• ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ
  • " />

     

    ছয় গোলের থ্রিলারের পর পেনাল্টিতে লিভারপুলের শেষ হাসি; সেমিতে পা চেলসি-স্পার্সেরও

    ছয় গোলের থ্রিলারের পর পেনাল্টিতে লিভারপুলের শেষ হাসি; সেমিতে পা চেলসি-স্পার্সেরও    

    ইএফএল কাপের কোয়ার্টার ফাইনাল রাউন্ডে লিভারপুল-লেস্টার সিটি ম্যাচ ছিল যেন বারুদে ঠাসা! ৯০ মিনিটেও শেষ হয়নি সে রোমাঞ্চ; গড়িয়েছে পেনাল্টিতে। ১৩ মিনিটে ২-০ গোলে পিছিয়ে থাকা লিভারপুলই শেষ পর্যন্ত ঘুরে দাঁড়িয়েছিল মূল খেলায়; পেনাল্টিতেও শেষ হাসি তাদের। লেস্টার সিটির আশা চূর্ণ করে ২০১৬-১৭ সালের পর প্রথমবারের মত ইএফএল কাপের সেমিফাইনালে চলে গিয়েছে লিভারপুল। অন্যদিকে চেলসি আর টটেনহামও পা রেখেছে লিগ কাপের সেমিতে

     

    লিভারপুল ৩-৩ লেস্টার সিটি (৫-৪ পেনাল্টি; লিভারপুল সেমিতে)

    দুইদিন আগেই টটেনহামের সঙ্গে এন্ড টু এন্ড রুদ্ধশ্বাস এক ম্যাচ খেলে এসেছে লিভারপুল; যাকে নিঃসন্দেহে বলা যেতে পারে এই মৌসুমের সেরা ম্যাচ। নিরপেক্ষদের আনন্দ দিলেও লিভারপুল বস ইউর্গেন ক্লপের জন্য তা মোটেও স্বস্তির নয়; মাত্র দুইদিনের মাথায় লেস্টারের সঙ্গে কোয়ার্টার ফাইনাল খেলার ব্যাপারে যথেষ্ট ‘বিরক্ত’ ছিলেন তিনি। তার বিরক্তির পারদ আরও চড়ে যায় ‘ভার্ডি-পার্টি’র উদযাপনে। ম্যাচ শুরুর ১৩ মিনিটের মধ্যেই অ্যানফিল্ডে পিন পতন নীরবতায় ডুবে যায় ভার্ডির জোড়া গোলে। দুই সেন্টার ব্যাক জুটি মাতিপ আর কোনাতেকে রীতিমত ঘোল খাইয়ে লেস্টারকে দারুণ শুরু এনে দেন এই ইংলিশ স্ট্রাইকার। তবে ম্যাচে ফিরতে খুব একটা সময় নেয়নি লিভারপুল। ক্রমাগত ফরোয়ার্ড প্রেসিং থেকে দারুণ এক স্ট্রাইকে গোল করেন অক্সালেড-চেম্বারলেইন। 

    কিন্তু লিভারপুলের জন্য যেন সব আশার প্রদীপ নিভে যায় জেমস ম্যাডিসনের বক্সের বাইরে থেকে দুর্দান্ত এক ফিনিশিংয়ে। লিভারপুল গোলকিপার কুইমিন কেলেহারের সে শট ঠেকানোর কোন অবস্থাই ছিল না। নির্ভার থেকে দ্বিতীয় হাফ শুরু করলেও পাল্টাতে শুরু করে পরিস্থিতি। রজার্সের লেস্টারের জন্য মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছিল দ্বিতীয়ার্ধে বদলি হিসেবে নামা ডিয়োগো জটা ও রবার্তো ফিরমিনোর জুটি। ৬৮ মিনিটে ডিয়োগো জটার দুর্দান্ত এক গোলে আবারও যেন প্রাণ ফিরে পায় ক্লপের লিভারপুল

    ম্যাচে অতিরিক্ত সেন্টার ব্যাক নামিয়ে খেলা স্থবির রাখতে চেয়েছিলেন সাবেক লিভারপুল ম্যানেজার ব্রেন্ডন রজার্স। কিন্তু লিভারপুলের মূহর্মুহ আক্রমণ আর প্রেসিং ঝড় দুঃসাধ্য হয়ে যাচ্ছিল লেস্টারের জন্য। তবুও ম্যাচের ৯৩ মিনিটে মনে হচ্ছিল; আবারও কোয়ার্টারেই শেষ হতে যাচ্ছে লিভারপুলের যাত্রা

    হলো না তাকুমি মিনামিনোর জন্য। জেমস মিলনারের ক্রস পায়ে নিয়ে চমৎকার এক লো ভলিতে ৩ গোলে পিছিয়ে থেকেও সমতা এনেই ফেলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত টাইব্রেকারে গড়ায় ম্যাচ; যেখানেও অপেক্ষা করছিল চমক।

    প্রথম তিন সুযোগে গোল পায় দুই দলই। চতুর্থ চেষ্টায় লুক থমাসের শট ঠেকিয়ে দেন লিভারপুলের দ্বিতীয় গোলকিপার কেলেহার। পঞ্চম পেনাল্টিতে গোল করলেই সেখানে জিতে যায় লিভারপুল। ৯৩ মিনিটে গোল করা সেই মিনামিনোই কীনা বল মারলেন পোস্টে। সাডেন ডেথে গিয়ে আবার রায়ান বার্ট্রান্ডের শটও ঠেকিয়ে দেন কেলেহার। পরবর্তী শটে জোটা গোল করে এনে দেন লিভারপুলের জন্য ‘প্রায় অসম্ভব’ এক জয়। এমন জয়ে দলীয় সবার অবদান থাকলেও শেষ অঙ্কে এসে ম্যাচের নায়ক আইরিশ গোলকিপার কুইমিন কেলেহারই! ইএফএল কাপ সেমিফাইনালে লিভারপুলের প্রতিদ্বন্দ্বী আগের দিন সেমি নিশ্চিত করা আর্সেনাল।

     

    ব্রেন্টফোর্ড ০-২ চেলসি 

    বিটলসের ‘হেই জুড’ এর তালে মাতোয়ারা ব্রেন্টফোর্ড কমিউনিটি স্টেডিয়ামের দর্শকদের জন্য উদযাপনের উপলক্ষ্য হতে পারত ব্রেন্টফোর্ডের যেকোন গোল। শুধু সে উদযাপনের উপলক্ষ্যটুকু আসেনি। পুরো ম্যাচে বলের দখল রেখেছিল চেলসি, তবে গোলে ভালো সুযোগ তৈরি করে যাচ্ছিল ব্রেন্টফোর্ড। 

    ফুটবলের ফলাফল মাঝে মাঝে বিভ্রান্তও করে। কোভিড আর ইনজুরিতে জর্জরিত চেলসির ফর্ম বর্তমানে নিম্নমুখী। আক্রমণের ফাইনাল থার্ডে চেলসি প্রথমার্ধে ছিল একেবারেই নিষ্প্রভ। অ্যাকাডেমির খেলোয়াড়দের নামালেও সিনিয়ররা ভালো করতে পারছিলেন না শুরুতে। অন্যদিকে ব্রেন্টফোর্ডের তিনটি ভালো সুযোগ ঠেকিয়ে দিয়ে চেলসিকে ম্যাচে নিরাপদ রাখেন কেপা আরিসাবালাগা। ব্রায়ান এমবুয়েমোর হেডার একেবারে গোলমুখ থেকে ঠেকান তিনি।

    দ্বিতীয়ার্ধে আর ঝুঁকি নিতে চাননি টুখেল। একে একে নামেন ক্রিস্টিয়ান পুলিসিক, মেসন মাউন্ট, কানতে, রিস জেমসরা। তাদের উপস্থিতিতে আক্রমণে বাড়ে ধার; আর এমন এক পরিস্থিতিতে রিস জেমসের ক্রস ক্লিয়ার করতে গিয়ে উল্টো নিজেদের জালে জড়িয়ে দেন ব্রেন্টফোর্ড ক্যাপ্টেন পয়ন্টাস ইয়ানসন। আর ৮৫ মিনিটে ব্রেন্টফোর্ড কিপার আলভারো ফারনান্দেজ বক্সে পুলিসিককে ফাউল করলে পেনাল্টি পায় ব্লুজরা। সেখান থেকে গোল করে চেলসির সেমি নিশ্চিত করে মাঠ ছাড়েন জর্জিনিয়ো। সেমিতে চেলসির প্রতিদ্বন্দ্বী টটেনহাম।

     

    টটেনহাম ২-১ ওয়েস্ট হাম

    কোয়ার্টার ফাইনালে লন্ডন ডার্বি। প্রথম থেকেই টের পাওয়া যাচ্ছিল আঁচ। প্রথমার্ধে ২৮ থেকে ৩৩ মিনিটের মধ্যেই চলে আসে তিন গোল। হয়েবিয়ে-বার্গওয়াইনের ওয়ান-টু থেকে ম্যাচের প্রথম ডেডলক ভাঙ্গে ডাচ ফরোয়ার্ডের গোলে। কিন্তু ঠিক তিন মিনিটের মাথায় জ্যারড বাওয়েনের গোলে সমতায় ফেরে হ্যামার্সরা। আবার ঠিক দুই মিনিট পরই লুকাস মউরার গোলে এগিয়ে যায় কন্তের দল।

    ডেভিড ময়েসের ওয়েস্ট হাম প্রথমার্ধে আরোও দুইটি গোল পেত যদি টমাস সুচেকের দুইটি সুযোগ নষ্ট না হত। দ্বিতীয়ার্ধে ভ্লাসিচের নেওয়া গোলে শট গিয়ে লাগে ক্রসবারে; তবে শেষ পর্যন্ত আর কোন গোল না খেয়েই বাকি সময়টুকু পার করে দেয় কন্তের স্পার্স। দায়িত্ব নেওয়ার পর এখন পর্যন্ত অপরাজিত কন্তের টটেনহাম সেমিতে মুখোমুখি হবে নগর প্রতিদ্বন্দ্বী টুখেলের চেলসির।