• বঙ্গবন্ধু বিপিএল ২০২২
  • " />

     

    আলাউদ্দিন-ঝড় সামলে 'সব্যসাচী সৌম্যে' খুলনার স্বস্তির জয়

    আলাউদ্দিন-ঝড় সামলে 'সব্যসাচী সৌম্যে' খুলনার স্বস্তির জয়    

    খুলনা টাইগার্স- সিলেট সানরাইজার্স, সিলেট (টস-সিলেট/বোলিং)
    খুলনা টাইগার্স- ১৮২/৩, ২০ ওভার ( সৌম্য ৮২*, মুশফিক ৫৮*, ইয়াসির ২৩, সোহাগ ১/২৭, স্বাধীন ১/৩৩)
    সিলেট সানরাইজার্স- ১৬৭/৭, ২০ ওভার (বিজয় ৪৭, মোসাদ্দেক ৩৯*, ইনগ্রাম ৩৭, পেরেরা ২/২৩, সৌম্য ২/২৭, নাবিল ১/২৭)
    ফলাফল: খুলনা টাইগার্স ১৫ রানে জয়ী

     

    কোভিড কাটিয়ে মাঠে যখন সৌম্য সরকার ফিরলেন তখন অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম ছিলেন যারপরনাই উচ্ছ্বসিত; জানিয়েছিলেন তাকে নিয়ে উচ্চাশার কথা। সৌম্য এতদিন ছিলেন একেবারেই নিষ্প্রভ। এদিন যেন সৌম্য অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান দিলেন সুদে-আসলেই। দুর্দান্ত অলরাউন্ড পারফর্ম্যান্সে সৌম্য এদিন যেন হয়ে উঠলেন একাই একশো। শেষদিকে আলাউদ্দিন বাবু নাটকীয় এক ক্যামিও খেলে পাদপ্রদীপের আলো কেরে নেওয়ার চেষ্টা করলেও তাই পারেননি; সিলেটও তাই আটকে থেকেছে হারের বৃত্তেই।

    অনবদ্য সৌম্য-মুশফিক

    টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে সোহাগ গাজির আঘাতে প্রথম ওভারেই নেই খুলনার দুই উইকেট। এদিন চারে নামা ইয়াসির আলী রাব্বিকে নিয়ে ইনিংস মেরামতের কাজে লেগে পড়েন সৌম্য। নিজের ফর্মটা খুব একটা সুবিধাজনক না হলেও তেড়েফুঁড়ে আক্রমণে যাননি সৌম্য। পাওয়ারপ্লের শেষ বলে যখন ইয়াসিরও ফিরলেন, খুলনার স্কোরবোর্ড তখন বলছে: ৪৬/৩। সৌম্য নিজের ওপর আস্থা রাখলেন; আর অভিজ্ঞতার ঝুলি মেলে মুশফিক তাকে দিলেন যোগ্য সঙ্গ। উইকেটে এসে বরং মুশফিকই বুঝে নিলেন আক্রমণের দায়িত্ব। সৌম্য তাই আসরে নিজের প্রথম ফিফটি তুলে নিলেন, ৪৩ বল খরচায়। ফিফটি পূর্ণ করার পরেই সৌম্য হাত খুলে খেলতে শুরু করেন। অন্য প্রান্তে মুশফিকও ততক্ষণে পেয়ে গিয়েছেন আসরে নিজের প্রথম ফিফটির দেখা, সেটাও ৩২ বলে। বিপদ থেকে দুজন তো খুলনাকে উদ্ধার করেছেনই, ইনিংসও এগিয়ে নিয়েছেন দারুণভাবে। শেষ ৫ ওভারে দুজন মিলে তুলেছেন ৫৭ রান। ৮৪ বলে দুজনের অবিচ্ছিন্ন ১৩৬ রানের জুটিই গড়ে দিয়েছে দলের জয়ের ভিত।

    সৌম্য-পেরেরার তিন ওভারের ঝড়

    ১৮৩ রানের লক্ষ্যে দশ ওভারের মাথায় সিলেটের স্কোরবোর্ড বলছিল: ৬৯/১; প্রয়োজনীয় রান রেট তখন ১২ ছুঁইছুঁই। তবে ৩১ বলে ৪৭ রান রান করে দারুণ শুরু করা আনামুল হক বিজয় তখনও উইকেটে আছে বলেই সিলেট তখনও ম্যাচে ছিল।  এরপরের তিন ওভারে সৌম্য-থিসারা পেরেরার স্পেলেই অবশ্য এলোমেলো হয়ে গেল সিলেটের ইনিংস। ১১তম ওভারেই পেরেরার গুড লেংথের বল তুলে মারতে গিয়ে ইয়াসিরের দুর্দান্ত ক্যাচের শিকার হয়ে বিজয় ফেরেন ওই ৪৭ রানেই। পরের ওভারে সৌম্যর বাউন্সারে কাবু মোহাম্মদ মিঠুন। দুই বল পরেই বল টেম্পারিংয়ের শাস্তির ক্ষতের ওপর পড়ল নুনের ছিটা; রানের খাতা খোলার আগেই প্যাভিলিয়নের পথ দেখলেন নবনিযুক্ত অধিনায়ক রবি বোপারা, হন্তারক পেরেরা। ১০-১৪তম ওভারে দুজনের স্পেলে রান এসেছে মোটে ২৪; সাথে ওই ৩ উইকেটের পতনে সিলেটের মুঠো থেকে ম্যাচ কার্যত বেরিয়ে গিয়েছে ওই স্পেলেই।

    ইনগ্রামের প্রশ্নবিদ্ধ ব্যাটিংয়ে নিষ্ফলা আলাউদ্দিন বাবু

    পাওয়ারপ্লের শেষ বলে লেন্ডল সিমন্স ফিরলে উইকেটে আসেন কলিন ইনগ্রাম। অন্য প্রান্তে বিজয় যখন স্বাচ্ছন্দ্যে খেলে যাচ্ছেন উইকেটে এসে এই বাঁহাতি দক্ষিণ আফ্রিকান খেলেন বেশ দৃষ্টিকটু এক ইনিংস। প্রান্ত বদল করতেও যথেষ্ট ভুগতে থাকা ইনগ্রামের রান গুরুত্বপূর্ণ এক সময়ে ছিল ১৫ বলে ১২। মাঝের ওই ধাক্কা সামলে উইকেটে আসা মোসাদ্দেক হোসেনও তুলে নিচ্ছিলেন নিয়মিত বাউন্ডারি। তবে ইনগ্রাম যেন ব্যাট করছিলেন অন্য পিচে। শেষ দিকে কয়েকটি বাউন্ডারি বের করে ফেরার আগে তিনি করেন ২৮ বলে ৩৭ রান; যখন মোসাদ্দেকের রান ১৮ বলে ৩৩। ইনগ্রামের বিদায়ের পর মোসাদ্দেকের ওপরেও যেন ভর করে তার ভূত। যদিও মোসাদ্দেকের ওই তিন চার বলের ব্যর্থতার আগেই ম্যাচ প্রায় খুলনার দিকেই ঝুঁকে ছিল। শেষ ওভারে যখন ৩৬ রান প্রয়োজন তখন উইকেটে নবাগত আলাউদ্দিন বাবু ম্যাচে হুট করেই প্রাণ সঞ্চার করেন; মারেন টানা তিন ছক্কা। শেষ ওভারে ২০ রান  আসার পরেও সিলেটকে ফিরতে হয়েছে ১৫ রানের পরাজয়ের গ্লানি নিয়েই। ৭ বলে ২৫* রানের দারুণ ক্যামিও খেলে আলাউদ্দিন দেখিয়েছেন উইকেটে কোনও জুজু ছিল না। ইনগ্রামের ইনিংসটির ওপর তাই বড় একটা প্রশ্নবোধক চিহ্ন থেকেই যায়।