• পাকিস্তানের বাংলাদেশ সফর
  • " />

     

    লিটন-মুশফিকে বাংলাদেশের সোনালী বিকেল

    লিটন-মুশফিকে বাংলাদেশের সোনালী বিকেল    

    ১ম টেস্ট, চট্টগ্রাম (টস- বাংলাদেশ/ ব্যাটিং)
    বাংলাদেশ ২৫৩/৪, ৮৫ ওভার (লিটন ১১৩*, মুশফিক ৮২*, হাসান ১/৩৮, ফাহিম ১/৩৮, আফ্রিদি ১/৫০)
    ১ম দিন, স্টাম্পস

     

    একজনকে সম্ভবত টি-টোয়েন্টি থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্যই বিবেচনার বাইরে ছুঁড়ে ফেলা হয়েছে, আরেকজনকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধেই বাদ দেওয়া হয়েছে সদ্য সমাপ্ত টি-টোয়েন্টি সিরিজ থেকে। হোক ফরম্যাট ভিন্ন, কিন্তু জবাব দিলেন দুজনেই, ব্যাট হাতে। দলকে খাদের কিনারা থেকে উদ্ধার করে দুজনেই গড়েছেন অসামান্য জুটি, বাংলাদেশকে দিন শেষে বসিয়েছেন চালকের আসনে। লিটন কুমার দাসের ১১৩* ও মুশফিকুর রহিমের ৮২* রানে বাংলাদেশ দিন শেষ করেছে ২৫৩ রানে।

    অন্য দুই ফরম্যাটে লিটনকে বিবর্ণ মনে হলেও টেস্টে এই বছরটা কেটেছে বেশ ভালো, প্রায় ৫৫ গড়ে রান করেছেন তিনি। কিন্তু ঐ যে সেই একই সমস্যা এখানেও-মননশীলতার অভাব। দারুণ গতিতে ছুটছেন তো এই হুট করে ছেদ পড়ল মনঃসংযোগে; পাওয়া হচ্ছে না বড় কোনও ইনিংস। ক্যারিয়ারজুড়েই নিজের সামর্থ্যের প্রতি সুবিচার করতে না পারা লিটনের ২০২১ সালের টেস্ট পারফর্ম্যান্সটা যেন তার পুরো ক্যারিয়ারেরই প্রতিফলন। তবে এই ফরম্যাটে অন্তত অর্জন করতে পেরেছিলেন ধারাবাহিকতা। তার ফল অবশেষে পেলেন পাকিস্তানের বিপক্ষে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে, মৃদু শীতের পরশে।

    সেই বহুল আরাধ্য টেস্ট সেঞ্চুরির জন্য মুশফিককে লিটন ধন্যবাদ দিতেই পারেন। লাঞ্চের পর মুশফিকের সপ্রতিভ ইনিংস লিটনকে দিয়েছিল স্বস্তি, দিয়েছিল নিজের স্বভাবজাত খেলা খেলে যাওয়ার সাহস। মুশফিক নিজেও যে তেঁতেই ছিলেন। টি-টোয়েন্টি থেকে বাদ পড়ার আক্ষেপটা তিনি লুকাননি। তবুও মাঠে জবাব দেওয়ার জন্য নিশ্চয়ই ছিলেন বদ্ধপরিকর। অতীতে বহুবার দলের ত্রাণকর্তার ভুমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। এদিনও সেই পরিচিত দৃশ্যপটে মুশফিক তাই ধরা দিলেন নিজের পরিচিত রুপেই। শুরুর বিপর্যয় সামলেছেন, মাটি কামড়ে পড়ে থেকেছেন প্রথম সেশন। তবে পাকিস্তানের হয়ে নৌমান আলী খান ও সাজিদ খান যখন দুই প্রান্ত থেকে আক্রমণে এলেন তখন মুশফিক বেরিয়ে এলেন খোলস থেকে। সেই যে বের হলেন এরপর আর ফিরে তাকাননি, কোনও সুযোগ সেই অর্থে দেননি।

    সুযোগ অবশ্য দিয়েছিলেন লিটন। ৬৭ রানে থাকার সময় শাহীন শাহ আফ্রিদির খাটো লেংথের বলে সপাটে ব্যাট চালিয়ে মিড উইকেটে থাকা সাজিদের হাতে সরাসরি ক্যাচ তুলে দেন। ক্যাচ তো সাজিদ লুফে নিতে পারেনই নাই, উল্টো মিস করেছেন সেখান থেকে রান আউটেরও সুযোগ। বোলিং প্রান্তে অনেকটাই দৌড়ে বের হয়ে আসা মুশফিক ফিরতে পারতেন সেখান থেকে সরাসরি থ্রোতে। পরের বলেই লিটনকে মুহূর্তের জন্য তাড়া করে ফিরেছিল পুরনো ভূত। মিড অনে সরাসরি বল ঠেলে দিয়ে তেড়েফুঁড়ে সিঙ্গেল নিয়েছিলেন; সরাসরি থ্রো স্টাম্পে লাগলে ঐ ৬৭ রানেই ফিরতে হত তাকে। সেই স্নায়ুচাপ আবারও তাকে পেয়ে বসে গিয়ে ৯৯ রানে। সেটা অবশ্য কিছুটা প্রত্যাশিত ছিলই, প্রথম সেঞ্চুরির সুবাস পাচ্ছিলেন যে। বল ঠেলে দিয়েই কঠিন এক সিঙ্গেল নিয়েছিলেন; তবে ভাগ্য যে বীরদের পক্ষেই থাকে তারই প্রমাণ মিলল লিটনের সেঞ্চুরি পূরণে, পেয়ে গেলেন তার সোনার হরিণ-প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরির দেখা।

    লিটন-মুশফিকের বদৌলতে লম্বা সময় পরে বাংলাদেশের ক্রিকেট দেখল ভালো ব্যাটিং। তবে শুরুটা ছিল ঠিক ততটাই গোলমেলে যতটা বর্ণালী ছিল এই দুজনের জুটি। বাংলাদেশের ছন্নছাড়া ব্যাটিংয়ের মুখোশ উন্মোচন করে পাকিস্তানি বোলাররা আরও একবার মেতেছিলেন উল্লাসে। বল করতে আসা চার বোলারের কেউই তখন ফেরেননি খালি হাতে। সাইফ হাসানকে নিয়ে টি-টোয়েন্টি সিরিজের পর কথা তো কম হল না। তারই জবাব দিতেই হয়ত ব্যাট চালাচ্ছিলেন সমানে, ১৪ রান করে ফেলেন ১১ বলেই। তবে দিনের প্রথম কোনও বাউন্সার ব্যাটসম্যান বরাবর গেলেই থামেন সাইফ। আফ্রিদির বাউন্সারে পাকিস্তানের সাজানো ফাঁদে পড়ে তিনি ফেরেন ১৪ রানেই। ১৪ সংখ্যাটা যেন প্রথম সেশনে সেই থেকেই অভিশপ্ত হয়ে গেল। সাদমান ইসলাম ও নাজমুল হোসেন শান্ত এরপর ফিরলেন সেই ১৪ রানেই।

    অষ্টম ওভারে হাসান আলীর বলে অফ স্টাম্পের ওপর সরে এসে খেলতে গিয়ে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়েন সাদমান। সাত ওভার পরে সাজিদের অফ ব্রেকে পরাস্ত হয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন চট্টগ্রামের মাঠে রাজত্ব করা বাংলাদশ অধিনায়ক মুমিনুল হক। বহুদিন ক্রিকেটের বাইরে থাকায় ব্যাটিংয়ে কিছুটা মরচে পড়েছে বলেই মনে হল। বলে ছিল তীক্ষ্ণ ঘূর্ণি; তবে অফ স্টাম্পের বাইরের সেই বল হয়ত ছন্দে থাকা মুমিনুল খেলতেন না। সে যাই হোক, বিপদ আরও বাড়িয়ে পরের ওভারের ফাহিম আশরাফের লাফিয়ে ওঠা বলে কাট করে সরাসরি পয়েন্টে থাকা সাজিদের হাতে তুলে দেন শান্ত। ৪৯ রানেই ৪ উইকেট হারিয়ে দিশেহারা বাংলাদেশকে যখন আরও এক লজ্জায় ডোবানোর কৌশল ফাঁদছিল বাবর আজমরা তখনই বাঁধ সেধে বসেন বিতর্কের বাণে বিদ্ধ লিটন-মুশফিক, গড়েন ২০৪ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি। আলোকস্বল্পতার কারণে আগেভাগেই শেষ হওয়া দিনটা তাই তারা করে রেখেছেন একান্তই বাংলাদেশের।