• বঙ্গবন্ধু বিপিএল ২০২২
  • " />

     

    সিমন্স সাইক্লোন ম্লান করে তামিমের তান্ডবে ঢাকার জয়

    সিমন্স সাইক্লোন ম্লান করে তামিমের তান্ডবে ঢাকার জয়    

    সিলেট সানরাইজার্স-মিনিস্টার গ্রুপ ঢাকা, চট্টগ্রাম (টস-ঢাকা/বোলিং)
    সিলেট সানরাইজার্স- ১৭৫/৫, ২০ ওভার (সিমন্স ১১৬, আনামুল ১৮, মোসাদ্দেক ১৩*, কাইস ১/২৬, মাশরাফি ১/২৯, এবাদত ১/২৯)
    মিনিস্টার গ্রুপ ঢাকা- ১৭৭/১, ১৭ ওভার (তামিম ১১১*, শাহজাদ ৫৩, আলাউদ্দিন ১/৩২)
    ফলাফল: মিনিস্টার গ্রুপ ঢাকা ৯ উইকেটে জয়ী

     

    লেন্ডল সিমন্সের সেঞ্চুরিকে ম্লান করে মঞ্চের সব আলো নিজের দিকে কেড়ে নিলেন তামিম ইকবাল, ম্যাচজয়ী অপরাজিত সেঞ্চুরি করে। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি থেকে বিরতির ঘোষণা দেওয়ার পরের দিনে তামিমের ব্যাটের এই তাণ্ডবলীলা হয়ত অনেকের তোলা অনেক প্রশ্নেরই জবাব হয়ে থাকবে। সিলেটের বিপক্ষে আগের দেখায় হারের ম্যাচে তিন রানে ফেরা তামিম হয়ত এবার ঢাকাকে জয় এনে দেওয়ার তৃপ্তির ঢেকুর তুলে সামনের ম্যাচের দিকেই তাকাচ্ছেন।

    ওয়েলকাম টু দ্যা সিমন্স-শো

    পাওয়ারপ্লেতে সিলেট তুলেছিল ৫০ রান যাতে মুখ্য অবদান ছিল লেন্ডল সিমন্সের। আনামুল হক বিজয় পাওয়ারপ্লের শেষ ওভারে ফেরার আগে করেছিলেন ১৬ বলে ১৮ রান। তার কিছুক্ষণ পরে দুই ওভারের মধ্যেই ফিরে যান মোহাম্মদ মিঠুন ও কলিন ইনগ্রাম। তবে সেসবে বিন্দুমাত্র বিচলিত না হয়ে ৩৩ বলে ফিফটি পূর্ণ করেন সিমন্স। অন্য প্রান্তে যেখানে সবাইকেই রানের চাকা সচল রাখতে বেগ পেতে হচ্ছিল সেখানে আন্দ্রে রাসেলকে তুলোধোনা করে সিমন্স যেন অন্য পিচে ব্যাট করছিলেন। পুরো ইনিংসের প্রতিফলনস্বরূপ সেঞ্চুরিও পূর্ণ করলেন এবাদতকে দারুণ এক ছয় মেরে, ৬১ বলে। ১৯ তম ওভারে রাসেলকেই দুই চার ও এক ছয় মারার পর আরও একবার মাঠছাড়া করতে গিয়ে থামেন। পুরো ইনিংসে সিলেটের অন্য ব্যাটসম্যানরা যেখানে ২০ রানের কোঠাও ছুঁতে পারেনি সেখানে প্যাভিলিয়নে ফেরার আগে সিমন্স খেলেছেন ৬৫ বলে ১১৬ রানের দানবীয় এক ইনিংস। ১৪টি চার ও ৫টি ছয়ে সাজানো ইনিংসটি যেন আক্ষরিক অর্থেই ছিল “ওয়ান ম্যান শো’।

    মাশরাফি-এবাদতের লাগাম টেনে ধরা স্পেল, সাথে কাইসের চাপ

    মাশরাফির শুরুটা মোটেও আশব্যাঞ্জক হয়নি; প্রথম দুই ওভারে দিয়েছিলেন ২০ রান। সিমন্স যখন ছুটছিলেন তখনই নিজের ভূমিকা বুঝে অন্য প্রান্তে অন্য ব্যাটসম্যানকে আটকে রাখার কাজে মন দেন তিনি। তার তৈরি করা চাপের ফল পেয়েছিলেন কাইস আহমেদ; নিজের শেষ ওভারে ইনগ্রামকে ফিরিয়ে ফল পেয়েছিলেন নিজেও। ওই দুই ওভারে রান গুনেছিলেন মোটে ৯। সেই চাপটা নিমেষেই সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন সিমন্স, রাসেলের ওভারে ১৫ রান নিয়ে। তবে এবাদত এসে সেই চাপ ঠিকই ধরে রেখেছিলেন, ওই স্পেলে দুই ওভার করে মোটে ৬ রান দিয়ে। শেষ দিকে সিমন্সের তাণ্ডবের শিকার হয়ে অবশ্য এক উইকেট পেলেও নিজের কোটা পূর্ণ করে গুনেছিলেন ২৯ রান। তবে এই দুজনের ওই ক্ষণিকের স্পেলটা ম্যাচের পরিপ্রেক্ষিতে ছিল বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তামিম ইকবাল ১৭৬ রানের লক্ষ্যকে যেভাবে ছেলেখেলা বানিয়েছেন তাতে অনেকেই তর্ক করতে পারেন যে কোনও কিছুতেই ম্যাচের ভাগ্য বদল হত না; ২২০ রানের লক্ষ্য থাকলেও তাড়া করে ফিরতেন বলেই ম্যাচের পরে ঘোষণা দিলেন স্বয়ং তামিমও। হ্যাঁ, তাতে অবশ্যই ভুল কিছু বলা হবে না। তবে লক্ষ্য যদি ১৯০ রানের ওপরে থাকত তাহলে তামিমদের ওপর মানসিক একটা বাড়তি সুবিধা পেত সিলেট; তামিমদের পরিকল্পনাও হত কিছুটা ভিন্ন, যা হয়নি দুজনের এই দুটো স্পেলেই।


    ক্যাচ মিস তো ম্যাচ মিস: তামিম সংস্করণ

    প্রথম ওভারের তৃতীয় বল গুড লেংথে সিমের ওপর ফেলে তামিমের ব্যাট থেকে বল বাইরে নিয়ে যেতে সমর্থ হলেন তাসকিন; ব্যাটের কানায় চুমু খেয়ে বল চলে গেল স্লিপে মোহাম্মদ মিঠুনের হাতে। সব ঠিকঠাক মত হলেও গোলমাল পাকিয়ে বসলেন মিঠুন, ফেলে দিলেন ক্যাচ। সেই যে মিঠুনের হাতে ফস্কে বল বের হয়ে গেল, এরপর ম্যাচটাও তাদের মুঠো থেকে বের করে নিয়ে গিয়েছেন তখনও রানের খাতা খুলতে না পারা তামিম। টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে পাওয়ারপ্লেতে সর্বোচ্চ বল (৩০) খেলার রেকর্ড করেছেন; এবারের পাওয়ারপ্লে সর্বোচ্চ ৭৪ রানের প্রায় পুরোটা জুড়েই তাই ছিলেন তামিম। শুরুতেই উইকেটে ততটা সময় ব্যয় করতে পেরে তামিম যেন ফিরিয়ে আনলেন পুরনো সেই “বুম বুম তামিম”, যে একাই ম্যাচ জেতায়। ২৮ বলে পূর্ণ করলেন ফিফটি। ছন্দে থাকা তামিমের সামনে সিলেটের বোলারদের যেন বোধবুদ্ধিই লোপ পেয়ে বসে; তাতেই ৭৫ রানের মাথায় আরও একবার সহজ জীবন পান তিনি। আধা একটা সুযোগের পাশাপাশি দুবার সুযোগ পাওয়া তামিম কি আর সেসব হাতছাড়া করার পাত্র! দুমুঠো ভরে সুযোগের পাত্রের সেই পানি পান করে রানের তৃষ্ণা, জয়ের তৃষ্ণা দুটোই মেটালেন। অন্য প্রান্তে মোহাম্মদ শাহজাদ এদিন যেন দর্শক! দুজনে মিলে গড়েছেন বিপিএল ইতিহাসের ৩য় সর্বোচ্চ ওপেনিং জুটি (১৭৩ রান)। তবে পাদপ্রদীপের আলোয় এদিন শুধুই খান সাহেব; ৬১ বলে সেঞ্চুরি পূর্ণ করলেন দোর্দণ্ড প্রতাপে। এরপর তিন ওভার বাকি থাকতে পুরো ইনিংস জুড়ে খেলা দাপুটে সব শটের ছাপ ফেলেই চার মেরে জয় নিশ্চিত করলেন।