• বঙ্গবন্ধু বিপিএল ২০২২
  • " />

     

    পেরেরার অভিজ্ঞ বোলিংয়ের পর ফ্লেচার-মুশফিকে খুলনার মধুর প্রতিশোধ

    পেরেরার অভিজ্ঞ বোলিংয়ের পর ফ্লেচার-মুশফিকে খুলনার মধুর প্রতিশোধ    

    চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স-খুলনা টাইগার্স, চট্টগ্রাম (টস- খুলনা/ বোলিং)

    চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স- ১৪৩/৮, ২০ ওভার (আফিফ ৪৪, জ্যাকস ২৮, নাঈম ২৫, থিসারা ৩/১৮)

    খুলনা টাইগার্স- ১৪৪/৪, ১৮.৫ ওভার (ফ্লেচার ৫৮, মুশফিক ৪৪, মিরাজ ২/২৪)

    ফলাফল: খুলনা ৬ উইকেটে জয়ী


    তাদের প্রথম দেখায় চট্টগ্রাম জিতেছিল ২৫ রানে। সেদিন চট্টগ্রাম গড়েছিল এ পর্যন্ত টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রানের ইনিংসের রেকর্ড। ভালো শুরুর পর ব্যাটিং ধ্বসে আজ দুদলের দ্বিতীয় দেখায় চট্টগ্রাম আটকে গিয়েছিল ১৪৩ রানেই। ফ্লেচারের ফিফটির পর মুশফিকের ব্যাটে যা সাত বল হাতে রেখেই পেরিয়ে গেছে খুলনা। ঢাকায় হারের পর চট্টগ্রামে এসেই চট্টগ্রামের বিরুদ্ধে বদলাটা তাই নেওয়া হয়ে গেলো খুলনার।

    পাওয়ারপ্লে শেষে চট্টগ্রামের পাওয়ার ডাউন

    আজও পাওয়ারপ্লেতে ‘পাওয়ার প্লে’ দেখিয়েছে চট্টগ্রাম। তবে পাওয়ারের জন্য পরিচিতি পাওয়া কেনার লুইস ব্যর্থও হয়েছেন শুরুতেই। নাবিলের বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে টাইমিংয়ে গড়বড় করে লোপ্পা ক্যাচ তুলে দিয়েছেন কাভারে। যদিও আফিফ ও জ্যাকসের ব্যাটে চট্টগ্রাম পাওয়ারপ্লেতে তুলতে পেরেছিল ৪৬ রান।

    সাত ওভার শেষে আম্পায়ার যখন টাইম আউটের ইশারা দেন, তখন চট্টগ্রামের স্কোর ৫২/১। কিন্ত সর্বনাশের শুরু নবম ওভার থেকেই। পেরেরার সে ওভারে জ্যাকস আউট হন ২৮ রানে। এরপর ১৬ ওভার শেষ হতে না হতেই চট্টগ্রাম উইকেট হারায় আরও পাঁচটি। নবম ওভার থেকে ষোলোতম ওভার, এর মধ্যে মাত্র দুটি ওভার বাদে প্রত্যেক ওভারেই উইকেট হারায় চট্টগ্রাম। উড়ন্ত শুরুর পরও তাই ১৬ ওভারে চট্টগ্রামের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৭ উইকেটে ১০৩ রান। আর তাদের এই ব্যাটিং ধ্বসের অন্যতম কারণ ‘স্পিনার’ থিসারা পেরেরা।

    ‘স্পিনার’ পেরেরা পাল্টে দিলেন ম্যাচের চেহারা

    চট্টগ্রামে ব্যাটিংবান্ধব পিচের সাথে আউটফিল্ডও ছিল বেশ দ্রুত। ভালো শুরুর পর তাই চট্টগ্রামের বড় সংগ্রহে চোখ না রাখার কোন কারণ ছিল না। আফিফ তাঁর নামের প্রতি একেবারেই সুবিচার করতে পারছিলেন না এই বিপিএলে, জ্যাকসও ভালো শুরু পেলেও বড় করতে পারছিলেন না তার ইনিংস। এ ম্যাচে আফিফ দারুণ সব শটে শুরু করেছিলেন তাঁর ইনিংস। বেরিয়ে এসে রাব্বিকে মিড উইকেট দিয়ে দৃষ্টিনন্দন চারের পর মেরেছেন ছয়। ছিলেন বেশ ছন্দে, জ্যাকসও তেমন।

    চট্টগ্রামের ৫৭/১ স্কোরে নবম ওভারে আক্রমণে আসেন পেরেরা; ওভারের তৃতীয় বলটা পেরেরা ব্যাক অফ দ্যা হ্যান্ড স্লোয়ার করলেন। তাতেই ২৮ রানে থাকা জ্যাকস জোরের উপর কাট করতে গিয়ে বল ডেকে আনলেন স্টাম্পে। পেরেরা তাঁর পুরো স্পেলেই স্লোয়ারের উপরই মনোনিবেশ করেছেন। মিডিয়াম পেসার পেরেরা যেন বনে গিয়েছিলেন স্পিনার। তবে তাঁর ধীরগতির সেসব বল কাজে এসেছে বেশ। ৪ ওভারে ১৮ রানে তাঁর তিন উইকেটে ছিল হাওয়েলের গুরুত্বপূর্ণ উইকেটও। পাঁচ রানে পেরেরার স্লোয়ারে ধোঁকা খেয়ে ক্যাচ তুলে দিয়েছেন বোলারেরই হাতে। শামিমও এরপর তাঁর বলে ক্যাচ তুলে ফিরেছেন প্যাভিলিয়নে। সেই বলটার ধরন কি ছিল, তা তো আর না বললেও চলছে!

    এবং নাঈম-শরিফুলে লড়ে যাওয়ার আশা

    ওয়ান ডাউনে নেমে আফিফ খেলে যাচ্ছিলেন স্বাচ্ছন্দ্যে, তবে এক পাশে উইকেট হারাতে থাকলে তাকেও খোলস বন্দী হতে হয় একটা সময়। অপর প্রান্তে থেকে তাকে দেখতে হয়েছে চার সঙ্গীর ফেরা। শেষমেশ ১৫তম ওভারে তিনিও আউট হয়ে যান ৩৭ বলে ৪৪ রানে। ৯৭ রানে ষষ্ঠ উইকেট হারানো চট্টগ্রামের জন্য লড়াকু এক পুঁজি গড়াইটাই তখন কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সেটি আরও কঠিন হয়ে যায় পরের ওভারেই শামিমও ফিরে গেলে।

    এরপর ১৮তম ওভারে রাজাও সাত রানে আউট হয়ে যাওয়ার পরে আসেন শরিফুল। এসেই রাব্বিকে লং অফ দিয়ে হাঁকান এক ছয়। রেজার পরের ওভারে আসে মাত্র তিন রান। ক্রিজে থাকা নাঈম ধুঁকছিলেন তখনও। রাউন্ড দ্য উইকেটে ওয়াইড ইয়র্কারের বেষ্টনীতে রাব্বি তাকে আটকেও রেখেছিলেন। শেষমেশ শেষ দুই বলে ছয়ের পর চার মারেন নাঈম। তার আগে শরিফুলের এক চারে সে ওভারে ১৭ রান এলে চট্টগ্রামের লড়ার মতো ১৪৩ রানের এক সংগ্রহ পায়।

    কিন্ত লড়াইটা ঠিক করতেই দেয়নি খুলনা

    দ্বিতীয় ওভারেই উইকেট পেয়েছিল চট্টগ্রাম। কোভিড পজিটিভ হয়ে এ পর্যন্ত সব ম্যাচ মিস করা সৌম্য ফিরেছিলেন আজ। তবে শরিফুলের বলে স্কোয়ারে লেগে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন ১ রানেই। তবু রনি-ফ্লেচারের জুটিতে বিপদে পড়তে হয়নি খুলনাকে।

    ফ্লেচার লেগ সাইডে সরে গিয়ে জায়গা বানিয়ে খেলেছেন, স্টেপ আউট করেছেন; শুরুতে চট্টগ্রামের বোলারদের ভালো বলকেও এভাবে খারাপ বানিয়েছেন এই ক্যারিবিয়ান। গেল ম্যাচে রাজার বাউন্সারে আঘাত পেয়ে মাঠ ছাড়া হয়ে হাসপাতালেই যেতে হয়েছিল ফ্লেচারকে। এদিনও ফ্লেচার ও রাজা মুখোমুখি হয়েছিলেন। জয় হয়েছে আজ ফ্লেচারেরই। এই বিপিএলের প্রথম ফিফটির দেখা যেদিন পেয়েছেন ফ্লেচার, সেদিন দুর্দান্ত অভিষেকের পরের ম্যাচে রাজা দিয়েছেন ৪ ওভারে ৪০ রান।

    ৪৭ বলে ৫৮ রান করলেও ফ্লেচারের সাথে অন্যদের ব্যাটে খুলনা লক্ষ্যের দিকে এগুচ্ছিলো সুন্দরমতো। চট্টগ্রামকে ম্যাচে ফেরার সুযোগটা দেয়নি কখনোই। মুশফিকের ৩০ বলে ৪৪* রানের চতুর ইনিংসের সাথে প্রসন্নর ১৫ বলে ২৩ শেষমেশ ম্যাচেরও সমাপ্তি এঁকে দেয়।