• ক্রিকেট, অন্যান্য
  • " />

     

    হোল্ডারের ডাবল হ্যাটট্রিক: ছয় বলে পড়েছে ছয় উইকেটও

    হোল্ডারের ডাবল হ্যাটট্রিক: ছয় বলে পড়েছে ছয় উইকেটও    

    পাঁচ ম্যাচের সিরিজে দুই দলই ছিল ২-২ সমতায়। কেনসিংটন ওভালে শেষ টি-টোয়েন্টিটা তাই রূপ নিল অঘোষিত ফাইনালে। নিজের ঘরের মাঠে ডাবল হ্যাটট্রিক করে দলকে সেই অঘোষিত ফাইনালটা জিতিয়েছেন জেসন হোল্ডার। শেষ ওভারে একে একে চার ইংলিশ ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে প্রথম ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটার হিসেবে এই কীর্তি গড়েছেন তিনি। 

    ইংল্যান্ডের সামনে ছিল ১৮০ রানের লক্ষ্য। সিরিজ জিততে শেষ ওভারে হাতে চার উইকেট রেখে তাদের প্রয়োজন ছিল ২০ রান। চার-ছক্কার বিকল্পও ছিল না। সেই ওভারের প্রথম বল থেকেই মারমুখী ব্যাটিংয়ের চেষ্টা চালায় ইংল্যান্ড। হোল্ডারের প্রথম বলটাই ওভারস্টেপিংয়ের জন্য ‘নো’ ডাকেন আম্পায়ার। তবে পরের বলে ডট দিয়ে আগের ভুল খানিকটা শুধরেও নেন হোল্ডার।

    চমকের শুরু তৃতীয় বলে। লো ফুলটস পেয়ে লেগ সাইডের ছোট বাউন্ডারি পানে হাঁকান ক্রিস জর্ডান। ডিপ মিড উইকেটে ধরা পড়েন হেইডেন ওয়ালশ জুনিয়রের হাতে। পরের বলে একই দিকে তুলে মারতে গিয়ে সেই ওয়ালশের হাতেই ক্যাচ দেন স্যাম বিলিংস। হোল্ডারের হ্যাটট্রিক পূর্ণ হয়েছে আদিল রশিদকে ফিরিয়ে। ডানহাতি এই পেসার ডাবল হ্যাটট্রিক করেছেন সাকিব মাহমুদকে দারুণ এক ইয়র্কারে বোল্ড করে। ইতিহাসগড়া এই স্পেলের পর ম্যাচসেরার পুরস্কারটা উঠেছে হোল্ডারের হাতেই। ব্যাট হাতে ৩৭ রানের পাশাপাশি ১৫ উইকেট নিয়ে সিরিজসেরাও হয়েছেন এই অলরাউন্ডার। 


    হোল্ডারের আগে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ডাবল হ্যাটট্রিক করেছেন  রশিদ খান, লাসিথ মালিঙ্গা, ও কার্টিস ক্যাম্ফার। ২০১৯ সালে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম বোলার হিসেবে  এই কীর্তি গড়েন রশিদ। একই বছরের সেপ্টেম্বরে দ্বিতীয় বোলার হিসেবে নাম লেখান মালিঙ্গা। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে চার বলে চার উইকেট নেন সাবেক এই লংকান পেসার। ওয়ানডে ক্রিকেটে প্রথম ডাবল হ্যাটট্রিকও দেখা গেছে তার বদৌলতে। 

    আয়ারল্যান্ডের কার্টিস ডাবল হ্যাটট্রিক করেন গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে। তালিকার সর্বশেষ সংযোজন হোল্ডার।

    এ তো গেল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের কথা। এর বাইরেও ডাবল হ্যাটট্রিক দেখেছে ক্রিকেট। টি-টোয়েন্টিতে ডাবল হ্যাটট্রিক করাদের তালিকায় আছেন বাংলাদেশের আল-আমিন হোসেনও। ২০১৩-১৪ মৌসুমে ঘরোয়া ক্রিকেটের ম্যাচে সোহরাওয়ার্দী শুভ, নাজমুল হোসেন মিলন,  নাঈম ইসলাম জুনিয়র ও নাবিল সামাদকে টানা চার বলে আউট করেন ডানহাতি এই পেসার। 

    অবশ্য পাঁচ বলে পাঁচ উইকেটের পাশাপাশি, ছয় বলে ছয় উইকেট নেয়ার নজিরও আছে। 

     

    ছয় বলে ছয় উইকেট

    অবিশ্বাস্য শোনালেও, ছয় বলে ছয় উইকেট নেয়ার ঘটনাও আছে ক্রিকেটে। দুবাইয়ের ক্লাব ক্রিকেটের এক ম্যাচে এই কীর্তি গড়েন ভারতীয় বংশোদ্ভূত হারশিত শেঠ। কারওয়ান গ্লোবাল টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টের ম্যাচে হায়দরাবাদ হকসের ছয় ব্যাটসম্যানকে আউট করেন বাঁহাতি এই স্পিনার। সংযুক্ত আরব আমিরাতের বয়স ভিত্তিক জাতীয় দলেও খেলেছেন তিনি। 

    এর আগে এক ওভারে ছয় উইকেট নিয়ে আলোচনায় আসেন অস্ট্রেলিয়ান তরুণ অ্যালেড ক্যারি। ভিক্টোরিয়ার চতুর্থ সারির দুই ক্লাবের ম্যাচে ছয় উইকেট নেন তিনি। প্রথম তিন উইকেট ক্যাচ আর এলবিডব্লিউতে পেয়ে, শেষ তিনটা নিয়েছেন ব্যাটসম্যানদের উইকেট উপড়ে। 


    পাঁচ বলে পাঁচ উইকেট

    সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডারদের তালিকায় স্যার গ্যারফিল্ড সোবার্সের নাম ওপরেই থাকে। ব্যাট-বল হাতে ক্যারিয়ারজুড়ে জন্ম দিয়েছেন দারুণ সব কীর্তির। এসবের সাথে অনন্য এক ঘটনাতেও জুড়ে গেছে এই কিংবদন্তির নাম। ১৯৬৪ সালে পাঁচ বলে পাঁচ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। যদিও সেটা স্বীকৃত ক্রিকেট ম্যাচ ছিল না। 

    প্রয়াত ইংলিশ সাংবাদিক জিম সোয়ান্টনের নিমন্ত্রণে কুয়ালালামপুর সফরে যান সোবার্স। সেই দলে তার সঙ্গী ছিলেন রিচি বেনো, টাইগার পতৌদির মতো ক্রিকেটাররা। তাদের ছাপিয়ে সব আলো কেড়ে নেন সোবার্সই। মালয়েশিয়ার বিপক্ষে দুই ওভার মিলিয়ে এই কীর্তি গড়েন তিনি। 

    টানা পাঁচ উইকেট নিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার এক বোলারও। ২০১৭ সালে ভিক্টোরিয়ার তৃতীয় সারির এক লিগে পাঁচ বলে পাঁচ উইকেট নিয়ে তাক লাগিয়ে দেন নিক গোডেন নামের এক তরুণ।  


    চার বলে চার উইকেট

    আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে হাতেগোনা ক’জন হলেও প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ডাবল হ্যাটট্রিকের তালিকাটা বেশ লম্বাই বটে। এখন পর্যন্ত ডাবল হ্যাটট্রিক হয়েছে মোট ৪২টি। এর মধ্যে সর্বোচ্চ দুইবার ডাবল হ্যাটট্রিক করেছেন বব ক্রিস্প। 

    এই তালিকায় আছে বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের নামও। ২০১৪ সালে বিকেএসপিতে বিসিএলের ম্যাচে ডাবল হ্যাটট্রিক করেন এই ডানহাতি স্পিনার। দুই ইনিংস মিলিয়ে নর্থ জোনের চার ব্যাটসম্যানকে আউট করেন তিনি। প্রথম ইনিংসে পরপর তার বলে ফিরেছিলেন তানবীর হায়দার, শুভাশিস রায়। দ্বিতীয় ইনিংসে বল হাতে নিয়েই মাহমুদউল্লাহ শিকার সেন্ট্রাল জোনের তাইজুল ইসলাম ও মুক্তার আলী।   

    ২০১১ সালে প্লাংকেট শিল্ডের ম্যাচে ওয়েলিংটনের চার ব্যাটসম্যানকে টানা চার বলে বোল্ড করেছিলেন নিল ওয়াগনার। সারির হয়ে ১৯৭২ সালে চার বলে চার উইকেট নিয়েছিলেন প্যাট পোকক। সাবেক এই ইংলিশ অফস্পিনারের ডাবল হ্যাটট্রিকে প্রতিপক্ষ ছিল সাসেক্স।