• বঙ্গবন্ধু বিপিএল ২০২২
  • " />

     

    লো-স্কোরিং ম্যাচে হাই-ভোল্টেজ উত্তেজনা: বরিশাল 'বোমা', মুজিব 'মিস্ট্রি', এবং রানার রাজত্ব

    লো-স্কোরিং ম্যাচে হাই-ভোল্টেজ উত্তেজনা: বরিশাল 'বোমা', মুজিব 'মিস্ট্রি', এবং রানার রাজত্ব    

    খুলনা টাইগার্স-ফরচুন বরিশাল (টস- খুলনা/ বোলিং)

    ফরচুন বরিশাল ২০ ওভারে ১৪১/৯ (গেইল ৪৫, থিসারা ২/১৮)

    খুলনা টাইগার্স ১৯ ওভারে ১২৪/১০ (মুশফিক ৪০, রানা ৪/১৭, মুজিব ২/২২)

    ফলাফল: ফরচুন বরিশাল ১৭ রানে জয়ী

     

    আজ বরিশালের ব্যাটিং অর্ডারে অদল-বদল অবাক করে দেওয়ার মতো। আর বরিশালের বোলিংটাও ছিল ঠিক তেমনই। গেইলের ব্যাটে ভিত্তি পেলেও বরিশালের ইনিংস থামে ১৪১ রানে। সেই পুঁজি নিয়েই মুজিবের ‘মিস্ট্রি’র সাথে সাকিব-লিন্টটদের আঁটসাঁট বোলিংয়ে খুলনার ওপর চড়ে বসে বরিশাল। একপাশে ‘গ্লু’ হয়ে থাকা মুশফিকের সাথে পেরেরার ব্যাটে উল্টো ঘটনার সম্ভাবনাও জাগায়। কিন্তু লো-স্কোরিং এই ম্যাচে মেহেদী হাসান রানার দুর্দান্ত বোলিংয়ে যোগ হয়ে বাড়তি উত্তেজনা। বাঁহাতি এই পেসারের নৈপুণ্যে বারবার রঙ বদলাতে থাকা এই ম্যাচে শেষ হাসিটাও বরিশালেরই।

     

    বরিশালের ‘বোমা’ পড়ল তাদেরই ওপর

     

    গেল ম্যাচেও তারা নেমেছিল চারটি পরিবর্তন নিয়ে। আজও ফরচুন বরিশাল তাদের ‘ফরচুন’ বদলের আশায় করেছে চার পরিবর্তন। যার আরেক অর্থ, দলের চেহারাই বদলে যাওয়া। তবে আসল ‘বোমা’ তারা ফাটিয়েছে ব্যাটিংয়ে নামার পর। সে বোমায় বিস্ফোরিত হয়ে খুলনার ধ্বংস হওয়ার কথা। কিন্ত সেই টোটকা কাজে লাগেনি। কাজে আসেনি ব্যাটিং অর্ডারে মিউজিক্যাল চেয়ার খেলা।

    ক্যারিয়ারে এর আগে সাতের আগে ব্যাট করেননি লিন্টট। তাকেই দেখা গেল ওপেনিংয়ে। এ ম্যাচের আগে যার ক্যারিয়ার গড় ছিল ৯.৩০, সেই লিন্টট শরিফুল্লাহর নিরীহ এক বলে বোল্ড হয়ে ফেরার আগে অবশ্য দিয়েছেন ১১টি রান। পাওয়ারপ্লেতে রানখরা নিয়ে শঙ্কায় থাকার কথা আগেই জানিয়েছিলেন সাকিব। আজ বরিশালের ব্যাটিংয়েও পড়েছে তার ছাপ। 

    লোয়ার-মিডল অর্ডারে খেলা জিয়াউর ও সোহানকে নামানো হয়েছে তিনে ও চারে। তাদের ভূমিকা যেমন পাল্টে গিয়েছিল, তেমনি সে কারণে বাকিদের ভূমিকায়ও এসেছে বদল। হৃদয়-শান্ত কিছুক্ষণ ক্রিজে সময় কাটানোর পর হিটিংয়ে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন, সাকিব-শুক্কুরও তেমন। দুই চারের মারের পর সাতে নামা সাকিব লো ফুলটসে স্কোয়ার লেগে ধরা খেয়ে ফিরে গেছেন ৯ রানেই। শুক্কুরও বল সীমানা ছাড়া করতে ব্যর্থ হয়ে ২ রানেই থেমেছেন। বরিশালের ১৪০ পেরোনো এই স্কোরে অবদান ‘ওপেনার’ গেইলের। 

     

    গেইল নিয়ে গ্যাম্বলিং

     

    বরিশাল যে ‘গ্যাম্বল’ করেছিল, তাতে ছিলেন গেইলও। অবশ্য গেইলকে নিয়ে আজ যা করেছে তাকে অবশ্য ‘জুয়া’ বলা যায় না। কারণ ওপেনারের বাইরে তো গেইলের কোন পরিচয়ই ছিল না। তবে ক্যারিয়ারের শেষবেলায় এসে তাকে আইপিএলে পাঞ্জাবের হয়ে নামতে হয়েছিল চার নাম্বারে। বরিশালও তাকে নিয়ে করেছিল ‘গ্যাম্বল’! এবার বিপিএলে তাকে নামিয়ে দিয়েছিল পাঁচ নাম্বারে। আজ অবশ্য নিজের পুরনো জায়গা ফেরত পেয়েছেন তিনি। 

    ৪২ বছর বয়সী গেইলের ‘বিধ্বংসী’ রূপটা যেন দিনে দিনে ম্লান হয়ে যাচ্ছে। তার ব্যাটিংয়েও পড়েছে এর প্রকট ছাপ। বাঁহাতি এই ক্যারিবিয়ান অপেক্ষায় থাকেন নিজের জোনের বলের। ব্যাক অফ লেংথের বল সময় নিয়ে খেলেন ব্যাকফুটে গিয়ে। এর বাইরে বাকিটা সময় সাবধানী ব্যাটিংই করেন।

    ওপেনিংয়ে নামা গেইলের সামনে পাওয়ারপ্লেতে পাঁচ ওভারই ছিল অফ স্পিনারদের। মাহেদী-শরিফুল্লাহদের ভালোভাবেই সামলেছেন তিনি। মাহেদীকে দুই ছয়ের সাথে শরিফুল্লাহকে দুই চার মেরেছেন, নিয়মিত স্ট্রাইক রোটেটটাও করতে পেরেছেন। ইনিংসটা তার এগুচ্ছিলো ভালোমতোই। কিন্তু সেকুগে প্রসন্ন-পেরেরাদের আঁটসাঁট বোলিংয়ে চাপে পড়ে যান গেইল। উড়িয়ে মারতে গিয়ে প্রসন্নর গুগলিতে লং অনে ক্যাচ দেন সৌম্যের হাতে ।

     

    আবারও পেরেরা

     

    গেইল দেখেশুনে খেলে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন বরিশালের ইনিংস। এক উইকেট হারিয়ে পাওয়ারপ্লেতে তুলেছিল ৪৭ রান। সপ্তম ওভারে পেরেরা এসে গেইলের হাতে ছয় খেয়ে সব মিলিয়ে দিয়ে দেন ১১ রান, পরের ওভারের খরচ দুই রান। গেল ম্যাচে দারুণ সব স্লোয়ার ডেলিভারিতে ‘স্পিনার’ বনে যাওয়া পেরেরা ১৮ রানে নিয়েছিলেন তিন উইকেট। আজও তার স্লোয়ারের মুন্সিয়ানা কাজে লাগলো ১৮তম ওভারে। প্রথমে লো ফুলটসে সাকিবকে এবং পরে শান্তকে অফ কাটারে ধোঁকা দিয়ে আউট করেন পেরেরা।  

     

    ব্যাট হাতেও ছন্দে ছিলেন এই লঙ্কান। ব্যাটিংয়ে যখন যান, ওভারপ্রতি খুলনার দরকার দশের বেশি রান।  স্কোরবোর্ডে ৮৬ রানে পাঁচ উইকেট। চাপে থাকা খুলনাকে এগিয়ে নিয়ে যান তিনি। মুজিবকে হাঁকান একটি করে ছক্কা ও চার। আরেকটি ছক্কা জোটে শফিকুলের ভাগ্যে। সেই ছয়ের পর মনে হচ্ছিল খুলনার দিকেই ঝুঁকছে ম্যাচ। সেখান থেকে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন সেই শফিকুলই। তাকে মারতে গিয়ে এক্সট্রা কভারে লিন্টটের হাতে ক্যাচ দেন পেরেরা। ৯ বলে ১৯ করে আউট হন এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। 

     

    মুজিব ‘মিস্ট্রি’তে আশা,  রানার রাজত্ব ও নিরাশ মুশফিক

     

    ১৪২ রানের পুঁজিতে খুলনাকে আটকাতে হলে শুরুতে উইকেটের কোনো বিকল্প ছিল না বরিশালের। চলতি বিপিএলে নিজের প্রথম ম্যাচেই দেখালেন ভেলকি। নিজের প্রথম ওভারেই পরপর ফিরিয়েছেন ফ্লেচার ও সৌম্যকে। পাওয়ারপ্লেতে তিন ওভারে দিয়েছেন মাত্র ১০ রান।

    সাকিব ম্যাচের আগেও বলেছিলেন, ভালো সংগ্রহ পেলে প্রতিপক্ষকে আটকানোর মতো বোলিং আক্রমণ তাদের আছে। কিন্ত সেই ভালো সংগ্রহটা পায়নি বরিশাল। তবে মুজিবের পর বরিশালের বাকি বোলারদের দুর্দান্ত বোলিংয়ে খুলনাকে অল আউটই করে দেয় তারা। 

    ম্যাচ শেষে নিরাশ হয়ে মুশফিক বলেছেন, ১৪২ রানের লক্ষ্য আরেকবার দিলে তিনি অবশ্যই নিতেন। অবশ্য হতাশাটা বেড়েছে নিজের আউট হওয়ার ধরনে।  

    একপ্রান্ত আগলে রেখে দলকে নিয়ে যাচ্ছিলেন জয়ের পথেই। তখন সাত বলে খুলনার প্রয়োজন ১৮ রান। স্ট্রাইকিং প্রান্তে ছিলেন মুশফিক। মেহেদী হাসান রানার বলে স্কুপ করতে গিয়ে ক্যাচ দেন সোহানের হাতে।  ৩৬ বলে ৪০ রান করেন খুলনা অধিনায়ক। এর আগে একই ওভারেই রানা ফিরিয়েছিলেন আরও দুজনকে। দারুণ সব স্লোয়ারে  তিন ওভারে মাত্র ১৭ রানে চার উইকেট নেন এই বাঁহাতি পেসার।