• ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ
  • " />

     

    'বিতর্কিত' সব সিদ্ধান্তে আর্সেনালের স্বপ্নভঙ্গ আর সিটির জয়োল্লাস

    'বিতর্কিত' সব সিদ্ধান্তে আর্সেনালের স্বপ্নভঙ্গ আর সিটির জয়োল্লাস    

    নতুন বছরটা ম্যান সিটি আর পেপ গার্দিওলার জন্য হতে পারত দুঃস্বপ্নময়। বল পজেশন হারিয়ে বলের পেছনে ছোটা, গোল খেয়ে ম্যাচে ফেরার প্রাণান্ত তাড়া, নিষ্প্রভ ফরোয়ার্ড লাইন- এসব বর্ণনা পেপের সিটির সঙ্গে একেবারেই যায়না। তবে নতুন বছরের প্রথম দিনের ব্লকবাস্টার ম্যাচের জন্য অপেক্ষা করছিল অন্য এক ‘নাটক’। উলটো ম্যাচ রেফারিই হয়ে উঠলেন ম্যাচে উড়তে থাকা আর্সেনালের জন্য দুঃস্বপ্ন। ভিএআর, পেনাল্টি, কার্ড বিতর্কের আর শেষ মুহূর্তে রদ্রির আচমকা গোলে সিটিই আর্সেনালকে হারালো ১-২ গোলে।

    কে বলবে- এই আর্সেনালকেই মৌসুমের শুরুতে ৫ গোলে ডুবিয়েছিল পেপ গার্দিওলার ম্যান সিটি। প্রিমিয়ার লিগ টেবিলের তলানীতে ধুকতে থাকা আর্সেনাল আর আগের মত নেই। আরতেতা বাহিনী রীতিমত শাসন করে উঠে এসেছে প্রিমিয়ার লিগের চার নম্বর স্থানে। এমিরেটসে প্রথমার্ধে সেই তীব্র ঝাঁঝটাই সিটিকে বুঝিয়ে দিচ্ছিল গানাররা। প্রথম ৪৫ মিনিট বল পজেশনে দাপট রেখেও কোন পাত্তাই পেল না সিটি; উলটো ৩১ মিনিটে গোল করে আর্সেনালকে এগিয়ে নেন ২০ বছর বয়সী বুকায়ো সাকা।

    চমতকার এক মৌসুম কাটছে তরুণ এই মিডফিল্ডারের। আর গোলটাও এসেছে আর্সেনাল ম্যাচের মিডফিল্ড ডমিনেট করার ফলে। সেন্ট্রাল স্পেস থেকে মার্টিন ওডেগার্ডের বল দারুণ এক ডায়াগনাল পাসে সাকার কাছে পাঠান কিইরান টিয়ের্নি। ওয়ান টাচে দারুণ এক ফিনিশিংয়ে এদেরসনকে ফাঁকি দিয়ে সাকা বল পাঠান জালে।

    প্রথমার্ধে সিটির পরিসংখ্যান রীতিমত বিস্ময়কর! অক্টোবরের পর এই প্রথম তারা ম্যাচে গোল খেল। আর আর্সেনাল সিটির বিপক্ষে ম্যাচে প্রথম গোল পেয়েছে ঠিক সাত বছর পর! এমনকি, আর্সেনালের গোলে কোন শটও নিতে ব্যর্থ হয় পেপের শিষ্যরা। পুরো মাঝমাঠে দাপট রেখে সিটিকে রীতিমত আউটপ্লে করছিল আর্সেনাল। থমাস পার্টে-ওডেগার্ড-জাকার ইন্টারসেপশনে রদ্রি কিংবা দুই ফুলব্যাক থেকে বল পাচ্ছিলেন না সিটির ফরোয়ার্ডরা। উলটো ফ্ল্যাংকের বিপজ্জনক জায়গায় বল পজেশন জিতে সিটির ব্যাকলাইনের ঘাম ছুটিয়ে দিচ্ছিলেন সাকা আর মার্টিনেলি।

    সব কিছুই আর্সেনালের পক্ষে ছিল। দৃশ্যপট পুরোটাই বদলে গেল দ্বিতীয়ার্ধে। না, সিটির কোন খেলোয়াড়ের চমকপ্রদ প্রদর্শনীতে নয়; এ ম্যাচের চিত্রনাট্য পুরো ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেল রেফারি স্টুয়ার্ট অ্যাটওয়েলের কারণে। ৫৫ মিনিটে গ্রানিট জাকা বেরনাদো সিলভার জার্সি টেনে ধরায় বক্সের ভেতর পড়ে যান সিলভা। প্রথম দেখায় বেশ ‘সফট’ হলেও ভিএআর চেকে পেনাল্টি দেওয়ার মতই অপরাধ মনে হয়েছে অ্যাটওয়েলের। পেনাল্টি দেয়ার সিদ্ধান্ত ঠিক হলো কি হলো না সেটা বোঝার আগেই পেনাল্টি স্পট মুছে দেওয়ার অভিযোগে হলুদ কার্ড দেখেন গ্যাব্রিয়েল মাগলায়েশ। রিয়াদ মাহরেজের পেনাল্টিতে ম্যাচে অবশেষে সমতায় ফেরে ম্যান সিটি।

    নাটক কেবল জমতে শুরু করেছে। আরেকটু হলেই মিনিট দুইয়েকের মাঝে আত্মঘাতী গোল দিয়ে বসছিলেন লাপোর্তে। নাথান আকে ক্লিয়ার করায় বেঁচে যায় সিটি। পরমুহূর্তেই জেসুসকে ধাক্কা দিয়ে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে বসেন গ্যাব্রিয়েল; তবে সেই ধাক্কা হলুদ কার্ড দেওয়ার মত অপরাধ ছিল কীনা সে নিয়েও চলেছে মাঠে তর্কবিতর্ক। এরপরও শুধু রেফারির সঙ্গে কথা বলে কার্ড দেখেছেন বুকায়ো সাকা।

    শেষ অঙ্কের নাটকটা অবশ্য আর্সেনালের জন্য করুণ। দশজন নিয়েও সিটিকে চেপেই ধরে রেখেছিল আরতেতার দল। মার্টিনেলির দুর্দান্ত এক শট বাইরে দিয়ে না গেলে  দ্বিতীয় গোলটা প্রায় হয়েই গিয়েছিল আর্সেনালের। ম্যাচের ৯১ মিনিটে এলো সেই ক্লাইম্যাক্স। আর্সেনালের বক্সে তুলনামূলক ফাঁকা পেয়ে লাপোর্তের বাড়ানো বল আলতো ছুয়ে আর্সেনালের জালে পাঠিয়ে উদ্যাম উল্লাসে মেতে উঠেন রদ্রি। অন্যদিকে এমিরেটসের দর্শকরাও বুঝিয়ে দিয়েছে এই ম্যাচ নিয়ে নিজেদের প্রতিক্রিয়া। একের পর এক বোতল এসে পড়েছে মাঠে; জোর চিতকারে রেফারিকে দেওয়া হয়েছে দুয়োধ্বনি। 

    এরপর ম্যাচে আর ফেরা হয়নি আর্সেনালের; নতুন বছরে দারুণ এক শুরু করেও পেতে হয়েছে ম্যাচ হারের তেতো স্বাদ। আর লিগ টেবিলে ৫৩ পয়েন্ট নিয়ে শিরোপার স্বপ্ন আরোও জোরালোভাবে দেখতে শুরু করতে পারেন এখন পেপ গার্দিওলা।