• বাংলাদেশের নিউজিল্যান্ড সফর
  • " />

     

    রস টেলর: প্রশান্তপাড়ে এক ক্রিকেট সাধক

    রস টেলর: প্রশান্তপাড়ে এক ক্রিকেট সাধক    

    সময়টা ১৯৯০। নিউজিল্যান্ডে পড়ন্ত শীতের সন্ধ্যা নেমে গেছে আগেই। ওয়াইরারাপা এলাকার এক ইনডোরে চেয়ারে দাঁড়িয়ে, বোলিং মেশিনে একের পর এক বল দিয়েই যাচ্ছেন মধ্যবয়সী ডারমট পেটন। কার্পেটের উইকেটের অপর প্রান্তে একেকটা বল প্রচন্ড জোরে খেলছিল ছোট্ট এক সামোয়ান বালক। মাঝ ব্যাটে লেগে আওয়াজটাও হচ্ছিল দারুণ। 

    তা দেখে পেটন রীতিমতো অভিভূত। 

    প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটার ছিলেন পেটন। ১২ বছরের সেই ক্যারিয়ারে নতুন বলের মুখোমুখি হতেও এতটা ভয় পাননি; যতটা পাচ্ছিলেন চেয়ারে দাঁড়িয়ে সেই সামোয়ান বালকের খেলা একেকটা স্ট্রেইট ড্রাইভের পর। 

    ক্রিকেট ছাড়ার পর কৃষিকাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন পেটন। তবে ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসায় ভাটা পড়েনি। নিখাদ সেই ভালোবাসা থেকেই নিউজিল্যান্ডের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের অনেক শিশু-কিশোরদের হাতে ব্যাট-বল তুলে দিয়েছেন তিনি। সেই কচিকাঁচাদের আসরে আলাদা করে নজর কেড়েছিল সামোয়ান বংশোদ্ভূত ছোট্ট ছেলেটা।।

    কখনোই প্র্যাকটিস সেশন বাদ না দেয়া সেই সামোয়ান ছেলেটার গুণমুগ্ধ ছিলেন পেটন। না হওয়ার কারণও ছিল না। অতটুকু বয়সেই শট সিলেকশনের মুন্সিয়ানায়, পেটনের প্রিয়পাত্র হয়ে ওঠে সে। কখনো বলেও দিতে হয়নি পেটনের, ‘এই শটটা এভাবে খেলো।’

    তবে আলাদা করে বলেছেন, ইনডোরে যেন স্ট্রেইট ড্রাইভ না খেলে, ‘ওর হাতে নিজের জীবন আমি বাজি রাখতে পারি। কিন্ত এত জোরে বল পেটাত! ওকে স্ট্রেইট ড্রাইভ খেলতে মানা করে দিই এরপর।’

    অফস্টাম্পের বাইরের ফুল লেন্থের ডেলিভারিতে কভার ড্রাইভ। একই লেন্থের বল লাইনে পিচ করলে অন ড্রাইভ। খানিকটা উঁচু হয়ে আসা ওয়াইডিশ বলগুলোতে সজোরে স্কয়ার কাট। এসব দেখে পেটন মনে করেননি, তাকে নতুন করে শেখানোর কিছু আছে। সামোয়ান সেই ছেলে, নতুন করে অনেক কিছুই শিখেছে পরবর্তীতে। পাড়ি দিয়েছে লম্বা একটা পথ। 

    দীর্ঘ সেই পথে হাঁটার শুরুটা ইনডোরেই। মূল দরজা বন্ধ করে, ঘন্টার পর ঘন্টা তাকে নিয়ে পড়ে থেকেছেন পেটন। বোলিং মেশিনে দিয়েছেন একের পর এক বল। দেখতে চেয়েছেন তার শিষ্য কতখানি পথ পেরোতে পারে। তবে বল পেটানোতে যতটা সিদ্ধহস্ত, কথা বলায় ততটাই অস্বস্তি সেই ছেলের। 

     

    ***

    লাজুক, চুপচাপ, অন্তর্মুখী ছেলেটার নাম লুটেরু রস পৌটোয়া লোটে টেলর। এত বড় আর জটিল নাম নিয়ে বেশ বেকায়দাতেই পড়তে হয়েছে তাকে। সেখান থেকে কাটছাঁট করে রস টেলর। অবশ্য এই নামকরণের নেপথ্যে বেশ মজার একটা গল্পও আছে। 

    স্কুলের প্রথমদিনই নাম বিভ্রাট। মা ও দাদির সাথে গিয়েছেন স্কুলের প্রিন্সিপালের কাছে। বয়স্ক প্রিন্সিপাল তার সেই নাম উচ্চারণই করতে পারছিলেন না। বেশ কয়েকবার চেষ্টার পর উপায়ান্তর না দেখে, তাকে রস বলে ডাকার সিদ্ধান্ত স্কুল কর্তৃপক্ষের। তখন থেকেই রস হিসেবে তার পরিচিতি। 

    জন্মেছেন ওয়েলিংটনে। বাবা নিল টেলর পুরোপুরি নিউজিল্যান্ডার। মা অ্যান পলিনেশিয়ান; সামোয়ান অধিবাসী। পলিনেশিয়া-নিউজিল্যান্ডের এই সেতুবন্ধনের স্মারক যেন তার নামটাও।  

    ওয়েলিংটনে জন্মালেও বড় হয়েছেন মাস্টারটনে। সামোয়ান ভাষাও ভালোই বলেন। ২১,০০০ জনসংখ্যার সেই ছোট্ট শহরের ছিল না  আলাদা কোনো জৌলুশ, কিংবা কোনো পর্যটন খাত। টেলরের সেই শহর থেকে অবশ্য পিটার জ্যাকসন, জেমস ক্যামেরনের মতো সিনেমা পরিচালকরা উঠে এসেছেন। 

    মায়ের দিক থেকে টেলরের নাগরিকত্ব সামোয়ান। সে হিসেবে নিউজিল্যান্ডের হয়ে টেলরের আগে সামোয়ানদের প্রতিনিধিত্ব করেছেন কেবল মারফি সু’আ। কিউইদের হয়ে ১২ টেস্ট খেলেছেন বাঁহাতি এই স্পিনার। এর পেছনে অন্যতম কারণ হচ্ছে, পলিনেশিয়ানদের ক্রিকেট বিমুখতা।  ক্রিকেটের চেয়ে রাগবি, নেটবল খেলা বেশি প্রাধান্য পেত। যে কারণে তৃণমূল থেকেও উঠে আসেনি ক্রিকেটের  তেমন কোনো প্রতিভা। 

    টেলরের ক্যারিয়ারও মোড় নিতে পারত সেদিকেই। ক্রিকেটের পাশাপাশি খেলতেন হকিও। কিন্তু একসাথে হকি আর ক্রিকেট সরঞ্জামের খরচা চালানো মুশকিল হয়ে পড়েছিল। ত্রাতা হয়ে এলেন তার দাদা-দাদি। টেলরের যাবতীয় ক্রিকেতীয় খরচ তারাই চালিয়েছেন এরপর। 

    টেলর তখন ১৫ বছরের কিশোর। পড়তেন ওয়ারিরাপা কলেজে। ওয়েলিংটনে তখন শুরু হয় অনূর্ধ্ব-১৫  ক্রিকেট টুর্নামেন্ট। নিজের কলেজের হয়ে সেই টুর্নামেন্টে করেন টানা দুই সেঞ্চুরি। তখনই উঠতি ক্রিকেট প্রতিভা হিসেবে চারদিকে তার নামডাক ছড়ায়। সিদ্ধান্ত হয় আরো ভালো একটা কলেজে ভর্তি করে দেয়ার, যেখানে ক্রিকেটের আনুষাঙ্গিক সকল সুবিধা পাওয়া যাবে।

    কিশোর টেলরের নতুন ঠিকানা পালমারস্টোন নর্থ বয়েজ হাই স্কুল। ওখান  থেকেই পাশ করেছেন জ্যাকব ওরাম, ম্যাথু সিনক্লেয়ার, জেমি হাউয়ের মতো ক্রিকেটাররা। 

    নতুন স্কুল তো হলো। কিন্তু ছোট শহর থেকে উঠে আসা টেলরের জন্য মানিয়ে নেয়াটা একটু কষ্টকরই ছিল। একে তো লাজুক, সাথে নতুন পরিবেশ। টেলরের  ত্রাণকর্তা হয়ে এলেন পল গিবস, নব্বই দশকের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটার। তারই তত্বাবধানে, স্কুলের সেরা একাদশে জায়গা হয় টেলরের। দুই মৌসুম খেলেই স্কুলের অনার্স বোর্ডে নাম লেখান চারবার, চার সেঞ্চুরিতে। 

    *************

    স্কুল ক্রিকেটে টেলরের শেষ মৌসুম। জিলেট কাপের সেমিফাইনালে টেলরদের প্রতিপক্ষ ডানেডিনের কিংস হাই স্কুল। ডানেডিনের হয়ে খেলছিলেন ব্রেন্ডন ম্যাককালাম। তখনই দুজনের প্রথম দেখা। পরবর্তীতে জাতীয় দলে খেলেছেন একসাথে। 

    স্কুল জীবনে টেলরের কাছের বন্ধু ছিলেন জ্যারড স্মিথ। সাবেক কিউই ক্রিকেটার ও বর্তমান ধারাভাষ্যকার ইয়ান স্মিথের ছেলে। এই জ্যারডই ২০০৩ সালে টেলরকে ক্রিকেট কিটের স্পন্সরশিপ পাইয়ে দেন। 

    ক্রিকেট ক্যারিয়ারে টেলরের সবচেয়ে কাছের বন্ধু কে? উত্তরটা হচ্ছে মার্টিন ক্রো।  স্পন্সর ম্যাকগোল্ডরিকের 

    আমন্ত্রণে টেলরের খেলা দেখতে যান ক্রো। নিউজিল্যান্ডের সেরা ব্যাটসম্যানদের একজন।  সেই ম্যাচে টেলরের ব্যাটে  ১৪ বলে ১০ রান। আউটও হন, মারতে গিয়ে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে।  

     

    তবে সম্পর্ক দানা বাঁধতে সময় নেয়নি। হাঁটুর ইঞ্জুরিতে নিজের ক্যারিয়ার খুব একটা বড় হয়নি ক্রোর। তবে টেলরের সঙ্গে নিজের টেকনিক্যাল জ্ঞান ভাগাভাগি করতে কার্পণ্য করেননি। আক্রমণাত্মক ব্যাটিং টেলরের স্বভাবজাতই ছিল। গড়বড় হচ্ছিল রক্ষণে। সবার আগে টেলরের ডিফেন্সেই ছিল ক্রো’র নজর। 

    ক্রিকেটের প্রথম ধাপ; প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে টেলরের পা হড়কালেও, জাতীয় দলের হয়ে ঠিকই নিজেকে জানান দিয়েছেন আলাদা করে। অনেকেরই শংকা ছিল, এমন চুপচাপ স্বভাবের টেলর ড্রেসিংরুমে টিকতে পারবেন কিনা? সব উত্তর দিয়েছেন ব্যাট হাতেই। 

    ক্যারিয়ারের তৃতীয় টেস্টেই  প্রথম সেঞ্চুরি। ওয়ানডে পেতেও সময় লেগেছে তিন ম্যাচ। মজার ব্যাপার হচ্ছে, ওয়ানডেতে প্রথম সেঞ্চুরির উত্তেজনায় পানি খেতেই ভুলে গেছিলেন টেলর। সেই রাতটা আনন্দে কাটানোর বদলে শুয়ে ছিলে নেপিয়ারের হাসপাতালে।  

    জিম্বাবুয়ে সফরে গিয়ে নেট প্র্যাকটিসে ইঞ্জুরড হন টেলর। সামনে ছিল অস্ট্রেলিয়া সফর। যেতে হয় ডাক্তারের ছুরি-কাঁচির নিচে। কঠিন সেই সময়ে, টেলর পাশে পেয়েছেন মার্টিন ক্রোকেই। ক্রোর কাছ থেকে পাওয়া ই-মেইলের পর টেলর বুঝেছিলেন, পরিস্থিতি অনুযায়ী জীবন কীভাবে বদলায়। 

    টেলরকে এখনো ছুঁয়ে যায় ক্রোর সেই ই-মেইল। টেলরের ইচ্ছা আছে, যদি কখনো আত্মজীবনী লেখেন, ক্রোর সেই ইমেইলটাও থাকবে সেখানে। 

    টেলর জানেন জীবন বদলায়। সদ্য সমাপ্ত ক্রাইস্টচার্চ টেস্টই হয়ে রইল সবচেয়ে বড় প্রমাণ। 

     

    ***.

    বাউন্ডারি রোপ পেরোতে না পেরোতেই, প্যাডজোড়া ‘এডজাস্ট’ করে নিতে উইকেটের দিকে ধীর গতির দৌড়।  চলতি পথেই বার দুয়েক ফরোয়ার্ড ডিফেন্সের শ্যাডো। পুরো হ্যাগলি ওভাল তখন উল্লাস করছে তার জন্য। দর্শকরা দাঁড়িয়ে তালি বাজাচ্ছেন। দর্শক সারিতে তিন সন্তানের সাথে ছিলেন টেলরের  স্ত্রী ভিক্টোরিয়াও। 

    ক্যামেরার ফ্রেম মাঠে ফেরালে দেখা যায়, ‘গার্ড অব অনার’ দিতে, অধিনায়ক মুমিনুল হকের নেতৃত্বে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা দাঁড়িয়ে গেছেন মুখোমুখি দুই সারিতে। 

    সকল আয়োজনের কেন্দ্রবিন্দু টেলর। ক্রাইস্টচার্চে জীবনের শেষ টেস্টটা খেলতে নেমেছেন। পুরো ম্যাচটাই স্মরণীয় হয়ে রইল তার জন্য। ক্রিকেট যেন সকল আয়োজনই করে রেখেছিল এই কিউই কিংবদন্তির বিদায়ের। ‘গার্ড অব অনার’, উল্লসিত হ্যাগলি ওভাল, ব্যাট হাতে ২৮ রান, ম্যাচ জয়ী শেষ উইকেটটাও তার; সব মিলিয়ে টেস্ট ক্রিকেটে টেলরের শেষটা হয়েছে ‘পিকচার পারফেক্ট’।

    ২০০৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে হয়েছিল টেস্ট অভিষেক। টেলর থেমেছেন নিজ দেশে  ২০২২ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে। প্রায় ১৫ বছর বয়সী বর্ণাঢ্য এক ক্যারিয়ার। পুরো এই সময়টাতে কত উত্থান-পতন দেখেছেন। কত চ্যালেঞ্জের মুখেই না পড়েছেন। অপ্রাপ্তি হয়তো একটা বিশ্বকাপ, প্রাপ্তির খাতায়ও কম লেখা হয়নি  । আছে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের গদাটাও। 

    পাওয়া-না পাওয়ার হিসেব তো চুকেই গেছে প্রায়। বিশাল ক্যারিয়ারের শেষ পাতার শেষ লাইনটাতে দাঁড়ি বসানোর অপেক্ষায় আছেন টেলর। কদিন আগে প্রেস কনফারেন্সে বলেছেন, আরো কয়টা ওয়ানডে খেলে সব ধরনের ক্রিকেটকেই বিদায় জানাবেন। 

    সবচেয়ে বেশি টেস্ট (১১২)  আর ওয়ানডে (২৩৩) খেলেছেন দেশের হয়ে। দুই ফরম্যাটেই সর্বোচ্চ রানের মালিক তিনি। (টেস্ট-৭৬৮৩ রান), (ওয়ানডে ৮৫৬১)। তার চেয়ে বেশি টি-২০ খেলেছেন কেবল মার্টিন গাপ্টিল। তবুও তিন ফরম্যাট মিলিয়ে কিউইদের কালো ক্যাপটা মাথায় চাপিয়ে সবচেয়ে বেশিবার মাঠে নেমেছেন টেলরই। 

    নিউজিল্যান্ডের চার নম্বর ব্যাটিং পজিশনটা ছিল তার জন্য স্থায়ী। পারফর্ম্যান্সও করেছেন গোটা ক্যারিয়ারজুড়ে।  ব্যাটিং নিয়ে তার ভাবনা, দর্শন; আর দশজন ব্যাটসম্যানের কিপ ইট সিম্পল’ তত্ত্বে বিশ্বাসী হলেও, বিশেষ কিছু তো ছিলই। 

    টেলরের ভাষ্য, ‘ধারাবাহিক হতে চাইলে প্রথম ২০-৩০টা বল টিকে থাকাই মূল চ্যালেঞ্জ। নিজের ডিফেন্সে ভরসা করে ওই ৩০টা বল খেলতে পারলেই, ব্যাটিং অনেক সহজ হয়ে যায়। হোক সেটা ফ্ল্যাট, স্পিনিং কিংবা সিমিং উইকেট। এভাবে খেলতে খেলতে একটা পর্যায়ে অভ্যস্ত হয়ে যাবেন। তবে মাঝে মাঝে এমনও হয়, আপনি ভালো ফর্মে আছেন, কিন্তু রাতে ঘুম হলো না। এর প্রভাবটা পড়বে আপনার ব্যাটিংয়ে। কখনো তো এমনও হয়, ব্যাটিংয়ের জন্য ছয় ঘন্টা বসে থেকে, মাঠে গিয়ে ভালো করতে পারলেন না। আবার ছন্দে না থেকে, আউট সাইড এজে দুটা চার মেরেও ভেতরে কিছু একটা জেগে ওঠে।’

     

    ঘটনাচক্রে টেলরের কাঁধে অধিনায়কের দায়িত্বও ওঠেছিল। ২০১১ সালে ড্যানিয়েল ভেট্টোরি স্বেচ্ছায় অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিলে নতুন করে দায়িত্ব পান ম্যাককালাম। যদিও তখন সহ-অধিনায়ক ছিলেন টেলর। 

    নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেটার, বোর্ড সদস্যরাও দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছিলেন তখন। কোচ জন রাইটের কর্তৃত্বের বিপক্ষে ক্রিকেটাররা চাইছিলেন এমন একজনকে, যিনি তাদের হয়ে কথা বলবেন। ম্যাককালাম তাই এগিয়ে ছিলেন। বিপরীতে নির্বাচক, কোচ চাইছিলেন টেলরকে। যদিও বছরখানেক পর অধিনায়ক হন টেলরই। 

    দুই বছর টেলরের অধীনে ১৪ টেস্টের চারটা জিতেছে নিউজিল্যান্ড। ২০ ওয়ানডেতে ছয় জয়ের বিপরীতে আছে ১২টি হার। টি-টোয়েন্টিতে ১৩ ম্যাচের ছয়টায় জিতে, চারটায় হার। টাই হয়েছে দুইটি, ফলাফল আসেনি একটিতে।  বোর্ড-নির্বাচকরা ভরসা রাখতে পারেননি টেলরের ওপর। 

    অধিনায়ক হিসেবে ভরসা না জিতলেও, চার নম্বর পজিশনে কিউইদের ব্যাটিং ভরসা ছিলেন টেলরই। রেকর্ডস, পরিসংখ্যান তো সেই কথাই বলে।

    টিম সাউদি-ট্রেন্ট বোল্টরা চাচ্ছিলেন দীর্ঘদিনের সহযোদ্ধাকে দারুণ একটা বিদায় দিতে। অধিনায়ক ট ল্যাথামের ভাবনাও ছিল এক। স্কোরবোর্ডে বাংলাদেশের নয় উইকেট দেখে টেলরের হাতে বল তুলে দেন তিনি। সময়ের হিসেবে প্রায় এক যুগ পর টেস্ট ক্রিকেটে বল করেছেন টেলর। এবাদত হোসেনকে আউট করেছেন, দল ম্যাচ জিতেছে তার বলেই।  

    মাঠ ছেড়েছেন সবার আগে। হাত নেড়ে দর্শক-সমর্থকদের ভালোবাসার জবাব দিতে দিতে। হ্যাগলি ওভালের সবুজ প্রান্তর থেকে ধীরে ধীরে চলে গেলেন ড্রেসিংরুমে। টেলর চিরতরে হারিয়ে গেলেন ক্রিকেটের শুভ্রতা, শুদ্ধতার প্রতীক; টেস্ট ফরম্যাটের আঙিনা থেকে। 

    মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টের চতুর্থ দিন দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করছিলেন টেলর। ডিপ ফাইন লেগের পেছনের গ্যালারিতে একটা প্ল্যাকার্ড নিয়ে এসেছিলেন দুই সমর্থক। টেলরকে ডি-ফোকাস করে তোলা সেই ছবিতে দেখা গেছে  সামোয়ান ভাষায় লেখা, ‘AROHA NUI, ROSS’ 

     

    বাংলায় যেটার মানে হয় , ‘অনেক ভালোবাসা, রস’।  

    রস টেলর তো এই কাজটাই করে গেছেন। আনন্দদায়ী ব্যাটিংয়ে সৌরভ ছড়িয়ে গেছেন ২২ গজে, আর বিনিময়ে পেয়েছেন এমন অকৃত্রিম ভালোবাসা।