নিশ্ছিদ্র শৃংখলা এবং রক্ষণকৌশলের কারণে 'জোন ১৪' ফরোয়ার্ডদের জন্য উত্তর কোরিয়ার মতো ব্রাত্য জায়গা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ, সত্য বলতে কি সব দলে লিওনেল মেসি, আগুয়েরো, সুয়ারেজ, হাজার্ডদের মতো খেলোয়াড় থাকে না, যাঁরা একক দক্ষতায় এই বহুল আকাংক্ষিত জোনটিকে নিজের করে নিতে পারেন। সেক্ষেত্রে দুটো করণীয় হতে পারে, দলের প্লেমেকার 'জোন ১৪'-তে বল ধরে রাখবেন যাতে করে তার স্ট্রাইকার রক্ষণের পেছন থেকে পাস রিসিভ করার জন্য সঠিক সময়ে তার দৌড় শুরু করতে পারেন। নিজের দলের খেলোয়াড়দের মাঝে সামঞ্জস্য বা যথেষ্ট স্কিল না থাকলে অবশ্য এই পন্থা কাজ করবার সুযোগ কম।

    আর সব শেষে তো সব টোটকার রাজা আছেই। সেন্ট্রাল চ্যানেলে রক্ষণের জটলা বেশি থাকলে ওয়াইড চ্যানেল ব্যবহার করো, উইং দিয়ে লাগামহীন ভাবে দৌড়ে ডি-বক্সে ক্রস হাঁকাতে থাকো, দেখবে স্ট্যান্ড থেকে স্যার ফার্গি মুচকি হাসছেন!

     

    জোন ১৪ তে বল হোল্ড করে রাখা বার্গক্যাম্পের সবচেয়ে বড় গুণগুলোর একটা

     

     

    আরো একটা ঝামেলা হতে পারে, যদি আপনার দলের নাম্বার ১০ এমনই মার্কামারা খেলোয়াড় হন, যার পেছনে প্রতিপক্ষ ম্যানেজার রেলগাড়ির বগির মতো দুই-একজন ডিফেন্ডার সবসময় ঝুলিয়ে রাখবেন এটা নিশ্চিত। সেক্ষেত্রে আপনার প্লেমেকার কোনো বল পাবে না বা পেলেও সেটা জায়গামতো পাঠাতে পারবে না। 'জোন ১৪'-তে জটলা করে বিপক্ষ নাম্বার ১০-কে মার্ক করা যে কতটা ভালভাবে খাটানো যায় সেটা হোসে মরিনহো তার ইন্টার মিলানকে নিয়ে করে দেখিয়েছেন, তার শিকার ছিল মেসির বার্সেলোনা।

    এক্ষেত্রে তাহলে কি করা যায়? আধুনিক যুগের ম্যানেজাররা হাল আমলের সকল কাজের পারদর্শী ফুটবলারদের দিয়ে এই কৌশলেরও চাবিকাঠি বের করে ফেলেছেন। যে কারণেই আধুনিক ফুটবলে এসেছে ‘ফলস ১০’ বলে নতুন একটি পজিশন, যার সম্পর্কে পরবর্তী লেখায় বিস্তারিত আলাপ করা যাবে।

     

    কারা 'জোন ১৪' এর খেলোয়াড়?

    'জোন ১৪' নিয়ে এত গবেষণার আগেও দলের সবচেয়ে বুদ্ধিদীপ্ত খেলোয়াড়দেরই এই গহবরের দায়িত্ব দেওয়া হতো। এই ১৪নং স্টেশন মূলত 'নাম্বার ১০'-দের খেল দেখানোর জায়গা। রিভালদো, রবার্তো ব্যাজ্জিও, জিনেদিন জিদান, রোনালদিনহো বা ডেনিস বার্গক্যাম্পের মতো ত্রেকার্তিস্তা বা অ্যাডভান্সড প্লেমেকারদের কাজ হল এই ছোট্ট ভূমিখন্ড থেকে ম্যাচের ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ করা। অপরদিকে রক্ষণভাগে সেন্টারব্যাকদের কাজ হল বিপক্ষের মার্কা মারা খেলোয়াড়দের এই জায়গায় পা রাখতে না দেওয়া। হালের কূটিনহো, মেসুত ওজিল, ইসকো, মিখতারিয়ান, অস্কার, হামিস রদ্রিগেজ এরাই ম্যাচের ভাগ্য বদলে দেন। 'জোন ১৪'-কে কীভাবে কাজে লাগাতে হয় সেটা উদাহরণসহ ব্যাখ্যা করেছিলেন জিনেদিন জিদান ‘৯৮ বিশ্বকাপ ও ‘০০ ইউরোতে।  

    জিদানদের আমলে যেটা করা হতো সেটা হলো, 'জোন ১৪' এর নায়ক হিসেবে একজন প্লেমেকারকে দায়িত্ব দিয়ে দেওয়া। এই একমাত্রিক কৌশলের সমস্যাটা হল, দল যদি ঐ প্লেমেকারের দক্ষতার ওপর খুব নির্ভরশীল থাকে, সেক্ষেত্রে প্রতিপক্ষ রক্ষণের কাজটা অনেকটাই সোজাসাপ্টা হয়ে যায়। কিন্তু পেপ গার্দিওলা এই কৌশলে একটা নতুন মাত্রা দিলেন। তাঁর বার্সার খেলায় 'জোন ১৪' এর দায়িত্বে থাকতেন তিনজন - লিওনেল মেসি, আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা এবং জাভি হার্নান্দেজ। এক্ষেত্রে একজন ঝামেলায় পড়লে অন্যেরা আগু পিছু করে তাঁদের পজিশন সমন্বয় করে নিতে পারতেন।

    সাধারণত 'জোন ১৪' এর দায়িত্বে থাকা খেলোয়াড় অ্যাটাকিং থার্ডে দলের মূল ডিসিশান মেকার, কিন্তু পেপের বার্সায় এই ডিসিশান মেকিং বোর্ডে যুক্ত হলেন আরো দুইজন। যার পায়ে বল থাকবে সে-ই সিদ্ধান্ত নেবেন সামনে পাস যাবে কি, শুট হবে বা ড্রিবল করে ডি-বক্সে যাওয়া হবে। বাকি দু'জন তাঁদের মুভমেন্টের মাধ্যমে বল পায়ের ভদ্রলোককে (মেসি) জায়গা করে দেবেন, একজন ওয়াইড চ্যানেলের দিকে সরতে থাকবেন (ইনিয়েস্তা) আর অপরজন নীচে নেমে আসবেন (জাভি)। এটা সব দলেই হয়, কিন্তু পেপ যেটা করলেন ব্র্যাকেটের ভেতরের নামগুলোকে অদলবদল করার স্বাধীনতা দিলেন এবং সেই স্বাধীনতার ফলাফল? বার্সার ট্রফি কেস ঘুরে আসুন।

     

    জোন ১৪ এলাকায় তিনজনের সুবিধা যেভাবে নেয় বার্সেলোনা
     


    আরো পড়ুনঃ

    ট্যাকটিকসে হাতেখড়ি-৫ঃ লেস্টার জলসায়


    'জোন ১৪' নিয়ে অতীতেও বিস্তর গবেষণা হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে। প্রতিনিয়তই ম্যানেজাররা ১৪ নং এলাকা থেকে সর্বোচ্চ গোলের সুযোগ আদায় করা বা এর রক্ষণকৌশলের নতুন নতুন মাত্রা বিশ্ববাসীকে দেখিয়ে যাচ্ছেন। 'জোন ১৪' নিয়ে চিন্তাভাবনার ফলশ্রুতিতেই ফুটবলে ফলস নাইন, ইনভার্টেড উইঙ্গার, ত্রেকার্তিস্তা, ফলস টেন পজিশনগুলোর আগমন। এই এক খন্ড জমিন থেকে কত অতিমানবীয় মুহূর্ত তৈরী করে চিরকালের জন্য ফুটবলপ্রেমীদের মনে ছাপ ফেলে দেওয়া যায় সেটা যুগে যুগে প্রতিভাবান খেলোয়াড়েরা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে আসছেন। ফুটবলে পজেশন অনেক বড় ব্যাপার, কিন্তু সেই পজেশনকে কাজে লাগাতে হলে 'জোন ১৪' এর কাস্টমস পার করতে হবে - এটাই মূল কথা। 

     

    'জোন ১৪' ও হামেস রদ্রিগেজ

     


    তথ্যসূত্রঃ

    1. BBC Sport, 2012. Euro 2000: The French Revolution [digital image] [viewed 17 August 2013]. Available from: http://news.bbcimg.co.uk/media/images/60195000/jpg/_60195604_81575581.jpg

    2. GRANT, A. & WILLIAMS, M., 1999. Analysis of the Final 20 matches played by Manchester United in the 1998-99 season. Insight, 1(3), 42-44

    3. GRANT, A., 2000. Ten Key Characteristics of Successful Team Performance. Insight, 3(4), 26-27

    4. GRANT, A., T. REILLY, M. WILLIAMS & A. BORRIE, 1998b. Analysis of the Successful and Unsuccessful Teams in the 1998 World Cup. Insight, 2(1), 21-23

    5. HORN, R. & M. WILLIAMS, 2002. A Look Ahead to World Cup 2002: What Do the Last 40 Years Tell Us?Insight, 5(2), 26-29

    6. HORN, R., M. WILLIAMS & A. GRANT, 2000. Analysis of France in World Cup 1998 and Euro 2000. Insight, 4, 40-43

    7. HORN, R., WILLIAMS, M., & ENSUM, J., 2002. Attacking in Central Areas: A Preliminary Analysis of Attacking Play in the 2001/2002 F.A. Premiership Season. Insight, 5(3), 31-34

    8. Rascojet, 2011. Zidane [digital image] [viewed 17 August 2013]. Available from:http://www.rascojet.com/blog/wp-content/uploads/2011/01/Zidane.jpg

    9. Sawh, M., 2010. manchester_united_1999 [digital image] [viewed 17 August 2013]. Available from:http://sackthemanager.files.wordpress.com/2012/01/manchester_united_1999_cham.jpg

    10. TAYLOR, S., J. ENSUM & M. WILLIAMS, 2002. A Quantitative Analysis of Goals Scored. Insight, 5(4), 28-31

    11. The FA, 2013. dennis-bergkamp-testimonial [digital image][viewed 17 August 2013]. Available from:http://www.thefa.com/~/media/Images/TheFAPortal/News%20Articles/2013/dennis-bergkamp-testimonial.ashx?w=620&h=349&c=facupgallery&as=1

    12. THE TELEGRAPH, 2002. Scientists find football’s golden square [online]. Available from:http://www.telegraph.co.uk/sport/football/3028353/Scientists-find-footballs-golden-square.html

    13. Leo Chan Performance Analysis Blog