• আফ্রিকান নেশন্স কাপ
  • " />

     

    আফকন রঙ্গ- ক্যামেরুনের হুঙ্কার; ঘানার বিদায়

    আফকন রঙ্গ- ক্যামেরুনের হুঙ্কার; ঘানার বিদায়    

    ইউরোপিয়ান লিগগুলোর মাঝেও চলছে অন্যতম বড় মহাদেশীয় টুর্নামেন্ট আফকন। ক্যামেরুনে ৯ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে আফ্রিকা কাপ অফ নেইশন্সের ৩৩ তম আসর। ২০২১ সালে হবার কথা থাকলেও কোভিড জটিলতায় ২০২১ আফ্রিকান কাপ অফ নেইশন্স নামেই বসেছে এবারের আসর। যারা খেলা দেখছেন, কিংবা দেখছেন না- শুধুমাত্র সোশ্যাল মিডিয়া ফিডে খোঁজখবর রাখার চেষ্টা করছেন, তারাই জানেন যে এবারের আসর হয়ে উঠেছে উপভোগ্য আর জমজমাট! এবারের আসরের স্বাগতিক ক্যামেরুনের দাপট চোখে পড়ার মত। অন্যদিকে আসরের আগে ধরে নেওয়া ফেভারিটরা খেয়েছে হোঁচট। আলজেরিয়ার আছে বাদ পড়ার শংকা। মিশরের জন্যও রাউন্ড অফ সিক্সটিনের পথটা সুগম নয়। আর আসরের অন্যতম জায়ান্ট ঘানা তো বাদই পড়ে গেল নিজেদের গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচ হেরে। শেষ ষোল শুরু হওয়ার আগে তাই আফকনের বর্তমান হালচাল জেনে নেওয়া যাক-

     

    ক্যামেরুনের ‘লঙ্কাকাণ্ড’, রেকর্ড ভাঙ্গার পথে ভিনসেন্ট আবুবাকার

    আফ্রিকান কাপ অফ নেইশন্সে ক্যামেরুনকে টুর্নামেন্টের অন্যতম বর্ণাঢ্য দল বললে ভুল কিছু হবে না। ২০১৭ আফকনের চ্যাম্পিয়নরা এবার খেলছে চ্যাম্পিয়নদের মতই। গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচে বুরকিনা ফাসোকে হারিয়ে তারা শুরু করে তাদের এবারের ক্যাম্পেইন। পরের ম্যাচে আরও আগ্রাসী আফ্রিকান ‘লায়ন্স’র; ইথিওপিয়াকে তারা হারায় ৪-১ গোলে, আর নিশ্চিত করে শেষ ষোল’র টিকিট। 

    আফকনে ক্যামেরুনের হয়ে নিজের জাত চেনাচ্ছেন তাদেরই ক্যাপ্টেন ভিনসেন্ট আবুবাকার। পোর্তোর সাবেক এই স্ট্রাইকার আফকনের মঞ্চ উজ্জ্বল করেছেন গ্রুপ পর্বেই পাঁচ গোল করে। তার দৃষ্টি এখন এক আসরে সর্বোচ্চ সংখ্যক গোল করার রেকর্ডের দিকে; ৩৮ বছর আগে এক আসরে নয় গোল করে যে রেকর্ড গড়েছিলেন জায়ারের দায়ে মুলাম্বা। টুর্নামেন্টে সবচেয়ে বেশি গোলে শট নিয়েছেন এই আবুবাকার, তিন ম্যাচ মিলে ১৫ বার! ইথিওপিয়ার বিপক্ষে বক্সে টাইট অ্যাঙ্গেল থেকে করেছেন অসাধারণ এক গোল। যদি এই ফর্ম ধরে এগিয়ে যান আবুবাকার এবং তার দল ক্যামেরুন, তবে এবারও চ্যাম্পিয়ন হবার বড় দাবিদার তারা। সঙ্গে এক আসরে সর্বোচ্চ গোল করার রেকর্ডটাও নিজের দখলে নিতে চাইবেন লায়ন্সদের ক্যাপ্টেন।

     

    টুর্নামেন্টে বড় ফ্লপ: ঘানা 

    দীর্ঘ ১৬ বছর পর সবাইকে অবাক করে দিয়ে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিতে হয়েছে আফকন জায়ান্ট ঘানাকে। তাও আবার শেষ ম্যাচে হারতে হয়েছে ফিফা র‍্যাংকিংয়ে ১৩২ নম্বরে থাকা দেশ কমোরোসের কাছে; যারা এই প্রথমবারের মত খেলছে আফকনের মত বড় টুর্নামেন্ট। তারকাবহুল ঘানা জিততে পারেনি গ্রুপ পর্বের একটি ম্যাচও। মরোক্কোর কাছে হারের পর গ্যাবনের সঙ্গে শুধু করতে পেরেছিল ড্র। আর অন্যদিকে কমোরোস যেন আছে স্বপ্নের মধ্যে! ২০০৫ সালে তারা পায় ফিফার সদস্যপদ; আর ১৭ বছর পর তারা পেল ঘানার মত এক বিশ্ব জায়ান্টকে হারানোর আনন্দ। চারটি সেরা তৃতীয় দলের একটি হয়ে শেষ ষোলতে ওঠার স্বপ্ন দেখছে এখন কমোরোস; যদিও সেটা নির্ভর করবে অন্য গ্রুপের দলগুলোর ফলাফলের উপর। তবে ঘানার জন্য এবারের আফকনে এখানেই সমাপ্তি।

     

    আলজেরিয়ার আতঙ্ক; উড়ন্ত ইকুয়েটোরিয়াল গিনি  

    কে ভেবেছিল প্রথম দুই পর্বের ম্যাচ শেষে গ্রুপের তলানীতে অবস্থান করবে বর্তমান আফকন চ্যাম্পিয়ন আলজেরিয়া? সিয়েরা লিওনের সঙ্গে প্রথম ম্যাচের ড্র টা নাহয় মানা যায়, কিন্তু পরের ম্যাচে উলটো ইকুয়েটোরিয়াল গিনির কাছে তারা হেরে বসে ১-০ গোলে। প্রতিপক্ষের জালে এখন পর্যন্ত বল জড়াতে পারেনি রিয়াদ মাহরেজের দল। গ্রুপের শীর্ষে থাকা আইভরি কোস্টের সঙ্গে তাদের শেষ ম্যাচটা তাই ‘ডু অর ডাই’। এই ম্যাচে জয়-পরাজয়ের উপর নির্ভর করবে পুরো গ্রুপের সমীকরণ। আলজেরিয়া দুই গোলের ব্যবধানে ম্যাচ জিতলে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েও পরের রাউন্ডে যেতে পারে তারা। অন্যদিকে চার পয়েন্ট পাওয়া আইভরি কোস্টের জন্য ড্র করলেই যথেষ্ট পরের রাউন্ডে যাবার জন্য, তবে ফাইনালের পথে কঠিন ম্যাচের দেখা পেতে হবে আইভরিয়ানদের। 

    কিন্তু ছেড়ে কথা কইবে না আইভরি কোস্টের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলা ইকুয়েটোরিয়াল গিনি। আইভরি কোস্টের কাছে হারলেও আলজেরিয়াকে হারিয়ে দিয়ে রীতিমত শোরগোল ফেলে দিয়েছে তারা। তাদের শেষ ম্যাচে সিয়েরা লিওনকে হারালেই তারা চলে যাবে পরের রাউন্ডে, ড্র করলেও থাকবে সুযোগ। তবে আলজেরিয়ার ভাগ্য শুধুমাত্র নিজেদের হাতেই। জিততেই হবে, তাও বড় ব্যবধানে। অন্যথায় বাদ পড়ে যাবার আশংকায় অপেক্ষা করতে হবে অন্য ম্যাচে ইকুয়েটোরিয়াল গিনি’র দুর্ভাগ্যের জন্য।

     

    পরিসংখ্যানে আফকন

    আফকনের গ্রুপ পর্বে এরই মধ্যে হয়ে গেছে ৩০ ম্যাচ, আর সবমিলিয়ে গোল হয়েছে ৫৬টি। প্রথম পর্বের ১২ ম্যাচে যদিও টুর্নামেন্টে দলগুলো করে কাটায় কাটায় ১২ গোল। আর বাকি ১৮ ম্যাচে গোল সংখ্যার হার বেড়ে হয়েছে ৪৪ টি। প্রতি ম্যাচেই তাই হচ্ছে প্রায় দুই গোলের কাছাকাছি। সবচেয়ে বেশি গোল এসেছে স্বাগতিক ক্যামেরুন থেকে, সাত গোল নিয়ে তারা টুর্নামেন্টে শীর্ষে। পাঁচ গোল নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছে মরক্কো। আর এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ছয় গোল হজম করেছে ইথিওপিয়া, তবে এক ম্যাচ কম খেলে পাঁচ গোল খেয়েছে মউরিতানিয়া। 

    আফকনে রাফ ট্যাকল এবং ফাউল নিয়ে বেশ দুর্নাম আছে; এবারও তার খুব একটা ব্যতিক্রম নয়। এরই মধ্যে রেফারিদের পকেটে হাত দিয়ে কার্ড বের করতে হয়েছে ৯৯ বার; যার মধ্যে চারটি আবার ছিল লাল কার্ড। টুর্নামেন্টে সবচেয়ে বেশি ফাউল করেছে গ্যাবন, ৭০ বার। আর সবচেয়ে বেশি শৃঙ্খলা বজায় রেখে খেলেছে নাইজেরিয়া, তাদের খেলোয়াড়রা ফাউল করেছে মাত্র ১৯ বার। টুর্নামেন্টে সবচেয়ে সেরা ডিফেন্স সেনেগালের। তিন ম্যাচ খেলে তাদের গোল খেতে হয়নি একটিও; যদিও তারা নিজে গোল দিয়েছে মাত্র একটি; বাকি দুটো ম্যাচে করেছে গোলশূন্য ড্র। 

    পাসিং মেট্রিকে অবশ্য ইউরো এবং কোপা আমেরিকা থেকে পিছিয়ে আছে এবারের আফকন। বল প্রগ্রেসনে ১০টির বেশি পাস দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে মাত্র ১২ বার। আলজেরিয়া,ক্যামেরুন ও মরোক্কো ছাড়া কেউই আসলে পজেশন নিয়ে ফুটবল খেলছে না, বরং বেছে নিচ্ছে লং বলে রাউট ওয়ান ও ডিরেক্ট ফুটবল খেলার গেমপ্ল্যান। 

     

    কারা শেষ ষোলতে; কাদের আছে সুযোগ আর কাদের বিদায়?

    যেমনটা বলা হয়েছে আগেই; বড় এক অঘটন ঘটিয়ে বিদায় নিয়ে ফেলেছে ঘানা। এর বাইরে এক আলজেরিয়া ছাড়া বাকি হেভিওয়েইট দলগুলোর মোটামুটি শেষ ষোল নিশ্চিত বললেই চলে। এখন পর্যন্ত ছয়টি দল নিশ্চিত করেছে গ্রুপ পর্ব; বাকি দশটি স্থানের জন্য লড়াই করবে তেরটি দল। শুক্রবারের মধ্যেই ঠিক হয়ে যাবে শেষ ষোল’র লাইনাপ।