• আফ্রিকান নেশন্স কাপ
  • " />

     

    আলিও সিসের শাপমোচন: যেভাবে লিখলেন আফকন রূপকথা

    আলিও সিসের শাপমোচন: যেভাবে লিখলেন আফকন রূপকথা    

     

    বাস্তবতা মাঝেমাঝে ছাড়িয়ে যায় রূপকথাকেও। সেনেগালের কোচ আলিও সিসেকেই দেখুন না! 

    ২০ বছর আগে টাইব্রেকারে তার মিস করা পেনাল্টি কিকেই ক্যামেরুনের কাছে আফকনের ফাইনাল হেরেছিল সেনেগাল। ভাগ্যদেবীরও কী খেলা! ক্যামেরুনের মাটিতেই ঘুচল সিসের শিরোপা খরা। তাও সেই পেনাল্টি শুটআউটেই। তার অধীনেই আফকনের সফলতম দল মিশরকে টাইব্রেকারে (৪-২) হারিয়ে প্রথম শিরোপা জিতেছে সেনেগাল। এরই মাধ্যমে এতদিন বয়ে চলা সেই অভিশপ্ত স্মৃতি হয়তো এবার মুছে ফেললেন সিসে। 

     

    সিসের সঙ্গে শাপমুক্তির আনন্দে ভেসেছে গোটা সেনেগালও। ১৯৬০ সালে ফ্রান্সের কাছ থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার পর প্রথম শিরোপা তো এবারই ঘরে এলো। এর আগেও কাছে গিয়ে সেনেগালের হাতছাড়া হয়েছে আফকনের শিরোপা। আলো ঝলমলে পোডিয়ামে আরাধ্য শিরোপাকে হাতছোঁয়া দুরত্বে রেখে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার বেদনা, আটলান্টিকের পূর্ব পাড়ের মানুষগুলোর চেয়ে ভালো আর কে জানে? 

    এই আনন্দ তাই ছাপিয়ে গেছে সবকিছুকে। বাঁধভাঙ্গা উল্লাসে মেতেছিল গোটা সেনেগাল। জেতার পর যেভাবে সিসেকে হাওয়ায় ভাসিয়ে ফের লুফে নিয়েছেন তার শিষ্যরা, মনে হতেই পারে তিনি বুঝি রূপকথার এক গল্পের নায়ক। সেনেগালের সমর্থকরা তো বটেই, সাদিও মানেরাও তাকে দেখছেন সেই দৃষ্টিতেই। 

    ফাইনালের পর সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছিলেন সিসে। সেখানে তার নাম ধরে স্লোগান দিতে দিতে ঢুকে পড়েন স্কোয়াডের সব ফুটবলার। পানি দিয়ে ভিজিয়ে দেন প্রিয় কোচকে। এরপর বিশাল এই জয় সিসে উৎসর্গ করেছেন দেশের মানুষদের। এর প্রতিদানও সেনেগালের সমর্থকরা দিয়েছেন দু হাত ভরে। 

    বীরদের বরণ করে নিতে জনতার ঢল নেমেছিল সেনেগালের রাজপথে। ট্রফি নিয়ে ঘরে ফিরে পুরো সেনেগাল দল সিক্ত হয়েছে সমর্থকদের নিখাদ ভালোবাসার বৃষ্টিতে। ইতিহাসের সেরা এই সাফল্য উদযাপন করতে সেনেগালের রাষ্ট্রপতি একদিনের সরকারি ছুটিও ঘোষণা করেন। এই খন্ডচিত্রগুলোই তো বলে দেয়, শাপমোচন কিংবা প্রায়শ্চিত্ত; সিসে, আর তার শিষ্যরা বেশ ভালোমতোই করেছেন। 

    প্রায়শ্চিত্তের সুযোগ কোচ সিসে এর আগেও পেয়েছিলেন একবার। ২০১৯ সালে তার অধীনেই আফকনের ফাইনালে উঠেছিল সেনেগাল। কিন্তু সেবার আলজেরিয়ার বাধা আর ডিঙাতে পারেনি দলটি। ১-০ গোলে হেরে অপূর্ণ থেকে যায় ট্রফি উঁচিয়ে ধরার আশা। তবে এবার আর কোনো বাধাই আটকে রাখতে পারেনি ‘তিরাঙ্গা লায়ন্স’ খ্যাত সেনেগালকে। পুরো আফকনে একটি ম্যাচও হারেনি তারা। 

    জিম্বাবুয়েকে ১-০ গোলে হারিয়ে এবার আফকন যাত্রা শুরু সেনেগালের। গিনি আর মালায়ইয়ের সাথে গোলশূন্য ড্র করেও শেষ ষোলোতে উঠে যায় দলটি। এরপর সাদিও মানে আর বাম্বা দিয়েংয়ের গোলে কেপ ভার্দেকে হারিয়ে নিশ্চিত করে কোয়ার্টার ফাইনালে নিজেদের অবস্থান। 

    সেমিফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে ইকুটোরিয়াল গিনিকে ৩-১ গোলে উড়িয়ে দেয় সেনেগাল। ফাইনালে যেতে তাদের সামনে ছিল বুরকিনা ফাসোর বাধা। সেমিফাইনালের সেই ম্যাচে  ৮১ মিনিট পর্যন্ত ২-০ গোলে এগিয়েও ছিল সেনেগাল। কিন্তু ৮২ মিনিটে ব্যবধান ২-১ এ কমিয়ে আনেন বুরকিনা ফাসোর ব্লাতি তৌরে। বেশ খানিকটা জমে ওঠে ম্যাচ। তবে ম্যাচের শেষ বাঁশি বাজার তিন মিনিট আগে সাদিও মানের গোলে ফাইনাল নিশ্চিত করে সেনেগাল। 

    অবশেষে এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ, আফকনের ফাইনাল। পরম আরাধ্য শিরোপার হাতছানি আবারও। এবার প্রতিপক্ষ ছয়বারের চ্যাম্পিয়ন মোহাম্মদ সালাহর মিশর। অর্জনে সালাহরা এগিয়ে থাকলেও ফেভারিট ছিলেন মেন্ডি-মানে-কুলিবালিরাই। ম্যাচের শুরু থেকেই মিশরের ডি বক্সে আক্রমণ চালান তারা। 

    তেমনই এক আক্রমণ ঠেকাতে গিয়ে সেনেগালের লেফট ব্যাক সালিও সিসকে ডি বক্সের ভেতরে ফাউল করে বসেন মিশরের ডিফেন্ডার মোহামেদ আবদেলমোনেম। সাত মিনিটেই এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পায় সেনেগাল। কিন্তু সাদিও মানের সেই পেনাল্টি কিক আটকে দেন মিশরের গোলরক্ষক আবু গাবাল। 

    আক্রমন- পাল্টা আক্রমণেও গোলের দেখা পায়নি কোনো দল। অতিরিক্ত সময়ের খেলার পরেও স্কোরলাইন ০-০। নিষ্পত্তি করতে তাই টাইব্রেকারের শরণাপন্ন আফকনের ফাইনাল। ম্যাচের সাত মিনিটে পেনাল্টি কিকে লক্ষ্যভেদ করতে না পারা সেই সাদিও মানের বুলেট গতির শটেই নিশ্চিত হয় সেনেগালের আফকন শিরোপা। 

    মানের সেই শট জাল খুঁজে পাওয়ার পর সব সতীর্থরা এসে ঝাঁপিয়ে পড়েন তার ওপর। এমন জয়ের সাথে তো পূর্ব পরিচয়  ছিল না তাদের। ছিল না কোচ সিসেরও। শিষ্যরা ব্যস্ত মাঠে উন্মাতাল উদযাপনে। সিসে ছুটে গেছেন গ্যালারিতে থাকা সমর্থকদের দিকে। তার ভেতরে ছিল শাপমুক্তির আনন্দ, চোখে ছিল আনন্দাশ্রু। যাদের কাছে তার আজীবনের ঋণ, সেই সমর্থকদের কাছে এই জয় সমর্পন করে সেই ঋণের বোঝা থেকে মুক্ত হয়েছেন। দু হাত ভরে ফেরত দেয়ার উপযুক্ত সময় ছিল সেটাই। এই মুহুর্তের জন্যই তো চাতকের অপেক্ষায় ছিল তার মন। 

    সেনেগালে জন্ম নেওয়া, কিন্তু ফ্রান্সের আলো বাতাসে বড় হওয়া সিসে শৈশবেও চাতকের মতো চেয়ে থেকেছেন। চল্লিশোর্ধ্ব সিসের অপেক্ষা ট্রফির জন্য হলেও কিশোর সিসের অপেক্ষা ছিল পিএসজির জার্সির জন্য। লক্ষ্য ছিল পিএসজির একাডেমিতে যোগ দেয়ার। কিন্তু সেই সুযোগ আর হয়নি তার। 

     

    তবে পেশাদার ফুটবলে তার হাতেখড়ি  ফ্রান্সের ক্লাব লিলেতে। সেখানে তিন বছর কাটিয়ে সেডানে খেলেছেন এক মৌসুম। এরপর গায়ে উঠেছে আরাধ্য পিএসজির জার্সি। সতীর্থ হিসেবে পেয়েছেন রোনালদিনহো, জে জে ওচোয়ার মতো ফুটবলারদের। পিএসজিতে চার মৌসুমে খেলেছেন মোট ৪৬ ম্যাচ। বলার মতো অর্জন তেমন নেই বললেই চলে। তবে রোনালদিনহো-ওচোয়াদের সান্নিধ্য পাওয়া অর্জনের খাতায় না গেলেও সিসের মণিকোঠায় আলাদা জায়গাজুড়ে আছে, তা বলা যায় নিঃসন্দেহে।

     

    ঘটনাবহুল ২০০২

    ২০০২; ব্যক্তি কিংবা ফুটবলার সিসের জন্য অন্যরকম এক বছর। সেই এক বছরে ক্যারিয়ার আর ব্যক্তিগত জীবনের নানা উত্থান পতনের অভিজ্ঞতা হয় তার। সে বছর জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ায় অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের দলে জায়গা করে নেন তিনি। বোনাস হিসেবে জুটে যায় দলের অধিনায়কের আর্মব্যান্ড। এবং প্রথম দানেই বাজিমাৎ সেনেগালের। 

    তার নেতৃত্বেই সেই বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে  ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সকে ১-০ গোলে হারিয়ে দেয় আফ্রিকার দলটি। অভাবনীয় এই জয়ের রেশ ধরেই সিসের সেনেগাল পৌঁছে যায় কোয়ার্টার ফাইনালে। কোয়ার্টার ফাইনালে তুরস্কের কাছে ১-০ গোলে হারলেও খেলোয়াড় সিসের ক্যারিয়ারের সবচেয়ে উজ্জলতম অধ্যায় সেই বিশ্বকাপই। 

    বিশ্বকাপের পর মোড় নেয় সিসের ক্লাব ক্যারিয়ারও। প্যারিস ছেড়ে পাড়ি জমান ইংল্যান্ডে। তাকে দলে ভেড়ায় বার্মিংহাম। তবে নতুন যাত্রা আনন্দের হয়নি হৃদয়বিদারক এক দুঃসংবাদে। আফ্রিকার পশ্চিমে গাম্বিয়ার উপকুলে এক ফেরি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান তার পরিবারের ১২ সদস্য।

    সেই শোক সঙ্গী করে বার্মিংহামের হয়ে প্রিমিয়ার লিগে অভিষেকটাও রাঙাতে পারেননি। আর্সেনালের বিপক্ষে সেই ম্যাচে লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়তে হয় তাকে। পরের ছয় ম্যাচে হলুদ কার্ড দেখেন পাঁচবার; বছর শেষ হওয়ার আগে সংখাটা গিয়ে ঠেকে দশের কোটায়। প্রিমিয়ার লিগের দ্রুতগতির ফুটবলে ফিটনেসও সঙ্গ দেয়নি সেবার। ইঞ্জুরিতে পড়ে বাকি মৌসুমে মাঠেই আর নামতে পারেননি। 

    পরের বছর প্রাক-মৌসুমে স্কোয়াডে ফিরলেও কোচ স্টিভ ব্রুসের পরিকল্পনায় ছিলেন না সিসে। সেখান থেকে দুজনের সম্পর্কেও বেড়ে যায় তিক্ততা। সেবার কেবল তিন ম্যাচে সিসেকে নামিয়েছিলেন ব্রুস। মৌসুমের শেষদিকে বার্মিংহাম ছেড়েই দেয় সিসেকে। দুই বছরের চুক্তিতে তাকে দলে নেয় পোর্টসমাউথ। 

    পোর্টসমাউথে চুক্তির মেয়াদ পূর্ণ করে সিসের প্রত্যাবর্তন হয় ফ্রান্সে। দুই বছর সেডানে কাটিয়ে নতুন ঠিকানা বানান ফ্রান্সের দ্বিতীয় সারির দল নিমস অলিম্পিককে। সেখানে এক মৌসুমে খেলেছেন সাত ম্যাচ। ক্লাব ফুটবলের ইতিও টেনেছেন সেখানেই।  

     

    মোড় ঘোড়ানো ২০১৫

     

    বুটজোড়া তুলে রেখে সিসে নিজেকে সঁপে দেন কোচিংয়ে। কোচিং ক্যারিয়ার শুরু ২০১০ সালে  ফ্রান্সের দ্বিতীয় সারির দল লৌহান্স এফসিতে। সেখানে দুই বছর দীক্ষা দেয়ার পর ডাক আসে সেনেগালের কোচিং প্যানেলের। ২০১২ অলিম্পিকে জন্মভূমির সহকারী কোচ ছিলেন সিসে। জাতীয় দলের হয়ে এই পদে আরো তিন বছর ছিলেন তিনি। 

    ২০১৫ সালে আফকনে ফেভারিট হিসেবেই যোগ দিয়েছিল সেনেগাল। কিন্তু সে বছর  প্রথম রাউন্ডের বাধাই টপকাতে পারেনি দলটি। ব্যর্থতার দায় নিয়ে বরখাস্ত হন কোচ অ্যালেন গিরেস। দুঃস্বপ্নের সেই  টুর্নামেন্টের পর সেনেগালের  দায়িত্ব বর্তায় সহকারী কোচ সিসের কাঁধে। এরপর ধীরে ধীরে গুছিয়ে তুলেছেন দলকে। ম্যানেজার হিসেবে তার প্রথম ম্যাচেই সেনেগাল হারায় ঘানাকে। এরপর ৭০ ম্যাচে এসেছে আরো ৪৫ জয়। সেনেগাল ড্র করেছে  ১৬ ম্যাচ। হেরেছে মাত্র ৯টি।  

    সমালোচনা ও তার জবাব

    অর্ধযুগেরও বেশি সময় ধরে সেনেগালের দায়িত্বে আছেন সিসে। অর্জনের খাতায় ছিল কেবল ২০১৯ আফকনের রানার আপ খেতাব। অল্পের জন্য বড় সাফল্য আসেনি, সেটা মানতে নারাজ তার এক সময়কার সতীর্থরাও। বছর তিনেক আগেও সিসের দুই সাবেক সতীর্থ খলিলু ফাদিগা ও এল হাদি দিওফ মনে করতেন, সেনেগালের আফকন জয়ে একমাত্র বাধা স্বয়ং সিসে। 

    তাদের সেই ধারণা বদলে গেছে এবার। সেনেগালের জেতা প্রথম আফকন ট্রফি নিয়ে সিসের সঙ্গে উল্লাস করেছেন তারাও। এবারের আফকনে ফাদিগা ছিলেন দলের টেকনিক্যাল গ্রুপের সদস্য। দিওফকে নিজেই মেন্টর বানিয়েছিলেন সিসে। 

    গুরু-শিষ্যর রসায়নে শাপমোচন 

    এবারের আফকন ফাইনালের টাইব্রেকারের পর ক্যামেরা ঘুরেছিল সালাহ আর মিশরের ফুটবলারদের দিকেও। অশ্রুসিক্ত সালাহ জার্সিতে মুখ ঢেকে কান্না লুকাচ্ছিলেন। লেফট উইংগার ট্রেজেগুয়েত চোখের জলে ভেসে তার সতীর্থ আমর এল সৌলিয়াকে দুই আঙ্গুল তুলে দেখাচ্ছিলেন ‘আমি দুইবার আফকনের ফাইনাল হেরেছি।' 

    সেনেগালের বাঁধনছেঁড়া উল্লাস মুদ্রার একপিঠ হলে, মিশরের চিত্রগুলো মুদ্রার অপর পিঠ। যে পিঠে এতদিন মাথা খুঁটে মরেছেন সেনেগালের কোচ সিসে। ট্রেজেগুয়েতের দুঃখটা সিসে কিছুটা হলেও বুঝবেন। 

    সিসে হয়তো প্রতিপক্ষের এক ফুটবলারের দুঃখবোধে সান্ত্বনা দিতে পারবেন। কিন্তু তাকে সান্ত্বনা দেয়ার মতো মানুষ বলতে ছিলেন সেনেগালের ফুটবলাররাই। দলের সবচেয়ে বড় তারকা সাদিও মানের কথাই বলা যাক। মেটস, সালসবার্গ, সাউদাম্পটন ঘুরে সেনেগালের এই নাম্বার টেন থিতু হয়েছেন লিভারপুলে। বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে কত কোচের অধীনেই না খেলেছেন তিনি। সেমিফাইনাল জেতার পর বিশাল অভিজ্ঞতার ঝুলি হাতড়ে সাদিও মানে বলেছেন, সিসেই হচ্ছেন তার দেখা একমাত্র কোচ; যিনি সবচেয়ে বেশি সমালোচিত হয়েছেন।

    সাদিও মানে তো সেই ২০১৫ থেকেই সিসেকে কাছ থেকে দেখছেন। গুরুর আচার, আচরণ, দর্শন, ফুটবল আর দেশের প্রতি ভালোবাসার কথা বেশ ভালো করেই জানা আছে তার। তাই সমালোচনায় বিদ্ধ হওয়া কোচের পক্ষে দু কথা বলার উপযুক্ত সুযোগ পেয়ে হাতছাড়া করেননি তিনি। দৃঢ় কন্ঠে জানিয়েছিলেন, সেনেগালের জন্য তো বটেই, সিসের জন্যও আফকনের শিরোপাটা জিততে চান তারা। 

    সিসের সাথে দুষ্টুমিতেও কম যান না তার শিষ্যরা। আড়ালে আবডালে নয়, সরাসরিই তাকে 'জাম্মেহ' বলে ডাকেন মানে-মেন্ডিরা। এই ডাকনামের নেপথ্যে আছে গাম্বিয়ার সাবেক রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়া জাম্মেহ। ২১ বছর গাম্বিয়ার নেতৃত্বে ছিলেন তিনি। সিসেও প্রায় সাত বছর ধরে সামলাচ্ছেন সেনেগালের ফুটবল। সেখান থেকেই মিল খুঁজে নিয়ে সিসের এই ডাকনামের জন্ম।

    কোচ হিসেবে 'জাম্মেহ' কেমন?  তার কাছে শৃঙ্খলা, কঠোর পরিশ্রম, সময়ানুবর্তিতা আর একাগ্রতাই শেষ কথা। শিষ্যদের সাথে যতই দুষ্টু মিষ্টি সম্পর্ক থাকুক না কেন, এসব জায়গায় এক চুল ছাড় নেই তার। সিসের ক্লাসে ছেলেমানুষি চলবে না একেবারেই।

    আফকনের শিরোপা জিতিয়েছেন সেনেগালকে। আনন্দে ভাসা রঙিন উদযাপনও শেষদিকে। সিসে প্রস্তুত হচ্ছেন তার পরবর্তী মিশন নিয়ে। আগামী মাসের শেষ সপ্তাহে সেই মিশরের বিপক্ষেই দুইবার মাঠে নামবে সেনেগাল। মঞ্চ এবার কাতার বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব। আফকনের মতো সেখানেও শিষ্যদের কাছ থেকে সেরাটা নিংড়ে বের করে আনবেন, এই দৃশ্যর অপেক্ষাতেই শাপমুক্ত হওয়া গোটা সেনেগাল। 

    কারণ সিসেই তো জানেন, হাজারটা সমালোচনা উপেক্ষা করে, সাফল্যের দ্বারপ্রান্ত থেকে ফিরে গিয়ে কীভাবে ঘুরে দাঁড়াতে হয়।