• বঙ্গবন্ধু বিপিএল ২০২২
  • " />

     

    পাওয়ারপ্লে ধাঁধার উত্তর খুঁজে পেয়েছে বরিশাল?

    পাওয়ারপ্লে ধাঁধার উত্তর খুঁজে পেয়েছে বরিশাল?    

    চট্টগ্রাম পর্বে তিন ম্যাচে তিন জয় নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসে দলের কোচ খালেদ মাহমুদ সুজন বললেন, জিতলেও ব্যাটিং নিয়ে খুশি নন। তার আগে প্রেজেন্টেশনে এসে সাকিবও বলে গেছেন, তাদের চিন্তার জায়গাটা এখনও থেকে গেছে। যা নিয়ে তিনি আগের ম্যাচেও বলেছেন, তার আগের ম্যাচেও। 

    তৃতীয় ম্যাচে হারের পর কারণ দেখাতে গিয়ে বলেছিলেন, আমরা পাওয়ারপ্লতে ৩৬ রানই তুলতে পারিনি। পাওয়ারপ্লেতে রান তুলার শঙ্কায় যে আছে তারা, সে ছাপ পড়লো পরের ম্যাচেরই ব্যাটিং অর্ডারে। সেদিন বরিশাল যেন 'বোমা' ফাটিয়েই দিয়েছিল! তবে ব্যাটিং অর্ডারে ওমন 'চমকিত' অদল-বদল প্রতিপক্ষের পরিকল্পনায় বোমা ফেলার কাজ করতে পারতো, উল্টো তা যেন পড়ে গেল তাদেরই উপর। 

    ক্রিস গেইলকে পাঁচে নামানো হলেও পুরোনো জায়গা ওপেনিংয়েই আবার ফেরত আনা হলো। তবে চমকের ব্যাপার ছিলো লিনটটের ওপেনিং। ইংলিশ এই বোলারের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে এর আগে সাতের উপরে ব্যাট করার সুযোগ আসেনি। সেদিন তিনি আউট হওয়ার আগে ১১ রান দিতে পেরেছিলেন বরিশালকে। চমকের মাত্রাটা আরও বেড়ে যায় এরপর থেকেই। লিনটটের আউট হওয়ার পর পাঠিয়ে দেওয়া হয় জিয়াউর রহমানকে। জিয়াউর প্যাভিলিয়নে ফেরার পর বাইশ গজের পথ ধরেন নুরুল হাসান। তখনও সাকিব, হৃদয়, শান্ত বাকি। 

    অথচ জিয়াউর ও নুরুলের পরিচিত ভূমিকা, শেষের দিকে পাওয়ার হিটিংয়ের প্রচেষ্টা। সেখানে তাদেরই শুরুর দিকে খেলিয়ে দেওয়া হলো। যার আরেক অর্থ, তাদের ভূমিকার সাথে বাকিদেরও ভূমিকা পরিবর্তন। শান্ত, হৃদয় কিছুক্ষণ ক্রিজে সময় কাটিয়ে হিটিংয়ে ব্যর্থই ঠেকেছেন। সাতে নামা সাকিবের পর ইরফান শুক্কুরও পারেননি ধুন্ধুমার ব্যাটিং করতে। বরিশাল আটকে গেছে ১৪১ রানেই। এই যে ব্যাটিং অর্ডারের চেহারা একেবারেই পাল্টে ফেলা, এটি আসলে ওই পাওয়ারপ্লেতে রানের নেশার প্রভাবিত বা প্রতিফলিত রুপই। 

    সাকিব পাওয়ারপ্লেতে ৩৬ রান তুলতে না পারার আক্ষেপের কথা বলেছিলেন। ছয় ম্যাচ শেষে এখনও বরিশাল মাত্র একটি ম্যাচেই পাওয়ারপ্লেতে ৩৬ রানের বেশি করতে পেরেছিল। বাকি পাঁচটি ম্যাচের চারটিতেই প্রথম ছয় ওভারে ত্রিশের বেশি রান করতে পারেনি বরিশাল। চট্টগ্রামের ব্যাটিংবান্ধব উইকেটেও তিন ম্যাচের দুটিতে তাদের পাওয়ারপ্লে স্কোর ছিল ২৯ ও ৩৪। রানও উঠছিল না, সেই সাথে উইকেটও হারাচ্ছিল তারা। ছয় ম্যাচের মাত্র দুটিতেই উইকেট সংখ্যা দুইয়ের কম রেখে পাওয়ারপ্লে শেষ করতে পেরেছিল বরিশাল। 

    এরই মধ্যে ছয় ম্যাচে ছয় ওপেনার খেলিয়ে ফেলেছে বরিশাল। পাওয়ারপ্লের সূচনা যারা করেন, সেই ওপেনারদের ভিন্ন চারটি জুটিই এরই মধ্যে নামিয়েছে ইনিংসের সূচনা করতে। প্রথম জুটি যে দুজনের, সেই শান্ত ও সৈকতের জুটির উপর প্রথম তিন ম্যাচের পর আর আস্থা রাখতে পারেনি বরিশাল। সে জুটির এক সদস্য সৈকতের তিন ম্যাচের স্কোর ছিল- ৩৯(৩৫), ১৫(১৮), ০(৬)। শান্তর প্রথম তিন ম্যাচে সম্বল ছিল ৬২ বলে ৪২ রান! সৈকত বাদ পড়লেও একইভাবে ব্যর্থ শান্তকে একাদশে জায়গা হারাতে হয় না, তবে ওপেনিং হারিয়ে ফেলেন। 

    তিন ম্যাচ পরেই চট্টগ্রামে গিয়েই বরিশালের সেই চমক! গেইলের সাথে লিনটটের জুটি যেদিন ইনিংস উদ্ভোধন করতে নেমেছিল, সেদিন কিন্ত এ পর্যন্ত পাওয়ারপ্লেতে সাকিব-সুজনের বরিশালের সর্বোচ্চ স্কোরটা এসেছিল। তবে পাওয়ারপ্লেতে সেদিন ৪৭ রান আনায় যেমন অবদান গেইলের, তেমনই ১৪১ রানে গুটিয়ে যাওয়া বরিশালের ইনিংসে অবদান ছিল গেইলের ৪৫ রানের ইনিংসের। পরের দুই ম্যাচেও যেখানে থাকা উচিত, গেইল থাকলেন ওপেনিংয়ে এক পাশে। তবে দুদিন তাকে নামতে হলো ভিন্ন দুজনকে সঙ্গী বানিয়ে। 

    ব্রাভো এর আগেও টি-টোয়েন্টিতে ওপেন করতে নেমেছেন পাঁচবার। সবশেষ ২০১২ সালে বিগ ব্যাশের এক ম্যাচে। এবার দুই টি-টোয়েন্টি কিংবদন্তি একইসাথে নামলেন ইনিংস ওপেন করতে। ব্রাভোর ইনিংসটা ৫ বলে ৯ রানের বড় হলো না যদিও। গেইলও ৪ রানে ফিরে যান খুলনার বিপক্ষে সে ম্যাচে। সেদিনও পাওয়ারপ্লেতে বরিশাল তুলতে পারে মোটে ২৯ রান, তাতেই নেই তিন উইকেট। পরের ম্যাচে তাই আবার পরিবর্তন! এবার তারা নামালো একজন জেনুইন ওপেনারকে। যে মুনিম শাহরিয়ারকে ড্রাফটের পরে দলে ভিড়িয়েছিল বরিশাল। ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো স্ট্রাইক রেটে খেলা এই ওপেনার ১ রানেই যদিও ফিরে যান প্যাভিলিয়নে। 

    ষষ্ট ম্যাচে চতুর্থ জয় শেষে সাকিব বলেন, ইনিংসের শুরুর সাথে শেষের দিকটাও এখন তাদের চিন্তার বিষয়। তবে শেষের দিকেও বরিশালের ব্যর্থতায়ও হাত ওই পাওয়ারপ্লেরই৷ পাওয়ারপ্লেতে ভোগান্তির পর সেই ধাক্কা মাঝের ওভারে স্ট্রাইক রোটেটে মনযোগী হয়ে কাটিয়ে উঠে বরিশাল, কিন্ত ডেথ ওভারে রানের নেশায় উইকেটের মিছিল শুরু হয়ে যায়। 

    এ পর্যন্ত প্রথম ছয় ম্যাচেই নাম্বার তিনে বরিশাল খেলিয়ে ফেলেছে চারজনকে। চারে তিনজন, পাঁচেও খেলিয়ে ফেলা হয়েছে চারজনকে। টপ অর্ডারে রানের আশায় ব্যাটিং অর্ডারে অদল-বদলের কারণে ব্যাটারদের ভূমিকাই পাল্টে যায়। ন্যাচারাল গেমের বিপরীতে গিয়েই অনেক সময় তাই অনেককে খেলতে হয়। সেই সাথে প্রথম দিকের রানখরা পরের দিকে এলোপাতাড়ি ব্যাট চালাতে বাধ্য করে। কিন্ত ডেথ ওভারে পাওয়ার হিটিং মানেই তো এলোপাতাড়ি ব্যাট চালানো নয়! শেষ তিন ম্যাচেই বরিশাল পূর্ণ ওভার খেলার আগেই তাদের সবকটি উইকেট হারিয়েছিল। 

    স্বল্প পুঁজিতেও দুর্দান্ত বোলিংয়ে বরিশাল চট্টগ্রাম পর্বে তিন জয় পেলেও সাকিব-সুজনের মতে তাদের সমস্যার জায়গা যেখানে, সেই ব্যাটিং সমস্যার সমাধান বলা যায় পাওয়ারপ্লেতেই। সঠিক ওপেনিং কম্বিনেশন খুঁজে পাওয়ার সাথে অন্তত টপ ফাইভে স্থির হতে চান দলের কোচ খালেদ মাহমুদ সুজন। আপাতত বরিশালের দরকারও সেটিই!