• বঙ্গবন্ধু বিপিএল ২০২২
  • " />

     

    চট্টগ্রামে বরিশালের দুইয়ে দুই: ইয়াসির-মুশফিকের প্রচেষ্টা ছাপিয়ে 'সাকিব-শো'র জয়জয়কার

    চট্টগ্রামে বরিশালের দুইয়ে দুই: ইয়াসির-মুশফিকের প্রচেষ্টা ছাপিয়ে 'সাকিব-শো'র জয়জয়কার    

    খুলনা টাইগার্স-ফরচুন বরিশাল, চট্টগ্রাম (টস-বরিশাল/ব্যাটিং)
    ফরচুন বরিশাল- ১৪৫, ১৮.৫ ওভার ( শান্ত ৪৫, সাকিব ৪১, মুজিব ১২, খালেদ ৩/৪১, ফরহাদ ২/১৪, কামরুল ২/২৫)
    খুলনা টাইগার্স- ১৩৯/৬, ২০ ওভার ( ইয়াসির ৫৭*, মুশফিক ৩৩, সৌম্য ১৩, ব্রাভো ৩/৪০, সাকিব ২/১০, শফিকুল ১/৩৯)
    ফলাফল: ফরচুন বরিশাল ৬ রানে জয়ী

     

    চট্টগ্রামে পা রেখেই নিজেদের যেন খুঁজে পেল বরিশাল; নিজেকে খুঁজে পেলেন বরিশাল অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। দুর্দান্ত অলরাউন্ড পারফর্ম্যান্সে নিশ্চিত করেছেন টানা দ্বিতীয় জয়।

    সুপারম্যান সাকিব

    এই সাকিবকেই তো চেয়েছিল বরিশাল! বল হাতে কার্যকর কিছু স্পেল করলেও ব্যাট হাতে একেবারেই সাদামটা এক বিপিএল কাটছিল বরিশাল অধিনায়কের। পাওয়ারপ্লেতেই ২৪ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বসা বরিশালের আজ ব্যাটার সাকিবকে বড্ড প্রয়োজন ছিল। সাকিব নিরাশ করেননি। প্রথমে রয়েসয়েই একশো স্ট্রাইক রেটের আশেপাশেই খেলছিলেন। উইকেটে একবার থিতু হয়ে যাওয়ার পরে হাত খুলতে শুরু করেন। থিসারা পেরেরার কাটার পুল করলে বাউন্ডারিতে ক্যাচ তো পড়লই, উল্টো পেয়ে যান ছয়। তবে পেরেরার পরের ওভারে কাউ কর্নার দিয়ে মারা ছয়ে কোনও সুযোগ দেননি।  কামরুল ইসলাম রাব্বিকে তো এরপর মারেন বিশাল এক ছয়। তবে তার পরের বলটাই কিছুটা খাটো লেংথের হওয়াতে আবার পুল করতে গেলেই মিড উইকেটে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন। ২৭ বলে ৪১ রান করে ফেরার সময় দলকে বিপদ থেকে উদ্ধার করে শেষের ব্যাটারদের গিয়ার পাল্টানোর সুযোগ দিলেও কাজে লাগাতে পারেননি তারা।

    তবে বল হাতে এরপর যা করলেন সাকিব তা অবিশ্বাস্য। পাওয়ারপ্লেতে করলেন দুই ওভার, রান দিলেন মোটে ৪! পাওয়ারপ্লের পরের ওভারেই ফেরালেন সৌম্য সরকারকে। নবম ওভারে নিজের চার ওভারের কোটা পূর্ণ করতে এসে ফেরালেন রনি তালুকদারকে, যার পর তার বোলিং ফিগার হয়ে দাঁড়ায়: ৪-০-১০-২! অলরাউন্ডার সাকিব যেন সাগরিকার পিচে ধরা দিলেন নিজের চিরচেনা রুপেই।

    ৭৯ রানের দুটো জুটি: তফাৎ কেবল জয়-পরাজয়ে

    দুই দলের দুই ইনিংসে দেখা মিলল প্রায় হুবহু দুটো জুটির। শুরুতেই বিপদ, অতঃপর মেরামত ও শেষাংশে আক্রমণ। সাকিব আল হাসানের সাথে নাজমুল হোসেন শান্ত নোঙ্গর গেঁথেছিলেন। খুলনার হয়ে সেই কাজটা করেছিলেন ইয়াসির আলী রাব্বি-মুশফিকুর রহিম।

    আরও একবার খুলনার টপ অর্ডারের ব্যর্থতায় ম্যাচটাই কার্যত শেষ হতে বসেছিল। ১০ ওভার শেষে খুলনার স্কোরবোর্ড বলছিল: ৩৫/৪! সেখান থেকে দুজনে ইনিংস মেরামতের কাজ সারার পর পর ইয়াসির আক্রমণের দায়িত্ব নেন। ম্যাচের শেষ তিন ওভারে প্রয়োজনীয় রান রেট প্রায় ১৮ রানে গিয়ে দাঁড়ালে শফিকুল ইসলামকে এক চার মারার পরের বলে আবারও সেই চেষ্টা করতে গিয়ে ফেরেন ২২ বলে ৩৩ রান করা মুশফিক। ৩৪ বলে ৫৭ রান করে ইয়াসির শেষ পর্যন্ত লড়ে গেলেও শুরুর সেই ধাক্কাই তাদের কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে।

    প্রথম ইনিংসে অবশ্য সাকিব-শান্তর ৭৯ রানের জুটিটা না হলে লড়াই করার মত কোনও পুঁজি পেত না তারা। ওই জুটির পতনের পর শেষ ৬ উইকেটও পড়েছে ৩৬ রানে। সাকিব রানের চাকা সচল রাখতে সমর্থ হলেও শান্ত অন্য প্রান্তে খুব একটা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেননি। ৪০ বলে ৪৫ রানের তার এই স্বভাববিরুদ্ধ ইনিংস নিয়ে তাই প্রশ্ন থাকতেই পারে। তবে ম্যাচের পরিস্থিতি বিবেচনায় এই ইনিংসটা জরুরী ছিল সেটাও অনস্বীকার্য। ইনিংস বড় করতে না পারাটাই তার বিপক্ষে যুক্তি হয়ে দাঁড়াতে পারত; ম্যাচ জেতায় আপাতত সেই কাঠগড়ায় তাকে দাঁড়াতে হয়নি।

    সাকিব-মুজিবের পাওয়ারপ্লে বেষ্টনী

    দিনশেষে পার্থক্য গড়ে দিয়েছে সাকিব ও মুজিব-উর-রহমানের কিপটে ওপেনিং স্পেল। সৌম্য সরকার ও আন্দ্রে ফ্লেচারের কোনও জবাবই জানা ছিল না এই দুজনের। মুজিব তো ৪র্থ ওভারে মেইডেনও দিয়েছিলেন। পাওয়ারপ্লেতে দুজনে মিলে গুনেছিলেন মোটে ২২ রান। সেই চাপে পিষ্ট হয়েই পরে সাকিবের কাছে তারা দিয়েছিল ২ উইকেট; ৪ উইকেট হারিয়েছিল ১০ ওভারের মাথায়। রান রেট উচ্চমাত্রায় বেড়ে যাওয়ায় ব্যাটিং অর্ডার, পরিকল্পনাতে পরিবর্তন আনতে হয়েছিল খুলনাকে;  যার সদ্ব্যবহার করে ৩ উইকেট তুলে নিয়ে ব্রাভো পরে নিশ্চিত করতে পেরেছেন জয়।