• বঙ্গবন্ধু বিপিএল ২০২২
  • " />

     

    নেট সেশন: কুমিল্লার তৃতীয় নাকি বরিশালের প্রথম?

    নেট সেশন: কুমিল্লার তৃতীয় নাকি বরিশালের প্রথম?    

    বঙ্গবন্ধু বিপিএল ২০২২, ফাইনাল

    ফরচুন বরিশাল- কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স

     

    কবে, কখন

    ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

    বাংলাদেশ সময় ৫.৩০টা

     

    আগামীকাল পর্দা নামছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের অষ্টম আসরের। বিকাল ৫.৩০টায় মাঠে নামবে দুই ফাইনালিস্ট ফরচুন বরিশাল ও দুইবারের চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। আজ ফাইনালের আগে বিপিএলের ট্রফি নিয়ে হয়েছে আনুষ্ঠানিক ফটোসেশন। কুমিল্লা অধিনায়ক ইমরুল কায়েস থাকলেও, পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হয়ে আসতে পারেননি বরিশালের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। তার পরিবর্তে ফটোসেশনে উপস্থিত হন সহ-অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান।

    স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, ফাইনালের মঞ্চে সাকিবকে দেখা যাবে তো? উত্তরে বরিশালের ম্যানেজার সাব্বির খান আশার বাণীই শুনিয়েছেন। কিন্তু ফটোসেশনে সাকিবের না থাকা নিয়ে পাওয়া গেছে ভিন্ন তথ্য। সংবাদ সম্মেলনে সোহানের ভাষ্য শুনে মনে হতে পারে সাকিব ইচ্ছা করেই আসেননি। কোচ খালেদ মাহমুদ সুজনও কথা বলেছেন একই সুরে। এই ধোঁয়াশা অবশ্য কেটে যাবে ফাইনালের আগেই।

     

    ফরচুন বরিশাল

    নতুন ফ্র্যাঞ্চাইজির অধীনে পুরো টুর্নামেন্টে ব্যাটে-বলে দাপট দেখিয়েই ফাইনালে উঠেছে বরিশাল। সাকিবের দল প্লে অফে উঠেছিল পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে থেকে। প্রথম কোয়ালিফায়ারে কুমিল্লাকে হারিয়ে নিশ্চিত করেছে ফাইনাল। সাকিবও আছেন দারুণ ছন্দে। অলরাউন্ডিং নৈপুণ্যে টানা পাঁচবার হয়েছেন ম্যাচসেরা। 

    ব্যাটিং অর্ডারও বেশ লম্বা দলটির। শুরুতেই আছেন মুনিম শাহরিয়ার। ডানহাতি এই ওপেনারের শটের পসরাতে ভর করেই, বড় সংগ্রহের ভিত পায় বরিশাল। নির্ভীক এই তরুণের মুগ্ধ দর্শক হিসেবেও দেখা যায় ক্রিস গেইলকে। সোনালী সময় পেছনে ফেলে এলেও টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে দাপুটে এক চরিত্র তিনি। তাকে অন্য প্রান্তে রেখে চারপাশে শটের বন্যা বইয়ে দেয়াও কম কথা নয়। মুনিমের দিকে সবার চোখ থাকবে এটা নিশ্চিত। 

    ফর্মে থাকা সাকিবের সাথে টপ অর্ডারে আছেন নাজমুল হোসেন শান্ত, তৌহিদ হৃদয়রা। মিডল আর লেট মিডল অর্ডারে অভিজ্ঞ ডোয়াইন ব্রাভোর সাথে হাল ধরতে পারেন নুরুল হাসান সোহান ও জিয়াউর রহমান। 

    এবারের ব্যাটিংয়ের চেয়ে বেশি আলোচিত হয়েছে বরিশালের বোলিং আক্রমণ নিয়ে। আফগানিস্তানের অফ স্পিনার মুজিব-উর-রহমান আর সাকিব মিলে বেশ ভুগিয়েছেন সব দলের ব্যাটসম্যানদের। দুজনের আট ওভারে কমবেশি খাবি খেয়েছে সবগুলো দলই। কিপ্টে বোলিং আর আঁটসাঁট লাইন-লেংথের বলে দুজন রান আটকে রাখার পাশাপাশি উইকেটও নিয়েছেন টপাটপ।

    বরিশালের চার ওভারের নিশ্চয়তা দিচ্ছেন ব্রাভো। স্লোয়ার, বাউন্সার কিংবা আচমকা গতিময় ডেলিভারিতে ব্যাটসম্যানদের চমকে দিয়ে দলকে ব্রেকথ্রু এনে দেয়ার দারুণ সক্ষমতা আছে তার। আলাদা করে বলা যায় ‘বোলার’ শান্তর কথা। দূরদর্শী অধিনায়কত্বে সাকিব তাকে ব্যবহার করেছেন দারুণ। বেশ কয়েকবার এই পার্ট টাইমারকে দিয়ে উইকেট বের করে এনেছেন সাকিব।

    আলোচিত হয়েছে পাওয়ার প্লে আর ডেথ ওভারে বরিশালের দুই বাঁহাতি পেসার শফিকুল ইসলাম ও মেহেদী হাসান রানার বোলিং নিয়েও। পাওয়ার প্লেতে গতির ঝড় তুলে বৈচিত্র্যময় বোলিং করতে সক্ষম শফিকুল। নতুন বলে সুইং, মুভমেন্টও আদায় করতে পারেন তিনি। ডেথ ওভারে দুটো ম্যাচ রানা জিতিয়েছেন রানা। স্লোয়ারেও পারদর্শিতা আছে তার। সব মিলিয়ে দারুণ এক টুর্নামেন্ট কাটিয়ে ফাইনালে উঠেছে বরিশাল। 

     

    কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স

    .এর আগে দুইবার ফাইনাল খেলে দুইবারই জিতেছে কুমিল্লা। ২০১৫ সালে প্রথম শিরোপা জিতেছিল মাশরাফি বিন মুর্তজার অধীনে। দ্বিতীয় ট্রফিটি এসেছে ২০১৯ সালে ইমরুলের নেতৃত্বে। তৃতীয় ফাইনালেও দলটি উঠেছে ইমরুলের হাত ধরেই। অপেক্ষা এবার তৃতীয় বিপিএল শিরোপার।  

    গ্রুপ পর্বে ১০ ম্যাচের ৬টিতে জিতে দ্বিতীয় হয়ে প্লে অফে উঠেছিল কুমিল্লা। প্রথম কোয়ালিফায়ারে সাকিবের বরিশালের কাছে পেরে ওঠেনি ইমরুলের দল। তবে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে রীতিমতো উড়িয়ে দিয়েছে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সকে। ১৪৯ রানের লক্ষ্য ৪৩ বল হাতে রেখেই টপকে গেছে কুমিল্লা। 

    সুনিল নারাইনের রেকর্ডগড়া বিস্ফোরক এক ফিফটির পর ফাফ ডু প্লেসি আর মঈন আলীর তাণ্ডবে অনায়াসেই ফাইনালে উঠেছে কুমিল্লা। দলটির ব্যাটিং অর্ডারের অন্যতম তিন ভরসা এই তিন বিদেশি। দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে ‘মেইকশিফট ওপেনার’ নারাইন যে খুনে মেজাজে ছিলেন, ফাইনালের মঞ্চেও তার ব্যাটের সংহারমূর্তি দেখতে চাইবে কুমিল্লা। সেই ম্যাচে লিটন রানের খাতা খুলতে না পারলেও, বড় মঞ্চে ভালো করতে মুখিয়ে থাকবেন তিনি। 

    কুমিল্লার টপ অর্ডারে ছন্দে থাকা ডু প্লেসির সঙ্গে আছেন তরুণ মাহমুদুল হাসান জয়। ম্যাচের মোড় ডু প্লেসি যেকোনো সময় ঘুরিয়ে দিতে পারেন দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে। শুরুর দিকে ধ্বস নামলে, ধৈর্য্য ধরে সেটা সামাল দেয়ার সামর্থ্যের প্রমাণ জয় দিয়েছেন বেশ কয়েকবারই। অধিনায়ক ইমরুলও আছেন টপ অর্ডারে। যদিও তার ব্যাটে রানের ধারাবাহিকতা ছিল না। তবে ফাইনালের বড় মঞ্চে ‘ক্যাপ্টেন্স নক’ খেলতেই চাইবেন তিনি।

    মিডল কিংবা টপ অর্ডার; মঈন আলী খেলতে পারেন সব পজিশনেই। আগের ম্যাচেই করেছেন ১৩ বলে ৩০*। ২০ রানের খরচায় উইকেটও নিয়েছেন তিনটি। খুলনা টাইগার্সের বিপক্ষে গ্রুপ পর্বের ম্যাচে ৩৫ বলে খেলেছিলেন ৭৫ রানের ইনিংস। ছক্কা ছিল নয়টি। ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি বোলিংয়েও কুমিল্লার অন্যতম ভরসা এই ইংলিশ অলরাউন্ডার। 

    আলাদা করে বলতে হবে নাহিদুল ইসলামের কথা। প্রায় প্রতি ম্যাচেই কুমিল্লার বোলিং শুরু করেন এই অফ স্পিনার। লাইন-লেংথ মেনে বল করে পাওয়ারপ্লেতে রানের চাকা আটকে রাখতে পারেন তিনি। ফাইনালে একাদশে জায়গা লেট অর্ডারের ব্যাটিংয়েও ভরসা দিতে পারেন। যদিও শেষ ম্যাচের একাদশে ছিলেন না তিনি। কুমিল্লার আরেক স্পিন অস্ত্র তানভীর ইসলাম। বাঁহাতি এই স্পিনার ১১ ম্যাচে নিয়েছেন ১৪ উইকেট। 

    শহীদুল ইসলাম ও মোস্তাফিজুর রহমানকে নিয়ে কুমিল্লার পেস আক্রমণ। দুজনের মধ্যে মোস্তাফিজ যেন উড়ছেন শুরু থেকেই। বিশেষ করে বাঁহাতি ব্যাটসম্যানদের বিপক্ষে ওয়াইড লাইনে যেভাবে বল করছেন, তা নজরকাড়া। আর কাটার তো আছেই। ১০ ম্যাচে তার সংগ্রহ ১৮ উইকেট। শুরু আর শেষে কুমিল্লা তার কব্জির দিকে তাকিয়ে থাকবে তা নিশ্চিত। মোস্তাফিজও চাইবেন উইকেটের ট্যালিটা আরো একটু বাড়িয়ে নিতে। 

    রঙ্গমঞ্চ

    বিপিএলের আগের সাত আসরের সবগুলো ফাইনালই অনুষ্ঠিত হয়েছে মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে। এবারের ভেন্যুও সেই মিরপুরই। আগের সাত ফাইনালে চারবারই জিতেছে আগে ব্যাট করা দল। ফেব্রুয়ারির শিশিরভেজা মাঠের হিসেবে টসও তাই হয়ে উঠবে শিরোপা নির্ধারণের অন্যতম নিয়ামক। 

     

    সম্ভাব্য একাদশ

    গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ দুই ম্যাচ থেকে অপরিবর্তিত একাদশ নিয়েই খেলছে বরিশাল। ফাইনালেও উইনিং কম্বিনেশনেই ভরসা রাখতে পারে দলটি। অন্যদিকে কুমিল্লা প্রথম কোয়ালিফায়ার খেলেছিল একাদশে তিন পরিবর্তন নিয়ে। দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে আসে আরো দুই পরিবর্তন। আবু হায়দার রনি কিংবা আরিফুলের ওপর ভরসা না করলে পরিবর্তন আসতে পারে ফাইনালেও। 

    ফরচুন বরিশাল: মুনিম শাহরিয়ার, ক্রিস গেইল, সাকিব আল হাসান (অধিনায়ক), নাজমুল হোসেন শান্ত, ডোয়াইন ব্রাভো, জিয়াউর রহমান, তৌহিদ হৃদয়, নুরুল হাসান সোহান, মুজিব-উর-রহমান, শফিকুল ইসলাম ও মেহেদী হাসান রানা।

    কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স: লিটন দাস, ইমরুল কায়েস (অধিনায়ক), ফাফ ডু প্লেসি, মঈন আলী, সুনিল নারাইন, মাহমুদুল হাসান জয়, আরিফুল হক/নাহিদুল ইসলাম, আবু হায়দার রনি, তানভীর ইসলাম, শহিদুল ইসলাম ও মোস্তাফিজুর রহমান।  


    সংখ্যার খেলা

    টুর্নামেন্টে কুমিল্লার সাথে ৩ বারের দেখায় ২ বার জিতেছে বরিশাল।

    অধিনায়ক হিসেবে ৩বার ফাইনাল খেলে ২ বার হেরেছেন সাকিব। অধিনায়ক হিসেবে প্রথম শিরোপা জিতেছেন ২০১৬ বিপিএলে। 

    অধিনায়ক হিসেবে ফাইনালে ইমরুলের সাফল্য শতভাগ। ২০১৯ বিপিএলে সাকিবের ঢাকা ডায়নামাইটসকে হারিয়ে দ্বিতীয় শিরোপা জিতে কুমিল্লা।