• পাকিস্তানের বাংলাদেশ সফর
  • " />

     

    তাইজুলদের স্বপ্নের শুরুর পর দুঃস্বপ্নের শেষ প্রহর

    তাইজুলদের স্বপ্নের শুরুর পর দুঃস্বপ্নের শেষ প্রহর    

    ১ম টেস্ট, চট্টগ্রাম (টস- বাংলাদেশ/ ব্যাটিং)

    বাংলাদেশ ৩৩০ ও ৩৯/৪, ১৯ ওভার (সাইফ ১৮, মুশফিক ১২*, ইয়াসির ৮*, আফ্রিদি ৩/৭৬, হাসান ১/১৯)

    পাকিস্তান ২৮৬, ১১৫.৪ ওভার (আবিদ ১৩৩, শফিক ৫২, ফাহিম ৩৮, তাইজুল ৭/১১৬, এবাদত ২/৪৭, মিরাজ ১/৬৮)

    ৩য় দিন, স্টাম্পস 


    তৃতীয় দিনে বল হাতে যেমন দিন চেয়েছিল বাংলাদেশ তার প্রায় সবটুকুই করে দেখিয়েছে; কিন্তু ব্যাট হাতে পরে স্বল্প যেটুকু সময় খেলার সুযোগ হয়েছে সেটুকু কেটেছে ততটাই খারাপভাবে। তাইজুল ইসলামের ৭ উইকেটে ৪৪ রানের লিড পেয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু দিন শেষ করেছে ৪ উইকেট খুইয়ে। 

    চার উইকেট বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে খুইয়েছিল ৪৯ রানে। এবার তা হল স্কোরবোর্ডে ২৫ রান তুলতেই। শাহীন শাহ আফ্রিদি যেন একেবারে যমদূত রুপে দেখা দিলেন। ৫ম ওভারে নিলেন ডাবল উইকেট মেইডেন। সাদমান ইসলামের এলবিডব্লিউটা নিয়ে সাদমান অবশ্য কিছুটা হতাশ হতেই পারেন। আম্পায়রস কলের কারণে বল ট্র্যাকিংয়ে লেগ স্টাম্প আলতো ছুঁয়ে যাওয়ায় সাদমানকে ফিরতে হয়েছে ১ রানে। তবে এক বল পরে নাজমুল হোসেন শান্তর উইকেটে সেসব চিন্তাভাবনার অবকাশ ছিল না। অফ স্টাম্পের সামান্য বাইরের বলে খোঁচা মেরে রানের খাতা খোলার আগেই প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন শান্ত। পরের ওভারে অধিনায়ক মুমিনুল হকও ফেরেন রানের খাতা খোলার আগেই; হাসান আলীর বল মিড অনের মাথার ওপর দিয়ে বাউন্ডারির খোঁজ করতে গিয়ে সেখানে থাকা আযহার আলীর হাতে সরাসরি ক্যাচ তুলে দেন।

    উইকেটে আসা মুশফিকুর রহিমের সাথে সেই ঝড় সামলে আরেক প্রান্তে টিকে ছিলেন সাইফ হাসান। তবে আফ্রিদি ঝড়ে কিছুক্ষণ পরেই পতন ঘটে তারও। আবারও আফ্রিদির বাউন্সারে কাবু সাইফ; এবার তাকেই ফিরতি ক্যাচ দিয়ে তিনি ফেরেন ১৮ রানে। ইয়াসির আলীকে নিয়ে এরপর সেই ঝড় সামলেছেন মুশফিক। ইয়াসিরও দেখিয়েছেন দৃঢ়তা। দুজনে উইকেটে থেকে দিন শেষ করলেও দুঃস্বপ্নময় সেশনের রেশ কাটাতে বেশ বেগ পেতেই হবে বাংলাদেশকে।  

    শেষ সেশনটা দুঃস্বপ্ন হয়ে থাকলেও দিনের শুরুটা বাংলাদেশের হয়েছিল স্বপ্নের মত। প্রথম ওভারেই তাইজুল ইসলাম হানেন জোড়া আঘাত। আব্দুল্লাহ শফিককে কিছুটা দ্রুত গতির আর্ম বলে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেললে ভাঙে ১৪৬ রানের ওপেনিং জুটি। শফিক ৫২ রানে ফেরার পরের বলেই দারুণ অফ ব্রেকে পুরোপুরি পরাস্ত হয়ে এলবিডব্লিউর শিকার হন আযহার আলী। আবিদ আলীর সাথে বেশ সাবধানেই এগিয়ে যাচ্ছিলেন পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর আজম। কিন্তু মেহেদি হাসান মিরাজের দারুণ এক বলে স্টাম্প খুইয়ে তিনিও ফেরেন ১০ রানে। উইকেট এসে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি ফাওয়াদ আলমও। তাইজুলের ভাসিয়ে দেওয়া বল তীক্ষ্ণ টার্ন নিয়ে ভেতরে ঢুকলে ব্যাটে বলে করতে হিমশিম খান তিনি। বল উইকেটের পেছনে চলে গেলে দারুণ রিফ্লেক্স দেখিয়ে বল গ্লাভসে লুফে নেন লিটন। ফাওয়াদ রিভিউ নিলেও বল ব্যাটেই লেগেছিলও দেখা যায়। দারুণ প্রথম সেশনে ৪ উইকেট তুলে নিয়ে পাকিস্তানকে মোটে ৫৮ রান করতে দিয়েছিল বাংলাদেশ। 

    লাঞ্চের দুই ওভার পরই আবারও এলবিডব্লিউ! শিকারি এবার এবাদত হোসেন আর শিকার মোহাম্মদ রিজওয়ান। অন্য প্রান্ত আগলে উইকেট মাটি কামড়ে তখনও পড়েছিলেন আবিদ। এর আগে দিয়েছিলেন হাফ চান্স। তাইজুলের বলে এবার দিলেন শর্ট লেগে থাকা ইয়াসির আলীকে পূর্ণ সুযোগই। সে সুযোগ লুফে নিতে না পারলেও হতাশায় ডোবার কোনও সুযোগ রাখেননি তাইজুল। এক বল পরেই তাকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন; আবিদ থামেন ১৩৩ রানে। উইকেটে এসে এরপর তাইজুলের ওপর চড়াও হওয়ার চেষ্টা করেন হাসান আলী। চার-ছয়ের পর সেই লড়াইয়ে শেষ হাসি হাসেন তাইজুলই। হাসান স্টাম্প ছেড়ে বের হয়ে আসবে আঁচ করেই বল দিলেন ভাসিয়ে; হলও তাই। ফলাফল হাসানের স্টাম্পড হয়ে ফিরে যাওয়া, তাইজুল পেয়ে যান টেস্ট ক্যারিয়ারের ৯ম ৫-উইকেটের দেখা। 

    তাইজুল মাঠে যেমন অক্লান্ত স্পেলের ফল পেয়েছেন, অন্য প্রান্তে টানা দারুণ লেংথে বল করে যাওয়া এবাদতও শেষাংশে এসে তার পরিশ্রমের ফল পেয়েছেন। কিছুক্ষণ পরেই সাজিদ খানের স্টাম্প উড়িয়ে দেন তিনি। তাইজুল নামক মানুষরুপী যন্ত্র তখনও চলছিলেন অবিরাম; টানা লেংথ বজায় রেখে ব্যাটারদের গলদঘর্ম করে রেখেছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় নৌমান আলীকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন। শাহীন শাহ আফ্রিদিকে নিয়ে ফাহিম আশরাফ এরপর প্রতিরোধ গড়ে তোলেন, তুলে ফেলেন গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু রান। তবে থামতে হয়ে সেই তাইজুলের কাছেই। লেগ স্টাম্পের ওপর ভাসানো বল ফাহিম আলতো ছোঁয়ায় উইকেটের পিছে ঠেলে দিতে গেলে অসাধারণভাবে বল গ্লাভসবন্দি করেন লিটন। তাইজুল পেয়ে যান ৭ উইকেট, বাংলাদেশকে এনে দেন ৪৪ রানের লিড। স্বপ্নের মত দুটা সেশন কাটালেও দুঃস্বপ্নময় শেষ সেশনে দিনটা তাই আর বাংলাদেশের হয়ে থাকেনি। সাম্যাবস্থায় শেষ হলেও পাকিস্তান যেমন সকালটা কাজে লাগানোর জন্য মুখিয়ে থাকবে তেমনই বাংলাদেশকে আরও একবার তাকিয়ে থাকতে হবে উইকেটে থাকা মুশফিকুর রহিমের দিকেই; সেই সাথে অভিষিক্ত ইয়াসির আলীকেও করতে হবে বিশেষ কিছুই।